আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত,
রাসূল ﷺ বলেন, “যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় মসজিদে যাওয়া আসা করে, তার প্রত্যেকবার যাওয়া আসার সময় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি করে আবাস তৈরি করে দেন।” (রাসূলের চোখে দুনিয়া, পৃষ্ঠা -৩৩)
দেখুন, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি কতটা খুশি হন যখন সে মসজিদে যাওয়া আসা করে। তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। আমরা তো দুনিয়াতে একটি বাড়ি বানানোর জন্য কতই না কষ্ট করি। কিন্তু আমরা কি জানি এত কষ্ট করে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো কি না? কিন্তু আমরা আমাদের রব্ব এর ওয়াদার কথা বেমালুম ভুলে বসে আছি। তিনি আমাদের স্থায়ী বাসস্থান জান্নাতে খুব সহজে আমাদের আবাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ভাই, শুধু আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। কত সময়ই তো দুনিয়াবি ব্যস্ততায় কাটিয়ে দেই। অফিস, ভার্সিটির কাজ করতে করতে সালাতের টাইম হয়ে গেলে সময় বাঁচানোর জন্য বাসায় পড়ে নেই। কিন্তু একটু কি লক্ষ করে দেখেছেন যে, সময় কিন্তু সেইভাবে সেইভ হচ্ছে না? হয়তো আপনি বাসায় সালাত পড়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে সময়টা নষ্ট করে ফেলেছেন। আপনি যদি সালাত মসজিদে গিয়ে পড়ে আসেন, আপনার একটু কষ্ট হবে ধরলাম। কিন্তু আমার ভাই, এই সামান্য কষ্টের বিনিময় আপনার রব্ব উত্তম রূপে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেছেন,
“জামা’আতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি বৃদ্ধি পায়। কারণ, তোমাদের কেউ যদি ভালো করে উযু করে কেবল সালাতের উদ্দেশেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে, ততক্ষণ মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার জন্যে এ বলে দু’আ করেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন।’ যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, উযু ভেঙে যাওয়ার কোনো কাজ সেখানে না করে। (সহীহ বুখারি; আধুনিক প্রকাশনী, ৪৫৭; ইসলামী ফাউন্ডেশন, ৪৬৩)
হে আমার ভাই, আপনি বুঝতে পারছেন কত বড় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসায় সালাত আদায় করে? আপনার ক্ষমার জন্য ফিরিশতাগণ দু’আ করুন, এটা আপনি চান না? ফিরিশতার দু’আ আপনার আমার সবার জন্য খুব বেশি দরকার। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন,
তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতারাও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে, যাতে তিনি অন্ধকার হতে তোমাদেরকে আলোকে আনয়ন করেন। আর তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি পরম দয়ালু। [সূরাহ আল-আহযাব (৩৩):৪৩]
উপরের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ এবং ফিরিশতাদের দু’আর কারণেই মানুষ হিদায়াত পায়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর সালাত কায়েম করো, যাকাত দান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। [সূরাহ আল-বাকারাহ (২):৪২]
ইমাম ইবনে কাসির উপরোক্ত আয়াতের শেষাংশের “রুকুকারীদের সাথে রুকু করো” এর তাফসীরে বলেন, এর অর্থ এই যে তারা যেন ভালো কাজে মুমিনদের সাথে অংশগ্রহণ করে। আর ওই কাজগুলোর মধ্যে সালাতই হল সর্বোত্তম। এই আয়াত দ্বারা অধিকাংশ ইমাম জামা’আতের সাথে সালাত ফরয হওয়ার দলিল গ্রহণ করেছেন (পুরুষদের জন্য)। সুতরাং, আমরা যারা নানা কাজের ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে জামা’আতে সালাত আদায় থেকে বিরত আছি, তাদের কি সময় হয়নি প্রভুর অনুগ্রহে শামিল হওয়ার?
আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা’আতের সাথে আদায় করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: মরতুজা আমিন
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।