বাংলা উইকিপিডিয়ার মতে পর্নোগ্রাফি

পর্নোগ্রাফি (সংক্ষেপে “পর্ন” বা “পর্নো” অনানুষ্ঠানিক ব্যবহারে) (ইংরেজি: Pornography) যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনসংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা। পর্নোগ্রাফি শব্দটি গ্রিক শব্দ “পরনোগ্রাফিয়া” থেকে নেওয়া হয়েছে। পর্নোগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে উপস্থাপন করা হতে পারে, এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে, বই, সাময়িকী, পোস্টকার্ড, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, অঙ্কন, পেইন্টিং, অ্যানিমেশন, সাউন্ড রেকর্ডিং, চলচ্চিত্র, ভিডিও এবং ভিডিও গেম।

বাংলাদেশের আইনে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা

যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য-চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, অঙ্কিত চিত্রাবলি, বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য বিষয় — যার কোনো শৈল্পিক মূল্য নেই – তা পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকন্তু, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, পত্র-পত্রিকা, ভাস্কর্য, কল্প-মূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা প্রচারপত্র পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসবের নিগেটিভ বা সফট ভার্শনও পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য হবে।

IIRT Arabic Intensive

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত কারা?

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি ব্যবহারকারী কারা, তা নির্ধারণের তেমন কোনো চেষ্টা এখনো হয়নি৷ তবে স্কুল ছাত্রদের নিয়ে একটি জরিপ করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’৷ দেখা গেছে, ঢাকার স্কুল পড়ুয়াদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে৷ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি পত্রিকাকে জানান, “আমাদের এই জরিপটি অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে করা হয়৷ আর তাতে দেখা যায়, পর্নোগ্রাফি তারা ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট আকারে ব্যবহার করে৷ এসব পর্নোগ্রাফির আবার বড় অংশই দেশে তৈরি৷ এই শিক্ষার্থীরা প্রধাণত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে৷ এর বাইরে ট্যাব, ল্যাপটপেও তারা দেখে৷ আবার পেনড্রাইভ ব্যবহার করে বিনিময়ও করে৷”

বাংলাদেশে সাধারণভাবে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার কেমন বা কারা এর ভোক্তা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট জরিপ নেই৷ জরিপের ফলোআপে দেখা যায়, ৩০-৩৫ বছর যাদের বয়স এবং তাদের মধ্যে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের শতভাগই একবার হলেও পর্নোগ্রাফি দেখেছেন৷ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখেন ৯০ ভাগ৷ আর যুবনারীদের মধ্যে সংখ্যাটা শতকরা ৫০ ভাগ৷”

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পর্নোগ্রাফির প্রবণতা বাড়ছে৷

এই পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধে বাংলাদেশে আইন নেই ব্যাপারটা এমন না, আইন ঠিকই আছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আইন থাকা সত্ত্বেও এই প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু তা না হয়ে বরং তা বাড়ছে ভয়ানক গতিতে। যদিও বিটিআরসি ৫৬০টি পর্ন সাইট বন্ধ করেছে, কিন্তু পর্নোগ্রাফির জগত তো আর এই (৫৬০ টি সাইট) গণ্ডিতে থাকে না। তার আছে যে এক বিশাল ফিল্ড! আর বাংলাদেশের ছেলেপেলে কি কম মেধাবী? তাদের ভালো করেই জানা আছে কীভাবে ওই বন্ধ সাইটে প্রবেশ করতে হয় ভিপিএন দিয়ে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল মামুন (১১ অক্টোবর ২০১৭ একটি পত্রিকায়) বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনটি সুনির্দিষ্ট একটি আইন। এ আইনের অধীনে একটি-দুটি মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার নজির থাকলে অপরাধীরা ভয় পেত।

এই তো গেলো আমাদের সোনার দেশে পর্নোগ্রাফির চিত্র। আপনি যদি আপনার ছোট ভাই বা বোন কিংবা ভাগিনা, ভাতিজা, ভাতিজিকে সতর্ক না করেন, কী জানি উপরের পরিসংখ্যানে পড়ে যেতে পারে আপনার প্রিয়জনও। তা আমরা নিশ্চয়ই চাই না। কী বলেন? তাই এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। ছেলে, মেয়ে সহ পরিবারের ছোটদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। তারা যেন সারাদিন মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে পড়ে না থাকে, সেদিকেও আপনার নজর দিতে হবে। আর হ্যাঁ, আপনাকে একটি তথ্য দেই। আপনি এখন (বাংলাদেশে) যদি কম্পিউটারের সামনে থাকেন, তাহলে গুগলে জাস্ট “চ” লিখে দেখেন সার্চ দেওয়ার দরকার নেই। দেখেন গুগল আপনাকে কী সাজেস্ট করে। আর এই সাজেস্ট গুগল কেন করে জানেন? কারণ গুগল সেই জিনিসই বেশি দেখায়, যেটা তার কাছে বেশি হিট বা রিকোয়েস্ট আসে। আর এই রিকোয়েস্টগুলো আমাদের বাংলাদেশের ছেলেপেলেরাই করছে। কত ভয়ানক তাই না! কিন্তু এই “চ” যদি আপনি সাউথ কোরিয়া থেকে লিখেন, সেখানে কিন্তু এই আজেবাজে সাজেস্ট গুগল করবে না যা আপনাকে বাংলাদেশে করেছিলো। কারণ গুগল একটি নির্দিষ্ট system এ সার্চ করে। এই নিয়ে বেশি কথা বললে আর্টিকেল বড় হয়ে যাবে, তাই এখানেই থামছি। আর তাদের (পরিবারের) সাথে সময় দিতে হবে। এর প্রতিকার নিয়ে সামনে আরো কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এখন চলুন, আপনাকে কিছু পর্নোগ্রাফির পরিসংখ্যান ও বিভিন্ন দেশের এই নিকৃষ্ট (পর্নোগ্রাফি) জিনিসের চিত্র তুলে ধরে দেখাই।

পর্নোগ্রাফির পরিসংখ্যান

প্রতি ১ সেকেন্ডে এই ভয়ানক জগতে যা যা হয়, তার অতি সংক্ষিপ্ত লিস্ট

■ 3,075.64 ডলার ব্যয় করা হয়। যা বাংলা টাকায় দাঁড়ায় ২৪৯,৬৭৪ টাকা। কী? অবাক হচ্ছেন? পর্নোগ্রাফির জগতে এইগুলো পানিভাত। এটা তো মাত্র ১ সেকেন্ডের হিসাব। ১ দিনের টাকার পরিমাণ কত হবে ভাবতে পারেন! হিসাবটা নিজেই করে দেখুন।

■ ২৮,২৫৮ জন মানুষ পর্ন দেখে।

■ ৩৭২ জন মানুষ যে word টি search engine এ সার্চ করে সেটি হলো “adult”

এ তো গেলো সেকেন্ডের কথা। এখন মিনিটের কথা তুলে ধরছি।

■ প্রতি ৩৯ মিনিটে ১টি পর্নোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করে আমেরিকা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। আমেরিকা।

এবার চলুন দেখে আসি ভার্চুয়াল জগত তথা ইন্টারনেটে এই পর্নোগ্রাফি যা মানব চরিত্র কলুষিত করছে তার অবস্থান।

■ আপনি কি জানেন ইন্টারনেটের জগতে পর্ন সাইট কয়টি আছে? না, না! কয়টি বললে ভুল হবে। কত লাখ আছে? জেনে অবাক হবেন ৪.২ মিলিয়ন, মানে ৪২ লাখ! যার মানে ইন্টারনেটের মোট সাইটের ১২%। সাংঘাতিক ব্যাপার, তাই না?

