পর্ব ০১ | পর্ব ০৩

আজকের পর্বে আমি একদম সুনির্দিষ্ট করে পয়েন্ট আকারে বলবো আইন বিষয়ে পড়ে একজন মেয়ে কিভাবে বৃহত্তর পরিসরে অবদান রাখতে পারে। এখানে আবারো বলে রাখা ভালো যে, এটা আমার উর্বর মস্তিষ্কজাত চিন্তা, অনেক ডিসিপ্লিন নিয়েই আমার এরকম নিজস্ব চিন্তা আছে।

IIRT Arabic Intensive

আইন পেশা ছেলে ও মেয়েদের উভয়ের জন্য দারুণ একটা পেশা যার মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে অবদান রাখার বিশাল সুযোগ আছে। একটি রাষ্ট্রের জন্য ন্যায্য বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বলে বুঝানোর কিছু নেই। একটি জাতিকে ধ্বংসের জন্য আইন ও শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়াই যথেষ্ট- খুব সম্ভবত এটা লর্ড ক্লাইভের একটা উক্তি। তাই একজন মুসলিম একজন সৎ ও নিরপেক্ষ আইনজীবি, বিচারক হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

এত গেল একটা আদর্শ পরিস্থিতি। বর্তমান বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আমরা যেহেতু এখন মানব রচিত আইন ব্যবস্থার মাঝে বাস করছি তাই ইসলামপন্থীরা নানা ধরণের জুলুমের শিকার। প্রচলিত আইন ব্যবস্থার মাঝেই যতটুকু সম্ভব তাদেরকে ন্যায় বিচার দেয়াটা যেন সম্ভব হয় (অন্যায়ভাবে গ্রেফতার হলে ইত্যাদি) সেজন্য আমাদের প্রচুর প্র্যাক্টিসিং আইনজীবী দরকার যারা প্রচলিত সিস্টেমের ব্যাপারে খুবই দক্ষ।

কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে বর্তমানে কোর্টের যে পরিবেশ তা একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম মেয়ের জন্য মারাত্মক বৈরী। কিন্তু তা হলে কি একটা মেয়ে আইন নিয়ে পড়বে না?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি পড়বে, পড়া উচিৎ। আসুন দেখা যাক কিভাবে সে এই বিষয় নিয়ে পড়ে অবদান রাখতে পারে।

⬛ যখন একটা মেয়ে ‘আইন’ একটা শাস্ত্র হিসেবে পড়বে তখন সে শরীয়াহ আইন গুলোকে একটা অন্য আলোয় দেখার সুযোগ পাবে। আমরা খেয়াল করলে দেখবো যে ইসলাম নিয়ে যত আক্রমণ, বিতর্ক হয় সেগুলোর অধিকাংশেরই উৎস হচ্ছে শরীয়াহ আইন।

একটা খুব কমন উদাহরণ হচ্ছে- হিল্লা বিয়ের আইনটা। ছোট বেলায় দেখা নাটক সিনেমার একটা কমন দৃশ্য ছিলো যে স্বামী এসে ভাত চেয়েছে, বউ বলেছে ভাত হয় নাই, স্বামী রেগে গিয়ে “যাহ তোরে আমি তালাক্ব দিলাম বলে” তিন তালাক্ব দিয়ে দিলো। আর মেয়েটা “আল্লাগো” বলে একটা চিৎকার দিলো। তারপর তাদের হিল্লা বিয়ে হল ইত্যাদি নানা কিছু। আসলে কি তালাক্বের ব্যাপারটা এমন? IOU তে Fiqh of Marriage কোর্সে যখন বিয়ে এবং তালাক্বের নিয়ম বিস্তারিত পড়েছিলাম, আমার এত অবাক হয়েছিলাম যে বলার মত না! নিয়মটা কী, আর আমরা জানিটা কী!

এতো গেলো জাস্ট একটা উদাহরণ। আরো শত সহস্র দেয়া যায়। যেমন এটা খুব কমন কথা যে ইসলামে চোরের শাস্তি হাত কাটা। এটাকে বর্বর প্রথা হিসেবে আখ্যায়িত করে ইসলামকে পশ্চাৎপদ হিসেবে তুলে ধরা হয়। আমার মনে আছে যে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ বইটাতে কোনো বাচ্চা ছেলে গাছের নিচে পরে থাকা ফল না বলে কুড়িয়ে নিয়েছিল বলে তার হাত কেটে দেয়া হয়েছিল এমন কিছু ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে তাই?

আমাদের বিবিএ সিলেবাসে Business law একটা কোর্স ছিলো। সেখানে আমার প্রথম ‘আইন’ বিষয়টার সাথে পরিচয় হয়। তখন আমি সেখানে পড়েছিলাম যে কখনই কোনো একটা বিষয়ে ‘আইন বা শাস্তি অমুক’ এভাবে এক কথায় বলা যায় না। বিশেষ করে ‘ক্রিমিন্যাল ল’ এর ক্ষেত্রে। বিষয়টা জটিল এবং সূক্ষ্ম। যে কোনো কাজের শাস্তি অমুক সেটা বলার আগে কোন প্রেক্ষিতে, কোন শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এটার প্রয়োগ করা যাবে আর কখন যাবে না এরকম বহু কিছু বলা থাকে। ঠিক এই ব্যাপারটা ইসলামী আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পরে যখন IOU তে ইসলামী আইন ব্যবস্থার উপর কোর্স করেছি তখন এই হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগের শর্ত, পরিস্থিতি এরকম সব কিছু বিস্তারিত পড়েছি। যেমন একটা শর্ত হচ্ছে যে চুরিকৃত মালটার মূল্য ন্যুনতম চল্লিশ দিরহামের সমমানের হতে হবে। তাহলে এখন আপনারাই বলেন গাছের তলায় কুড়িয়ে পাওয়া ফলের ক্ষেত্রে এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে?

পরবর্তীতে আমি ইসলামী শাস্তি আইন নামে একটা বই পড়েছিলাম (কেউ আগ্রহী হলে এই লিংকে গিয়ে পড়তে পারেন http://www.islameralobd.com/2015/11/book-islamic-law.html যেখানে ইসলামের শাস্তি আইনের ব্যাপারগুলো অসাধারণ নৈপুণ্যের সাথে তুলে ধরা হয়েছিলো। বলাই বাহুল্য বইয়ের লেখক একজন আইনের অধ্যাপক।

তাই আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের এমন দক্ষ মানব সম্পদ দরকার যারা প্রচলিত আইন নিয়ে গভীরভাবে জানবে, সাথে শরীয়াহ আইন নিয়ে জানবে। তারপর ইসলামের তথাকথিত বিতর্কিত শরীয়াহ আইনগুলোর প্রজ্ঞা সাধারণ জনগণের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরবে প্রচলিত আইনের সাথে তুলনার মাধ্যমে।

কেউ যদি এমনিতে শুধু শরীয়াহ নিয়ে পড়ে তাহলে তার অ্যাপ্রোচ, আর যে প্রচলিত আইন নিয়ে পড়েছে, তারপর শরীয়াহ আইন নিয়ে পড়েছে তার অ্যাপ্রোচ স্বাভাবিকভাবেই আলাদা হবে। ২য় গ্রুপের অ্যাপ্রোচ তুলনামূলকভাবে বেশী Effective হবে বলে আমার কাছে মনে হয়। (আল্লাহই ভালো জানেন)।

⬛ যে ‘ল’ ফিল্ডটা নিয়ে পড়েছে সে খুব ভালো বুঝবে ফতওয়া এবং শরীয়াহর মাঝে পার্থক্য। আমার ইদানিং মনে হয় প্র্যাক্টিসিং মুসলিমদের মাঝে মহামারীর মত ছড়িয়ে যাওয়া একটা সমস্যা হল ফতওয়া এবং শরীয়াহর মাঝে পার্থক্য বুঝতে না পারা। ফতওয়া By definition একটা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট একজন মানুষকে দেয়া স্কলারের মতামত। এখন একজনকে দেয়া ফতওয়া আরেকজনের উপকারে লাগতে পারে ঠিকই, ঠিক যেমন আগে কোনো এক সময়ে কোনো কোর্টে দেয়া রায় পরবর্তীতে বিচার করার সময় আইনের একটা উৎস হতে পারে। কিন্তু সেটার সাথে তুলনা করে আজকে রায় দেয়ার সময় অবশ্যই সময়, পরিস্থিতির পরিবর্তন, সাথে আগের কেসের সাথে এই কেসের পার্থক্য বিবেচনা করতে হয়।একইভাবে একটি ফতওয়া আরেকজন মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে নাকি সেটা বুঝতে হলে চেক করতে হবে দুজন মানুষের পরিস্থিতি, সময়, দেশ ইত্যাদি একই নাকি। এগুলো চিন্তা না করেই আমরা একটা ফতোয়ার ওয়েবসাইট থেকে ফতওয়া কোট করে দিয়ে দেই। আমি নিজে Islam QA থেকে প্রচুর ফতওয়া উর্দ্ধৃতি দেই, কিন্তু সেটাকে ঐশী বাণীর মর্যাদা দেই না, মানে সেটা মন দিয়ে পড়ি এবং আমি যে পরিস্থিতিতে আছি আর প্রশ্নকর্তার পরিস্থিতির মাঝে বিশাল কোনো পার্থক্য আছে নাকি সেটা বোঝার চেষ্টা করি। ফতওয়া শপিং করছি নাকি সেটাও খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।

কো এডুকেশন নিয়ে Islam QA এর ফতওয়ার কথাই চিন্তা করুন। এখানে কিন্তু ছেলে এবং মেয়ের উভয়ের জন্যই কোএডুকেশনে পড়া হারাম বলা হয়েছে, তারপর বেশ কিছু ব্যতিক্রমও দেয়া হয়েছে। ( https://islamqa.info/en/45883 ) আমরা এই ব্যতিক্রম গুলার কথা বলিনা, আমরা এই বিধান শুধু মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেই এটা বলে যে ছেলেদের জন্য আয় করা ফরয। অথচ এই ব্যতিক্রমের কথা কিন্তু ফতয়াতে বলা নাই।

আমরা যদি এই ফতওয়াটার পক্ষে দেয়া শরীয়াতের দলীলগুলো চিন্তা করি তাহলে দেখবো এখানে Intermingling নিষেধ এমন প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ কো এডুকেশন তখনই হারাম হবে যখন সেটা ফ্রি মিক্সিং এর কারণ হবে। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য আমরা শুরুতেই তুলে ধরেছি।

Intermingling এর বিপক্ষে উপস্থাপিত প্রধান প্রমাণ সম্ভবত সেই হাদীসটি যেখানে বলা হয়েছে যে মেয়েরা ছেলেদের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদীসের ব্যাপারে আমার মনে কোনো ধরনের দ্বিধা, ক্ষোভ নাই আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার প্রায়ই মনে হয় যে এটা একটা misquoted হাদীস।  আকর্ষণীয় কণ্ঠে নন-মাহরামদের সাথে কথা না বলার নির্দেশ সরাসরি কুরআনে এসেছে। আমি বলছি স্বাভাবিক স্বরে প্রয়োজনীয় কথার ব্যাপারে। সেটাতে কী সমস্যা আমার জানা নেই। মেয়েরা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে পূর্ণ পর্দা করেও (এমনকি চেহারা না দেখিয়েও বা নিক্বাব করেও) উপস্থিত হতে পারবেন না এমন ধারণা যারা পোষণ করেন তাদের পক্ষে কী প্রমাণ আছে সেটা আমার জানা নেই। শুধু তাই না কোনো মেয়ে কোনো বিষয়ে পাবলিকলি শিক্ষা দিচ্ছে এই ব্যাপারটিতেও তারা আঁতকে ওঠেন। অথচ ইতিহাস সাক্ষী যে কত মুসলিম মহিলা স্কলারের কাছ থেকে কত বড় বড় আলিম তৈরি হয়েছে।

যাই হোক, কথা বলছিলাম কো এডুকেশন নিয়ে Islam QA এর ফতওয়া নিয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে  এখানে কো এডুকেশনে পড়া নিষেধ মর্মে যখন একটা ছেলেকে ফতওয়া দেয়া হচ্ছে তখন ব্যতিক্রম উল্লেখ করা হচ্ছে, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে- There is no need for mixing. Studying in this school is not essential; so long as a woman can read and write and knows the teachings of her religion, that is sufficient, because she was created for that, i.e., to worship Allaah. Anything beyond that is not essential. (https://islamqa.info/en/8827 )

এটা পড়ে মনে হচ্ছে যে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য স্কুলে যাওয়ার কোনো দরকার নেই যদি Co-education ছাড়া কিছু পাওয়া না যায়। অক্ষর জ্ঞানই যথেষ্ট। এই মতটা আমাদের সময়ের জন্য কতটুকু উপযুক্ত তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে নিঃসন্দেহে এটা ফতওয়া যিনি দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত অভিমত। এখন এই সাইটে যারা ফতওয়া দেন আমি তাদের পায়ের নখের যোগ্য নই, কিন্তু সেই সাথে এটাও সত্যি যে ইসলামে কোনো পুরোহিত তন্ত্র নেই। তাই কোনো স্কলারের কোনো ব্যক্তিগত মত, যেটার পক্ষে ঊনি কোনো দলীল উপস্থাপন করেন নি, সেটার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি। এতে স্কলারদেরকে অসম্মান করা হয় না, বরং নিজেরা জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট না থেকে স্কলারদেরকে অন্ধ আনুগত্যের কালচারকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

যাই হোক, যখন একজন মেয়ে আইন নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করবে তখন সে ফতওয়া ও শরীয়াহর মাঝে সহজেই পার্থক্য করতে পারবে ইনশাল্লাহ। সেইসাথে একটি ফতওয়া পড়ে সে বুঝতে পারবে যে এটার কোন অংশটুকু একজন স্কলারের মত আর কোন অংশটুকু কুরআন হাদীস থেকে সরাসরি আসছে অর্থ্যাৎ কোনো অংশটি মানতে আমরা বাধ্য আর কোন অংশটা না।

⬛ বেশ কিছু ব্যাপারে ইসলামী আইনের প্রজ্ঞা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই কেন ইসলামী আইন কোনো একটা কিছুর বিধান দিয়েছে সেটা প্রচলিত আইনের সাথে তুলনা করে ইসলামী আইনের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা যায়। যেমন ধরুন মৃত্যু দণ্ড প্রথাটা বর্বর মনে করে অনেক দেশই এখন এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে চিন্তা করলে এবং অর্থনৈতিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে মৃত্যু দণ্ড বেশী কার্যকরী পন্থা। আমার ইউনিভার্সিটির ইকোনোমেট্রিক্স এর প্রফেসরের রিসার্চ পেপার আছে ২টা এটার উপর। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা নিয়ে পেপার নাই বললেই চলে। মুসলিমদের তো প্রশ্নই উঠে না, নন-মুসলিমদের মাঝেও নাই। একজন মুসলিম এ ধরণের কাজ করতে পারে।

 ‘ল’ ফিল্ডটার ক্রম বিকাশ/ বিবর্তন নিয়ে কাজ করতে পারেন কেউ। দেখাতে পারেন যে আজকে যত মানব রচিত আইন আছে সেটার উৎস কোনো না কোনোভাবে কোনো ধর্মীয় গ্রন্থের (যেমন বাইবেলের 10 commandments) সাথে সম্পর্কিত। তাই আজকে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা যতই অস্বীকার করা হোক না কেন, মানুষের পক্ষে একদম শূন্য থেকে শুরু করা আসলে সম্ভব না।

আরো দেখানো যেতে পারে যে ‘আইন’ করে সমাজের সব বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায় না, নৈতিকতার প্রসার অপরিহার্য আর সেটা ধর্মীয় প্রভাব ছাড়া সম্ভব না।

⬛ ‘ল’ ফিল্ডটাতে একটা খুব কমন কন্সেপ্ট হচ্ছে letter of the law and spirit of the law এর মাঝে পার্থক্য করা। আমাদের বর্তমান সময়েও আমরা ইস্লামিস্টরা letter of the law কে spirit of the law এর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই বলে মনে হয় আমার কাছে।

একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে মনে হয়। একবার আমার এক পরিচিত আপুর আব্বা হঠাৎ করে মারা গেলেন কানাডার একটা শহরে যেখানে শুধু ঊনারা স্বামী স্ত্রী থাকতেন। এখন একা বাসায় আপুর আম্মা একদমই থাকতে পারছিলেন না, ঊনি চাচ্ছিলেন যে দেশে চলে আসবেন। তো আমি পণ্ডিত ভাবছিলাম যে এইভাবে ইদ্দতকাল চলা অবস্থায় একা মাহরাম ছাড়া ঊনার Travel করা উচিৎ হবে নাকি। আমি এইটা নিয়ে IOU এর ফিকহ এর একজন টিচারের সাথে কথা বললাম। উনি বললেন অবশ্যই উচিৎ হবে কারণ একজন মহিলা একা একটা শহরে এভাবে থাকার চেয়ে Travel করে হলেও উনার দেশে মাহরামদের মাঝে থাকাটা বেশী শরীয়াহ সম্মত কারণ সেটাই Maqasid (objective) of Shariah র বেশী কাছাকাছি- মেয়েদের একটা নিরাপদ পরিবেশ দেয়া। তখন আমার মনে হয়েছিল যে এটা হচ্ছে letter of the law এর চেয়ে spirit of the law কে বেশী গুরুত্ব দেয়া।

ইসলামিক ইকোনমিক্সেও এটা একটা বিশাল সমস্যা। এটা নিয়ে আমার গত ৫ বছরের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা থেকে আমি এটাই বুঝেছি যে আমরা আজকের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাতে letter of the law কে spirit of the law এর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই। তাই হয়তো পণ্যগুলোর বাহ্যিক রূপটা শারিয়াহ সম্মত হয়েছে কিন্তু সেটা সুদ নিষিদ্ধ করার যে উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্য সাধনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে।

আমি আশা করি যে একজন আইনের শিক্ষার্থী আইন নিয়ে তার Diversified, গভীর পড়াশোনা থেকে ইসলামী আইনের এমন প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করতে পারেন ইনশাল্লাহ যেখানে প্রাধান্য পাবে Spirit of law.

আমি নিজে রিসার্চ করতে ভালোবাসি বলে নিজের অজান্তেই হয়তো উপরের পয়েন্টগুলো সবই রিসার্চের সাথে সম্পর্কিত হয়ে গেছে। ধরুন আপনার এমন দিকে ঝোঁক নাই। তাইলে শুধু ইসলামী আইনগুলো নিয়ে ভালোভাবে জানুন, সাথে সেই সংশ্লিষ্ট প্রচলিত আইনগুলো। এই আইনগুলা না জানার কারণে কত মেয়ে যে Domestic Abuse এর স্বীকার হচ্ছে আমাদের ধারণাও নাই। আজকাল প্রচুর ডিভোর্স হচ্ছে দ্বীনী সার্কেলেও এবং কারণগুলো অনেক সময়েই সঙ্গত। সেখানেও মেয়েদের অনেক হেল্প দরকার। মানুষের যে কী সীমাহীন অজ্ঞতা এসব ব্যাসিক ব্যাপারে তা মানুষের সাথে কথা না বললে বোঝা যায় না। শুধু ইসলামী আইন নিয়ে পড়লে আপনার যে প্রজ্ঞা তৈরি হবে তা অনেকাংশে বাড়বে যদি আপনি ঠিক মত প্রচলিত আইন নিয়ে পড়েন এবং তারপর ইসলামী আইন নিয়ে পড়েন। উত্তরাধিকার আইন নিয়ে পড়াশোনা থাকলে মানুষকে অনেক হেল্প করা যায়……The list can go on and on. এই সাহায্য করার জন্য আপনার পিএইচডি করতে হবে না, কোথাও চাকরি করতে হবে না……ছোট্ট বাচ্চার মা হলেও সমস্যা নেই। সপ্তাহে কিছুটা সময় দিবেন বোনদের সাথে স্কাইপে কিংবা অনলাইনে বা বাসাতে।মূল কথা হচ্ছে Let’s try to be people of impact. নিজে খাইলাম, ঘুমাইলাম, ক্যারিয়ার গড়লাম, মা-বাবা হইলাম, বাড়ি করলাম, গাড়ি করলাম, নাতি নাত্নীর মুখ দেখলাম তারপর বুড়া বয়সে হাজ্জ করলাম, দাড়ি রাখলাম, বোরখা পরলাম আর এমন বাচ্চা রেখে গেলাম যারা আমি মারা যাওয়ার পর হুজুর ডেকে কুরআন খতম দিলো আর এতিম খাওয়ায় দিলো- এই যে একটা বৃত্ত আমরা আমাদের চারপাশে অহরহ দেখি, সেটা থেকে আসুন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি, যেভাবে পারি।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive