আমরা কতজন জানি যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া ছাড়াও দুনিয়ায় অনেক বড় একটা পরিবর্তন এসেছে?
১৯৭১ সাল’ই হল সেই বছর যখন সমগ্র দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। পরিবর্তনটি করে আমেরিকা, আর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এই অপকর্মটি করেন বলে এটাকে বলে ‘নিক্সন শক’[১]। মানে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সারা বিশ্বকে একটা ইলেকট্রিক শক দেন এই আরকি। সারা বিশ্বকে? হ্যাঁ, সারা বিশ্বকে, এবং কোন যুদ্ধ ছাড়াই।
একটু পিছন থেকে শুরু করা যাক, খুব শর্টকার্টে। আচ্ছা, আপনার সম্পদ কিভাবে টাকায় পরিণত হল তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? টাকা তো কিছু স্পেশালি প্রিন্ট করা কাগজ তাইনা? সরকার যদি ইচ্ছেমতন টাকা প্রিন্ট করে তাহলেই কি সম্পদের মূল পরিমাণ বেড়ে যায়? কখনো ভেবে দেখেছি আমরা? তাহলে তো দুনিয়ার সব সরকারই কোন কাজ কর্ম না করে শুধু টাকাই প্রিন্ট করতো, তাইনা?
প্রকৃতপক্ষে আপনি ইন্ডাষ্ট্রিতে যা উৎপাদন করেন এবং যেই ফসল-ফলাদি উৎপন্ন করেন সেটাই হল আপনার প্রকৃত সম্পদ। সেই প্রকৃত সম্পদের সমতুল্য টাকা প্রিন্ট করা হয়, এর বেশী প্রিন্ট করলে জিনিসের দাম বেড়ে ইনফ্লেইশন হবে, মোট সম্পদ কখনো বাড়বে না। তবে আস্তে আস্তে একটু একটু করে টাকা প্রিন্ট করে বাজারে ছেড়ে দিলে কিন্তু মানুষ ইনফ্লেইশনটা টের পায় না যদি ইনফ্লেইশন হয়ে থাকেও। এবং সম্পদ উৎপাদন যদি টাকার প্রিন্ট করার হার থেকে বেশী হয়, তাহলে কিন্তু ইনফ্লেইশন না হয়ে ডিফ্লেইশন হবে (মানে জিনিসপত্রের দাম কমবে)।
আসলে প্রথম দুনিয়াতে কোন টাকা ছিল না। প্রথমে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র – এসব ধাতুর মুদ্রা। এসব ধাতু ব্যবহারের সুবিধা হল এসব ধাতুর নিজস্ব একটা বাজার মূল্য আছে, প্রিন্টেট টাকার মতন এটা ইচ্ছেমতন প্রিন্ট করা যায় না বরং খনি থেকে তুলে বাজারে ছাড়তে হয়। তবে এসব মুদ্রা বহন করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় একসময় ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো স্বর্ণমুদ্রাকে ব্যাংকে জমা রেখে স্বর্ণমুদ্রার ইক্যুইভ্যালেন্ট ‘প্রিন্ট করা টাকা’ বাজারে ছাড়তে লাগলো। নিয়ম করা হল যে যখন তখন ইচ্ছে করলে প্রিন্ট করা টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে স্বর্ণ ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া যাবে। তার মানে তখন পর্যন্ত ‘প্রিন্ট করা টাকা’ হল স্বর্ণের রিসিট। [তবে তারা একটু চালাকি করলো, যতটুকু স্বর্ণ জমা থেকে তার প্রায় দশ গুন টাকা বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করলো (এক্ষেত্রে রিজার্ভ রেশিয়ো হয় ১০%)। কারণ সব মানুষ কিন্তু একসাথে ব্যাংকে গিয়ে টাকাকে স্বর্ণে রুপান্তর করেনা।]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সব ইউরোপিয়ান নেশন গুলো তাদের স্বর্ণগুলো নির্দিষ্ট ডলার রেইটে (এক আউন্স = ৩৫ ডলার এই রে্টে ) আমেরিকায় জমা রাখলো, আর আমেরিকার সাথে চুক্তি করলো যে যখনই তাদের দরকার হবে আমেরিকাকে প্রিন্টেড কারেন্সি দিবে, বিনিময়ে আমেরিকা গোল্ড ফিরত দিবে। (ওরা হয়ত ভয় পাচ্ছিল, হিটলার ইউরোপ দখল করে ফেললে সব স্বর্ণ হিটলারের হস্তগত হবে।)
এই ব্যবস্থার নাম ছিল ‘ব্রিটন উডস সিস্টেম’[২], এটা ৪৪ টি ইউরোপীয় দেশের সাথে আমেরিকার একটা অর্থনৈতিক চুক্তি। সবাই আমেরিকান ডলার কমন কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার করে, কারণ গোল্ড ভল্টে রাখা অনিরাপদ।
এখন আমেরিকা হল অতিচালাক। তারা দেখলো তারা ইচ্ছা করলে এই গোল্ড ব্যবস্থাটা উঠিয়ে দিয়ে সারা দুনিয়াকে ডলার খাওয়াতে পারে। তাই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭১ সালে ঘোষণা করলো তারা আর ব্রিটন উডস সিস্টেম মানবে না, তারা নির্দিষ্ট কোন ডলার রেটে স্বর্ণ বেচাকেনা করবে না। স্বর্ণের দাম হবে অনির্দিষ্ট। মানে মার্কেট অটোমেটিকালী স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করবে। সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ডলার হয়ে গেলে ভাসমান মুদ্রা, এর এখন থেকে গোল্ডের উপর কোন ডিপেন্ডেন্সি নাই। ডলার আজ থেকে স্বর্ণ হতে স্বাধীনতা পেল।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতে শক খাওয়ার কি আছে আসলে? ডলার গোল্ড থেকে মুক্ত হলে বাংলাদেশে বসে আমার অসুবিধা কি? শুধু অসুবিধা না, ব্যাপক অসুবিধা। অ-আমেরিকান সবারই ব্যাপক অসুবিধা, আর আমেরিকান সবারই ব্যাপক সুবিধা। কারণ, সব দেশকে ফরেইন রিজার্ভ আগে রাখতে হতো গোল্ডে। এখন সবাই রাখে ডলারে। গোল্ড থাকে আমেরিকায়। আমাদের ভল্টে থাকে শুধুই ডলার, যাহা কাগজ ছাড়া কিছুই নহে। এখন মনে করেন বাংলাদেশে ফরেইন রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার। এই ২২ বিলিয়ন ডলারের প্রকৃত মূল্য মনে করেন ২২ টন গোল্ড (ধরে নেন আরকি)। এখন, আমেরিকা করেকি, নিজেদের যুদ্ধ পরিচালনা স্ংক্রান্ত ব্যয়, ইন্টারনাল ক্রাইসিস এগুলা সামাল দেয়ার জন্য কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ছাপায়, এরপর এই ডলার সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ডলার ছাপানোয়, ডলারের মান কমে যায়, ব্যাপক ইনফ্লেইশন হয়। ফলে মনে করেন, মাত্র দশ মাসের মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলারের মূল্য কমে মাত্র ১১ টন গোল্ড হয়ে যেতে পারে। মানে অন্য কথায়, যেকোন পণ্যের দাম ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাতে পারে। মানে আপনার জমাকৃত অর্থের মূল্য ডেঞ্জারাসলি কমে যেতে পারে। এবং তা কমছেও।
আমেরিকা ইচ্ছাকৃতভাবে ডলার প্রিন্ট করে নিজেদের ধার দেনা শোধ করছে, নিজেদের মার্কেট টেনে টুনে সেইভ করছে, এবং সাথে সাথে সারা দুনিয়াই আমেরিকার যুদ্ধ এবং অন্যান্য ব্যয়ভার ইনডিরেক্টলি বহন করছে। তার মানে আপনার চাকরি-ব্যবসাকৃত অর্জিত সম্পদ কে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে কিছু লোক ডলার প্রিন্ট করার মাধ্যমে কমিয়ে দিচ্ছে। বা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দুনিয়ার কিছুই করার নেই, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। আসলে এইটাই দুনিয়ার সবচে’ বড় চৌর্যবৃত্তি। আপনার যে মাসের বেতনে পেট চলেনা, তার কারণ হল আমেরিকানদের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে কিছু লোকের ডলার প্রিন্ট করা, বুঝা গেল? আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (সব প্রাইভেট ব্যাংকারদের এসোসিয়েশণ) বারাক ওবামার অনুমতি ক্রমে ব্যাংকগুলোকে সেইভ করার জন্য যখনই এক ট্রিলিয়ন ডলার প্রিন্ট করার সিদ্ধান্ত নিল, তখনই বুঝবেন, আসলে ওরা আপনার পকেট (আসলে সারাদুনিয়ার সকল মানুষের পকেট থেকে) থেকে এই টাকা টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাহাথির মোহাম্মদের ক্ষমতায় থাকা কালে একবার মালয়েশিয়ায় ইকোনমিক ক্রাইসিস দেখা দিল, ১৯৯৯ সাল হবে। তো আনোয়ার ইব্রাহিম সহ সকল অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড থেকে পি এইচডি করা লোকজন মাহাথির কে বুদ্ধি দিলো হেন করতে হবে, তেন করতে হবে। মাহাথির বললো, ” কিচ্ছু করা লাগবেনা, ডলার রেটটা আসলে চেঞ্জ করতে হবে, তোমরা ইকোনমি’র কি বুঝ!!” মাহাথির ডলার রেটটা ফিক্স করে চেঞ্জ করে দিলো, মুহূর্তের মধ্যে মালয়েশিয়ার ইকোনমিক ক্রাইসিস শেষ। এটা ছিল মাহাথির এক বিশাল পলিটিকাল উইন। দুনিয়ার ইতিহাস করলো মাহাথির, কারণ পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে প্র্যাকটিকাল নলেজ এই মাহাথির এর মাথায় আল্লাহ বেশী দিছেন।
যাই হোক, তো এর সমাধান কি?
সমাধান হল, ইন্টারন্যাশল মুদ্রা হিসেবে আবারও গোল্ডকে (মানে গোল্ড, সিলভার এবং তামা) ব্যবহার করা। গোল্ড কারেন্সির ইচ্ছামতন প্রিন্ট করা যায় না। গোল্ডের ইকুইভ্যালেন্ট মানি ছাড়া যেতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক লেনদেন অবশ্যই গোল্ডের রেসপেক্টে হতে হবে, ডলার দিয়ে নয়।
শুধু ডলার প্রিন্ট করে সারা দুনিয়ায় তা ছড়ানোর ব্যবস্থাটা আছে বলেই আমেরিকা এখনও টিকে আছে। না হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতন আমেরিকার ও পতন এদ্দিনে হয়ে যেতো। সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্ভাগ্য, যে তাদের রুবল সারা দুনিয়ার কমন মুদ্রা না। ইরাকে আর আফগানিস্তানে তো কত ট্রিলিয়ন খরচ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই, সারা দুনিয়ায় আমেরিকার ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ, তাও কোন সমস্যা নেই, কারণ আমেরিকা শুধু ডলার প্রিন্ট করে, প্রিন্ট করে ঋণ শোধ করে, আর যেই ইনফ্লেইশনটা হয়, তা সারা দুনিয়া একসাথে বহন করে, তাই আমেরিকার গায়ে লাগেনা।
এটা মনে রাখবেন, আপনি, আমি সবাই ইনডিরেক্টলি ইরাক, আফগানিস্তান, ইসরাইল সব জায়গায় যুদ্ধের খরচ আমেরিকাকে যুগিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমরা ডলার ব্যবহার করছি। যতদিন গোল্ড ফিরে না আসে, ততদিন এই ব্যবস্থাই চলবে।
বুঝতেই পারছেন, দুনিয়ার সবচে’ বড় বাটপাররাই আজ দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক। এই বাটপাররাই আমাদের মানবাধিকার শিখায়, সততা শিখায়, কেউ উল্টাপাল্টা করলেই তাকে কনডেম করে, অথচ আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পারেনা। এই বাটপারদের হাত থেকে দুনিয়া ইন শা আল্লাহ খুব দ্রুত মুক্তি পাবে – এই আশায় আজ এখানে শেষ করলাম।
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Nixon_Shock
http://www.investopedia.com/terms/n/nixon-shock.asp
https://history.state.gov/milestones/1969-1976/nixon-shock [এটা আমেরিকানদের ব্যাখ্যা]
[২] http://en.wikipedia.org/wiki/Bretton_Woods_system
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।
আচ্ছা একটা ব্যাপার,তাহলে আমেরিকা economic crisis এ কেন পড়ে
টাকা প্রিন্ট করার স্বাধীনতা থাকলেও ইচ্ছে করলেই যত খুশী তত টাকা প্রিন্ট করা যায় না। কারণ ম্যাসিভ ইনফ্লেইশন হয়, সমগ্র পৃথিবী ডলার ইউজ করায় ইনফ্লেইশনটা অনেক কম হয়, কিন্তু হয়।। অন্য দেশগুলোর ইকোনমি আমেরিকার উপর ডিপেন্ডেন্ট বলে তারাও হৈচৈ শুরু করতে পারে।
এজন্য পরপর দুইটা যুদ্ধ করে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত টাকা প্রিন্ট করেও ইকোনমিক ক্রাইসিস এড়াতে পারেনি আমেরিকা।
[ আর টাকা প্রিন্ট করেই তো তা সরাসরি মানুষকে হাতে হাতে দিয়ে দেয়া যায় না। ব্যাংকের মাধ্যমে তা তা দেয়া হয় , ধীরে ধীরে। ]
ভাই, ডলার রেটটা ফিক্স করে ইকোনোমিক ক্রাইসিস কিভাবে সামাল দিল তা আরেকটু বিস্তারিত বলবেন কি?
ইনফ্ল্যাশন বা মুল্যস্ফীতির উদাহরণসহকারে একটা ব্যাখ্যা দিলে সবাই বুঝতে পারবে। নন-ফিন্যান্স ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের লেখা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হবে মনে হয় শুধু ঐ ইনফ্ল্যাশনের স্বচ্ছ ধারনা না থাকার কারনে।
ইনফ্ল্যাইশন নিয়ে প্রচুর লেখা নেট এ এভেইলেবল। আর মালয়েশিয়ার ঘটনাটাও গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন। দয়া করে গুগলে সার্চ করে দেখে নিন।
ভাই ! ফ্র্যকশনাল রিজার্ভ ব্যঙ্কিং ও ইউ এস ডলার কো-রিলেটেড। ব্যঙ্কিং সিস্টেমও আমেরিকার আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে। এব্যপারেও কিছু লেখা আশা করছি।
মা আস সালামা
এ ব্যাপারে আর একটা লেখা আছে। শীঘ্রই পাবলিশ হবে ইংশাআল্ল-হ।
“তারা আর ব্রিটন উডস সিস্টেম মানবে না, তারা নির্দিষ্ট কোন ডলার রেটে স্বর্ণ বেচাকেনা করবে না। স্বর্ণের দাম হবে অনির্দিষ্ট। মানে মার্কেট অটোমেটিকালী স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করবে। সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ডলার হয়ে গেলে ভাসমান মুদ্রা, এর এখন থেকে গোল্ডের উপর কোন ডিপেন্ডেন্সি নাই। ডলার আজ থেকে স্বর্ণ হতে স্বাধীনতা পেল।”
ভাইজান! আমার প্রশ্ন হল, ডলারের রেট গোল্ডের মার্কেট ভ্যালুর সাথে পরিবর্তিত হবে বুঝলাম। কিন্তু তাতে ডলার গোল্ড থেকে মুক্ত হল কই? বরং বলা যায় ডলারের রেট আর স্থির থাকবে না। দ্বিতীয়ত ইউরোপিয়ানরা যে গোল্ড রেখে ডলার নিয়েছিল ডলারের দরপতনে তার চেয়ে কম গোল্ড নিতে রাজী হয়ে গেল? এটাতে তো বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়া উচিত ছিল। ব্যাপারটা যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন!
ডলার স্বর্ণ হতে মুক্ত হয়েছে বলতে ”ডলারের রেট গোল্ডের মার্কেট ভ্যালুর সাথে পরিবর্তিত হবে”— ঠিক তা নয় বরং ”গোল্ডের রেট ডলারের মার্কেট ভ্যালুর সাথে পরিবর্তিত হবে” তা বুঝিয়েছি। মানে আগে ইচ্ছে করলেই ডলার প্রিন্ট করা যেত না। কারণ মার্কেটে ডলার বেশী হয়ে গেলে , সবাই একসাথে গোল্ড কিনতে গেলে সব গোল্ড শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু ডলার শেষ হবে না, এমন অবস্থার উদ্ভব হতো।
এখন আর ব্যাপারটা তা নয়, বরং এখন বেশী ডলার প্রিন্ট করলে সমস্যা নেই। বরং ডলার বেশী প্রিন্ট করলে সাথে সাথে গোল্ডের রেট কমে যাবে। সুতরাং সবাই এক সাথে গোল্ড টান দিলেও গোল্ড সংকট হবে না।
আসলে ডলার ফিয়াট মানি করলে সুবিধা হল, যত খুশী তত ডলার প্রিন্ট করা যায়।
আর ইউরোপের মধ্যে এমন কোন একতা নেই যে তারা এক হয়ে আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করবে। আর যুদ্ধ করলেও আমেরিকার টেকনোলজির কারণে আমেরিকার সাথে পারবে না ইউরোপ। যুদ্ধ করার যে পলিটিকাল উইল তা ইউরোপ ওই সময়ে দেখাতে পারেনা। যুদ্ধ অনেক বড় ব্যাপার।
আর ডলারকে স্বর্ণ থেকে মুক্ত করার কারণে ইমিডিয়েটলি ইউরোপীয়ান ইকোনমি ঝুঁকির মধ্যে পড়েনি। বরং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী , ধীরে ধীরে হয়। তাই ইউরোপ যুদ্ধে এগিয়ে আসেনি।
https://youtu.be/ELObtuFnM5I?t=1546
চমৎকার আলোচনা।
আসলেই পুজিবাদী ব্যাবস্থার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল ব্যাংক আর কারেন্সী।
এর মাধ্যমেই তারা কোন যুদ্ধ ছাড়াই পৃথিবী শাষণ করছে।
তবে তাদের সামনেও বিপদ আছে – চিনের মুদ্রা আগামী অক্টোবর থেকে রিজার্ভ কারেন্সী হিসেবে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। সেটা হলেই দেখা যাবে বহু রাস্ট্র আমেরিকান ডলারের পরিবর্তে চাইনিজ কারেন্সীতে রিজার্ভ রাখতে শুরু করবে। আর সেটা হবে আমেরিকার জন্য নিজের খোঁড়া গর্তে পরারমত ঘটনা।