আজ কিছু তথ্য শেয়ার করবো। আপনি কুরআন নিয়ে ইন্টারেস্টেড হয়ে থাকলে তথ্যগুলো অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে আপনার সামনে আগেও এসেছে। তবে আমি আজ যেটা শেয়ার করবো সেটা শুধুই তথ্য নয়, তথ্যের চাইতেও বেশি কিছু, যাকে আরবিতে ‘ইজায বলা হয়। ‘ইজায হচ্ছে এমন কিছু যা আপনাকে হতভম্ব করে দেয়। একটা এক্সাম্পল দিই।
ধরে নিচ্ছি, আপনি কানে হেডফোন লাগিয়ে লাউড সাউন্ডে মিউজিকে বুঁদ হয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। যদিও আপনি পরিষ্কারভাবে জানেন মিউজিক শোনা ঠিক না, এটা অন্তরের জন্যে খুবই খুবই ক্ষতিকর, এটা আপনার মহামূল্যবান অন্তরকে অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে আজেবাজে ইসলামবিরোধী মেসেজ দিয়ে, এমনকি শির্কি মেসেজ দিয়ে দিয়ে আপনাকে আস্তে আস্তে এমনভাবে কলুষিত করে দেয় যে আপনি বুঝতেও পারেন না। যা হোক, সব জেনেশুনেও আপনি এখনো ছেড়ে দিতে পারেননি, তবে আজ বা কাল নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবেন, তাওবা করে ফিরে আসবেন।
তো আপনি মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ব্যস্ত সড়ক পার হচ্ছেন। ডান দিক থেকে ধেয়ে আসা ট্রাকের তীব্র হর্ন আপনি শুনতে পাননি, খেয়ালও করেননি। ঠিক এক ফুট দূরত্বে যখন ট্রাকটা চলে এলো তখনই টাইম স্লো হয়ে গেলো। আপনার মাথা ধীরে ধীরে ডানদিকে ঘুরে ট্রাকটাকে দেখতে লাগলো, ঠিক একই সাথে আপনার চোখ দুটো বিস্ময় আর ভয়ে বড় বড় হয়ে যেতে থাকলো।
এবং এই সময়টাতেই আপনার পুরো শরীর, হাঁটুর জয়েন্ট আর পা দুটো এমনভাবে জমে গেলো যে আপনি আর নড়তে পারছেন না। আপনার মুখ ধীরে ধীরে হা হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড হতবাক হয়ে বুঝতে পারছেন যে এখন যা ঘটছে এর চেয়ে অবশ্যম্ভাবী আর কিছু নেই, এবং এখনই আপনি টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনের টমের মতো চ্যাপ্টা রুটি হয়ে যাবেন। যা আপনাকে বুঝিয়ে দেয় যে এটা obvious এবং এই অবভিয়াস ঘটনাটার বিস্ময় যখন আপনার উপর পুরোপুরি ভর করে আপনাকে নিশ্চল করে দেয় তখন সেই ঘটনাকে আরবিতে ‘ইজায বলে। ক্লিয়ার?
আজকের লেখাটার প্রভাব পুরোপুরি আপনার বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আর কল্পনার ক্ষমতা কতটা তীব্র তার উপর নির্ভর করছে। আমি কেবল কিছু তথ্য আপনাকে দেবো, সেই তথ্যগুলো কতটা অসাধারণ তা নিয়ে ভাবনা আর কল্পনায় ডুবতে আমি হয়তো ১% হেল্প করতে পারবো, বাকি ৯৯% নির্ভর করবে আপনার মাথা খাটানোর ক্ষমতার উপর। যেহেতু আপনার একটি মাথা আছে, তার ভিতরে গ্রে ম্যাটার, হোয়াইট ম্যাটার সহ একটা ব্রেইনও আছে নিশ্চিত। আশা করি, এই ব্রেইনটা আপনি এতদিন ইউজ করে এসেছেন, ফলে এটা পুরোপুরি নিস্তেজ আর অন্ধকার হয়ে যায়নি। অনেকক্ষণ মজা করলাম। এখন ঢুকে পড়া যাক।
একটা হাতঘড়ি আর ক্যালেন্ডার কল্পনা করুন।
হ্যাঁ, আমি যা-ই বলবো এখন থেকে তা আপনাকে পরিষ্কারভাবে কল্পনা করতে হবে। কল্পনাটা শুরু হবে রঙিন দিয়ে। শেষ হবে সাদাকালোতে। হাতঘড়িটার কথা ভাবুন। খেয়াল করুন (কল্পনাতেই) কয়টা বাজে। ক্যালেন্ডারের দিকে তাকান। তারিখ দেখুন আজকের। হঠাৎ কিছু একটা ঘটায় আপনার ঘড়ির কাঁটা স্লোলি উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করলো। ঘুরছে। ঘুরছেই। ঘোরার গতি বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে ফ্যানের মতো ঘুরতে লাগলো। ক্যালেন্ডারের পাতাও উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। আপনার চারপাশের দৃশ্যগুলোও বদলে যেতে লাগলো। সাঁই সাঁই করে ঘুরতে ঘুরতে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মরুভূমিময় এক জায়গায় এসে আপনি স্থির হলেন। চারপাশের সব সাদাকালো। এবার আমি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলে যাবো। আপনি সেগুলো নিজের চোখে দেখছেন, সেভাবে কল্পনা করে নেবেন।
মুহাম্মাদ নামে অসাধারণ গুণাবলীর এক মানুষ এখানে বাস করেন। সবাই তাঁর অসাধারণ গুণাবলীর জন্যে তাঁকে এক নামে চিনে। তাঁর সত্যবাদিতা, দয়াবান চরিত্র আর ন্যায়পরায়ণতার জন্যে সবাই তাঁকে ভালোবাসে। সবাই মানে কারা? মাক্কার লোকেরা। এরা খুবই খারাপ টাইপের মানুষ। এরা কন্যা সন্তানকে জীবিত পুঁতে ফেলে, দুর্নীতি করে, হত্যা রাহাজানি আর অশ্লীলতায় এদের জুড়ি নেই। সুদ, মাদক, অসততা, অশ্লীল মিউজিক, নারী, বয়ফ্রেন্ড গালফ্রেন্ড, পরকীয়া নামের নানান রকম ব্যভিচারে সবাই লিপ্ত, এবং এটাই এখানকার স্বাভাবিকতা। একেকজন গোত্রের নেতাকে বলা যায় একেকজন মাফিয়ার ডন। নারীরা খারাপভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় কারো ঘরে মেয়ে শিশুর জন্মানোটা তার ভবিষ্যত সম্মানের পরিপন্থী ছিলো, এবং সেটা ভেবে তারা নিজের মেয়েকে মাটিতে পুঁতে ফেলতো জীবন্ত! ভাবা যায়? কল্পনা করুন সেই শিশুটির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা কষ্ট, অনুভব করুন পৃথিবীর আলোতে না আসতেই দুনিয়ার মানুষের বানানো নিয়ম কানুনের তীব্র অত্যাচার তার ফুসফুসকে আটকে দিচ্ছে। কল্পনা করুন মানুষগুলোকে। যারা নারীকে শুধু উপভোগ করে, মাংসের পুতুল ভাবে। পশুর মতো তাকিয়ে থাকে যেখানেই দেখে। নারীদের কথা ভাবুন, যারা নিজেকে ঢেকে না চলে রূপ সৌন্দর্য দেখানোর জন্যে এমনভাবে পোশাক পরতো যাতে তাকে সবাই সুন্দর বলে, আকৃষ্ট হয়। এরকম বুদ্ধি-বিবেকহীন পশুর মতো জীবন যাপন করতো তারা। সুদের কারবার করতো, গরীবরা হতো শোষিত, নির্যাতিত। মদ-মাদকে লিপ্ত একটা ড্রাগ অ্যাডিক্টেড জাতি ছিলো তারা। মোট কথা, সব দিক দিয়েই তারা ছিলো নিকৃষ্ট মানের ও মননের মানুষ। এই খারাপ মানুষের ভীড়ে একজন ছিলো আলোর ছটার মতন। মুহাম্মাহ ইবনে আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহর ছেলে মুহাম্মাদ ﷺ।
এই লোকটি এতই অসাধারণ ছিলেন গুণেমানে যে, সবাই তাঁকে সত্যবাদী বলে জানতো। তিনি কোনোদিন মিথ্যে কথা বলেননি। এটা সবাই জানতো। শারিরীক সুস্থতায় আর সৌন্দর্যে এই মানুষটা ছিলেন অনন্য। এক গাদা খারাপ মানুষের মাঝে যদি কাউকে বিশ্বাস করা যায় নির্দ্বিধায়, তো সেই মানুষটাই ছিলেন মুহাম্মাদ। কেউ কোনো ধন-সম্পদ গচ্ছিত রাখতে কাউকে বিশ্বাস করতে পারতো না, কারণ সবাই খুবই খারাপ ছিলো। তবে মুহাম্মাদকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। কিছু গচ্ছিত রাখতে তাই সবাই মুহাম্মাদকেই খুঁজতো। একটা সমস্যা হয়েছে। কেউ সমাধান করতে পারছে না। ন্যায়নিষ্ঠ আর বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান কে দিতে পারে? কে এমন আছে যে যার বুদ্ধিমত্তা আর ন্যায়পরায়ণতা থেকে আসা সিদ্ধান্ত এক বাক্যে মেনে নেয়া যায়। ইয়েস। মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ। এই অসাধারণ মানুষটা এই সব অসাধারণ গুণাবলী নিয়েই ছোট থেকে এখানে বেড়ে উঠেছেন। সবাই তাঁকে এক নামে চিনে তাঁর অসাধারণ সত্যবাদিতা, সত্যের সাথে আপোষহীনতা, ন্যায়পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা আর সুন্দরতম চরিত্রের জন্যে।
মানুষটার বয়স চল্লিশ হলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে মনোনীত করলেন নবী হিসেবে, সমগ্র মানবজাতির জন্যে মেসেঞ্জার হিসেবে। এর আগে মানবজাতির এক এক জাতিকে এক এক সময়ে তিনি অন্যান্য নবী-রাসূল (মেসেঞ্জার) পাঠিয়ে পাঠিয়ে পথ দেখিয়েছেন। তাদেরকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়েছেন নিজের বাণী আর মেসেঞ্জারের মাধ্যমে, যাতে মানুষ ভুল পথে না চলে যায়, ঠিক থাকে, পুরষ্কারপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আস্তে আস্তে মানুষের সময়োপযোগী মেসেজ পাঠাতে পাঠাতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন “চূড়ান্ত আর পরিপূর্ণ” মেসেজ পাঠানোর, কারণ মানুষ এখন জ্ঞান-বুদ্ধিমত্তায় এই চূড়ান্ত আর পরিপূর্ণ গাইডেন্সটা বোঝার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছে। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাকে ক্লাস নাইনের বই তো আর দেওয়া যায় না। ধীরে ধীরে একটা একটা ক্লাস শেষ করে যখন সে ক্লাস এইট পাশ করে, তখনই তাকে ক্লাস নাইনের বই দেওয়া হয়। সে পড়ে, চেষ্টা করে তখন তা বুঝতে পারে। চূড়ান্ত এই গাইডেন্স পাঠানোর জন্যে তিনি সিলেক্ট করলেন পৃথিবীর বুকে এ যাবৎ আসা সর্বশ্রেষ্ঠ গুণাবলীর অসাধারণ মানুষটিকে। তাঁর কাছে নিজের ফেরেশতার মাধ্যমে মেসেজ পাঠালেন। বুঝিয়ে দিলেন, আল্লাহ এক। উপাসনা শুধু এই এক আল্লাহরই জন্যে হতে হবে আর কারো জন্যে নয়। এবং এই মেসেজ আর চূড়ান্ত-পরিপূর্ণ গাইডেন্স সমগ্র মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
অসাধারণ মানুষটা প্রচণ্ড ভয় পেলেন। কী হচ্ছে এসব? তাঁর স্ত্রী তাঁকে অভয় দিলেন। তাঁর অসাধারণ গুণাবলীর কথা বলে দিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন এই বলে যে তাঁর মতো ভালো একটা মানুষের সাথে কক্ষনো খারাপ কিছু ঘটতে পারে না। এবং নিজে সর্বপ্রথম আমাদের প্রিয় নবীকে ﷺ আল্লাহর মেসেঞ্জার হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, এবং আল্লাহর এককত্বের ঘোষণা দিলেন নির্দ্বিধায়। চূড়ান্ত ঐশীবাণীকে মেনে নেয়া অসাধারণ আলোকজ্জ্বল সাহসী মানুষের মিছিলে সবার আগে, সর্বপ্রথমে কে ছিলেন? ছিলেন একজন নারী। একজন মহিয়সী নারী। রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা ’আনহা। নারী আবারো প্রমাণ দিলো যে, সত্যের পথে হাঁটায় তাঁদের সাহসিকতার জুড়ি নেই। আলোর যাত্রা শুরু হলো।
মাক্কার মানুষ উনাকে প্রথমেই মেনে নিলো না। ওরা ভাবলো,
“আরে আমাদের সাথে, আমাদের মাঝেই বেড়ে ওঠা একজন ব্যবসায়ী একদিন এসে আমাদের বলছে যে, আল্লাহ তাঁকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর কাছে আল্লাহর মেসেজ আসে, এবং তিনি আমাদেরকে সেই মেসেজ পৌঁছে দিচ্ছেন! আর আমাদের বাপ দাদার পূজা অর্চনা, এতদিন যে অন্যায় অত্যাচার আর দুর্নীতি করতাম, সেই সব কিছুর জীবন বাদ দিয়ে এখন তাঁর কথা মেনে নিতে হবে? অসম্ভব। ওকে থামাও। ওকে থামাতেই হবে।”
কিন্তু তিনি থামলেন না। মানুষকে সেই মেসেজ শোনাতে লাগলেন। আল্লাহর একজন সম্মানিত ফেরেশতা এসে তাঁকে মুখে মুখে শিখিয়ে দিতেন আল্লাহর বাণী, আর তিনি তা মুখে মুখে শিখে নিয়ে মানুষকে গিয়ে বলতেন। মানুষ তাজ্জব হয়ে সেই বাণী শুনতো আর কেঁদে ফেলতো ঝরঝর করে। কল্পনা করতে পারছেন? আরবের মানুষের একটা অসাধারণত্ব ছিলো। ভাষা। আরবি ভাষা। বিশুদ্ধ আরবি ভাষা। আরবের লোকেরা কথায় কথায় কবিতা বানাতো। আরবিতে তাদের চেয়ে দক্ষ আর কেউ ছিলো না। একজন কবিকে তারা খুবই সম্মান করতো। অন্যদিকে কবি নয় এবং একজন অশিক্ষিত নিরক্ষর মানুষের মুখ দিয়ে এমন কথা বের হচ্ছে যার শক্তিতে আরবের ভাষা নিয়ে খেলা করা, কথায় কথায় কবিতা তৈরী করা মানুষরা মুগ্ধ হয়ে, নাড়া খেয়ে বলতো, “এই কথা মানুষের কাছ থেকে আসা সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই এই কথা অন্যজগত থেকে এসেছে।” আর এই বলে তারা আল্লাহর এককত্ব আর মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসুল হিসেবে মেনে নিতো।
তবে অনেকেই মেনে নেয়নি। তারা বুঝতে পারছিলো, এই মেসেজ ছড়িয়ে গেলে এর সত্য মানুষ জেনে যাবেই, সত্যের পথে এসে যাবেই। ফলে, ওদের সব দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার আর অশ্লীলতার জীবনব্যবস্থা ধসে পড়বে। উনাকে থামানোর জন্যে তাই ওরা একটা প্রস্তাব নিয়ে গেলো। প্রস্তাব দিলো,
১। তাঁকে ধন সম্পদ দিয়ে ধনী করে দেওয়ার।
২। আরবের সুন্দরী মেয়েদের এনে দেওয়ার।
৩।গোত্রের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা দেওয়ার।
কিন্তু তিনি তো সত্যের প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর একমাত্র প্রভুর কাছ থেকে। তিনি তো আর ভণ্ড নন, বা কোনোকিছুর লোভে এই চরম দুঃসহ কষ্টের জীবন বেছে নেননি। তাই তিনি সরে দাঁড়ালেন না। আজীবন সত্যের সাথে আপোষহীন, ন্যায়বান এই মানুষটা তা কেন করবেন? তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে ওদের বলে দিলেন যে, তাঁর এক হাতে চাঁদ আর এক হাতে সূর্য এনে দেওয়া হলেও কেউ তাঁকে সত্যের প্রচার থেকে থামাতে পারবে না। নিরাশ হয়ে ফিরে গেলো ওরা।
এর পরে উনার মুখে আল্লাহর বাণী শুনে সত্যকে স্বীকার করে নেয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ওরা বলাবলি করতে লাগলো যে নিশ্চয় সে পাগল, নয় তাকে জিনে ধরেছে, নয়তো সে জাদুকর। এই কথাগুলো খুব ভালো করে খেয়াল করুন। ওরা উনাকে যা যা অপবাদ দিচ্ছিলো সেগুলো নিজেরাই কিন্তু উনার মুখে উচ্চারিত আল্লাহর অসাধারণ বাণীগুলোর অসাধারণত্ব ঘোষণা করছিলো। ওদের অপবাদ থেকেই বুঝা যাচ্ছিলো যে, উনি যা বলতেন তা কোনো মানুষের পক্ষে বলা বা তৈরী করা অসম্ভব ব্যাপার। এরকম অসাধারণ কথা কোনো সাধারণ মানুষ বলতে পারেনা, সম্ভব না। ভাষার উৎকর্ষের শীর্ষে থাকা মানুষগুলোর এই অপবাদগুলোও আল্লাহর বাণীর অসাধারণত্বের সাক্ষী।
ওরা উনাকে পাগল আর জিনে পাওয়া বলেছিলো। অথচ উনার বংশে, এমনকি উনার চল্লিশ বছরের জীবনে উনার সুস্থতা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেনি। কেউ কিন্তু একবারও বলেনি উনি এগুলো কপি করেছেন বা শুনে এসে বলেছেন। কারণ, বাণীগুলোর তথ্য এর আগে আসা বাণীগুলোর থেকে তথ্যের দিক দিয়ে সঠিক এবং ভিন্ন ছিলো, যেহেতু এর আগের সবগুলো বাণীই মানুষ অসততার কারণে বদলে নিয়েছে। সেগুলো ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে ঠিক করে নেয়া এই অশিক্ষিত এবং নিরক্ষর মানুষটির পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিলো না। কোথাও থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে তথ্য সংগ্রহ করাও তাঁর জন্যে অসম্ভব ছিলো, কারণ তিনি তো পড়তেই জানতেন না।
সবচেয়ে অসাধারণ অপবাদ ছিলো, তাঁকে ম্যাজিশিয়ান বা জাদুকর ডাকা। আমরা ম্যাজিক চোখে দেখি। যখন কোনোকিছু চোখের সামনে ঘটতে দেখে বুঝে যাই যে এই ঘটনাটা অসাধারণ, অতুলনীয়, ব্যাখ্যার বাইরের একটা ঘটনা এটা, তখনই আমরা বলি, “ওয়াও, এটা তো পুরাই ম্যাজিক!” রাসুলুল্লাহ ﷺ ওদের কোনো ম্যাজিক দেখাননি। তিনি শুধু আল্লাহর কাছ থেকে ফেরেশতার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আসতে থাকা বাণীগুলো তাদের সামনে বলতেন, আর ওরা শুধু শুনতো। কোনো কথা শুনেই সেটাকে “ম্যাজিক” বলতে হলে সেই কথাগুলোকে কতটা অসাধারণ আর ব্যাখ্যার বাইরের হতে হলে সেটাকে কতটা অসাধারণ হতে হয় তা কি আমরা কল্পনা করতে পারছি? তাই উনাকে ম্যাজিশিয়ান বলে ডেকে ওরা আসলে আল্লাহর বাণী যে কত্ত অসাধারণ সেই ঘোষণাই দিয়ে বেড়াতো নিজের অজান্তেই।
মজা না?
ধীরে ধীরে সত্যকে স্বীকার করে নেয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলো, যারা আল্লাহর বাণী মেনে নিতো, আর রাসূলুল্লাহকে ﷺ অনুসরণ করতো পুরোপুরি। নিজের জীবনে শান্তির (আরবিতে ইসলাম) এই গাইডলাইন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করে নেয়া মানুষগুলো হচ্ছে মুসলিম, যারা ইসলামকে নিজের জীবনে মেনে নিয়েছে পরিপূর্ণভাবে, ঠিক যেভাবে এসেছে সেইভাবে। এই মানুষগুলো ছিলেন রাসূলুল্লাহর ﷺ সার্বক্ষণিক সাথী (আরবিতে সাহাবী)। সাহাবীরা যখন আল্লাহর বাণীর কথা শুনতেন, বা বলতেন বা মনে করতেন তখন তাঁদের চোখে একজনের মুখই ভেসে উঠতো। তা ছিলো, আমাদের প্রিয় নবীর পবিত্র মুখ। তাঁরা আল্লাহর বাণীকে বই হিসেবে দেখেননি আমাদের মতো, তাই তাদের চোখে কোনো বই ভেসে উঠতো না। তাঁরা আল্লাহর বাণী শুনতেন নবীজীর কাছ থেকে, তাই নবীজী আর আল্লাহর বাণী তাঁদের কাছে ছিলো অবিচ্ছেদ্য। তাঁরা কোথাও থেকে পড়ে আল্লাহর বাণী শিখতেন না, রাসূলুল্লাহর ﷺ মুখ থেকে শুনেই শিখে ফেলতেন। এটার একটা খুব বড় আর গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে। খুব ভালো করে খেয়াল করুন এখন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখনই আল্লাহর বাণী বলতেন, তখন সাহাবীরা তা শুনেই শিখে নিতেন। তাঁর মানে একবার একটা বাণী বলে দিয়ে সেটাকে সম্পাদনা করার বা ঠিক করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন কথা বলি, তখন তা ভাষাগত দিক থেকে নিখুঁত থাকে না, অর্থগত দিক থেকে অনেক ভুলত্রুটি থাকে, অনেকবার আমরা “আমম্মম-উমমম, ইয়ে, মানে” বলি, ঠিক? রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন আল্লাহর বাণী বলতেন, তখন তা কিন্তু মুখেই বলতেন, এবং বাকিরা সবাই তা সাথে সাথে ঠোঁটস্থ মুখস্থ করে ফেলতো। তাই ভবিষ্যতে আর কোনোরকম বিকৃতি বা পরিবর্তন সাধিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না, এবং এখন পর্যন্ত এই মুখস্থ করে ফেলার ট্র্যাডিশানের কারণে তা অবিকৃতই আছে। ২৩ বছরে সবগুলো বাণী পরিপূর্ণভাবে অবতীর্ণ হওয়ার পর সেগুলো একসাথে লিখা হয়, এবং আমরা সর্বপ্রথম বই আকারে পূর্ণাঙ্গ পবিত্র আল-কুরআন পাই আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে, পরিচালনা করতে এবং এর মেসেজগুলো সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে। সমগ্র জগত জুড়ে যেসব বুদ্ধিমান আর সাহসী মানুষেরা আল্লাহর পাঠানো বাণীর সত্যতা জেনে, মেনে নিয়েছে, এবং সেই অনুযায়ী নিজের জীবনকে সাজিয়েছে, সেই মুসলিমদের অনেকেরই পবিত্র কুরআনের সবগুলো বাণী, অক্ষরে অক্ষরে ঠোঁটস্থ মুখস্থ। তাই আপনি কোনো পরিবর্তন করে আনলেই, তা অক্ষরে অক্ষরে ধরা খেয়ে যাবে। আর এই দুনিয়ার প্রতিটা মুসলিমই এই ১১৪টা সূরাহর (আমরা চ্যাপ্টার বলিনা, সূরাহ বলি) মাঝে ১০-২০টা সুরা মুখস্থ জানে। হ্যাঁ। সবাই জানে। বিশ্বাস হয়? এমন কোনো অসাধারণ আর মর্যাদাবান বই দুনিয়ার বুকে আসেনি, আর আসবেও না।
আজকের এই যুগে কুরআন পড়া কোনো ব্যাপারই না। ঠিক? গুগলে সার্চ দিলেই আপনি সুন্দর সুন্দর অনুবাদ পেয়ে যাবেন। যদিও আমাদের মনে রাখতে হবে, অনুবাদ মানুষের ভাষা। অনুবাদের শব্দ, ভাষা এই সবগুলো মানুষের সিলেক্ট করা। আর তাই কুরআনের ভাষার অসাধারণত্ব অনুবাদে পূর্ণভাবে পাওয়া যায়না। যা-ই হোক, আপনি চাইলেই দুইশ টাকা দিয়ে মার্কেট থেকে সুন্দর কুরআনের অনুবাদ কিনে আনতে পারেন। বা গুগলে সার্চ দিয়েই M. A. S. Abdel Haleem এর অসাধারণ ইংরেজি অনুবাদ The Quran এর ফ্রী পিডিএফ নামিয়ে পড়ে নিতে পারেন। এটা নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। বের করতে পারেন, এতে কয়টা আয়াত (আয়াত মানে সিগনেচার, বা চিহ্ন। কুরআনে ৬ হাজারেরও বেশি আয়াত রয়েছে), কয়টা শব্দ আছে বা কয়টা অক্ষর আছে। কম্পিউটার আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই বিশাল শব্দের কালেকশানে কোনো শব্দ কয়বার আছে, কোনো শব্দ কোনো পজিশানে আছে, কোন শব্দের অর্থ কী, কোন শব্দে কয়টা অক্ষর, কোন শব্দের কয়রকম অর্থ, কোন আয়াতে কোন শব্দ ঠিক কী অর্থ করছে, কেন এরকম অর্থ করছে এই সবগুলো সব এখন আপনার কাছ থেকে শুধু কয়েকটা ক্লিকের দূরত্বে আছে। ঠিক না? কিন্তু আজ হতে দেড় হাজার বছর আগে এগুলোর কিছুই ছিলো না। আর তাই এগুলোর কিছু করা ছিলো পুরোপুরি অসম্ভব।
পবিত্র আল-কুরআন সাইনের (অর্থাৎ আয়াতের) বই, সিগনেচারের বই, সায়েন্সের (Science) বই না। এতে ভাষাগত সাইন আছে, ইতিহাসগত সাইন আছে, প্রজ্ঞার সাইন আছে, আছে বিজ্ঞানের সাইন। এখানে মানবজীবনকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্যে চুরির শাস্তি থেকে শুরু করে দেশ কীভাবে চালাতে হবে তারও দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত কীভাবে চলতে হবে, সেগুলোর নির্দেশনা এখানে দেওয়া আছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ সেগুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। আমরা যারা মুসলিম, তাঁরা উনার জীবন আর কুরআনের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। দেড় হাজার বছর আগে যখন বিভিন্ন সময় আর ঘটনার প্রেক্ষাপটে একটা একটা আয়াত নাযিল হচ্ছিলো, তখন ইতিমধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এমন কিছু অসাধারণত্ব পাঠাচ্ছিলেন যা তখন বুঝা সম্ভব ছিলো না, যেটা আমরা আজ কম্পিউটার আর প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব দ্রুত জেনে ফেলেছি। এটার মাঝে শব্দের কিছু অলৌকিকত্ব আছে, যেটা দেড় হাজার বছর আগে পুরো কুরআন জুড়ে এভাবে বজায় রাখা সম্ভব ছিলো না, এমনকি কুরআনে যে শব্দগুলো এভাবে আছে, তা-ও জানা সম্ভব ছিলো না। সেই অনেকগুলো অসাধারণত্বগুলোর মাঝে শুধুমাত্র শব্দসংখ্যার ব্যাপারটা নিয়ে বলছি এখানে।
■ আমরা জানি, দুনিয়া (دنيا) মানে এই জীবন, আর আখিরাত (اخرة) মানে পরের জীবন। এই দুইটা শব্দ কুরআনে কয়বার এসেছে জানেন? দুইটাই ১১৫ বার করে এসেছে। পুরো কুরআন জুড়ে যেটা মানুষের পক্ষে মেইনটেইন করা সম্ভব না। আপনি বুদ্ধিমান, আর সচেতন মানুষ হলে আপনি এতক্ষণে Allah is the most perfect one বলে ফেলেছেন অলরেডি, এবং আপনি জানেন আল-কুরআন এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকেই আসা সম্ভব না। তবু আপনাকে আরো কয়েকটা দিচ্ছি।
■ পুরুষ (رجل) শব্দটা এসেছে ২৪ বার, আবার নারী (امرأة) শব্দটাও এসেছে ২৪ বার। এই বিশাল কুরআন জুড়ে একদম সমান সংখ্যক বার। ভাবা যায়?
■ Angel মানে ফেরেশতা (ملائكة), আর শাইত্বান (شيطان) হচ্ছে devil. পুরো কুরআন জুড়ে এই দুইটা শব্দ কয়বার এসেছে জানেন? ৮৮বার। একেবারে সমান সংখ্যায়।
■ উপকার (خير) শব্দটা এসেছে ৫০ বার। অন্যদিকে ক্ষতিকর (ضر) শব্দটা এসেছে ৫০ বার।
আমাদেরকে প্রতি বছর আমাদের সম্পদের একটা অংশ গরীবদের দিয়ে দিতে হয়। যদি এই সিস্টেমটা সারা দুনিয়ায় মানা হতো, তাহলে আজকের দুনিয়ায় কোনো গরীব থাকতো না, না খেয়ে কেউ মারা যেতো না। এই সিস্টেমটার নাম যাকাত। যাকাত দেওয়া আমাদের জন্যে বাধ্যতামূলক, এবং এই যাকাত হচ্ছে মুসলিমদের সম্পদে গরীবের অধিকার। অর্থাৎ, আমরা যাকাত দিয়ে মনে করি না যে আমরা একটা মানুষের উপকার করে ফেলেছি। বরং আমরা তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্পদ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করি মাত্র। আল্লাহ বলেছেন, যাকাত দিলে তিনি সম্পদে বরকত বা blessings বাড়িয়ে দিবেন। পুরো কুরআন জুড়ে এই দুটো শব্দের মোট সংখ্যা জানেন?
■ পুরো কুরআনে যাকাত (زكاة) শব্দটা এসেছে মোট ৩২ বার, এবং বরকত (بركة) শব্দটা এসেছে ৩২ বার।
■ জিহবা (لسان) শব্দটা এসেছে ২৫ বার, বাক্য (الكلمة) শব্দটা এসেছে ২৫ বার।
ছোটবেলার একটা প্রশ্ন করি।
সারা বছরে মাসের সংখ্যা কয়টা?
-১২ টা।
আর এক বছরে কয় দিন?
-৩৬৫ দিন।
■ পুরা কুরআন জুড়ে মাস (شهر) শব্দটা এসেছে ঠিক ১২ বার।
■ দিন (يوم) শব্দটা এসেছে ৩৬৫ বার।
সুবহান আল্লাহ।
আল্লাহ নিশ্চয়ই সবচাইতে নিখুঁত এবং সবচাইতে শ্রেষ্ঠ।
এভাবে একটা পুরো বইকে সাজানো কোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
আরো একটা কথা আমরা সবাই শুনেছি প্রায় সময়েই। কিন্তু উত্তরটা কি খুঁজেছি?
প্রশ্নটা হচ্ছে, কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ কেন সম্ভব নয়? কোনো অনুবাদই কেন কুরআনের সামগ্রিক অর্থকে তুলে ধরতে অক্ষম?
এটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ব্যাপক গভীরে যেতে হবে। সেটা জ্ঞানীদের (‘আলিমদের) কাজ। আমি শুধু অত্যন্ত সহজ ভাষায় সিম্পল আর ছোট্ট একটা উদাহরণ দিবো। যারা বুদ্ধিমান মানুষ, তাঁরা এখান থেকেই পুরো জিনিসটা ধরে ফেলবেন ইন শা আল্লাহ।
পবিত্র আল-কুরআন শুরু হয় যে বাক্যটা দিয়ে তা হচ্ছে:
“بسم الله الرحمن الرحيم”
“বিসমিল্লাহি আর-রাহমান আর-রাহীম”
বাক্যের শুরুতে একটা “বি” (ب) দেখা যাচ্ছে না? এখানে এই “বি” হচ্ছে একটা Preposition। ইংরেজিতে এই Preposition টার অর্থ হচ্ছে:
১। শুরু (beginning)
২। উৎসর্গ (dedication)
৩। আনুষঙ্গিক বস্তু (accompaniment)
৪। কর্তৃত্ব, মাধ্যম (instrumentality)
বাক্যটাতে “বি” এর এই সবগুলো অর্থই প্রযোজ্য। ফ্যাঁকড়াটা লাগে অনুবাদের সময়। ইংরেজি বা বাংলাতে এমন একটা শব্দও নেই, যে শব্দটা এই একটা ছোট্ট আরবি অক্ষরের চার-চারটা অর্থের ব্যাপকতাকে একই সাথে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। আপনি যেভাবেই অনুবাদ করার চেষ্টা করবেন তা কেবলই অক্ষরটার আংশিক অর্থকে তুলে ধরবে। আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেভাবে বিস্তারিতভাবে বলেছেন, বুঝিয়েছেন শুধুমাত্র একটা অক্ষর দিয়েই, সেটা আপনার সীমিত মানবিক ক্ষমতা দিয়ে অনুবাদ করতে গিয়ে আপনি শব্দেও ধরতে পারবেন না।
এ তো গেলো শুধু একটামাত্র অক্ষরের কাহিনী, শব্দ বা বাক্য দূরে থাকুক। বিশ্বাস করুন, যদি এখন পুরো বাক্যটার ব্যাপকতা নিয়ে লিখতে যাই, তাহলে এই লেখাটা আরো দশগুণ বড় করলেও কুলোবে কি না সন্দেহ আছে!
কুরআনের অসাধারণত্বের লিস্টে এইটা খুবই ছোট্ট উদাহরণ। আরো অজস্র অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে আছে পুরো কুরআন জুড়ে। আপনাকে আমি বলছি না আজকেই আরবি শিখে ফেলুন, বলছি না আরবি ভাষার উপরে পি এইচ ডি করুন, আমি শুধু একটাই অনুরোধ করছি, পুরো কুরআন একবার অর্থ বুঝে পড়ে ফেলুন। হ্যাঁ, আপনি বুঝবেন। এটা একদমই সহজ ভাষাতে অসাধারণ করে লেখা, সহজ মেসেজ দেওয়া।
এই কুরআন এসেছে আপনার সম্পূর্ণ জীবনকে গাইড করতে। আল্লাহ আপনাকে পথ দেখাতে এত সুন্দর কিছু বাণী পাঠিয়েছেন, শুধুমাত্র একটা মাত্র বই পাঠিয়েছেন, এই জীবন আর অনন্তের জীবনে পারফেক্টলি সফল হতে আর আপনি সেটা একবারও বুঝে পড়বেন না পুরোটা? এটা কোনো কথা?
এখনই শুরু করুন কোনো ভালো অনুবাদ দিয়ে। নিরপেক্ষ মন দিয়ে পড়ুন। ভাবুন। মাত্র কয়েকদিন লাগবে পুরোটা শেষ হতে। আমার সবচাইতে প্রিয় অনুবাদটা ইংরেজিতে করা। M.A.S. Abdel Haleem এর এই অনুবাদটা সাবলীল, প্রাঞ্জল, একইসাথে ভাবগাম্ভীর্যকেও ধরে রাখতে পেরেছে। শুরু করে দিন যেকোনো একটা নিয়ে।
আপনি অভিভূত হয়ে যাবেন। সত্যকে পুরোপুরি চিনে ফেলবেন নিশ্চিত। মুগ্ধ হয়ে যাবেন। গ্যারান্টিড!
কী সিদ্ধান্ত নিলেন? পড়ে শেষ করবেন তো?
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।