بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
আল্লাহ (سبحانه و تعالى) সুরা মারইয়ামের (সুরা নং ১৯) ৮৮ নম্বর থেকে ৯২ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করেন-
▪ وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَٰنُ وَلَدًا (তারা বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।)
▪ لَّقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا (নিশ্চয় তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ।)
▪ تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا (হয় তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হবে।)
▪ أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدًا (এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে।)
▪ وَمَا يَنبَغِي لِلرَّحْمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا (অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়।)
এবং আল্লাহ (سبحانه و تعالى) সুরা ইখলাসে (সুরা নং ১১২) বলেন-
▪ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,)
▪ اللَّهُ الصَّمَدُ (আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,)
▪ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি)
▪ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ (এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।)
এখানে স্পষ্টত স্রস্টা কাউকে জন্ম দেননি (অর্থাৎ তিনি কারো জনক নন) এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি (অর্থাৎ কেউ তাঁর জনক নন)। অথচ সর্বচ্চ অন্যায় করা হয় এই বলে যে আল্লাহ সন্তান জন্ম দিছেন (نعوذ بالله)। জন্ম দান নিম্ন প্রাণী বৃত্তি যা স্রস্টার ধর্ম নয়।
খ্রিস্টান ধর্মমতে ঈসা (আঃ) এর জনক স্রস্টা (نعوذ بالله) এবং বড়দিন (ক্রিসমাস) তাঁর জন্মদিন হিসাবে উদযাপন করা হয়। এর মধ্যমে যেহেতু স্রস্টাকে সর্বোচ্চ অমর্যাদা করা হয় তাই এই উপলক্ষে খ্রিস্টানদের অভিবাদন শাশ্বত সত্যকে অস্বীকার করার শামিল।
ক্রিসমাস বা বড়দিন উদযাপন এর মত নিন্দনীয় কাজ করার মাধ্যমে বিষয়টিকে ভুলভাবে নেওয়া হয় যা এমনকি ঈসা (আঃ) এর শিক্ষা অনুযায়ী খ্রিস্টানদের প্রতি অসম্মান করার শামিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি পালনের মধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা, ঈসা (আঃ) এর শিক্ষা ও একই সাথে মুহাম্মাদ (সঃ) কে অবমাননা করা হয়। এবং এর কোনই যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
যদি আপনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’কে[১] সঠিক এবং যৌক্তিক মনে করেন তাহলে ক্রিসমাস নিয়ে সেখানে কি বলা আছে তা জানতে নিচের অংশটুকু পড়ুন।
“ক্রিসমাস(Christmas) শব্দটি পুরাতন ইংরেজি ভাষার Cristes maesse (Christ’s Mass) শব্দদ্বয় থেকে উদ্ভূত। খ্রীষ্টের (ঈসা আঃ) জন্মদিনের নির্দিষ্ট কোন ঐতিহ্য নেই। তৃতীয় শতাব্দীর খ্রিস্টান কর্ণগ্রাফাররা (যারা সময় সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন) বিশ্বাস করতেন এই পৃথিবীর সৃষ্টি বসন্ত বিষুবে/মহাবিষুবে হয়েছে, যার সময় ২৫ মার্চ হিসাবে গণনা করা হয়; তাই নতুন যীশুরুপী (ঈসা আঃ) ঈশ্বর এর অবতারন এবং তাঁর মৃত্যু ঠিক একই দিনে তাঁর জন্মের ৯ মাস পরে দক্ষিণায়ণে, ২৫ ডিসেম্বরে হয়েছে।”
“একটি রোমান বর্ষপঞ্জি অনুসারে, খ্রিস্টান ধর্মীও বড়দিনের (ক্রিসমাস) উৎসব ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে পালিত হয়েছে। বড়দিনের (ক্রিসমাস) উদযাপন কেন ২৫ ডিসেম্বরে করা শুরু হয়েছিল এর সুস্পষ্ট কারণ অনিশ্চিত, কিন্তু সর্বোচ্চ সম্ভব্য কারণ হল শুরুর দিকে খ্রিস্টানরা পৌত্তলিক রোমানদের উৎসব হিসেবে চিহ্নিত “অনধিকৃত সূর্যের জন্মদিন” উদযাপনের তারিখের সাথে মিলিয়ে তা (ক্রিসমাস) উদযাপনে ইচ্ছুক হয়েছিল। দক্ষিণায়ণে দিন যখন প্রলম্বিত হতে এবং সূর্য আকাশের উচ্চে আরোহণ করতে শুরু করে তখন এ উৎসব উদযাপিত হত। বড়দিনের (ক্রিসমাস) সাথে সংযুক্ত প্রথাগত রীতিনীতি পৌত্তলিকদের দক্ষিণায়নান্ত কৃষি ও সৌর ধর্মানুষ্ঠানের মত বিভিন্ন উৎস থেকে উন্নীত যার ফলশ্রুতিতে এই দিনে আকর্ষিকভাবে খ্রীষ্টের (ঈসা আঃ) জন্মদিন উদযাপন শুরু হয়। রোমান জগতে স্যাটারনালিয়া[২] উৎসব (১৭ ডিসেম্বর), ফুর্তি এবং উপহার বিনিময়ের সময় ছিল। এছাড়াও ২৫ ডিসেম্বর, ইরানের রহস্যময় ন্যায়পরায়ণতার সূর্য ঈশ্বর মিথ্রা’র[৩] জন্ম তারিখ হিসাবে গণ্য করা হত। রোমান নববর্ষে (১ জানুয়ারী) ঘর সবুজ পত্রপুঞ্জ এবং আলো দিয়ে সজ্জিত করা হত, এবং শিশু ও দরিদ্রদের উপহার দেওয়া হয়। জর্মান-ভাষাগোষ্ঠীয় উপজাতিরা যখন ফরাসী, ব্রিটেন ও মধ্য ইউরোপে অনুপ্রবেশ করে তখন এই ধর্মানুষ্ঠান জার্মান এবং সেল্টিকদের (আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আইল অফ ম্যান, ওয়েল্স্, কর্নওয়াল, ব্রতাইন)[৪] ইউল[৫] নামক কৃত্যানুষ্ঠানে যুক্ত হয়। খাবার, সাহচর্য, ধর্মানুষ্ঠানের কাঠের গুড়ি, কেক, শ্যামলিমা, দেবদারূ গাছ, উপহার, শুভেচ্ছা – এ সবকিছু এই উৎসব মরসুমের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। পৌত্তলিক ও খৃস্টান উভয়েই অগ্নি ও আলো’কে উষ্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী জীবনের প্রতীক হিসাবে শীতকালে উৎসবের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। ইউরোপীয় মধ্যযুগ থেকে চিরসবুজ বেঁচে থাকার প্রতীক হিসাবে বড়দিনে যুক্ত হয়েছে।” (এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা)
সুতরাং যে কোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন লোক বুঝতে পারবে, বড়দিন বা ক্রিসমাস উদযাপনের কোন সঠিক ভিত্তি নেই, না ঈসা (আঃ) বা তাঁর সত্য অনুগামী কেউ ক্রিসমাস উদযাপন করেছে, না ঈসা (আঃ) এর পরে কয়েক শত বছর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিজেদের খ্রিস্টান দাবি করে ক্রিসমাস উদযাপন করেছে।
তাই যদি সত্যিই আপনি ঈসা (আঃ) কে সম্মান করতে চান, যেটা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য, তাহলে পৌত্তলিকদের উৎসব এবং প্রথাসমূহ অনুকরণের মাধমে মিথ্যা উদ্ভাবিত কিছু ঘটনাকে উদযাপন করবেন না। বড়দিন বা ক্রিসমাস উদযাপনের মত বিষয়কে “সৃষ্টিকর্তা অথবা এমন কি ঈসা (আঃ) স্বয়ং নিজে অনুমোদন দিবেন, না এর তিরস্কার করবেন?”- সত্তিকার অর্থে আপনার কোনটি মনে হয়। যদি বলেন অনুমোদন দিবে, তাহলে সম্ভবত সত্য গ্রহণে আপনি আগ্রহী নন।
আমরা আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’আলার (যিনি এক, যার কোন অংশীদার বা সন্তান নেই, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের স্রস্টা) কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের সঠিক (সুপথ) এবং সততার পথে চালিত করেন।
[১] http://www.britannica.com/EBchecked/topic/117239/church-year/67664/Advent#toc67665 [আর্টিকেলটি পড়তে সর্বপ্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে নিবন্ধন করতে হবে।]
[২] http://en.wikipedia.org/wiki/Saturnalia
[৩] http://en.wikipedia.org/wiki/Mithra
[৪] http://en.wikipedia.org/wiki/Celtic_nations#Celtic_diaspora
[৫] http://en.wikipedia.org/wiki/Yule
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।