■ ৬৮ মিলিয়ন, মানে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দৈনিক সার্চ ইঞ্জিনে রিকোয়েস্ট পাঠায় (মানে পর্ন দেখতে চায়) যা মোট রিকোয়েস্টের ২৫%।

■ প্রতি মাসে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট ডাউনলোড করা হয় তার পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন। আর জানেন তো ১ বিলিয়ন মানে ১ এর পর ৯টা শূন্য। যা টোটাল ডাউনলোডের ৩৫%

■ ৪২.৭% ইন্টারনেট ইউজার পর্নোগ্রাফি দেখে। যা টোটাল ইউজারের অর্ধেকের কাছাকাছি।

এবার চলুন দেখি আসি এর থেকে কোন কোন দেশ কী পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।

■ আমেরিকা আয় করে ১৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৩০% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।

■ জাপান আয় করে ১৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৪২% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।

■ সাউথ কোরিয়া আয় করে ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৫৮% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।

■ চায়না আয় করে ২৭.৪০ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৬৮% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।

উপরের পরিসংখ্যান দেখে এখন আপনি হয়তো ভাবছেন আরেহ! পুরো ইন্টারনেট জগত কি পর্নোগ্রাফিতে তলিয়ে যাবে? না, এখনও পুরোটা তলিয়ে যায়নি। তবে অর্ধেকের থেকে একটু কম কিন্তু already তলিয়ে গেছে। তারপরও কি আপনি মুখ বুজে বসে থাকবেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আপনার কাছের আপনজন যে এই স্রোতে ভেসে যাবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? ভাবুন, আপনিও ভাবুন নিজের ঘর থেকে পুরো সমাজকে কীভাবে এর থেকে মুক্ত করা যায়। আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন। পুরো সমাজ না পারলেও নিজের ঘরকে তো মুক্ত রাখতে পারলেন। এতেই বা আনন্দ কম কীসের। কে জানে আপনার দেখাদেখি অন্যরাও সংশোধন হয়ে যেতে পারে। ওহ, আর একটি কথা বলতে ভুলেই গেছি। উপরের যে পরিসংখ্যান দেখেছেন, তা কিন্তু ২০০৬ সালের। এবার আরো একটু ভাবুন ২০১৮-তে এর অবস্থান কমেছে নাকি ভয়ানক গতিতে বেড়েছে, সে প্রশ্নটা আপনার সুস্থ বিবেকের কাছে রইলো।

পর্ন দেখলে যেসব ক্ষতি হয়

১. অতিরিক্ত পর্নের নেশা ড্রাগের চেয়েও মারাত্মক। পর্ন ড্রাগ, মদ বা সিগারেটের মতোই আসক্তি তৈরি করে। পর্ন দেখলে মস্তিষ্কে একটা ‘ফিল গুড’ রাসায়নিক তৈরি হয়। এর নাম ডোপামিন। একটানা পর্ন দেখলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন সামান্য ডোপামিনের ক্ষরণে উত্তেজনা তৈরি হয় না। আরও বেশি ডোপামিনের জন্য মস্তিষ্ক আরও বেশি পর্নের রসদ খোঁজে এবং আসক্তি বাড়িয়ে তোলে।

২. অতিরিক্ত পর্নের আসক্তি সম্পর্কের ক্ষতি করে। যত বেশি পর্ন দেখবেন, ততই আপনি একটা অলীক ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাবেন। এর ফলে বাস্তবের সম্পর্কগুলো আর আপনাকে সুখ দিতে পারবে না, যা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।

৩. অতিরিক্ত পর্ন মানসিক রোগের জন্ম দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন দেখা হয় একা, সমাজের চোখ এড়িয়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে একটা অপরাধ বোধ জন্ম নেয়। যা থেকে ভবিষ্যতে মানসিক রোগ হতে পারে।

৪. অতিরিক্ত পর্ন আপনার মনে ভাবনার সাম্যতা নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন তারকারা মেক আপ, ফটোশপ এবং কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নেন। বেশি পর্ন দেখলে আপনি মানসিকভাবে বাইরের মানুষদের মধ্যে সেই তারকাদের খুঁজে পেতে চেষ্টা করবেন।

