“সবকিছুর মধ্যেই ধর্মকে টেনে আনবেন না তো” – কথাটা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিত একসময়।

আসলেই তো, সবকিছুর মধ্যেই আচার-পার্বণ সর্বস্ব ধর্মকে টেনে আনব কেন? মাথার ওপর একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন আর তিনি সময়ে সময়ে কিছু দূত/ম্যাসেঞ্জার পাঠিয়েছিলেন- আমি তো অস্বীকার করছিনা? ধর্মের ব্যাপারটা কি এখানেই শেষ নয়?

IIRT Arabic Intensive

আমিও বলি সবকিছুর মধ্যে আপনার ধর্মকে আনার দরকার নেই। আপনার একটা নিজের লাইফস্টাইল আছে, কোড অফ কন্ডাক্ট আছে এবং আপনি সেভাবেই চলবেন।

কিন্তু ফরচুনেইটলি, আমি এমন এক ধর্মের অনুসারী যেই ধর্মটা আসলে শুধু একটা ‘ধর্ম’ না বরং পূর্ণাঙ্গ এক জীবন ব্যবস্থা; একটা দ্বীন। এমন এক জীবন ব্যবস্থা যেটা একটা মানুষকে এটা পর্যন্ত শিখিয়ে দেয় যে সে কী বলে কোন পা দিয়ে টয়লেটে ঢুকবে, কিভাবে মধ্যকার সময়টা কাটাবে আর কী বলে কোন পা দিয়ে বের হবে।

আপনি হাসবেন তো কেন হাসবেন, কাঁদবেন তো কেন কাঁদবেন, কিভাবে হাসবেন কিভাবে কাঁদবেন না, এগুলো পর্যন্ত বলে দেয়া আছে।

কথা বলবেন তো কেন কী প্রসঙ্গে কিভাবে কার সাথে কথা বলবেন, চুপ থাকবেন তো কখন কোন সময়ে কেন চুপ থাকবেন, তাও বলা আছে।Bringing-religion-in-everything-content-picture

ব্যবসা করবেন, চাকুরী করবেন? ঠিক কী কী ধরনের ব্যবসা আর চাকুরী ঠিক কিভাবে কিভাবে করবেন, তাও বলা আছে। ওজনে কম দিবেন, মিথ্যা কসম কাটবেন, হিসাবের খাতা ম্যাইনটেইন করবেন না, অধীনস্থের সাথে বাজে ব্যবহার করবেন, সুদ আর ঘুষে নিমজ্জিত থাকবেন- ভাববেন না যে এই ব্যাপারগুলো ছেড়ে কথা বলা হয়েছে।

বিয়ে করবেন তো ঠিক কেন কাকে আর কোন সময়ে বিয়ে করবেন, সেটাও বলা আছে, দুজনকার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো কিভাবে যাবে কিভাবে যাবেনা সেটাও বলা আছে।

দেশ চালাবেন, শাসন করবেন- আলাদা একটা ফরম্যাটই আছে এই নিয়ে।

কেউ অপরাধ করেছে? কী কারনে কে কিভাবে ঠিক কতখানি শাস্তি পাবে সেটাও বলা আছে, কারা সেটা বাস্তবায়ন করবেন সেটাও বলা আছে।

কোন মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করবেন কিভাবে ব্যবহার করবেন না- এগুলো যে বলা আছে সেটা বলাও বাহুল্য।

আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার পর মুহুর্ত পর্যন্তও জীবনের প্রতিটা মুহুর্তের W/H কোয়েশ্চেনের উত্তর এই জীবনব্যবস্থায় আছে- কী করবেন, কখন করবেন, কী করবেন না, কখন করবেন না।

আপনিও যদি আমার মত এই জীবন ব্যবস্থার অনুসারী হয়ে থাকেন, আপনি নিজে আলাদা কোন ‘লাইফস্টাইল’ আর ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ তৈরি করতে পারবেন না। সত্যি কথা বলতে গেলে, সুযোগ বা দরকার- কোনটাই নেই। দ্বীনের সব কিছুই নিয়মতান্ত্রিক আর রুটিনে মাপা; একটা শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। আপনার প্রতিটা আ্যকশানই হবে এই জীবন ব্যবস্থার সেট করে দেয়া; আপনি তখন সেই জীবন ব্যবস্থা থেকে আলাদা নন। আপনার উপস্থিতি মানেই সেই দ্বীনের উপস্থিতি। আরও সহজ করে বলতে গেলে, আপনার দ্বীন অনুমোদন করেছে বলেই আপনি কিছু একটা করছেন। আপনার মুল্যবোধের ভিত্তি হবে তখন দ্বীন। সব কিছুর মধ্যেই তখন ‘দ্বীন’ চলে না আসাটা ইললজিকাল।

এই দ্বীনের মর্যাদা অন্য যে কোন জীবন ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কারন এটা তাঁর দেয়া একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; যিনি জানেন আমাদের জন্য কী ভাল আর কী মন্দ। সেভাবেই তিনি সবকিছু সেট করে দিয়েছেন। আর এই জীবন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ; অসম্পূর্ণতা বা ইমপারফেকশন তার সিফাতের মধ্যে নেই।

জ্বি, আমি ইসলামের কথাই বলছিলাম।

আপনি যেই ধর্ম মানছেন সেই ধর্ম যদি এমন সুশৃঙ্খলিত জীবন ব্যবস্থা না হয়, জীবনের প্রতিটা মুহুর্তের W/H কোয়েশ্চেন গুলোর উত্তর দিতে না পারে, তবে কোন সুযোগ তো নেই এমন এক ধর্মকে সবকিছুর মধ্যে টেনে আনার?

 আমিও বলি, সবকিছুর মধ্যে ধর্মকে টেনে আনার দরকার নেই। আচার আর পার্বণেই রেখে দিন।.

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

2 Responses

  1. iffat

    Assalamualikum wa rahmatullahi wa barakatuhu. Post ta pore khubi bhalo laglo.ekhane jesob jibon bidhan er kotha lekhok Abu Putul ullekh korechen segulo ki detail janiye r akta post lekha jabe.? Jamn kotha bolben to kano ki proshonge kotha bolben, kokhon chup thakben etc bishoy a lekhok sundor ingit dea gechen .ami eguloi detail a jante chai . Allah apnader porisromgulo kobul korenin ebong jazhaye khair daan korun.

    Reply
    • Avatar photo
      আবু পুতুল

      রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি হয় ভালো কথা বলবে নতুবা চুপ থাকবে।’ অন্য এক জায়গায় বলেছেন, ‘অনর্থক এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই উত্তম ইসলাম।’ এই সবকিছু মিলিয়েই কথাগুলো বলা। আপনি যা বলেছেন তা নিয়ে বিশদ ভাবে লেখার জন্য অনেক ইল্ম লাগবে যা আমার নেই। তবে ছোটছোট ভাগে কিছু কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ্‌। জাযাকাল্লহু খায়রান।

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive