আমরা সম্ভবত সেই যুগে আছি যে যুগ সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেছেন, “এমন এক সময় উপস্থিত হবে যখন লোকেরা পরোয়া করবে না সম্পদ হালাল নাকি হারাম উপায়ে অর্জিত।” অথচ হালাল হালাল উপার্জন দুআ কবুলের শর্ত।
রাসূল (সাঃ) অন্যত্র বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ব্যতীত কিছু গ্রহণ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের কে ওই বিষয়ে আদেশ করেছেন যা তিনি রাসূলগণকে আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র রিযিক থেকে ভোগ করো এবং ভাল কাজ করো এবং তিনি বলেছিলেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্যে পবিত্র বস্তু থেকে ভোগ করো।” তারপর মহানবী উল্লেখ করলেন, “লোকে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করে এবং (দুআ কবুল হওয়ার আশায়) আলু থালু কেশে ধুলায় ধুসরিত অবস্থায় দু’হাত আসমানের দিকে বাড়িয়ে ডাকে আয় প্রভু! আয় প্রভু!! অথচ তার খাবার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম এবং হারাম খাদ্য তাকে খাওয়ানো হয়ে থাকে। তা হলে কীভাবে তার মুনাজাতের জওয়াব দেওয়া হবে?” (মুসলিম)
বাস্তবতা এই যে আমাদের জীবনের সবচেয়ে সচল ও দীর্ঘ সময়টা অতিবাহিত হয় পেশা জীবনের প্রস্তুতি নিতে। মধ্যাহ্ন যায় সেটাকে গুছিয়ে নিতে আর রাত্রি কাটে তার স্মৃতিচারণে। কারণ একটাই- সমাজ এটা বিচার-বিশ্লেষণ করেই তার মর্যাদা নির্ধারণ করে। এরকমই একটা রানিং ট্রাকের প্রান্তে এসে কিছু ছেলে বুঝতে পারে সে ভুল দিকে দৌড়াচ্ছে! অন্যদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তখন সে চোখ দেয় আকাশেরও ওপারে। চোখ নামিয়ে যখন সে নিচে দেখে তখন কেবল হারাম আর হারাম! কই যাবে! কী করবে! কিন্তু অবস্থা যা-ই হোক, একজন বিশ্বাসীর পেশা নির্বাচন করতে হবে আখিরতকে সামনে রেখে। আখিরাতের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিকে কিছুমাত্র বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
প্রথমত, এমন পেশা যা আমাদের শারিয়াহ-বিরোধী, তা থেকে ইস্তফা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে হারাম বস্তু গ্রহণই কেবল হারাম নয় বরং উৎপাদনে জড়িত থাকা ও বিক্রয় করাও হারাম। অনুরূপভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কারও উপর জোর-জবরদস্তি করা, অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগ করা সুস্পষ্টভাবে হারাম। একথা বলার সুযোগ নাই যে আমার তো লাভ নাই, আমি তো কেবল চাকুরি করি। যে জিনিসগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ সেই জিনিসের সাথে জড়িত সকল কর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- সুদী ব্যাংক ও সমিতি, গান-বাজনা-নাটক-সিনেমা তৈরি ও প্রচার, নেশাজাত দ্রব্য তৈরি ও বিক্রয়, লটারী প্রচার ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট সকল পেশা হতে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ আমাদেরকে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
“সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।” [সূরা মায়িদাহ (৫):২]
দ্বিতীয়ত, বৈধ পেশার অবৈধ বাধাকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। এমনও অফিস আছে যেখানে জামাতে সলাত আদায় করার সুযোগ নাই, আবার মসজিদেও যেতে দেওয়া হয় না, কোথাও কাজ উদ্ধারের জন্য ঘুষ দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কোথাও গ্রাহকের সাথে প্রতারণামূলক আচরণ করতে বাধ্য করা হয়, কোথাও বেপর্দা গায়রে মাহরামের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। দাড়ি টুপির এলার্জি তো সাধারণ বিষয়। এসব কর্মস্থান হয় দাওয়া দিয়ে ঠিক করতে হবে অথবা সালাম দিয়ে বিদায় দিতে হবে।
অনেকে আবার এমন আছে যে তাদের চাকরি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় আছে কিন্তু আরও চাই, আরও চাই। এই চাওয়া এক সময় হালালের বর্ডার লাইন পেরিয়ে হারাম পর্যন্ত পৌঁছে যায়! সত্যি কথা হলো চাহিদা হচ্ছে এমন এক নদী যার কোনো কিনারা নাই। যতটুকুই আপনি পার হন না কেন তার কূলে ঠাঁই হবে না। অভাব দিনে দিনে বড় হবে, কোটি টাকার শান্তির নীড়ে লক্ষ টাকার অভাব থেকেই যাবে। কারণ ততক্ষণে আপনি যে দুনিয়াকে টার্গেট করে ফেলেছেন!
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তির জীবনে দুনিয়া অর্জন করাই তার বড় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তার উপর বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দেন। আর দরিদ্রতা ও অভাব তার চোখের সামনে তুলে ধরেন। সে যতই চেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তার ভাগ্যে যতটুকু দুনিয়া লিপিবদ্ধ করেছেন তার বাহিরে সে দুনিয়া হাসিল করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির জীবনে আখিরাত অর্জন করাই তার বড় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তার সম্পদকে সহজ করে দেন। আর দুনিয়া তার নিকট অপমান অপদস্থ হয়ে আসতে থাকে।” [২৪৬৫, তিরমিযি]
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান! আমার ইবাদাতের জন্য তুমি নিজের অবসর সময় তৈরি করো ও ইবাদতে মন দাও। তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবো এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেবো। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেবো এবং তোমার অভাব কখনোই দূর করবো না।।” [তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে মাজাহ ৪১০৭]
মুমিনকে স্মরণ রাখতে হবে দুনিয়ার সমস্ত রিযিক আল্লাহর মালিকানাধীন। সুতরাং সেখান হতে কিছু পেতে চাইলে তাঁর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিকল্প নাই। মুমিনের উত্তম রিযিকের জন্য চাই তাকওয়া ও সবর। যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে সকল দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার পথ করে দেন। সকল সঙ্কট থেকে মুক্তি লাভের উপায় বের করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।” [সূরা ত্বালাক্ব (৬৫):২]
তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তাকওয়া অবলম্বন করে, দুনিয়া তার জন্য কখনো সঙ্কীর্ণ হয় না। মহান আল্লাহ ঈমান ও তাকওয়ার শর্তে নিয়ামতের ওয়াদা করেছেন।
“আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং পরহেযগারিতা অবলম্বন করতো, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম।” [সূরা আ’রাফ (৭):৯৬]
আমাদের মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে এমনও অনেক প্রাণী আছে যারা খাদ্য সঞ্চয় করে না অথচ তারা অভুক্তও থাকে না। আল্লাহই রিযিক দাতা, চাকুরী বা ব্যবসা নয়।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।