৫. অতিরিক্ত পর্ন আপনার স্বাভাবিক যৌনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অতিরিক্ত পর্ন আপনার সঙ্গীর প্রতি আসক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে নষ্ট হয় স্বাভাবিক যৌনজীবন।

৬. পর্ন দেখা লোকজনের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অতিরিক্ত পর্ন মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এই রোগের সৃষ্টি করে।

৭. পর্ন নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ায়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিলেও নতুন মুখের চাহিদা এখানে প্রবল। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বাড়াতে গিয়ে বাড়ে নারী পাচারের সংখ্যা।

৮. পর্ন মানুষকে বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। দেখা গেছে, একেবারে সাদামাটা পর্নও অতিরিক্ত দেখলে তা দর্শকের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। এছাড়াও মানুষকে অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে।

পর্নোগ্রাফি তথা অশ্লীলতার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

আল্লাহ্‌ তা’আলা অশ্লীলতা সম্পর্কে কুরআনে বলেন,

আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য……। [সূরাহ আল-আ’রাফ (৭) : ৩৩]

যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ১৯]

আর তোমরা যিনার (অবৈধ যৌনকর্মের) কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ। [সূরাহ আল-ইসরা (১৭): ৩২]

হে মুমিনগণ, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন সে (শয়তান) নির্লজ্জতার ও মন্দ কাজের আদেশ করবে। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ২১]

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। … [সূরাহ আন-নূর (২৪): ৩০-৩১]

নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটি সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হবে। [সূরাহ আল-ইসরা (১৭): ৩৬]

চার দেয়ালের মধ্যে একা রুমে আপনি আর কেউ নেই। কেউ দেখছে না আপনাকে। ব্যস, অমনি চান্স পেয়ে আপনি চলে গেলেন পর্নসাইটে। ডেপ ডেপ করে গিলছেন সেই অসভ্য কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য। কিন্তু আপনার এই ভাবনাটা ভুল। আপনাকে দুনিয়ার আর কেউ না দেখুক, কিন্তু আল্লাহ্‌ আপনাকে ঠিকই দেখছেন। আর আপনি কি না বেমালুম তার কথা ভুলে গেলেন। কত অকৃতজ্ঞ বান্দা আপনি, একবার কি ভেবেছেন? ঠিক সেই সময় যদি আপনার মৃত্যু চলে আসে আর স্ক্রীন চলতে থাকে আর আপনার আপনজন যদি এসে আবিস্কার করে যে আপনি কি না এমন যাকে সবাই ভদ্র ও সভ্য মনে করতো! সেই ভদ্র ও সভ্যের মুখোশের আড়ালে আপনি ছিলেন নিরেট ভণ্ড। আর আপনি এও ভুলে গেলেন যে কান, চোখ, ও অন্তর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, অর্থাৎ হিসাব নেওয়া হবে। পারবেন কি সেই হিসাব দিতে?

প্রতিকার

১। ইসলামে আছে অশ্লীলতাসহ সব ধরনের পাপাচারের পার্মানেন্ট সলুউশান। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য রাস্তা তালাশ কর এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ কর। যাতে এ সবকিছুর ফলে তোমাদের সফলতা অর্জিত হয় দুনিয়াতেও, আখিরাতেও। [সূরাহ আল-মায়িদা (৫) : ৩৫]

তাকওয়া (আল্লাহ্‌র ভয়) এক অতন্দ্র প্রহরি। কোনো এলাকায় আইন-কানুনের পাবন্দি থাকলেও দেখা যায়, তা কেবল পুলিশের ডাণ্ডা ও আদালতি ঝামেলার ভয় থাকা পর্যন্তই। এরপর আর কেউ নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু একান্ত নির্জনতায় এবং নিশুতি রাতের অন্ধকারেও যে জিনিস মানুষের অন্তরে অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করে তা হল আল্লাহ তাআলার ভয়।

২। পরনারী থেকে দৃষ্টি নিচু করতে হবে। হারাম রিলেশান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

