লাইব্রেরীর পাশ দিয়ে আসছিলাম, ক্রিস্টানদের একটা গ্রুপ লিফলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে লেখা ‘আমাদের কাছেই আছে শান্তি’। পড়ে একটু মুচকি হাসলাম। শান্তি পাওয়ার জন্য আমাদের ব্যাকুলতাটা এতটাই তীব্র যে এটা পাওয়ার কথা সবাই তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে।
এই ‘শান্তির’ কন্সেপ্টটা ইসলামের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা মুসলিমরা যখন একজন আরেকজনকে সম্ভাষণ জানাই তখন প্রথমেই বলে থাকি আল্লাহ আপনার উপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমরা বলে থাকি ইসলাম শান্তির ধর্ম, দাবী করি ইসলাম মেনে চললে জীবনে শান্তি অবধারিত।
কিন্তু চারপাশে তাকালে তা কি দেখতে পাই আমরা?
উত্তর মনে হয় এক কথায় না। চারদিকে কান পাতলেই আমরা শুনতে পাই তীব্র হাহাকার, শান্তির খোঁজে অসংখ্য ডুবন্ত মানুষ খড়কুঁটো ভেবে যা পাচ্ছেন তাকেই আঁকড়ে ধরছেন। এমন একটা খড়কুঁটো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘কোয়ান্টাম মেথড’। আজকে আমরা কুরআন সুন্নাহর আলোকে এটাকে একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।[1]
কোয়ান্টাম মেথড আসলে কী
এককথায় এটা মেডিটেশন বা ধ্যানের টেকনিক। তাদের ভাষায় আশ্রম ও খানকার চৌহদ্দি থেকে বের করে ধ্যানকে গণমানুষের আত্মউন্নয়ন ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে প্রয়োগ করাই উনাদের উদ্দেশ্য।
আমরা হয়তো শুনে এসেছি যে মুনি ঋষি বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা ধ্যান করে নানা অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করতেন। কোয়ান্টাম মেথড এই প্রক্রিয়াটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। তাদের কথা হল সকল মানুষের মাঝেই অপার সম্ভাবনা আছে, সব মানুষই মেডিটেশন করে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। মেডিটেশন করে কী কী উপকার পেয়েছে এহেন কেস স্টাডির বিশাল লিস্ট ওদের ওয়েব সাইটে গেলে পাওয়া যায়। তাদের বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে-
- মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে।
- মেডিটেশনের পথ ধরেই আপনি অতিক্রম করতে পারবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা। দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে কাজ করছে স্পন্দন ও নিয়ম যা মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেডিশনের মাধ্যমে।
- মানুষের ব্রেন একটা কম্পিঊটারের মত। এটা সকল প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক। আর ব্রেনকে সুসংহতভাবে ব্যবহার করার নেপথ্য নায়ক হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি।
- মেডিটেশনের বিভিন্ন লেভেল রয়েছে। বিভিন্ন লেভেল ব্রেনের ওয়েভ প্যাটার্ণের সাথে মিলে যায়। যেমন মেডিটেশনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘শিথিলায়ন’[2] যার মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভকে আলফা লেভেলে নিয়ে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি করা হয়।
- থিটা লেভেল অনেক উচ্চস্তরের লেভেল। তাদের দাবী মেডিটেশনকালে সাধকরা এই স্তরে প্রবেশ করেই মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন। এর পরবর্তী লেভেল-ডেল্টাতে দরবেশ ঋষিরা এই স্তরেও সজাগ থাকেন আবার মহাচৈতন্যে লীনও হতে পারেন। [3]এই মহাচৈতন্যের সংজ্ঞা বইটির কোথাও সুস্পষ্টভাবে দেয়া নেই।
ইসলামের দৃষ্টিতে কোয়ান্টাম
মেডিটেশনের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
উপরে আমরা মেডিটেশনের ব্যাপারে যা বললাম তা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে এখানে মানুষকেই প্রকারান্তরে সকল ক্ষমতার উৎস ধরা হচ্ছে। মেডিটেশন একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের উপর এমন লেভেলের নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে যে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ‘মন ছবি’ টেকনিকটার কথা। বইতে উল্লেখিত নিচের ঘটনাটা একটু দেখি-
এক ইঞ্জিনিয়ার। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার মনছবি দেখতে লাগল। ডিভি ভিসা পেয়ে গেল। ভিসা পাওয়ার পর মনছবি দেখতে লাগল সমমানের চাকরির, যাতে নিজের প্রকৌশল জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন। দেশে তিনি কাজ করতেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দেড় মাসের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠানে আগের চেয়েও দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি হয়ে গেল তার। [4]
আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে মনের স্বাধীন শক্তির এই ধারণাটি ইসলামের শিক্ষার সাথে রীতিমত সাংঘর্ষিক। এভাবে নিজের ‘আমিত্ব’কে পরোক্ষভাবে ইলাহ/উপাস্য বানিয়ে দেয়া হয়। জৈবিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা বা স্থান-কালের ঊর্ধ্বে যেতে পারাও সম্ভব নয় মানুষের পক্ষে।
অন্তরের ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল “তাওয়াক্কুল” – যা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ওপর করা যাবে না। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তার ওপর এমন কোন ব্যাপারে তাওয়াক্কুল করে যা সংঘটনের ক্ষমতা তার নেই, তবে তা বড় শিরক হবে যা একজন ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডীর বাইরে নিয়ে যায়।
এছাড়াও এ সংক্রান্ত আরো একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মহাচেতনার সাথে বিলীন হয়ে যাওয়ার কনসেপ্টটা। এটা আসলে হিন্দু ধর্মের একটা কনসেপ্ট যেখানে মানুষকে ঈশ্বরের অংশ ভাবা হয় এবং জন্ম পুনর্জন্মের চক্র থেকে মানুষ মুক্তি পায় তখন তার আত্মা ব্রক্ষ্মের সাথে মিশে যায়। এটাকে তারা নির্বাণ বা ফানাফিল্লাহ বলে থাকে যেটার কথা কোয়ান্টামের বইটিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বেশ্বরবাদ কিংবা মানুষের ভিতর ঈশ্বরের অস্তিত্বের যে ইঙ্গিত এভাবে দেয়া হয়েছে – ইসলামের দৃষ্টিতে তা একাধারে ‘কুফর’ ও ‘শিরক’। ইসলামে আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন সত্ত্বা এবং তাঁর সাথে সৃষ্টির কোনো সাদৃশ্য নেই। [সূরা আশ-শূরা :১১]
তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে মনকে স্বাধীন শক্তি হিসেবে চিন্তা না করে আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা’লাকে যদি সকল ক্ষমতার উৎস ভাবা হয় তাহলে মেডিটেশনের মাধ্যমে কিছু কিছু টেকনিক শেখা যায় যা জীবনের কিছু ক্রিটিক্যাল মুহুর্তে আসলেই কাজে লাগে। যেমন যে কোনো Pre Natal কোর্সে কিছু Breathing Technique শিখানো হয় যা লেবার পেইনের প্রচণ্ড ব্যাথাকে মোকাবিলা করতে বা এইসময়ে কিছুটা হলেও রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করে।
মেডিটেশনের সাথে জড়িত আরো টেকনিক: কোয়ান্টা সংকেত ও কোয়ান্টা ভঙ্গী
মেডিটেশনের সময় ওরা আরো কিছু টেকনিক শিখায় যার মাঝে কোয়ান্টা সংকেত ও কোয়ান্টা ভঙ্গী অন্যতম।
কোয়ান্টা সংকেত
কোয়ান্টা সংকেত হল একই শব্দ অসংখ্যবার উচ্চারণ যা মনোদৈহিক স্পন্দন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ফলে মানুষ তার মনোদৈহিক শক্তি পুরোপুরি একাগ্রভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
কোয়ান্টা সংকেতের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য ইসলামেও বিভিন্ন বাক্য একাধিকবার বলাকে আমরা যিকির বলে থাকি যেটা একটা প্রতিষ্ঠিত ইবাদাত। আমরা মূলত করি পরকালের পুরষ্কারের আশায় তবে এটাও ঠিক যে তা মনোযোগ একীভূত করতে বা স্ট্রেস রিলিফে সাহায্য করে। তাই কোয়ান্টা সংকেত অনুমোদিত হবে নাকি সেটা নির্ভর করছে আমরা কোনো শব্দ পড়ছি তার উপর। আল্লাহ, ইয়াহু, ইয়া হক এসব অর্থহীণ শব্দ পড়ার কোনো মানে হয় না। ওম বা এই টাইপের অন্য ধর্মের শব্দ পড়া নিঃসন্দেহে নিষেধ।
কোয়ান্টা ভঙ্গি
কোয়ান্টা ভঙ্গি হল অভয়মুদ্রার আধুনিক নাম। বুদ্ধসহ প্রাচীন ঋষিদের ভাস্কর্যে আমরা সাধারণত হাতের যে ভঙ্গি দেখি, সেটাকেই অভয়মুদ্রা বলে। কোয়ান্টাম মেথডের বইটিতে তারা কোয়ান্টা ভঙ্গির[5] জ্যোতিষ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে- হাতের বুড়া আঙ্গুলের ক্ষেত্র হল শুক্র বা ভেনাসের ক্ষেত্র । আর তর্জনীর ক্ষেত্র হচ্ছে বৃহস্পতির ক্ষেত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানে শুক্র ও বৃহস্পতি কল্যাণ ও সাফল্যের প্রতীকরূপে গণ্য। আর মধ্যমার ক্ষেত্র শনির ক্ষেত্র রূপে পরিচিত। শনি বিলম্ব ও বাধার প্রতীক। প্রাচীন ঋষিরা এ কারণেই ভেনাস ও জুপিটারের প্রবৃদ্ধিকেই সংযুক্ত করেছেন, এর সাথে শনির প্রভাবকে যুক্ত করতে চাননি।
তারপর সেটার ইসলামীকরণের একটা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এটা বলে-কোয়ান্টা ভঙ্গি করে হাত সামনে এনে খেয়াল করলে দেখবেন হাতে আরবী আলিফ, লাম ও হে অর্থ্যাৎ আল্লাহু হয়ে আছে। অর্থ্যাৎ কোয়ান্টা ভঙ্গি করার সাথে সাথে আপনি প্রকারান্তরে স্রষ্টাকে স্মরণ করছেন।
কোয়ান্টা ভঙ্গির ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
কোয়ান্টা ভঙ্গীকে আল্লাহকে স্মরণ করার যে উপায় হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অভিনব একটি বিদ’আতের উদাহরণ। আল্লাহর স্মরণ বা যিকির ইসলামের একটি প্রতিষ্ঠিত ইবাদাত। তাই এর উৎস অবশ্যই ওহী হতে হবে। আর কোয়ান্টা ভঙ্গীর যে অ্যাস্ট্রোলজিকাল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে ইসলামে যে এটা পরিত্যাজ্য তা দিবালোকের মত পরিষ্কার। জ্যোতিষশাস্ত্র, রাশিচক্র এবং অনুরূপ ভ্রান্ত বিদ্যাগুলোর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থা ও অবস্থান দেখে কোন ঘটনা, ভাগ্য বা ভবিষ্যত নির্ণয় করা। এই বিদ্যাচর্চার দুটি তাওহীদ বিরোধী দিক রয়েছে:
প্রথমত এই ধারণা করা যে গ্রহ-নক্ষত্র মহাবিশ্বের ঘটনাবলীকে সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে, এই ধারণা মূলত রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শিরক করার সমতুল্য।
দ্বিতীয়ত গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান থেকে মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যত নির্ণয়ের চেষ্টা, যা কিনা আল্লাহ পাকের অদৃশ্যের জ্ঞানের একচ্ছত্র বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে অপরকে শরীক করার শামিল।
মেডিটেশনের পরবর্তী ধাপগুলো
আমরা আগেই বলেছি যে মেডিটেশনের একাধিক ধাপ রয়েছে। আমরা যে বইটি থেকে রেফারেন্স দিয়েছি সেখানে ধ্যানের প্রথম ধাপের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। পরবর্তীতে বাকি ধাপগুলোর ব্যাপারে শুধু আভাস দেয়া হয়েছে যাকে বলা হয়েছে অতিচেতনার পথে যাত্রা।
যারা কোয়ান্টাম এর গ্র্যাজুয়েট হন, তারা দেখা যায় আরো কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যেমন কমাণ্ড সেন্টার এবং অন্তর্গুরুর দেখা লাভ। নিচে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হল-
কমান্ড সেন্টার
কমান্ড সেন্টারকে তারা বলে মনের বাড়ির শক্তি ও কল্যাণ কেন্দ্র। তাদের ভাষায় মানব অস্তিত্বের যে অংশ স্থান কালে আবদ্ধ নয়, সে অংশ এই কমান্ড লেভেলে প্রকৃতির নেপথ্য নিয়ম ও স্পন্দনের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করে । যাকে তারা জীবনে কখনও দেখেননি, যার কথা জীবনে কখনও শোনেননি, শুধু তার নাম, বয়স ও ঠিকানা বলার সাথে সাথে তার এমন হুবহু বর্ণনা দিতে সক্ষম হন কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েটরা যে প্রশ্নকর্তা নিজেই অবাক হয়ে যান।
কমান্ড সেন্টারের প্রয়োগ
ছেলে কোলকাতায় গিয়েছে, যাওয়ার পরে ২ দিন কোন খবর নেই। বাবা কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েট, মাগরিবের নামাজ পড়ে মেডিটেশন কমান্ড সেন্টারে গিয়ে ছেলের বর্তমান অবস্থা দেখার চেষ্টা করতেই কোলকাতার একটি সিনেমা হলের গেট ভেসে এল। ছেলে সিনেমা হলের গেটে ঢুকছে। বাবা ছেলেকে তার উদ্বেগের কথা জানালেন। বললেন শিগগিরই ফোন করতে। [6]
কমান্ড সেন্টারের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
