এক “বিশ্বাস করেন, আমি লিখতে পারি না।”
উপরের বাক্যটা নিঃসন্দেহে মিথ্যা। আপনাকে যতই বুঝাই না কেন আপনি আমার এই উপরের লেখাটা বিশ্বাস করবেন না।
কেন?
কারণ, বাক্যটা যে নিজেই নিজেকে মিথ্যে প্রমাণ করছে! এইরকম আরো অনেক কথা বা বাক্য বলা যায়। যেমন-
“আমি টাইপ করতে জানি না।”
“আমি বাংলা বুঝি না।”
আমি লিখতে পারি না কথাটা এজন্যেই ভুল, কারণ, কথাটা আমি লিখেছি। যেহেতু আমি লিখেছি কথাটা, তাই “আমি লিখতে পারি না” কথাটা সত্য নয়। শেষের দুইটা বাক্যের জন্যেও একই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য।
এই ধরণের কথাবার্তা বা বিবৃতিকে সোজা বাংলায় বলা যায় “আত্মঘাতী বিবৃতি”। যেহেতু এই কথা বা বিবৃতিগুলো নিজেই নিজের সত্যতার বিপক্ষে জলজ্যান্ত প্রমাণ, সেই হেতু এই “আত্মঘাতী বিবৃতি” নামকরণ।
দুই হিউম। ডেভিড হিউম। ভদ্রলোক একজন দার্শনিক ছিলেন। Atheist আর Agnosticরা উনার নাম জানুক আর না জানুক, উনার মতবাদ দ্বারা তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খুবই মুগ্ধ এবং প্রভাবিত। এই দার্শনিক ছিলেন একজন Empiricist, অর্থাৎ অভিজ্ঞতাবাদী। তিনি শুধু তা-ই সত্য বলে বিশ্বাস করতেন, যেটা সংজ্ঞা অনুযায়ীই সত্য, অথবা যেটা পাঁচ ইন্দ্রিয়ের যে কোনো একটা বা সবক’টা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায়, অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। তাঁর এই মত অনুযায়ী, যা কিছু সংজ্ঞা অনুযায়ী সত্য নয়, বা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, তা অবশ্যই বিভ্রান্ত, মিথ্যা, এবং অর্থহীন। এই কারণেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের আইডিয়াও বিভ্রান্ত, মিথ্যা এবং অর্থহীন, ফলে, বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কঠিন লাগছে একটু? দাঁড়ান সহজ করে বলি।
তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, কোনো কিছুকে অর্থপূর্ণ তথা সত্য হতে হলে নিচের দু’টো শর্তের যে কোনো একটা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এই দু’টো শর্তকে বলা হয় The Principle of Empirical Verifiability. শর্ত দু’টো হচ্ছে-
১. সত্য বলে যেটাকে দাবী করা হচ্ছে, সেটা অবশ্যই গাণিতিক সমীকরণ বা সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত হতে হবে। যেমনঃ ১০+২=১২ অথবা প্রতিটি চতুর্ভুজের চারটি বাহু আছে।
অথবা,
২. যেটাকে সত্য বলে দাবী করা হচ্ছে সেটাকে অবশ্যই একটা ইন্দ্রিয় অথবা পাঁচটা ইন্দ্রিয় দ্বারাই পর্যবেক্ষণ কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষাযোগ্য হতে হবে।
উপরের দু’টো দাবীর যে কোনো একটা পূরণ না করতে পারলে তা সত্য নয়।
উপরে বর্ণিত ডেভিড হিউমের দু’টো শর্ত Atheistদের খুবই পছন্দ। তারা এই দু’টো শর্ত কপচে দিয়ে বলে, “অতএব, ঈশ্বর সত্য নয়। তাই আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না।”
তিন “আত্মঘাতী বিবৃতি”র কথা মনে আছে?
মনে না থাকলে আরেকবার পড়ে আসুন।
এইবার চিন্তা করে নিজেই বের করে ফেলুন কেন Atheist (or skeptic, or agnostic)দের সত্য নির্ণয়ের শর্ত দু’টো “আত্মঘাতী বিবৃতি”র পর্যায়ে পড়ে যায়!
নিজে নিজেই বের করে ফেলুন।
এইটুকু মাথা খাটানোর দরকার আছে।
এই লেখার পরবর্তী অংশ আর পড়ার দরকার নেই।
বিদায়।
চার যেহেতু, আপনি এই অংশে চলে এসেছেন, এবং লজ্জা লজ্জা মুখে এখনো এই লেখাটা পড়েই যাচ্ছেন, তার মানে দাঁড়াচ্ছে আপনি এখনও নিশ্চিত নন যে হিউম সাহেবের কথাগুলো কেনো “আত্মঘাতী বিবৃতি”র অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে সত্য নয় তথা নিজেরাই ভুল।
ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আসুন, আলোকিত হই।
হিউমের দাবী (অর্থাৎ The Principle of Empirical Verifiability) অনুযায়ী কোনো আইডিয়া বা বক্তব্য যদি গাণিতিক সমীকরণ বা সংজ্ঞানুযায়ী সত্য না হয়, অথবা ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা না যায়, তাহলে তা অবশ্যই সত্য নয়, অর্থাৎ মিথ্যা! ফলে, সেটা আর বিশ্বাস করবার দরকার নেই।
যেহেতু The Principle of Empirical Verifiability নিজেই সত্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত নয় (কোনো গাণিতিক সমীকরণ দিয়েও নয়, গাণিতিক সংজ্ঞানুযায়ীও নয়), আবার ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাযোগ্যও নয়, ফলে The Principle of Empirical Verifiability নিজেই সত্য নয়, অর্থাৎ মিথ্যা। ফলে, The Principle of Empirical Verifiability বিশ্বাস করবার দরকার নেই।
[I Don’t Have Enough Faith to be an Atheist বই হতে অনুপ্রাণিত]
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।