ক্লাসে স্যারের প্রশ্ন: কারা নববর্ষের দিন আমাদের ফ্যাকাল্টির অনুষ্ঠানে আসো নাই?
(হাত তোলার কিছুক্ষণ পর আমাকে জিজ্ঞাসা, “কেন আসো নাই?”)
উত্তর: অনুষ্ঠানে এমন অনেক কিছু করা হয় যা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশের বাইরে যায়, তাই আসিনি।
তখন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষক ছাত্রের অবস্থানের ভিন্নতার কারণে আমার পক্ষে অনেক জোরালো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিছু বলা হয়নি। সবক্ষেত্রে মুসলিম হিসেবে আমি সঠিক – এটা প্রমাণ করার চেয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি আউটপুট জিরো হবার সম্ভাবনা থাকে, তবে কনফ্লিক্ট সিচুয়েশন এড়ানোই অধিক যুক্তিযুক্ত।
আমার খুব ভালোভাবেই জানা আছে এই ধরনের প্রোগ্রামগুলোতে কী কী হয়। তারপরও শিওর হবার জন্য ক্লাসে আমার পাশে বসা এক ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করলাম প্রোগ্রামে কী কী হয়েছিলো। বললো – গান, নাচ, নাটিকা (নন-মাহরাম মেল ফিমেল টুগেদার)
যাহোক, আমার অবস্থান সঠিক প্রমাণ করার জন্য এই হাদিসটিই যথেষ্ট যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদেরকে চৌদ্দশ বছর আগেই সতর্ক করে গেছেন।
﴾ لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ﴿
“আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।” [সহীহ বুখারী : ৫৫৯০]
এই হাদিসটিই এই বিষয়সম্পর্কিত কী হালাল আর কী হারাম তা পরিস্কার করে দেয়।
তারপরও নিচে কুরআনের কিছু আয়াত সাহাবীরা, সাহাবিদের সন্তানরা (তাবে’ঈ) কীভাবে বুঝেছেন তা তুলে ধরা হলো, যা এই প্রেক্ষাপটে আরও জোরালো প্রমাণস্বরূপ।
আল্লাহ সূরা লুকমানের (সূরা নাম্বার: ৩১) ৬ নম্বার আয়াতে বলেন –
﴾ وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ﴿
অর্থ: “মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে …”
এ আয়াত সম্পর্কে –
– আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) [একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী] বলেন, “আল্লাহ’র শপথ! এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গান বাজনা নিয়ে লিপ্ত থাকা।” (তাবারী ২০/২১৭)[১]
– কাতাদাহ (রহঃ) [একজন তাবে’ঈ] বলেন, “আল্লাহ’র শপথ! সে হয়ত তার অর্থ দ্বারা উহা ক্রয় করে না। কিন্তু এখানে “অসার বাক্য ক্রয় করা” বলতে এটাই বুঝানো হয়ছে যে, সে উহা বলতে অথবা শুনতে পছন্দ করে। তাই সে যত বেশি এটা পছন্দ করবে তত বেশি পথভ্রষ্ট হবে। সত্যের বিপরীতে সে যত বেশি এটা পছন্দ করবে এবং অগ্রাধিকার দিবে, তত বেশি সে তার কল্যাণকে ত্যাগ করে অকল্যাণের দিকে ধাবিত হবে।” (তাবারী ২০/২১৭)[২]
– কেহ কেহ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, গান শোনার জন্য গায়ক/গায়িকাদের ভাড়া করে নিয়ে আসা কিংবা তাদের আসরে গিয়ে গান শোনাও এর অন্তর্ভুক্ত।[৩]
এরপর আল্লাহ সূরা নাজমের (সূরা নাম্বার: ৫৩) ৫৯ থেকে ৬১ নম্বার আয়াতে বলেন –
﴾ أَفَمِنْ هَٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ ﴿
অর্থ: তোমরা কি এই কথায় বিস্ময় বোধ করছো!
﴾ وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ ﴿
এবং হাসি-ঠাট্টা করছো! ক্রন্দন করছো না?
﴾ وَأَنتُمْ سَامِدُونَ ﴿
অর্থ: তোমরা তো উদাসীন!
ইবন আব্বাস (রাঃ) [একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী, নবী (সঃ) এর আপন চাচাতো ভাই] বলেন যে, سمد গানকে বলা হয়। এটা ইয়ামানী ভাষা।[৪]
আর ইসলামের অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল মাহরাম, নন-মাহরাম। আল্লাহর বিধান অর্থাৎ কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী যারা মাহরাম ক্যাটাগরির মধ্যে নন অর্থাৎ যারা নন-মাহরাম, তাদের সাথে সর্বক্ষেত্রে শরয়ী পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে। সেখানে একত্রে নাটিকা করা, নাচ, গান করা … হায়! সত্যিই যদি তারা বুঝত তাদের কর্ম কিভাবে তাদের ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে।
আল্লাহ সূরা নিসা’র (সূরা নাম্বার: ৪) ৫৯ থেকে ৬১ নম্বার আয়াতে বলেন –
“তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগিনীকন্যা, তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছো সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাকো, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা(-ও হারাম); কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে (তা ভিন্ন ব্যাপার)। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য- ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোনো গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।”
আল্লাহ তা’আলা সকলকে বুঝার তাওফিক দিন। আমিন।
রাহত বিন ইসলাম
২৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬ হিজরি | ১৬ এপ্রিল ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ
[১] [২] [৩] তাফসির ইবন কাসির, বাংলা ১৫ তম খণ্ড
[৪] তাফসির ইবন কাসির, বাংলা ১৭ তম খণ্ড
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।