মানুষকে কীসে সমকামের প্রতি ধাবিত করে, জিনগত কোনো প্রভাব এতে আছে কিনা এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে করা গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ২৯ অগাস্টে। গবেষণাটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Science-এ প্রকাশিত হয় এবং এই বিষয়ে করা স্মরণকালের সব চাইতে বড় ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা এটিই। প্রায় অর্ধ-মিলিয়ন মানুষের উপর চালান হয় গবেষণাটি। অর্থাৎ ৫ এর পর আরো ৫টি শূন্য বসাতে হবে সংখ্যাটি দাঁড়া করাতে চাইলে। আর নমুনার জন্য আরবের নাগরিকদের ব্যবহার করা হয়নি। পুরো গবেষণাটাই ‘প্রগতির’ উৎস এবং সমকামের প্রধান অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মানুষের উপর চালানো হয়।

ফলাফলঃ
‘There is no “gay gene”’, Andrea Ganna, lead study author & a geneticist at the Broad Institute of MIT and Harvard in Cambridge, Massachusetts.

IIRT Arabic Intensive

অর্থাৎ, বিজ্ঞানের নামে এ যাবতকালের অসংখ্য ভ্রান্ত তত্ত্বের মধ্যে একটি ‘গে-জিন’ এর একটি বড়সর সমাধি রচিত হলো। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের দ্বারা কৃত এই গবেষণাটি মানবজাতির জন্য বড় কিছুর রাস্তা তৈরি করে দিলো।

সমকাম কোনোদিনও প্রাকৃতিক কিছু ছিল না। পরিবেশ এবং সঙ্গের কারণে মানুষ নিজের ফিতরাত পাল্টে এমনটা হয়। মানসিকভাবে এটা প্রকৃতস্থ কিছু হলে শরীরও সেভাবেই গড়ে উঠত। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের সূত্রে মিলনের জন্য নাক-কান-গলা যেমন উপযুক্ত না বলে জানা যায়। তেমনি জানা যায় পায়ুও কোনো প্রবেশদ্বার না; বরং নির্গমন দ্বার। মিলনের জন্য একমাত্র প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার হলো যোনিপথ। আর প্রাকৃতিক কোনো কিছুর বিপরীত হলো বিকৃতি।

আর বিকৃত কোনো জিনিসই ভালো নয়। কারণ, ভালোর একটা বৈশিষ্ট্য হলো যে ঐ জাতের সকল কিছুর জন্যই তা ভালো। সমকামিতাকে যদি ভালো বলে ধরে নিই তাহলে বুঝতে হবে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের জন্যই তা ভালো। অর্থাৎ সবাই যদি এটা গ্রহণ করে তবে ফলাফলে সার্বিক কল্যাণই নিহিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর ফলে প্রাকৃতিকভাবে মানব প্রজন্মের সলিল সমাধি হবে। যাক, এর অনেক ডাল-পালা আছে, ওদিকে না যাই। অপ্রাকৃতিক অর্থাৎ বিকৃত কোনোকিছুতে প্রশ্রয় দেওয়া সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ না।

প্রাকৃতিক ক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য তৈরি হবে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা। শরীরের ভাষায় তাকে বলে রোগ। বহির্গমনের জায়গায় প্রবেশন আর ঘর্ষণের জন্য তৈরি হবে পায়ু ক্যান্সার, এইচআইভি, পাইলস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস, হবে জেনিটাল ইঞ্জুরি, ছড়িয়ে পড়বে প্যাপিলোমা ভাইরাস। এইডসকে কবে থেকে এবং কেন গুরুত্বের সাথে নেওয়া শুরু হয়েছে সেটি কি আমরা জানি? আমেরিকাজুড়ে সর্বপ্রথম ১৯৮১ সালে এইচআইভি মহামারী আকার ধারণ করে। আর এর প্রায় পুরোটার পিছেই দায়ী ছিল পুংকামীরা। শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ৮৩% সিফিলিসের ধারক-বাহক ছিল এই সমকামী এবং উভকামীরা।  ফরেনসিকে এবং বিকৃত আচরণ আইনে Unnatural Sexual Offence এ তাই সমকামিতা, পশুকামিতাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। যাক, এগুলো যেহেতু কোনো কলা অনুষদের ছাত্র-শিক্ষকের কাছ থেকে জানার বিষয় না তাই এই ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানই যথেষ্ট। কারণ, Sexual orientation কোনোদিন পাল্টানো সম্ভব নয়। আর প্রাকৃতিক Orientation কিন্তু Homosexuality নয়; বরং স্বাভাবিক Heterosexuality(বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ)। এ ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞান এতটুকু ছাড় দিতে রাজি না। বিজ্ঞান খুব ভালোভাবে Orientation এবং Conduct এর পার্থক্য বোঝে। Sexual Conduct মানুষের ইচ্ছা এবং পরিবেশ নির্ভর, জিন নির্ভর নয়। তাই Conduct-কে Orientation বলাটা কিন্তু একটি বৈজ্ঞানিক ভুল। অতএব, ‘কাউকে Sexual Orientation অনুযায়ী বিচার করা ঠিক না’ – জাতীয় কথাটাই একটি অপবিজ্ঞান এবং রাজনৈতিক কুপ্রচেষ্টা। সমকাম যে প্রাকৃতিক না এর একটা সহজ উদাহরণ হলো, আইডেন্টিকাল যমজ সন্তান। শতকরা ১০০-এর মধ্যে ১০০ বারই তাদের দুইজনেরই হয় Homosexual হবার কথা আর নাহয় Heterosexual। কিন্তু  SSA বিষয়ক গবেষণা বলে দিচ্ছে যে যমজদের একজন যদি সমকামী হয় তবে প্রতি ১০ বারের মধ্যে ৯ বারই অপরজন সমকামী নয়। অথচ যমজ কিন্তু জিনগতভাবে অভিন্ন হয়। তাহলে একই জিনের দুইজন দুই রকম কীভাবে হয়? বিজ্ঞান বুঝতে হলে Gender-এর রাজনীতি বাদ দিয়ে Biological Sex এর দিকেও ধাবিত হতে হবে।

তাহলে প্রাকৃতিকও না, ভালোও না। না ধর্মীয় কোনো ভিত্তি আছে, না বৈজ্ঞানিক স্বচ্ছতা। কথা এখানেই শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু, অপরাধীরা হয় বিকৃত মস্তিষ্কের। তাই তার কাজের বৈধতার সংজ্ঞা সে নিজেই তৈরি করে নেয়। এই প্রসঙ্গে তাই খুব সাধারণ দাবি হচ্ছে, ‘সে তো মানুষের কোনো ক্ষতি করছে না। এটা তার ব্যক্তিগত প্রেফারেন্স’।

ব্যক্তিগত পছন্দের দাবি যদি মেনে নিতে হয় তাহলে একজন মাদকাসক্তকেও কাল থেকে আর কিচ্ছুটি বলা যাবে না। সকল মাদক বিরোধী প্রচারণা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং ব্যক্তি অধিকার রক্ষার স্বার্থে স্বাধীন মাদক গ্রহণ আইন পাশ করতে হবে। কারণ সে তো অন্যের কোনো ক্ষতি করছে না। নিজের মতো মাদক নিলে নিক না, সঙ্গী হিসেবে তো এখনো সে বেশ! ব্যক্তিগত প্রেফারেন্স বলে কথা! কিন্তু আমাদের সাবজেক্ট এখনও তার অপরাধের বৈধতার জন্য আবার মাথা নাড়বে, ‘এটা তো সে তার ক্ষতি করছে। তাকে তো বাঁধা দিতে হবে।’