আল-কুরআন এবং হাদীসে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে গায়েবের জ্ঞান বা অদৃশ্যের জ্ঞান আল্লাহ পাকের একচ্ছত্র বৈশিষ্ট্য, এতে কারও কোন অংশীদারিত্ব নেই। গায়েবের জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে এমন সবকিছু যা মানুষের ইন্দ্রিয়সমূহের দ্বারা জানা যায় না। সেটা হতে পারে অতীতের ঘটনা, কিংবা ভবিষ্যতের ঘটনা কিংবা দূরত্বের কারণে মানুষের জ্ঞান থেকে অন্তরালে থাকা কিছু যেমন জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ পাক চাইলে তাঁর সৃষ্টির কোন অংশকে জানাতে পারেন, যেমন তিনি নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারফত আমাদেরকে জান্নাত জাহান্নামের বিবরণ জানিয়েছেন। তেমনি আল্লাহ পাক পৃথিবীতে মানুষের রিযিকের বিলিবন্টন সংক্রান্ত তথ্য ফেরেশতাগণের নিকট প্রকাশ করলে তাঁরা তা জানতে পারেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে নবী-রাসূল কিংবা ফেরেশতারা গায়েব জানেন বরং গায়েবের জ্ঞানের একাংশ আল্লাহ পাক তাদেরকে জানালে তবেই কেবল তারা তা জানতে পারে। আর তাই এটি ইসলামী আকীদার একটি অন্যতম মূলনীতি যে গায়েবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ পাকের বৈশিষ্ট্য, এতে কারো অংশীদার নেই।
কিন্তু কমাণ্ড সেন্টারের প্রয়োগ দেখলেই আমরা বুঝব তা মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দাবী করছে যখন সে গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী হয়।
অন্তর্গুরু
কোয়ান্টামের দাবী-আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হতে হলে একজন আলোকিত গুরুর কাছে বায়াত বা দীক্ষা প্রয়োজন। এছাড়া আধ্যাত্মিকতার সাধনা এক পিচ্ছিল পথ। যে কোন সময়ই পা পিছলে পাহাড় থেকে একেবারে গিরিখাতে পড়ে যেতে পারেন।কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করে সবকিছু ঠিক মত সাজানোর পর ধ্যানের বিশেষ স্তরে অন্তর্গুরুর আগমন ঘটে। অন্তর্গুরু প্রথমে সকল অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য ‘সাইকিক বর্ম প্রদান করেন যা অতীতের সকল অশুভ প্রভাব নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং ভবিষ্যতের এ ধরণের প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখে। অন্তর্গুরুকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হবে, তত সহজে আপনি তার দর্শন লাভ করবেন।[7]
অন্তর্গুরুর ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
ইসলামের কোন পুরোহিততন্ত্র (Priesthood) নেই – যা এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। পীরের মুরিদ হওয়ার কোন সুযোগ ইসলামে নেই বরং তা যে কিভাবে মানুষকে শিরকের দিকে ডাকে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা বোঝা মোটেও কঠিন নয়। কোয়ান্টাম মেথডের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও ভয়ংকর এই কারণে যে এখানে অন্তর্গুরু কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখেন যা শিরক হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখেনি।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
[1] এই লেখাটিতে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম মেথড সংক্রান্ত সকল তথ্য তাদের ওয়েবসাইট, লিফলেট এবং টেক্সটবুক (সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড – মহাজাতক, পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণঃ জানুয়ারী, ২০০০) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
[2] ‘শিথিলায়ন’ পুরোপুরি আয়ত্ত হলেই আপনি মনের শক্তিবলয় নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হাতে পাবেন। ধ্যানাবস্থায় মন হয় ত্রিকালদর্শী, চেতনা অতিক্রম করে সকল বস্তুগত সীমা। মনের এই ধ্যানাবস্থার শক্তিকে প্রয়োগ করেই প্রাচ্যের সাধক দরবেশ ঋষিরা একদিন আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ইচ্ছা করেছেন – ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন – মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা। এই চাবিকাঠি দিয়েই দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে তার সবটাকেই আপনি নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তুলতে পারবেন।’’ বইয়ের পৃঃ ৫৯
[3] বইয়ের পৃঃ ৫৮
[4] বইয়ের পৃঃ ১১৫
ওয়েবসাইটেও দেখলাম এক ব্যক্তি ধূমপান ছাড়তে পেরেছেন যখন মেডিটেশনের মাধ্যমে সিগারেটকে সাপের ছোবল হিসেবে দেখতে শিখেছেন। www.quantummethod.org.bd
[5] পৃঃ ১৬৩
[6] পৃঃ ২৪১
[7] পৃঃ ২৪৭
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।