“নিতু আজকে সত্যি সত্যি সেজেছে। তার গায়ে লাল সিল্কের শাড়ী-ঠোঁটে কড়া করে লাল লিপস্টিক দেয়া। শুভ্র কখনো নীতুর ঠোঁটে লিপস্টিক দেখেনি। … (নীতু বলল) তারপর ঠিক করলাম তুমি যখন আসবে তোমাকে বলব আমার শরীরটাই তো তোমার দরকার। বেশতো শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য তোমাকে দেব। তার বদলে মোটা কিছু অংকের টাকা তুমি আমাকে দাও। … শুভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিতু বলল, কথা বলছ না কেন? তুমি চাইলে আমি সব কাপড় খুলে ফেলতে পারি। ঘরেও কেউ নেই, তবুও তোমার কাছে যদি মনে হয় ঘর বেশী আলো তাহলে আমি জানালা বন্ধ করে দিতে পারি। শুভ্র কিছু বলার আগেই নীতু উঠে জানালা বন্ধ করে দিল। ঘর আবছা অন্ধকার হলো। নীতু বলল, অন্যদিকে তাকাও শুভ্র। নগ্ন হয়ে প্রেমিকের সামনে আসা কঠিন নয়। কিন্তু প্রেমিকের সামনে নগ্ন হওয়া বেশ কঠিন।” [১]
এই হল হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য চার্চার কিয়দাংশ, অথবা চুম্বকাংশও বলতে পারেন। এক সময় হুমায়ুন আহমেদ এর ‘ভক্ত’ ছিলাম। কিন্তু বুঝতাম এসব আমাকে বাস্তবে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, একটা কাল্পনিক জগতে নিয়ে যাচ্ছে, যেই জগতের কোন উদ্দেশ্য নেই, আছে শুধু ‘অহেতুক’ কল্পনা। লিখার মধ্যে ‘যৌনতা’ না থাকলে পাবলিকে বিশেষ করে ‘ইয়াং জেনারেশন’ তা খায় না। হুমায়ূন আহমেদ স্যাররা এটাকে ভালোভাবেই ব্যবহার করেছেন। এটা অবশ্য তার নিজের কথাই, তিনি উপন্যাস লিখতেন টাকা পয়সার জন্য।[২]
হিমু সিরিজ পড়ে অনেকেই মানসিক হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। হাসছেন? এটা বাস্তব, হুমায়ূন আহমেদের বই থেকেই নেয়া, তিনি অবশ্য এতে ‘গর্ববোধ’ করেছেন, তার লিখা পড়ে মানুষ ‘মানসিক রোগী’ হচ্ছে! আমরা কি বুঝতেছিনা, এসবের উদ্দেশ্য কী?
মক্কার কাফেররা যখন মানুষকে ‘কোরআন’ শোনানো থেকে ভিন্ন হুমকি ধুমকি দিয়েও কাজ হচ্ছিলনা; তখন তারা, পাশের পারস্যের রাজ-রাজড়াদের কাহিনী এনে শোনাতে লাগল, যাতে মানুষকে অলটারনেটিভ কিছু দেয়া যায়, ব্যস্ত রাখা যায়।
মক্কার এক মুশরিক ব্যবসায়ী নযর ইবনে হারেস বাণিজ্য ব্যপদেশে বিভিন্ন দেশে সফর করত। সে একবার পারস্য দেশ থেকে কিসরা প্রমুখ আজমী সম্রাটের ঐতিহাসিক কাহিনীর বই ক্রয় করে আনল এবং মক্কার মুশরিকদের বলল, “মুহাম্মদ তোমাদেরকে আদ, সামূদ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কিসসা-কাহিনী শোনায়। আমি তোমাদেরকে রুস্তম, ইসফেন্দিয়ার প্রমুখ পারস্য সম্রাটের সেরা কাহিনী শুনাই। মক্কার মুশরিকরা অত্যন্ত আগ্রহভরে তার আনীত কাহিনী শুনতে থাকে। কারণ এগুলোতে শিক্ষা বলতে কিছু ছিলনা, যা পালন করার শ্রম স্বীকার করতে হয়; বরং এগুলো ছিল চটকদার গল্প-গুচ্ছ। এর ফলে অনেক মুশরিক, যারা এর আগে কোরআনের অলৌকিকতা ও অদ্বিতীয়তার কারণে একে শোনার আগ্রহ রাখত এবং গোপনে শুনতও, তারাও কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ছু’তা পেয়ে গেল।[৩]
নযর ইবনে হারেসরা যা করেছিল তখন, হুমায়ূন আহমেদরা তা করে যাচ্ছে এখন। আমি বলছিনা তিনি ইচ্ছা কৃতভাবে করেছেন। হয়তোবা অনিচ্ছাকৃতভাবে, হয়তোবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, হয়তোবা নিজের ‘নফসে আম্মারা বিলসু’র’[৪] তাড়নায়, কিংবা একটা টিভিসেট[৫] কিনার জন্য কিংবা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য! এদের কথাই আল্লাহ্ কোরআনে বলেছেন, যুগে যুগে যারা নযর ইবনে হারেস দের মতো কাজ করবে তাদের কথা।
“একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” [আল কোরআন, ৩১ঃ৬]
শুরুর অশ্লীল কথা গুলো দেয়ার জন্য দুঃখিত! আসলে হুমায়ুন আহমেদদের লিখা না দিলে সম্ভব না, তারা কিভাবে অশ্লীলতা প্রচার করে ‘সাহিত্যের’ ছদ্মবেশে। দুঃখ আমাদের জন্যও আমরা কুরআন কে মানুষের কাছে ‘সঠিকভাবে’ পৌছাতে পারি নি হয়তোবা, অশ্লীল, যৌন সুড়সুড়ি দেয়া ‘সাহিত্যের’ বিপরীতে এমন ‘সাহিত্য জগত’ তৈরী করতে পারিনি কিংবা প্রচার করতে পারিনি যা আমাদের স্রষ্টার নিকটে নিয়ে যাবে, বাস্তব জীবনে ফিরিয়ে আনবে, কাল্পনিক জগতে নিবে না, সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে, হাসপাতালে ‘মানসিক রোগীতে’ রুপান্তর করবে না।
“যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন তোমরা জাননা।” [আল কুরআন, ২৪ঃ১৯]
প্রত্যেক অশ্লীল ‘শব্দের’ একটা ইফেক্ট আছে। এটা অনেকটা মাল্টিফ্লাইয়ার এর মতো, এক থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে, একসময় সমাজে, একসময় এই অশ্লীলতাই গণ্য হয় ‘শ্লীলতা’ রুপে। যা হচ্ছে। প্রত্যেক ভালো কথারও একটা ইফেক্ট আছে, যা ছড়িয়ে পড়ে সমাজে, এক জন থেকে অন্যজনে।
“তুমি কি লক্ষ্য কর না আল্লাহ্ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? সৎবাক্যের তুলনা একটি উৎকৃষ্ট বৃক্ষ যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা উর্ধ্বে বিস্তৃত। যা প্রতি মুহূর্তে ফলদান করে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে এবং আল্লাহ্ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। কুবাক্যের তুলনা এক মন্দ বৃক্ষ যার মূল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।” [কুরআন, ১৪ঃ২৫-২৬]
আল্লাহ্ আমাদেরকে অশ্লীল বাক্য বলা, লিখা এবং প্রচার করা থেকে দূরে রাখুন। আমীন।
[১] হুমায়ূন আহমেদ, মেঘের ছায়া, পৃ ৮৬-৮৮
[২][৫] “এইসব দিনরাত্রি ধারাবাহিক নাটকটি প্রচার হওয়ার পর এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, এই ধারাবাহিকটি লিখার পিছনে আপনার মূল প্রেরণা কি ছিল? আমি বললাম, অর্থউপার্জন। আমার একটি রঙিন টিভি কেনার প্রয়োজন ছিল বলেই ধারাবাহিক নাটকটি লিখেছি।” (হুমায়ূন আহমেদ, বলপয়েন্ট, পৃঃ ৭৯)
[৩] তাফসীরে মা’রেফুল কোরআন, ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩
[৪] নফস আল আম্মারা বিল সু মানুষকে মন্দ কাজে প্রেরণা দেয় এবং মন্দ কাজকে ভালো কাজ হিসেবে দেখায়, মানুষ বুঝতেই পারেনা সে মন্দ কাজ করছে। “নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ (ইন্নান নাফসা লা আম্মারাতুন বিস সু) কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু” (আল কুরআন, ১২ঃ৫৩)। মুসলিম স্কলারদের মতে তিন ধরণের ‘নফস’ আছে, নফসে আম্মারা বিল সু এর মধ্যে একটি।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।