অথচ একটু আগেও দাবি ছিল শুধু অন্যের ক্ষতি নিয়ে। বেশ, এখন এটাও যদি মেনে নিতে হয় তাহলে ক্ষতির তালিকায় ‘মানসিক’ অধ্যায়টাকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। কারণ সে মাদকের ফলে তৈরি কেবল শারীরিক অপ্রাকৃতিক ফলাফলকেই দোষ দিচ্ছে। মানসিক অপ্রকৃতস্থতা জায়গা পাচ্ছে না। অর্থাৎ মানসিক অপ্রকৃতস্থতা (বিকৃতি) তার কাছে ক্ষতির বলে মনে হচ্ছে না। আবার শুধু শারীরিক প্রসঙ্গে শুধুমাত্র Unnatural Sexual Offence এর কারণে সৃষ্ট রোগগুলোকেও সে কেন জানি উপেক্ষা করে চলে যেতে চাইছে। এইচআইভি, সিফিলিসের মতো মরণ ব্যাধি ছড়ানো তার কাছে কোনো ক্ষতিই মনে হচ্ছে না। তাহলে, এটাকে কি আসলে বিজ্ঞান মনস্কতা বলে নাকি গণস্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন? তাই  ‘কারো ক্ষতি তো করছে না’ জাতীয় কুযুক্তি আসলে বিজ্ঞানের কাছেও টেকে না।

কিন্তু এত কিছুর পরেও অপরাধী শেষ প্রশ্নটা আনতে পারেন যে উপরোক্ত জিন বিষয়ক গবেষণায় সমকাম যে অপ্রাকৃতিক এই বিষয়ক কিছুই তো উল্লেখ নাই। তাহলে ধর্মীয়-সামাজিক আলোচনা করে ভ্রান্তি ছড়াবার কী দরকার?

আমিও সেটাই বলি। ঐ গবেষণায় সমকামের অপ্রাকৃতিকতা নিয়ে কিছু বলা নেই। কিন্তু সমকাম যে প্রাকৃতিক এটাও বলা নাই। কারণ এই গবেষণার একটি মূল লক্ষ্যই ছিল সমকামীদের বহুল প্রচলিত সমকামের পিছে ‘গে-জিনের উপস্থিতি’ – এই দাবিটির সত্যতা যাচাই করা। আর গবেষণার ফলাফলস্বরূপ সেই দাবি আপাতত রূপকথা! আর সমকাম প্রাকৃতিক না অপ্রাকৃতিক সেটার স্বরূপ চিকিৎসা বিজ্ঞান পেশ করে দিয়েছে। তাহলে বিষয়টা যদি জিনগত না হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা পরিবেশ আর সঙ্গের ফলে সৃষ্ট! ঠিক মাদকের মতো। সমকামকে যদি কেউ নিঃসৃত হরমোনের উদাহরণ দিয়ে জায়েজ ঘোষনা করতে চায় তাহলে মাদকও জায়েজ। কারণ মাদক গ্রহণের সময় ডোপামিন, সেরোটিন, করসিটল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে যা মাদককে করে তোলে আনন্দঘন। মাদকাসক্ত ব্যক্তি যখন মাদক পায় না তখনও উভ্রান্ত হয়ে ওঠে এই হরমোনের কারণেই। তার কাছে তখন সেটাই খুবই ‘প্রাকৃতিক’ এবং ব্যক্তিগত ‘অধিকার’। কি? বিবেক কিছু বলে?

আমরা মাদকসেবনকে কোনো উদারতার চোখে দেখি না। জন্মের পর থেকেই কেউ প্রাকৃতিকভাবে মাদকসেবনকারী হয় না। হয় পরিবেশ, সঙ্গ এবং সুযোগের অবসরে। আজকে যদি আমার এলাকার মাদকাসক্তকে উদারতা দেখাই তাহলে আমি কালকের জন্য আমার ছোট ভাই-বোন, সন্তানদেরকে একটি মাদক বান্ধব পরিবেশের জন্য ছেড়ে যাচ্ছি। তারা জন্মাবে সুস্থ হয়ে কিন্তু পরিবেশ যে তার স্বভাবকে বিকৃত করে দিবে না তার নিশ্চয়তা কী? আজকে অক্সিজেন ছাড়া সে বাঁচতে পারছে না, কাল সিগারেট-গাঁজা-মদ-কোকেন ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না। এরপর দাবি করবে এগুলোই তার অক্সিজেন। একইরকমভাবে সমকামিতাও না কোনো প্রাকৃতিক বিষয় আর না-ই উদারতার চোখে দেখার বিষয়। ‘সে তো কারো ক্ষতি করছে না’- এটা ব্যাক ফায়ার করতে খুব বেশিদিন লাগবে না। পরিবেশ ছাড়া মাদক যেমন গড়ে উঠতে পারে না, তেমনি পারে না সমকাম।

অথচ বছর ত্রিশ-চল্লিশ আগেও মানসিক রোগ গবেষকরা সমকামকে প্রশ্রয় দিত না। ১৯৭৭ সালেও WHO এটাকে রোগ(ICD-9) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। একমাত্র ১৯৯০ সালে এসে তারা এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া শুরু  করে।  এর মাঝে এমন কী হলো যে মাত্র ত্রিশ বছরের আগের সব কিছু কলিযুগে পড়ে গেল? আজ অবধি American Psychological Association বলে,

‘There is no consensus among scientists about the exact reasons that an individual develops a heterosexual, bisexual, gay, or lesbian orientation…no findings have emerged that permit scientists to conclude that sexual orientation is determined by any particular factor or factors. Many think that nature and nurture both play complex roles.’

তাই এখানে চলে আসবে রাজনীতি প্রসঙ্গ, যেখানে জায়েজ-নাজায়েজের মানদণ্ড ন্যায্য-অন্যায্য না; বরং অধিকাংশের সম্মতি। মদও এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে হারাম ছিল। কিন্তু এখন? ধর্ম কী বলে মদের ব্যাপারে? বিজ্ঞান কী বলে? কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে? তাহলে অপরাধীদের স্বভাবের ব্যাপারে কী বোঝা গেল? সমকাম একটি নব্য পশ্চিমা রাজনৈতিক অপচেষ্টা মাত্র। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ এবং সংস্কৃতি গবেষণার প্রভাষক লিসা ডুগান এবং সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন আইনের প্রভাষক ন্যান হান্টার বলেন,

‘The work of lesbian and gay historians has also demonstrated that human sexuality is not a natural, timeless “given”, but is historically shaped and politically regulated.’

তারা আরো বলেন,

‘Lesbian and gay historians have asked questions about the origins of gay liberation and lesbian feminism & have come up with some surprising answers. Rather than finding a silent, oppressed, gay minority in all times and all places, historians have discovered that gay identity is a recent Western, historical construction.’

শুধুমাত্র বিজ্ঞানের উপর আমরা ঈমান আনি না। কারণ বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল। তাই ফাইনাল এক্যুরেসি বিজ্ঞানের পক্ষে কোনোদিনও ধারণ করা সম্ভব না। আর এমন দুর্বল জিনিসের উপর কোনো সত্যবাদির এক তরফা বিশ্বাস থাকতে পারে না। আপনি যদি একশত বছর আগে মৃত কোনো তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্ককে আজকে উঠিয়ে তার বিজ্ঞান বলতে বলেন, তাহলে আজকের বিজ্ঞান মনস্করা তাদেরই ভাইদের সেই রূপকথার গল্পগুলো শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে পারে।

যেমন এই গে-জিনের উপকথা ডাল-পালা মেলে সেই ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানি ডিন হ্যামারের একটি জিন বিষয়ক গবেষণা থেকে। কোনো প্রমাণ তখন আসেনি, কোনো দলিলই ছিল না। কিন্তু অপরাধীরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় মিডিয়া একটা ‘ধারণাকে’ রীতিমত একটি অকাট্য দলিল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রায়। অথচ আজকে ২০১৯ এ এসে অবশেষে বিজ্ঞান ধোঁয়াশা কাটিয়ে সত্যের দিক এক ধাপ এগোতে পারল! অথচ মাঝখানে কেটে গেল ছাব্বিশটি বছর! এতটাই সাংঘর্ষিক হতে পারে শুধুমাত্র বিজ্ঞান কেন্দ্রিক আক্বীদা।

ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হলো? অথচ যখন সমকাম রোগ বলে স্বীকৃত ছিল তখনও মুসলিম সমকামকে রোগই ভাবত, যখন এটাকে স্বাভাবিক বলে প্রোপাগেট করা হলো তখনও মুসলিম একই আদর্শে বিশ্বাস করে। ১৯৯৩ তে গে-জিন প্রসঙ্গে মুসলিম যা বিশ্বাস করত ২০১৯ এও একই বিশ্বাস করে। কারণ সত্য তাদের হাতের মুঠোয়। এরচেয়ে নিশ্চিত আর ইনসাফপূর্ণ জীবন আর কী হতে পারে? এখানেই নিহিত স্রষ্টা থাকা না থাকার পার্থক্য। ঐশী জ্ঞান কোনোদিন পরিবর্তশীল না এবং একই সাথে অকাট্য! তাই একজন মুসলিম ঠিক ততটুকুই বিশ্বাস করে যতটুকু ইসলামের সাথে মিলে যায়। বিজ্ঞানের সম্পূর্ণটাই ইসলামের সাথে মিলে যেত যদি তারা সমাধানের ব্যাপারে আল্লাহকে একটা ‘অপশন’ হিসেবে নিত। কিন্তু না, বিজ্ঞান কেবল পার্থিব সমাধানই চায়। কোনোকিছু তাই পার্থিবভাবে না মিললেও, তাদের জ্ঞানের বাইরে গেলেও তারা স্রষ্টার দিকে যাবে না। এটাকে কী নিরপেক্ষতা বলে নাকি অন্ধবিশ্বাস? তারা শুধুমাত্র একটা ‘ধারণার’ উপর সাময়িক বস্তুগত মতবাদ তৈরি করবে। তাই বিজ্ঞান নিরপেক্ষ নয়। সত্যান্বেষীর ঈমানও তাই কেবল এর উপর নির্ভর করে না।

কিন্তু যারা বিজ্ঞানকে ইলাহ হিসেবে মান্য করে তারা কেন সমকাম, পশুকাম, মদ ইত্যাদি প্রসঙ্গে নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়? এটা কিন্তু অনুচিত। কিন্তু অপরাধী তো উচিৎ-অনুচিত বুঝবে না। মাদকাসক্ত মাদক ছাড়বে না, মদখোর এলকোহল বন্ধ করবে না। সমকাম সমর্থকও তাই বিজ্ঞান, ধর্ম, ন্যায়-অন্যায়ের অধ্যায় শুনবে না। অথচ একই সাথে তাদের সমকাম এবং বিবর্তনবাদে বিশ্বাসও অযৌক্তিক। একটিতে বিশ্বাস আরেকটিকে উড়িয়ে দেয়। কারণ ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ অনুযায়ী সমকামীরা ‘Survival of the Fittest’-এর প্রথম ধাপও পার করে না। একটি দ্বীপে যদি একশ কোটি সমকামীও থাকে, তারপরেও মাত্র এক প্রজন্মের ব্যবধানে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এর উপর এদের অধিকাংশের মৃত্যুও ঘটবে অস্বাভাবিকভাবে। কারণ ঐ যে Unnatural Sexual Offense এবং মরণব্যাধির আবাসস্থল।

একটি ১০০ পাতার বইয়ের মাত্র ৪ পাতা উল্টিয়েই কি আমরা উপসংহারে পৌঁছে গেছি বলে দাবি করতে পারি? সেখানে যে বিজ্ঞান এই মহাবিশ্বের মাত্র ৪% আবিষ্কার করেছে, এর উপর আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে বসে আছি। আদৌ কি এটি যৌক্তিক কিছু প্রিয় সুধী?

অনেক বিরাট একটি প্রসঙ্গ। অনেক তর্ক ইচ্ছা করেই আনিনি। এতে তর্কই ভালো হত কিন্তু আমার কথা নয়। সামান্য তর্কে জিততে আমাকে আমার রব পাঠাননি প্রিয়। নিজেকে এবং নিজের চোখ যতদূর যায় তাদেরকে ঐ জ্বলতে থাকা আগুন থেকে বাঁচিয়ে একসাথে এক জান্নাতে থাকতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই এখনও অনেক মানব মনে ইনসাফ আর সত্যের জন্য জায়গা বাকি আছে। তাই আমার জবানে যতটুকু হয়, আমি আপনাদের কাছে বিনীত হয়ে নিজের অন্তরের নূরকে প্রজ্বলিত করার প্রতি আহ্বান জানাই। আপনি মুসলিম-অমুসলিম, সমকামী না সাধারণ তা জানি না। এই শরীরে এখনো প্রাণ আছে। আমার দাওয়াতটুকু তাই আপনার কাছে পৌঁছে দিলাম।

এই দুনিয়ার বেইনসাফী চিন্তার জালে আটকা পড়বেন না। আল্লাহ আপনাকে ফিরে আসার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী বোধ দিয়েছেন। আল্লাহ জাতির পর জাতি ধ্বংস করে দিয়েছেন শুধু এই সমকামের অপরাধে। একটু সেই মহাসত্যের কিছু পাতা উল্টান প্রিয় ভাই। মনে পড়ে লুত ইবনে হারুনের(আ) কওমের কথা? পার্থিব উৎকর্ষতা তাদেরকে অন্ধত্বের এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে তারা বিবেক বিসর্জন দিয়ে সমকামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। স্পষ্ট সতর্ককারী প্রেরণের পরেও তারা তাদের ভ্রান্তি আর বিকৃতিকেই সভ্যতা বলে আঁকড়ে ধরল। আল্লাহ তাদের কী বলেছিলেন?

‘তোমরা কাম ইচ্ছা পূরণের জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন কর; বরং তোমরা তো এমন এক সম্প্রদায়, যারা (সভ্যতা ও মানবতার) সীমালঙ্ঘন করে ফেলেছ।’ [সূরা আরাফ: ৮১]

আল্লাহ বলছেন এমন এক সম্প্রদায় যারা সভ্যতা ও মানবতার সীমালঙ্ঘনকারী। অথচ হাজার হাজার বছরের আগের সেই জাহিলিয়াত আর পশ্চাৎপদতাকে আজ আমরা ‘প্রগতি’ বলি!

কী পরিণতি ছিল তাদের? মৃত সাগর চোখে পড়ে?

‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম…’ [সূরা হুদ: ৮২]

‘এরপর আমি তাদের উপর ভীষণভাবে (প্রস্তর) বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। লক্ষ করে দেখ, সেই পাপাচারীদের পরিণতি কেমন হয়েছিল!’ [সূরা আরাফ: ৮৪]

আজকে আমরা কাদের সমর্থন করে যাচ্ছি? কাদের জন্য উদারতা প্রদর্শন করছি?


‘এরপর আমি লুত ও তার পরিবারবর্গকে সেই জনপদ থেকে উদ্ধার করলাম, তবে তার স্ত্রী ছাড়া। তার স্ত্রী ছিল পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ [সূরা আরাফ: ৮৩]

ছবিটা দেখছেন? নিদর্শনের জন্য আল্লাহ কোনো সমকামীকে রেখে যাননি। তাদের তিনি সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিদর্শন হিসেবে রেখে দিয়েছেন একজন সমকাম সমর্থককে। লূত নবীর(আ) স্ত্রীকে, যে নিজে তো সমকামী ছিল না কিন্তু সমকামীদের প্রতি তার ছিল গভীর উদারতা আর ভালোবাসা। নিজ স্বার্থে তৈরি ‘মুক্তচিন্তা’ আর ‘ব্যক্তি স্বাধীনতার’ বর্বর সংজ্ঞা। এবার নিজেদের অবস্থান কোথায় নিজেরাই বুঝি নিই।

‘…এই সীমা লংঘনকারীদের কার্যকলাপ তাদের কাছে এইরূপই পছন্দনীয় মনে হয়।’ [সূরা ইউনূস: ১২]

আমরা কি চাই আমাদেরই ভাই-বোনদের কেউ সেই প্রবঞ্চকদের সর্দার শয়তানের তুচ্ছতম প্রতারণায় প্রতারিত হয়ে তার রবের কাছে ফিরে যাক?

‘পুরুষ পুরুষের সাথে মিলিত হবে, আর নারী নারীর সাথে।'(কিয়ামাতের আগমন অনুধাবন প্রসঙ্গে) [তাবারানি]

কে বলে গেছেন? ১৪০০ বছর আগে জাহিলিয়াতের নিশানা মুছে দেওয়া এক সত্য নবী। এমন কোন বিষয় বাকি আছে যা তিনি আমাদেরকে বলে গেছেন আর তা বাস্তব হয়নি?

আমি তোমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির আশংকা করি, তা হচ্ছে কওমে লুতের জঘন্য কাজ।

অত:পর তিনি এই দুষ্কর্মে লিপ্তদেরকে এই বলে তিনবার হুশিয়ার করেন:

“কওমে লুতের দুষ্কর্ম যে করবে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।”’ [ইবনে মাজাহ, তিরমিযী]

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম।

ইসলাম হালাল করেছে কিন্তু তা শরীর ও মানসের জন্য ক্ষতিকর এমন নজির মেলে না। কারণ হালাল-হারামের অর্থই হচ্ছে একটা আমার জন্য উভয়দিক থেকেই কল্যাণকর, আরেকটি ক্ষতিকর। আর সেটা পরকালেরও বহু আগে এই ইহকালেই। বিজ্ঞান তো বিজ্ঞানের মতো পাল্টাতে থাকবে। কিন্তু যিনি এই মাটির দেহের স্রষ্টা, তাঁর চেয়ে বড় বিজ্ঞানী আর কে আছেন? কে আছেন তাঁর চেয়ে বড় সত্যবাদী?

‘…তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।’ [সূরা আন’আম: (১১৬)]

‘পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক(শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।

…নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য।’ [সূরা ফাতির]


 বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদনা: ডা. শামসুল আরেফীন, সহকারী সার্জন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়

তথ্যসূত্র ও গ্রন্থাবলি

1) No ‘Gay-gene’
https://www.nature.com/articles/d41586-019-02585-6
2) Dr. Shamsul Arefin, Ar Rijalu Bir Rijal
www.shorturl.at/msJY0
3) HIV epidemic has frequently been linked to homosexuality

https://en.wikipedia.org/wiki/HIV_and_men_who_have_sex_with_men
4) Unnatural act law and legal definition
https://definitions.uslegal.com/u/unnatural-act/
5) Gay and bisexual men’s health
https://www.cdc.gov/msmhealth/STD.htm
6) Hormones at work during addiction
https://www.recoveryfirst.org/blog/the-hormones-at-work-during-addiction-and-drug-rehab/
7) WHO’s recognition of homosexuality
shorturl.at/aoqsG
8) In a Q&A leaflet titled, “Answers to Your Questions For A Better Understanding of Sexual Orientation and Homosexuality.” http:// apa.org

9) Sex Wars: Sexual Dissent and Political Culture. (Routledge, 1995) p. 151-152.
10) Science only discovered 4% of the universe
https://home.cern/science/physics/early-universe
11) Nation of Lut(alaihis salam)
https://bn.wikipedia.org/wiki/লুত (ইসলাম)
12) Dead Sea: The punishment area
www.shorturl.at/sEN59
13) Wife of Lut(alaihis salam)
https://www.islamiclandmarks.com/jordan/wife-of-lut-as

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive