নাস্তিকরা ধর্মের বিপক্ষে অনেক ধরণের কুটিল বিতর্ক তৈরি করে। তবে রিচার্ড ডকিন্স ও রিকি জার্ভেইসের মতো ব্যক্তিত্বদের কারণে একটি বিশেষ ব্যাপারকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি এমন:
সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষের উপাসনা করা সকল ঈশ্বরকে বিবেচনা করলে বলতে হয়, তাদের প্রায় সকলের ব্যাপারে আমরা সবাই-ই নাস্তিক। ব্যতিক্রম শুধু এই যে, নাস্তিকরা তাদের অবিশ্বাসকে আরো এক ঈশ্বর এগিয়ে নেয়।
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্রিটিশ কমেডিয়ান রিকি জার্ভেইস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী স্টিফেন কোলবার্টের সাথে একটি টক শো তে অংশ নেন এবং কোলবার্টকে রিকি জার্ভেইস বলেনঃ
তো আপনি এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। তবে তাঁকে আপনার বেছে নিতে হয় তিন হাজার ঈশ্বরের মধ্যে থেকে। তাই মূলত আপনার ঈশ্বরে অস্বীকৃতি আমার চেয়ে মাত্র এক কম। আপনি ২৯৯৯ জন ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করেন। আর আমি শুধু আরও একজন ঈশ্বরকেও অবিশ্বাস করি যাকে আপনি বিশ্বাস করেন।
এই সংক্ষিপ্ত যুক্তিটি শুনতে বেশ চটপটে এবং এতে খানিকটা “আপনাকে জব্দ করে ফেলেছি ” ধরনের ব্যাপার আছে, যা সোশ্যাল মিডিয়া, ২৮০ ক্যারেক্টার এবং ক্লিকবেইট এর এই যুগে একে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শুধু এই ব্যাপারগুলোই যথেষ্ট, এমনকি যদি তাদের দেখানো যুক্তি একদম আজগুবিও হয়। তাহলে এই যুক্তিটির বিপরীতে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন?
কিছু আস্তিক মানবপ্রকৃতি, বিশ্বাসের প্রকৃতি এবং ইত্যাদি বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় রকম লম্বা প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করবেন। আপনার যুক্তিটি যতই নিপুণ হোক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা কাজে আসবে না, যেখানে কি না, মনে রাখবেন, খুব কম সময়ের জন্য মানুষের মনোযোগ ধরে রাখা যায় এবং সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো, আপনি যত কথা বলবেন ও যত বেশি শব্দ ব্যবহার করবেন, তারা আপনাকে ততই কম গ্রহণ করবে। নাস্তিক লোকটির কাছে যদি শুনতে চটপটে এবং এক-দুই বাক্যে জব্দ করার মতো যুক্তি থাকে, আপনাকেও তেমন যুক্তি মেলাতে হবে; যদি আপনি বিশ্বাসযোগ্য হতে চান। যদি ওরা একটি meme ইউজ করে, আপনাকে আরো মোক্ষম একটি meme ইউজ করতে হবে। ওদের কাছে যদি জব্দ করার মতো ব্যাপার থাকে, আপনাকে আরো বেশি জব্দ করার মতো ব্যাপার তৈরি করতে হবে। বিরক্তিকর রকমের দীর্ঘ প্রবন্ধের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানোটা কোনোভাবেই কাজে দিবে না।
তাহলে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর উপায়টা কী? যদি একজন নাস্তিক আপনার কাছে এসে বলে, “মানবজাতির উপাস্য বেশিরভাগ ঈশ্বরকে বিবেচনায় আনলে, আমরা সবাই-ই নাস্তিক; নাস্তিকদের অবিশ্বাস শুধু আরও এক ঈশ্বর এগিয়ে”, অস্থির হবেন না, তার চোখে চোখ রেখে বলুন,
“ঠিকাছে, তাহলে বেশিরভাগ আমিষজাতীয় খাবারের কথা যদি বলা হয়, তবে আমরা সবাই-ই নিরামিষভোজী। নিরামিষভোজীরা শুধু আর কিছুসংখ্যক বেশি আমিষ এড়িয়ে চলে”
অথবা,
“এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বেশিরভাগ প্রযুক্তিকে বিবেচনায় এনে বলা যায়, আমরা সবাই-ই অ্যামিশ। অ্যামিশরা শুধু আরো কিছুসংখ্যক বেশি ডিভাইস এড়িয়ে চলে”
অথবা বলতে পারেন,
“এ পর্যন্ত মানুষের তৈরি করা বেশিরভাগ সৌর মডেলের কথা চিন্তা করলে বলা যায়, আমরা সকলেই সমতল পৃথিবীর ধারণায় বিশ্বাসী। সমতল পৃথিবীর তত্ত্বে বিশ্বাসীরা কেবলমাত্র আরো একটি মহাজাগতিক মডেলকে অস্বীকার করে”
রিকি জার্ভেইসের ভাষায় বলা যায়, বিজ্ঞানীরা পৃথিবী এবং মহাজগতের একটি মডেলকেই বিশ্বাস করে যা কি না সূর্যকে কেন্দ্র করে গোলাকার পৃথিবীর আবর্তনকে নির্দেশ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পৃথিবী বা সৌর জগতের অনেকগুলো মডেল তৈরি হয়েছে। যেমনঃ ভূকেন্দ্রী, টলেমেয়েক ইত্যাদি। আজকের বিজ্ঞানীরা একটি মডেল ছাড়া বিভিন্ন রকমের অন্য সব মডেলকেই অস্বীকার করে এবং সমতল পৃথিবীর ধারণায় বিশ্বাসীরা শুধু আরও একটি মডেলকে অস্বীকার করছে।
তো, ধরুন, সমতল পৃথিবীর ধারণায় বিশ্বাসী কেউ একজন তার বিশ্বাসকে ন্যায্য করে তুলতে এ ধরনের যুক্তি দিতে শুরু করল, আমরা কিন্তু তক্ষুণি ধরে ফেলব যে এটি একদমই আজগুবি। অথচ ঠিক এই একই রকমের যুক্তিগুলো ব্যবহার করছেন রিচার্ড ডকিন্স অথবা রিকি জার্ভেইস এবং অন্যান্য নাস্তিকেরা।
এরকম প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নাস্তিকদের যুক্তিগুলোর সহজাত অর্থহীনতাকে আপনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন। এবং এরকম বিতর্কের ক্ষেত্রে অসংগতিগুলো ব্যাখ্যা করার চেয়ে বরং অঙ্গুলিনির্দেশ করে দেখানোই সহস্রগুণ ভালো। এমনটা করতে পারাটাই শ্রেয় হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা আপনার দর্শকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে এবং তাদের মননে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
(এই যুক্তিটিকে বিশ্লেষণ এবং কাটাছেঁড়া করে আরও অনেকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু আমি আমার নিজের পরামর্শমতো এই ভিডিওটি যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখতে চাই। এই নাস্তিক্যবাদী বিতর্কগুলোকে কার্যকরভাবে এবং সংক্ষেপে ভেঙে দেওয়া যেতে পারে এমন আইডিয়া যদি আপনার কাছে থাকে, তবে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।)
উৎস: Muslim Skeptic (মূল আর্টিকেল লিঙ্ক)
অনুবাদক: মারিহ বিনতু হাবিব
অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।