৩। যেসব জিনিস পর্ন দেখার উৎসাহ জোগায়, সেসব থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, গান-বাজনা, মুভি ও বাজে বন্ধু।

৪। উস্তাদ মাজেদ মাহমুদ বলেন, পর্ন দেখার জন্য তিনটা জিনিসের প্রয়োজন

■ চিন্তা (যে আজ আমি পর্ন দেখবো)

■ ডিভাইস (মোবাইল, ল্যাপ্টপ, ট্যাব ইত্যাদি পর্ন দেখার জন্য)

■ জায়গা (কোনো খালি একটি রুম বা ঘর)

এই তিনটি জিনিস থেকে যেকোনো একটি জিনিস বাদ দিন। দেখবেন পর্ন আর দেখা হবে না।

৩। মাসজিদে নিয়মিত সালাত পড়ুন।

নিশ্চয় সালাত সকল অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে … । [সূরাহ আনকাবুত (২৯): ৪৫]

৪। মাঝে মাঝে সওম রাখার অভ্যাস করুন। ইনশা আল্লাহ এর দ্বারা আপনার পর্ন আসক্তি দূর হয়ে যাবে।

৫। কিছু সময় যিকির করুন। আর খুব দু’আ করুন। বেশি বেশি তাওবাহ করুন।

৬। যদি এতকিছুর পরও আবারও সেই নেশায় পেয়ে যায়, তাহলে নিজেকে শাস্তি দিন। যেমন, আমি যদি আর পর্ন দেখি তাহলে ১০০০ টাকা দান করবো বা ১০ রাকাত বেশি নফল সালাত পড়বো। ইনশা আল্লাহ এই কাজগুলো করতে পারলে এই পর্ন নামক জিনিস থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন।

আপনিও পারবেন 

অনেকে বলে থাকেন যে, অনেক অনেক চেষ্টা করার পরও পর্ন দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না। আমি বলি এটা একটা অজুহাত মাত্র। কেন বলছি জানেন? আপনি তো শুধু পর্ন watcher (মানে শুধু দেখেন)। একবার চিন্তা করুন performer এর কথা, যাকে ঘিরে এই পর্ন ভিডিও তৈরি করা হয়। যদি সে পারে এই অসভ্য কাজ থেকে চলে আসতে, তাহলে আপনি কেন শুধু দেখা বন্ধ করতে পারবেন না? তেমনই এক porn performer ব্যক্তি তাঁর সময়ে সে ছিলেন most successful male porn performer. তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন কেন তিনি এই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি একটি উক্তি করেন, যা আমি তুলে  ধরছি।

“If I can change my heart, (এতটুকু বলে তিনি মুচকি হাসি দেন) anybody can.”

অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ

১। পরিবারের সদস্যের প্রতি যত্নবান হোন।

২। কোনো সদস্য একাকিত্ব বা হতাশায় ভুগে কি না সে ব্যাপারে লক্ষ রাখুন।

৩। পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ কায়েম করুন।

৪। কম্পিউটারে parental control software ইন্সটল করে দিন। এক্ষেত্রে k9 web protection software টি use করতে পারেন।

পর্নের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরো জানতে এবং এর থেকে বাঁচার আরো উপায় জানতে এই ভিডিওগুলো দেখুন

উস্তাদ নোমান আলি খানের লেকচার অবলম্বনে বাংলা  ডাবিং

মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর লেকচার

পর্নের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে এমন দুইটা বাংলা সাইট

http://lostmodesty.blogspot.com/

https://fightagainstd.org/

তথ্যসূত্র

১। http://bit.ly/2h9J0qr

২। http://bit.ly/2zEtz08

৩। http://www.bd-pratidin.com/news/2016/12/29/195954

৪। http://www.toptenreviews.com/internet-pornography-statistics/

৫। http://www.alkawsar.com/article/351

৬। দৈনিক আমাদের সময় (২১ এপ্রিল ২০১৬)


লেখক: মুহাম্মাদ সবুজ আহমেদ

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive