পৃথিবীতে দু’ধরনের মানুষ দেখা যায়। এক ধরনের হচ্ছে যারা ক্লাসে শিক্ষকের ডাক পেতে এবং সাড়া দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। দলগত ভাবে বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজ করা এদের খুব পছন্দ। বাইরের পরিবেশের বিভিন্ন অনুপ্রেরণার উপরই নির্ভর করে এদের কর্মক্ষমতা। অন্যদিকে আরেক ধরনের মানুষ দেখবেন যারা ক্লাসে রোল ডাকার সময়েও লুকাতে চায়। দলগত বিভিন্ন প্রোজেক্টগুলো তাদের কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত সহনীয়, যতক্ষণ সামাজিক যোগাযোগের মাত্রাটি সীমিত আকারে থাকে। বরং কাজগুলো বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলেই এরা যেন বেঁচে যায়। নিজ ঘরের নিরিবিলি পরিবেশেই তাদের সৃজনশীলতা ও কার্যক্ষমতা পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়।

আমি নিজের মধ্যে সব সময়ই এই শেষোক্ত শ্রেণীর বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পেতাম। আর এভাবেই এক সময় উপলব্ধি করলাম যে আমি আসলে একজন অন্তর্মুখী বা চাপা স্বভাবের মানুষ। এমন নয় যে আমি মানুষের সাথে মেলামেশা বা আড্ডায় পারদর্শী নই; কিন্তু নিজস্ব গণ্ডির মাঝের আরামপ্রদ নির্জনতা আর একাকিত্বের মাঝেই প্রকাশ ঘটে আমার চূড়ান্ত কর্মক্ষমতার।

IIRT Arabic Intensive

আবহমান কাল থেকেই এই চাপা স্বভাবের মানুষগুলোর বিচরণ থাকলেও বিংশ শতাব্দীতে কার্ল জাং সর্বপ্রথম আভিধানিকভাবে ‘ইন্ট্রোভার্শন’ বা অন্তর্মুখী শব্দটি ব্যবহার করেন মানুষের স্বভাবগত এই বৈশিষ্ট্যটিকে বোঝানোর জন্য। দৈনন্দিন জীবনে এবং এমনকি বইপত্রগুলোতেও হরহামেশাই চাপা স্বভাবের বোঝাতে ‘লাজুক’, ‘মুখচোরা’, ‘নির্জনতাপ্রিয়’ এ ধরনের শব্দগুলো ব্যবহৃত হলেও আসলে মৌলিকভাবে এগুলো অন্তর্মুখিতার সমার্থক নয়। বরং আলোচ্য শব্দটি দিয়ে একজন ব্যক্তি কোথা থেকে তার কাজের স্পৃহা, উদ্যম ও অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন তারই আলোকপাত করা হয়। যেখানে বহির্মুখীদের সমৃদ্ধি ঘটে তাদের পারিপার্শ্বিকতার ভিত্তিতে, চাপা স্বভাবের মানুষেরা তাদের অনুপ্রেরণার জন্য ডুব দেন একান্তই নিজস্ব চিন্তা-চেতনার জগতে। এই ব্যাপারটি মায়ার্স-ব্রিগ্‌স গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে চাপা স্বভাব কোনো অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং এটি শুধু এক ধরনের চারিত্রিক মনোনয়ন বা পছন্দ যা একজন ব্যক্তিকে তার কর্মোদ্যম খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

চাপা স্বভাবের মানুষদের গতানুগতিক বিভিন্ন লেবেল সেঁটে দেওয়ায় প্রায়শই তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। অধিকাংশ লোকেরই এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের মানুষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না। আর তাই সমাজে এদেরকে খাটো করে দেখার প্রবণতা দেখা যায়। তাই এরা যখন দলগত কোনো কাজে নিয়জিত হয়, তখন কাজের বিষয়বস্তু খুব চমকপ্রদ কিছু না হলে এদের জন্য দলের সাথে খাপ খাইয়ে, সাচ্ছন্দ্যে কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। চাপা স্বভাবের এই মানুষেরা যে কোনো অর্থবহ আলোচনা বা বিতর্ক বেশ উপভোগ করে। কিন্তু নিছক আড্ডাবাজি তাদের জন্য প্রচণ্ড ক্লান্তিকর। আর তাদের এই নীরবতা ও অস্বস্তিকে অনেকেই অদ্ভুত, অসামাজিক এবং অনেক সময় দাম্ভিকতা ভেবে ভুল করেন। এখানেই শেষ না, আচরণে খোলামেলা বা প্রাণবন্ত না হওয়ায় অন্তর্মুখীদের ভাবা হয় দুর্বল, লাজুক ও ব্যক্তিত্বহীন। অভিযোগ আরও আছে। এদের মধ্যে সাধারণত বলার চেয়ে শোনার প্রবণতা বেশি। অনেক ক্ষেত্রে এটি প্রশংসনীয় গুণ হলেও অধিকাংশ সময়ে এসব বোকামি, কমিটমেন্টের অভাব আর অন্যদের প্রতি অসৌজন্যমূলক বলে বিবেচিত হয়।

এই ব্যাপারগুলো অন্তর্মুখীদের কর্মোদ্যমের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেহেতু সমাজের চোখে তারা ভুলভাবে বিবেচিত হয় এবং অনুগ্রহ বঞ্চিত হয়। তাদের সৃজনশীলতার সুষ্ঠু বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিসর দেওয়া হয় না। যদিও সঠিক পরিবেশে চাপা স্বভাবের মানুষদের প্রতিভা চমৎকারভাবে বিকশিত হয়, উপরোল্লিখিত নানাবিধ সামাজিক প্রতিকূলতার ফলে এরা প্রায়শই হীনমন্যতায় ভোগে আর চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এতদসত্ত্বেও আমরা যদি অন্তর্মুখীদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে ইসলামের কিছু রীতিনীতির সাথে মিলিয়ে দেখি তবে সেটি তাদের পছন্দনীয় কর্মপন্থায় সাচ্ছন্দ্য বয়ে আনবে এবং তাদের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

ইসলামে অন্তর্মুখীদের যে স্বভাবগুলোর ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়

কোরআন মানুষের চারিত্রিক অন্তর্মুখিতা বা বহির্মুখিতার ভিত্তিতে কোনো বিভেদ করে না, তবে চাপা স্বভাবের লোকদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা এতে রয়েছে।

১। হায়া (শালীনতা)

মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দু’দিক থেকেই শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশ এসেছে। যদিও এর বাহ্যিক দিকটা সহজ, আভ্যন্তরীণ শালীনতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচেষ্টা। আর এটা অন্তর্মুখীদের জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ, যেহেতু তারা কথাবার্তায় নরম এবং আচরণে বিনম্র।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

হে বনী আদম, অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভূষার জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক, এটাই সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। [সূরা আল-আ’রাফ (৭):২৬]

২। তাদাব্বুর (গভীর চিন্তাভাবনা)

চাপা স্বভাবের মানুষদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনার জগতে ডুবে থাকার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। এর মাধ্যমে তাদের ধীশক্তি ও প্রজ্ঞার বিকাশ ঘটে।

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“চিন্তাভাবনার মতো প্রজ্ঞা আর কিছুতে নেই, নেই উত্তম আচরণের মতো কোনো সম্মান।[দারুসসালাম]

যথাযথভাবে চিন্তাভাবনার জন্য প্রশান্ত পরিবেশ অত্যন্ত সহায়ক। আগে থেকে ভেবে রাখা কোনো সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা, হালনাগাদ করা কাজের তালিকা, একটি গোছানো ঘর – এ সবকিছুই ‘তাদাব্বুর’কে করে তোলে সুখকর ও ফলদায়ক।

৩। অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকা এবং জানার জন্য প্রশ্ন করা

অন্তর্মুখীদের একটি বড় গুণ হলো অসার, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে দূরে থাকার এক সহজাত প্রবণতা। অর্থপূর্ণ আলোচনার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মানেই হচ্ছে তুচ্ছ আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট না করা।

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ … আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অহেতুক কথাবার্তা এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যপারে বেশি বেশি প্রশ্ন করাকে অপছন্দ করেন।” [আল বুখারি ও মুসলিম]

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে প্রশ্ন করাটা ভালো গুণ যদি তার পিছনে কোনো যথাযথ উদ্দেশ্য বা তাৎপর্য থাকে। একজন ব্যক্তি অন্তর্মুখী, বহির্মুখী অথবা এ দু’এর মাঝামাঝি- যে স্বভাবেরই হোন না কেন, অর্থপূর্ণ প্রশ্ন করার মনোভাব গঠনের জন্য এই ব্যপারটি মনে রাখা জরুরী।

৪। মৌনতা ও স্বল্পভাষিতা

যদিও চুপচাপ থাকাকে সাধারণত এক ধরনের খুঁত হিসেবেই ধরা হয়, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরং একে উৎসাহিত করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিঃশব্দ স্মিত হাসি এবং ই’তিকাফের রাতগুলোতে মৌন উপাসনায় নিয়োজিত থাকার জন্য সুবিদিত ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথেষ্ট ভেবেচিন্তে কথা বলতেন আর সাহাবাদের (রাঃ)-কেও তেমনটি করতে বলতেন।

তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

“যে নীরব থাকলো, সে বেঁচে গেলো।” [দারুসসালাম]

আর তাই তো সুন্নাহ পালনের লক্ষ্যে মৌনতা অবলম্বনকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে উত্তম পুরষ্কার।

৫। শ্রবণ

কোনো কিছু মন লাগিয়ে শুনতে পারার ক্ষমতা খুব বড় একটি রহমত। কোরআন এবং হাদিসে এর প্রমাণাদি পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন মনীষীদের উক্তিতেও আছে এর স্বপক্ষে নানাবিধ নিদর্শন। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

“নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার আছে অন্তঃকরণ অথবা যে শ্রবণ করে মনোযোগের সাথে।” [সূরা ক্বাফ (৫০):৩৭]

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার মূলমন্ত্রই হলো কেবল পাল্টা জবাবের জন্য না শুনে বরং ভালো করে বুঝার জন্য শোনা।

৬। নীরবতা

নীরবতা একজন ব্যক্তির নম্রতা ও বুদ্ধিমত্তার আভাস দেয়। কোনো চাপা স্বভাবের ব্যক্তি যখন কারো সম্মুখে নিশ্চুপ থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি মনোযোগের সাথে তার কথা শুনছেন। আর যখন একাকি নিশ্চুপ থাকেন তখন বুঝতে হবে যে তিনি গভীর ভাবনাচিন্তায় নিমগ্ন আছেন। সুযান কেইন তাঁর কোয়াইয়েট বইতে লিখেছেন যে নীরব থাকাটা কোনো অসম্মান জ্ঞাপনের বা নির্বুদ্ধিতার প্রতিফলক নয়। বরঞ্চ তাঁর মতে এটি নিজের ভাবনাগুলোকে গুছিয়ে সাজানোর খুব কার্যকর একটি উপায়। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।” [মুসলিম]

তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরও বলেছেন:

“তোমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার স্মরণ ব্যতিত অনর্থক কথাবার্তায় নিমগ্ন থেকো না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার যিকির ব্যতিত অতিরিক্ত কথাবার্তা অন্তরকে কঠিন করে তোলে। আর আল্লাহ তা’আলার থেকে সবচেয়ে দূরে তারাই অবস্থান করে যাদের অন্তরগুলো কঠিন হয়ে গেছে।” [আত-তিরমিযি]

ইসলামে অন্তর্মুখীদের যে স্বভাবগুলোকে কঠিনভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ‘অন্তর্মুখী’ বা ‘বহির্মুখী’ এ ধরনের কোনো স্বভাবের ভিত্তিতে মানুষের মাঝে তফাৎ করেন না। তবে অধুনা অন্তর্মুখী বলতে যে বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝায় তার কোনো কোনোটি ইসলামে অপছন্দনীয় হতে পারে, বিশেষত যেগুলো মানুষের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে।

১। মেহমানদারি থেকে দূরে থাকা

চাপা স্বভাবের লোকেরা খুব সীমিত আকারে জনাকীর্ণ ও কোলাহলপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করে, বিশেষ করে যে জায়গাগুলোতে আড্ডায় মেতে উঠতে হয়। তারা হয়তো একারণেই এড়িয়ে চলে যে পরিবারের আত্মীয়স্বজন বা অন্যান্য মুসলিমদের সাথে মেলামেশার এই স্থানগুলোতে নিশ্চুপ থাকাকে অবজ্ঞাপূর্ণ মনে করা হয়।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আর যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং বিচার দিবসে বিশ্বাস স্থাপন করে সে তার মেহমানদের প্রতি উদার হোক।” [আল বুখারি]

মেহমানদের সাথে অতিথিপরায়ণ আচরণ মুসলিমদের উপর এক বিশেষ দায়িত্ব। তাদের সামান্যতম যত্ন-আত্তির প্রচেষ্টাও ইসলামে মহৎ কাজ বলে বিবেচিত হয়। যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণকারীর জন্য বয়ে আনে অশেষ বারাকাহ। আর তাই অন্তর্মুখীদের উচিৎ শুধু আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য হলেও মাঝে মাঝে নিজেদের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে মেহমানদারিতে নিয়োজিত হওয়া।

২। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাত না করা

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“এক ফেরেশতা জনৈক ব্যক্তির নিকট গমন করলেন যে তার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলো কারণ সেই ভাইটিকে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য ভালোবাসতো। ফেরেশতা লোকটিকে জানালেন যে তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার একজন দূত এবং লোকটিকে এটি জানিয়ে দিতে এসেছেন যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা লোকটিকে ভালোবাসেন। কারণ সে তার ভাইটিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য ভালোবাসে।” [মুসলিম]

সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও আমাদের সবারই উচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটানো। স্বল্প সময়ের নিয়মিত দেখা সাক্ষাত পারস্পরিক সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে, যা সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করে তোলে। আপনি চাপা স্বভাবের হলে আপনার উচিত হবে নিজের মনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য সহনশীল করে তোলা। যে কোনো ভালো আচরণ যেমন রপ্ত করা যায়, তেমনি প্রয়োজনে নেতিবাচক স্বভাব পরিত্যাগ করাও অসম্ভব কিছু নয়। মনে রাখতে হবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক সমুন্নত রাখায় যেমন বড় পুরষ্কার আছে, অপরদিকে এই বন্ধন ছিন্ন করার মাঝে আছে গুরুতর পাপ।

৩। সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

“যে মুসলিম মানুষ জনের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের বিরক্তিকর আচরণকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে, তার জন্য রয়েছে বেশি পুরষ্কার ওই মুসলিমের থেকে যে কিনা মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না, না করে ধৈর্যধারণ।” [সুনান ইবন মাজাহ]

অন্তর্মুখীরা যে কোনো আলোচনায় গভীরতা খোঁজেন; যার ফলে বিরক্তিকর, হালকা ধাঁচের আলাপ সহ্য করা তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তার পরেও এ ধরনের যোগাযোগগুলো অনেক সময়ই এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সহজ রাস্তা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে এই ব্যাপারগুলোকে ভদ্রভাবে সামলানো। আপনি যদি কখনও অনুভব করেন যে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ছে, এমতাবস্থায় সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো একটা গভীর শ্বাস টেনে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য নিজের নিয়াত কে পুনরায় গঠন করে নেওয়া। দেখবেন পরিস্থিতি অনেকটাই সহনীয় হয়ে উঠবে।

মোহাম্মাদ ফারিস, যিনি নিজে একজন চাপা স্বভাবের মানুষ, তাঁর দি প্রডাক্টিভ মুসলিম বইতে তুলে ধরেছেন প্রতিনিয়ত একা একা কাজ করার ফলে তাঁর কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কথা। যদিও প্রাথমিকভাবে নিজে নিজে কাজ করায় তাঁর দক্ষতা বেড়েছিলো, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এটা আসলে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তিনি এ ব্যাপারটি মেনে নিয়ে নিজের সাথে বোঝাপড়া করেন। পরবর্তীতে কোনো বন্ধুকে ফোন করা, সম্ভাব্য নতুন ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করা, অনলাইনে সহকর্মীদের সাথে মিটিং—এরকম নানাবিধ কাজের মাধ্যমে তিনি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেন এবং ফলশ্রুতিতে তাঁর কর্মোদ্যম আবারও বৃদ্ধি পায়। দেখা যাচ্ছে যে এমনকি অন্তর্মুখীদেরও কাজের দক্ষতা বজায় রাখতে একটা ন্যূনতম পর্যায়ের সামাজিক যোগাযোগ প্রয়োজন।

পরিশেষে বলবো, আপনি যদি একজন চাপা স্বভাবের মানুষ হয়ে থাকেন, কাজের দক্ষতা ধরে রাখা ও বাড়ানোর জন্য আপনার প্রয়োজন হলো নিজের এই বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করেও মাঝে মাঝে চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসা। এর সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে খুশি করার নিয়াতকে দৃঢ়ভাবে মিলিয়ে দিলেই আপনি হয়ে উঠবেন প্রচণ্ড কর্মক্ষম একজন মানুষ এবং সেই সাথে মিলবে অশেষ পুরষ্কার ইন শা আল্লাহ।


উৎস: Productive Muslim (মূল আর্টিকেল লিংক)

অনুবাদ: আসিফ তারিক, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি

অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive