এক আমার স্বামীর এই দুর্ঘটনাটি আপাতদৃষ্টিতে হতাশাজনক হলেও আমাদের জন্য তা ছদ্মবেশী blessing এর রূপ নিলো। এর ফলে আমাদের উপর আল্লাহ্র নিয়ামাতের, রহমতের ও ভালওবাসার নিদর্শনের কত যে প্রমাণ পেয়েছি, তা লিখে শেষ করা যাবে না।
পা মচকানোর পরবর্তী দু-একদিন আমরা দুজন হারাম শরীফের অধিকাংশ জামাতে শরীক হতে পারিনি। সব কিছু একটু থিতু হলে আমি ধীরে ধীরে কয়েক ওয়াক্ত সালাতে মাসজিদ যাওয়া শুরু করলাম। দিনে তিন বা চার ওয়াক্ত সালাত মাসজিদে যেতে পারতাম। প্রথম প্রথম আতঙ্ক লাগতো একা যাবার কথা চিন্তা করলেই। কারণ মদিনার মতো মাসজিদের সন্নিকটে আমাদের হোটেল ছিলো না। প্রায় পনের-বিশ মিনিট হাঁটতে হতো হোটেলে থেকে মাসজিদ যেতে। এখনো মনে পড়ে প্রথম যেদিন ওকে ছাড়া মাসজিদে গেলাম, ফিরে আসার সময় হারিয়ে যাবার আতঙ্কে অস্থির হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ্ অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষের জন্য সবকিছু সহজ করে দেন।
এদিকে শারীরিক কষ্টের তুলনায় সাফির মানসিক কষ্টে মুষড়ে পড়তে লাগলো। সবাই জামাতে যাচ্ছে আর একজন জোয়ান মর্দ হয়ে তকে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে, এই ভাবনা ওর তীব্র মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। চাকরিজীবনের প্রথম সঞ্চয় ব্যয় করে, বুক ভরা আশা ও স্বপ্ন নিয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে করে ও হাজ্জে এসেছে। অর্থ সংস্থান করা, সরকারি অনুমতি নেয়া ও আমাদের বহু দিনের প্রচেষ্টার পর অবশেষে আমরা পৌঁছতে পেরেছি এই হারমাইনের দেশে। কিন্তু কাবা ঘরের এত কাছে থেকেও সেখানে যেতে না পারার ব্যর্থতকী পরিমাণ মানসিক যাতনা দিতে পারে, তা ওকে না দেখলে জানতাম না। ওর চোখে মুখে এখন কেবল হতাশা ও বিষাদ। কিন্তু আমি লক্ষ করলাম, ধীরে ধীরে এই বিষাদ পরিণত হচ্ছে এক সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা ও এক সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞায়। সেই প্রতিজ্ঞা হলো আল্লাহ্র ইচ্ছায় তাঁর ঘরে আবার ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা।
দেশ থেকে প্রচুর ইসলামী বই ও ইসলামী তথ্য সংবলিত সফট কপি নিয়ে এসেছিলাম অবসরে পড়ার জন্য। আমি তেমন একটা পড়ার সুযোগ না পেলেও সেই বইগুলো এখন কাজে লাগতে লাগলো। ও সারাদিন বাসায় থেকে এসব বই পড়তো ও লেকচার শুনতো। আমরা সারা জীবন দুনিয়াবি পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করি, কিন্তু দ্বীনের পথে ব্যয় করার জন্য আমাদের সময় হয় না। পার্থিব ছলনাময় জীবন আমাদের মিথ্যে ব্যস্ততায় মোহগ্রস্ত করে রাখে। সাফিরের ক্ষেত্রে কথাটি আরো বেশি সত্য ছিলো। স্কুল জীবন থেকে ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা ও তারপর সামরিক বাহিনীতে যোগদানের ফলে সর্বদা কঠিন নিয়ম কানুনের ভেতর দিয়ে ওকে যেতে হয়েছে। সেই সাথে ছিলো অফিসের সার্বক্ষণিক কাজের চাপ। যেখানে দম ফেলার সময় পাওয়া মুশকিল ছিলো, সেখানে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে তার উপর reflect ও realize করার জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা নিতান্তই কঠিন কর্ম।
হাজ্জে আসার আগ পর্যন্ত সাফির ছিলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা একজন গড়পড়তা সাধারণ মুসলমান, যে কিনা সময়ের ও সুযোগের অভাবে কিংবা আলসেমির কারণে দ্বীনের রাস্তায় সময় লাগাতে পারছিলো না। কিন্তু আল্লাহ্ যাকে তাঁর পথে শক্ত করে আনতে চান ও ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, তাকে তিনি কোন বিচিত্র উপায়ে পথ দেখাবেন, তা উনিই জানেন। সাফিরের পা মচকানো ওর জন্য “blessing in disguise” অর্থাৎ ছদ্মবেশী রহমতে পরিণত হলো।
ইসলাম নিয়ে শুধু পড়াশোনা করলেই হয় না, বরং জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে অর্জিত জ্ঞান অনুভব করতে হয় এবং নিজের ব্যবহারিক জীবনের আচার আচরণে সেই জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটাতে হয়। আমাদের সমাজে কতিপয় মানুষ দেখা যায় যারা কথায় কথায় হাদীস কপচায়, প্রচুর মুখস্থ ‘বিদ্যা’ আছে ইসলামের ওপর। কিন্তু সেই জ্ঞানের কোনো প্রতিফলন তাদের ব্যবহারে ও জীবনযাত্রায় দেখা যায় না। বরং তারা জ্ঞানের বোঝায় অহংকারী হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে ও মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে। অথচ সত্যিকারভাবে যে ইসলামের স্বাদ আস্বাদন করবে, তার পরিবর্তিত আচরণ দ্বারাই তা প্রকাশ পাবে।
ইসলামের জ্ঞানের রাজ্যে যে কড়া নাড়বে, সে ধরে নিতে পারে তার প্রচুর জ্ঞান অর্জন হয়ে গেছে। নিজেকে অনেক বিদ্বান ভেবে বসা তার জন্য আশ্চর্যের হবে না। কিন্তু সেই জ্ঞানের রাজ্যের যত গভীরে মানুষ প্রবেশ করবে, তত উপলব্ধি করতে পারবে আমাদের জানার পরিধি কতটা সীমিত ও নগণ্য। অসীম জ্ঞানের দুয়ারে দাঁড়িয়ে নিজের সসীম ধারণ ক্ষমতা আমাদের তখন আর উদ্ধত করবে না, বরং বিনম্র ও লজ্জিত করবে। আমাদের কারো পক্ষে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়, অতএব নিজের জানা-বোঝার ব্যাপ্তিকেই সর্ব জ্ঞান অনুধাবন করা নিরেট মূর্খতা বৈ আর কী?
আমাদের দেশের অধিকাংশ নাগরিকের ইসলামিক শিক্ষা পূর্ব পুরুষদের দেখে আসা ও প্রাচীন কাল থেকে লোক মুখে শোনা ধর্মীয় রীতিনীতির অন্ধ অনুসরণ। বহু যুগ ধরে আমাদের বাসায় বাসায় বিভিন্ন তাবিজ কবজের জ্ঞান সমৃদ্ধ, বহু জাল ও দুর্বল হাদীস সংবলিত বইগুলোকে ইসলাম সম্পর্কে জানার মূল মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছি আমরা। ওদিকে কুরআন মাজিদকে আমরা সযত্নে তুলে রাখি শেলফের সর্বোচ্চ তাকে, পাছে যদি কুরআনের অবমাননা করে ফেলি, সেই ভয়ে। অথবা অনেকেই চিন্তা করেন কুরআন নিশ্চয় অনেক কঠিন, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কি আর কুরআনের মতো অসাধারণ কিতাব বোঝার ক্ষমতা রাখে? তাই মাঝে মাঝে গিলাফে মোড়ানো কুরআন খানি ধুলা ঝেড়ে আবার সুউচ্চ তাকে রেখে দেই সম্মানের সাথে।
আল্লাহ্ কুরআন নাযিল করেছেন ‘সমগ্র’ মানব ও জ্বিন জাতির জন্য। যিনি আমাদের সকল সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্তা, তিনি অবশ্যই জানেন তাঁর সৃষ্ট জীবের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা কতদূর। অতএব তিনি কুরআন সর্ব সাধারণের বোধগম্য করেই নাযিল করেছেন। আমাদের ইসলামী শিক্ষার মূল উৎস যদি হয় কুরআন ও হাদীস, কেবলমাত্র তখন সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন সম্ভব হবে, নতুবা নয়। শিক্ষক কিংবা মা-বাবার মুখ থেকে ছোটকাল থেকে শুনে আসা সকল ধর্মীয় শিক্ষা সঠিক দলিলের কষ্টি পাথর দ্বারা যাচাই করে নেয়া উচিৎ।
আমাদের আশৈশব জেনে আসা যেকোনো তথ্য যদি সহীহ দলিল দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে ভুল তথ্যগুলো ঝেড়ে ফেলে সত্যকে আঁকড়ে ধরাই কাম্য। পিতৃপুরুষগণের কখনোই ভ্রান্ত ধারণা থাকতে পারে না, এমন ধারণা করা মক্কার জাহেলিয়াত আমলের মুশরিকদের চিন্তাধারার অনুরূপ। তাই আমাদের মন- মানসিকতা সব সময় উদার রাখলে, পরিবর্তন এবং জ্ঞানের পথে উন্মুক্ত রাখলে, যেকোনো সহীহ জ্ঞান আমরা সহজে অনুধাবন করতে ও গ্রহণ করতে পাবো ইনশা আল্লাহ্। মুশরিকদের মতো আত্ম-অহমিকা যেন আমাদের সত্য বোঝার ক্ষেত্রে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়।
ভুলে ভরা বইগুলোর কিছু জেনারেল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেখানে কতিপয় বুজুর্গের স্বপ্নে পাওয়া জ্ঞানের বাণী কপচানো হয়, কিংবা কোন দু’আ কতবার পড়লে কোন বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে সেসবের বিস্তারিত বর্ণনা থাকে (হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া)। স্বামী- সন্তান থেকে শুরু করে কাজের বুয়া বশীকরণের মন্ত্র পর্যন্ত সেইসব ‘ইসলামিক’ বইতে পাওয়া যায়। নারীদেরকে অবমাননা সূচক কথার ছড়াছড়ি থাকে সেখানে। আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্য মূলক আচরণের জন্য এ ধরনের ভ্রান্তিময় কিতাব বহুলাংশে দায়ী। তাছাড়া প্রচুর বাণীর আগে পরে লেখা থাকে, “হাদীস শরীফে বর্ণিত”। কিন্তু কোন হাদীস গ্রন্থের কত নম্বর হাদীস, তা অনেক ক্ষেত্রেই খুঁজে পাওয়া যায় না। এইসব বইতে ভালো কথার পাশাপাশি মিথ্যা ও নোংরা তথ্য মিশিয়ে ফেলা হয়। Context ছাড়া হাদীসের উল্লেখ এবং দুর্বল ও পরিত্যাজ্য হাদীসের সয়লাব থাকে চোখে পড়ার মতোন। এক কথায় আমাদের ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু বাঙালি জাতিকে ভ্রান্ত পথে নেবার জন্য এ ধরনের ভুলে ভরা ও সস্তা ভাষায় লেখা বহুল প্রচলিত বইগুলোই যথেষ্ট!
সারাদিন হোটেলে অবস্থান করে ও বিভিন্ন বই পত্র পড়ে আল্লাহ্ সাফিরকে দিয়ে যেন দ্বীন ইসলামের এক অদেখা সৌন্দর্য আবিষ্কার করালেন। মাত্র সপ্তাহ দু-একে কেউ বিশাল জ্ঞান অর্জন করে বিদ্যাসাগর হয়ে যেতে পারে না। কিন্তু দ্বীন ইসলামের সুমিষ্ট স্বাদ নিশ্চয় পেতে পারে। আল্লাহ্ আমাদের বোধশক্তিসম্পন্ন হবার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু দুনিয়াবি লালসায় আমরা আমাদের বোধ শক্তিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি।
হাজ্জে এসে সাফিরের হাতে এখন অফুরন্ত সময়, অফিসের চাপ নেই ও বাধ্যতামূলক ভাবে গৃহবন্দী। অতএব, ধর্ম ও জীবন নিয়ে চিন্তা করার জন্য এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। আমি বলবো না, ও অনেক বড় ধর্মীয় জ্ঞানের পণ্ডিত হয়ে গেছে কিংবা অত্যন্ত ধার্মিক হয়ে গেছে অথবা প্রচুর আমল করছে হাজ্জ থেকে আসার পর। কারো অন্তরের তাকওয়ার খবর তো আর আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে শুধু একটি কথাই বলবো, তা হলো ‘মালিক’ তাঁর বান্দাকে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানার একটি ‘সুযোগ’ করে দিয়েছেন। সকল প্রশংসা সেই সুমহান রব্বের, যিনি তাঁর দাসদের হিদায়েতের পথ দেখান ও তাঁর কাছেই বিনীত নিবেদন, যেন তিনি আমাদের সকলকে সুদৃঢ় রাখেন সেই পথে। কারণ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শয়তানের ফিতনায় পড়ে পথভ্রষ্ট হবার আশঙ্কা থাকে মানুষের।
দুই ধীরে ধীরে হাজ্জের সময় এগিয়ে এলো ও যিলহাজ্জ মাস শুরু হলে হয়ে গেলো। এ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন। রামাদ্বানের শেষ দশকের রাত্রিকালীন ইবাদাত যেমন সমগ্র বছরের মাঝে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে, ঠিক তেমন যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকের ইবাদাত বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এই দিনসমূহে ধর্মপ্রাণ মুসলিমেরা সওম রাখেন ও বিভিন্ন নফল ইবাদাত করেন। মাসের প্রথম দিকে সওম রাখতে না পারলেও আরাফাত দিবসের সওম সহজে কেউ বাদ দেন না। যারা হাজ্জে আসেন, তারা সাধারণত যিলহাজ্জ মাসের নফল সওমগুলো রাখেন না।
সাফির যেহেতু হোটেলে রুমেই থাকছে এবং তার কোনো শারীরিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে না, অতএব সে যিলহাজ্জ মাসের সওম রাখা শুরু করে দিলো। ফলে আমাকে ওর সকালের ও দুপুরের খাবার নিয়ে আর চিন্তা করতে হতো না। বক্সে করে ওর জন্য শুকনো খাবার ইফতারি হিসেবে দিয়ে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতাম। সারাদিনে শুধুমাত্র ঈশার পর বাইরে থেকে আনা রাতের খাবার আমাদের একত্রে খাওয়া হতো।
ওর ইফতারির বক্স যোগাড় হতো এক বিচিত্র উপায়ে। সৌদি বাদশাহের তরফ থেকে প্রতিদিন সকাল আটটা ও আসরের পর মিসফালাহ ব্রিজের পাশে বিশাল এক ট্রাক হতে হাজীগণকে বিনামূল্যে খাবারের বাক্স সরবরাহ করা হতো। সেই লাইন হতো অতীব দীর্ঘ। প্রায় এক ঘণ্টার অধিক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। প্রত্যেককে দুই বাক্স খাবার দেওয়া হতো। দেশি-বিদেশি হুজ্জাজগণ লম্বা সময় ধৈর্য সহকারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং খুশি মনে খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। অনেকের কাছে এই পদ্ধতি শুনে খয়রাতি খাবার মনে হবে, কিন্তু অবস্থান ও পরিবেশভেদে এভাবে খাবার নেয়াতে কেউ কোন লজ্জা পেতো না। আমাদের রুমের সকলেই বেশিরভাগ দিন এই বাক্স দিয়ে নাস্তা করতাম। সকালে অনেকবার এ লাইনে দাঁড়ালেও আসরের পর কখনো খাবারের বাক্স নেবার সময় পেতাম না।
এক বাক্স খাবার একজনের উদরপূর্তির জন্য যথেষ্ট হতো, যে কারণে এক বাক্স দিয়ে আমার সকালের নাস্তা হতো ও অন্য বাক্স দিয়ে সাফিরের ইফতার হতো। প্রতিটি বাক্সে মজাদার বিস্কিট, কেক, অথবা চিজ রোল, জুস সহ হরেক রকমের শুকনো খাবারের সমাহার থাকতো। অনেক বাঙালি আবার এসব খাবার জমিয়ে জমিয়ে দেশে পরিবার পরিজনের নিয়ে যেতেন। আবার যারা দুই বেলা লাইনে দাঁড়াতেন, তাদের এত খাবার জমে যেত, তখন তাদের শুধু এক বেলার খাবার কিনে খেলেই চলতো! আর বাকি দিন এসব খাবারেই চলে যেতো।
সবুজ রঙের কাগজের বাক্সগুলোর উপর লেখা থাকতো, “from custodian of two Harmain” অর্থাৎ সৌদি বাদশাহর তরফ থেকে। আরো লেখা থাকতো, এই উপহারের বিনিময়ে যেন সবাই বাদশাহের জন্য দু’আ করি। আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম, তেলের উপর বসে থাকা রাজপরিবারের কোনো কিছুর অভাব নেই। সুতরাং তাঁদের জন্য দু’আ করতে গেলে তাঁদের হিদায়াতের জন্যই দু’আ করতে হবে, এই একটা জিনিসেরই বোধ করি তাঁদের কিছুটা অভাব রয়েছে। ইসলামে রাজতন্ত্রের স্থান নেই, এই ব্যাপারে আল্লাহ্ যেন সৌদি বাদশাহদের হিদায়াত দেন ও তাঁরা যেন সত্যিকারের মুসলিমদের মতো জীবনযাপন করতে পারেন।
তিন প্রায় বারো দিন শয্যাশায়ী থাকার পর সাফির মাসজিদে যাবার মতোন সুস্থ বোধ করলো। আমরা আমাদের নতুন দ্বিচক্র যান (হুইল চেয়ার) নিয়ে মাসজিদের পথে রওনা দিলাম। এদেশে অনেক হাজ্জযাত্রী হুইল চেয়ারে করে চলাচল করেন। তাই এই এর ব্যবহার এখানে তেমন চোখে লাগে না। বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য হুইল চেয়ার ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। যারা একাধিক শিশু সন্তান নিয়ে হাজ্জে আসেন, তাঁদের দেখা যায় দু-তিন সন্তানকে একত্রে এ চেয়ারে বসিয়ে আরাম করে চলাচল করেন। এর ফলে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কষ্ট করতে হয় না, বাচ্চারাও বিমলানন্দ ভোগ করে।
তাই আমাদের দিকে কেউ অবাক দৃষ্টিতে তাকাতো না, তবে কেন যেন আমাদের দেখে মায়ায় অনেকের মন আর্দ্র হয়ে যেতো। তাদের কেউ কেউ ছুটে আসতো আমাদের সাহায্য করার জন্য। একাধিকবার দেখা গেছে, কোনো একজন হঠাৎ করে পথিমধ্যে উদয় হয়ে সাফিরের হুইল চেয়ার অনেক দূর পথ পর্যন্ত ঠেলে দিয়ে আবার কোথায় যেন গায়েব হয়ে যেতো। ধন্যবাদ নেবার জন্যও দাঁড়াতে চাইতো না। আল্লাহ্র ঘরের মেহমানদের তারা আল্লাহ্র ওয়াস্তে সাহায্য করে নিজের পথে হাঁটা দিতো।
২০১৩ সালে হাজ্জ করেছি আমরা। তখন কাবা ঘর ঘিরে সাময়িক চক্রাকারের রাস্তা দেওয়া হয়েছিলো। কাবা ঘরের চারদিকে ঘিরে এই দ্বিতল চক্রাকারের রাস্তা তৈরি করা হয়েছিলো হুইল চেয়ারে তওয়াফ করার জন্য। আরো অনেকের মতো আমার কাছেও মনে হতো, এর জন্য কাবা ঘরের সৌন্দর্য দূর থেকে দেখতে পাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু নিজেরা ব্যবহার করে অনুধাবন করতে পেরেছি কতটা উপকার হয়েছে ওই রাস্তাটি নির্মাণের ফলে। কারণ সাধারণ তওয়াফকারীদের সাথে হুইল চেয়ার নিয়ে তওয়াফ করা হলে যিনি চেয়ারে বসে আছেন তার যেমন কষ্ট হবে, ঠিক তেমনি হুইল চেয়ারের তীক্ষ্ণ পা দানির ধাক্কা খেলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হয়ে রক্তারক্তি হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।
এখানে তওয়াফ করার সময় একটি মজার ঘটনা ঘটতো। নিচতলায় উত্তরোত্তর ভিড় বৃদ্ধি পাওয়াতে এই চক্রাকার পথে সহজে ভিড়মুক্ত অবস্থায় তওয়াফ করতে অনেকের মনেই খায়েশ জাগতো। তাই আমাদের সাথে অনেকেই জুটে যাবার চেষ্টা করতো, কারণ কোনো হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী সাথে না থাকলে এই পথে গার্ডরা প্রবেশ করতে অনুমতি দিতো না। হারাম শরীফের গার্ডরাও মূর্খ নয়। শেষমেশ নিয়ম করা হয়েছিলো, একটি হুইল চেয়ার আরোহীর সাথে শুধু মাত্র একজন সাথী থাকতে পারবে, এর বেশি নয়।
হাজ্জের দিন যতই এগিয়ে আসলো, আমাকে সকলে মিলে নানাভাবে বোঝাতে লাগলেন আমরা যেন হাজ্জের সময়ের জন্য হুইল চেয়ার পুশ করার কোন লোক ভাড়া করি। এখানে এই কাজের জন্যও মানুষ ভাড়া খাটে! আরাফাত ও মুযদালিফার রাস্তা মক্কার মতোন মসৃণ নয়, উঁচু নিচু ও পাথুরে রাস্তার সমন্বয় সেখানে। তাই সবার ধারণা হচ্ছিলো সেখানে সহজে হুইল চেয়ার ব্যবহার করা যাবে না, চেয়ার পুশ করতে যথেষ্ট কষ্ট হবে। তাঁদের কথায় আমিও ভড়কে যাচ্ছিলাম। কারণ সত্যিই যদি কষ্টকর রাস্তা হয় এবং মাঝপথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের দুজনের হাজ্জই হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে শামছু সাহেব নামের আমাদের পরিচিত একজন আগ্রহ প্রকাশ করলেন হাজ্জের সময়ে আমাদের সাহায্য করার জন্য। অবশ্যই আল্লাহ্র ওয়াস্তে, কোনো অর্থের বিনিময়ে নয়। তিনিও আমার স্বামীর অফিসে চাকরি করেন। ওই ভদ্রলোকের উপকার ও মহানুভবতা কখনো ভুলবার নয়।
চার হাজ্জের আগের শেষ জুমু’আর জামাতে বরাবর অভাবনীয় ভিড় হয়। সকাল আটটা- নটার ভেতর মসজিদে প্রবেশ করতে না পারলে হয়তো রাস্তায় গরম পিচের ওপর সালাত পড়তে হবে। তাই আমরা বেশ সকালের দিকে মাসজিদে পৌঁছে গেলাম, অত সকালেও চারদিক মানুষে সয়লাব হয়ে ছিলো। যারা যারা হাজ্জ করবেন, প্রায় সকলেই এখন মক্কায়। এ বছর মাসজিদুল হারামে কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে, তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ কম এসেছে।
এবার মাত্র বিশ লাখ লোকে হাজ্জে এসেছেন, যেখানে বিগত কয়েক বছরে হুজ্জাজের সংখ্যা ছিলো পঁচিশ লাখ থেকে ঊনত্রিশ লাখ!!! আমরা এই বিশ লাখ মানুষের স্রোতেই হাবুডুবু খাচ্ছি। যখন প্রায় তিন মিলিওন অর্থাৎ ত্রিশ লাখ মানুষ থাকেন, তখন কী অবস্থা হয় তা আমার পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। যখন মাসজিদ থেকে বের হই, যেদিকে দুচোখ যায়, সর্বত্র শুধু মানুষের ঢল দেখি। সাদা, কালো, ধনী-দরিদ্র, দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি এক ধ্যানে এক মনে আল্লাহ্র ইবাদাতের জন্য এখানে এসেছেন। আহা, মুসলিম উম্মাহর কী এক অসাধারণ সম্মেলন এই মক্কা নগরীতে…
সকাল দশটা নাগাদ মাসজিদের সকল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো। কারণ মাসজিদের ভেতর টইটুম্বুর হয়ে গেছে, তিল ধারণের যায়গা নেই আর। এখন যারা আসবেন, সবাইকে বাইরে সালাত পড়তে হবে।
সাড়ে এগারোটার দিকে জুমু’আর খুতবা শুরু হলো। অবশ্যই খুতবা আরবীতে হয়েছে। সেদিন আরবী না জানাতে আমার যে পরিমাণ মনস্তাপ হয়েছিলো, তা আর কখনো হয়নি। হাজ্জ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত, হাদীসের বাণী আর হাজ্জের মাহাত্ম্য ছিলো সেদিনের বক্তব্যের মূল বিষয়। পরিচিত হাদীস বা কুরআনের আয়াত কানে আসলে উদগ্রীব হয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম। সারাক্ষণ মনে হতো কানের উপর দিয়ে শব্দগুলো চলে যাচ্ছে, অল্পের জন্য বুঝতে পারছি না। কী যে আফসোস হচ্ছিলো তখন! ইমাম সাহেব এক আবেগপূর্ণ খুতবা দিয়ে জুমু’আর সালাত শেষ করলেন।
হাজ্জের মূল শিক্ষা, তাৎপর্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে আজ। সকলের মন অত্যন্ত তরল অবস্থায় আছে, আবেগে টইটুম্বুর হৃদয় নিয়ে কাতর হয়ে আছে সবাই। হাজ্জ শুরু হতে আর মাত্র এক দিন বাকি। জুমু’আর খুতবার সাথে সাথে সর্বত্র কেমন এক ভাবগাম্ভীর্যূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হলো। সবার অন্তরে নাড়া পড়ে গেলো, মনে পড়ে গেলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত হাজ্জ এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। আমরা সৌদি আরবে এসেছি প্রায় ৫ সপ্তাহ হয়ে গেছে। আর এক দিন পর শুরু হয়ে যাবে আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত হাজ্জ … সকলের চেহারায় এখন এক অন্যরকম শান্ত সৌম্য ভাব। আল্লাহ্র কাছে আশা, ভয় ও ভালোবাসা নিয়ে হুজ্জাজগণ অপেক্ষায় আছেন আল্লাহ্র ক্ষমা পাওয়ার সেই বিশেষ দিনের জন্য … বিশেষ মুহূর্তগুলোর জন্য … হাজ্জের দিনের জন্য।
এদিকে কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে আমাদের এক আত্মীয় স্ত্রী নিয়ে এসেছেন হাজ্জ করতে। তাঁদেরও বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক হবে। আজকাল বাংলাদেশের অনেকেই নতুন জীবনের শুরুতে হাজ্জ করার চেষ্টা করছেন। সাথে উনার বাবাও এসেছেন, উনার বাবার মতো হাজ্জ-পাগল মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। আল্লাহ্ উনাকে সামর্থ্যের সাথে সাথে মনের ইচ্ছাও দিয়েছেন। প্রতিবছর উনি হাজ্জে আসেন। মোট কতবার এসেছেন, তার হিসেব তিনি নিজেও এখন আর জানেন না। জিজ্ঞেস করায় জানা গেলো, ১৯তম হাজ্জ পর্যন্ত ঘরের লোকেরা গণনা করেছেন। এর পর আর হিসেব রাখা হয়নি এবং এই উনিশ তম হাজ্জ করা হয়েছে বহু বছর আগে! এ বছর কত তম হাজ্জ, আল্লাহ্ পাকই বলতে পারবেন। সুবহানাল্লাহ!!!
একদিন সেই আত্মীয় সাফিরকে দেখতে এলেন। যেহেতু উনার বাবা বহুবার হাজ্জে এসেছেন, তাই কীভাবে হাজ্জ করলে সাফিরের কষ্ট কম হবে, সে ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন। হাজ্জের মূল দিন হলো আরাফাতের দিন। হাজ্জ সিদ্ধ হবার জন্য আরাফাতে অবস্থান আবশ্যকীয়। যারা হাজ্জে এসে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদেরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হলেও আরাফাতের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে পর্যাপ্ত সময় অবস্থান করানো হয়। মামা বললেন, সাফিরকে আরাফাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে এবং ওর জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপে দায়িত্ব অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিতে।
এসব কথা শুনে আমার ও সাফিরের দুজনের মন অসম্ভব খারাপ হয়ে গেলো। এত দূর থেকে, এত আশা নিয়ে হাজ্জে এলাম, আর এখন আরাফাতের ময়দানে প্রাণ ভরে থাকতে পারবো না!! এর চাইতে কষ্টের আর কী হতে পারে!! তাছাড়া ওর অসুস্থতা আল্লাহ্র রহমতে তেমন গুরুতর নয়। ঠিক করলাম, আমরা অন্যান্যদের সাথে একত্রে মিনা-আরাফাত-মুযদালিফায় যাবো। আল্লাহ্ নিশ্চয় সাহায্য করবেন আমাদের। আগামীকাল সন্ধ্যায় সবাই মিনাতে রওনা হবো।
মিনাতে যাবার নিয়ম হলো যিলহাজ্জ মাসের আট তারিখ ফজরের পর রওনা হওয়া। নয় তারিখ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে আরাফাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ও যোহরের আগে আরাফাতে পৌঁছানো। কিন্তু হাজ্জযাত্রীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সকলের সুবিধার্থে ও রাস্তা-ঘাটের ভিড় কমানোর জন্য সাত যিলহাজ্জ রাতের বেলা থেকেই অনেক গাড়ি মিনা রওনা দেয়। একই সময় বিশ-ত্রিশ লাখ মানুষ যদি মিনার পথে রওনা হয়, তাহলে প্রচণ্ড যানজটে সকলের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
আজ সাত যিলহাজ্জ রাতে আমাদের গাইডও অন্যান্য অনেকের সাথে আমাদের নিয়ে মিনার পথে যাত্রা শুরু করবেন। বলে দেওয়া হলো, আজ ঈশার জামাত শেষ হবার পর দেরি না করে যেন আমরা হোটেলে ফেরত আসি। কারণ ঈশার পরপর আমাদের বাস ছেড়ে দেবে। আজ সাফির ক্লান্ত হয়ে পড়বে দেখে আর বের হলো না। আমাকে পই পই করে বলে দিলো, ঈশার পর যেন আমি বিন্দুমাত্র সময় এদিক ওদিক না করে দ্রুত হোটেলে চলে আসি।
আমার ডিফেন্স অফিসার স্বামী বেচারা বুঝতে পারেনি যে, গাইডের বেঁধে দেওয়া সময় তাদের ডিফেন্সের বেঁধে দেওয়া সময় নয়। ডিফেন্সে সন্ধ্যা সাতটায় কোথাও যাবার কথা থাকলে সেই সময় অদল বদল হয়ে ছটা পঞ্চান্ন হতে পারে, কিন্তু সাতটা পাঁচ হলে তা হবে বিরাট অপরাধ! আমাদের গাইডের “ঈশার পর” যে ঈশার জামাতের পর থেকে শুরু করে ফজরের জামাতের মধ্যবর্তী যেকোনো সময় হতে পারে, তা আমাদের দুজনের কারোর মাথায়ই আসেনি!!!
আমি মাগরিবের পর ঈশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। মাসজিদ হারামে হাজ্জের আগে আগে একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। সবাই কাঙ্ক্ষিত দিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন এবং মুসল্লিগণ নিজেদের ইবাদাতের সৌন্দর্য দিয়ে সেই অপেক্ষার দিনগুলো মহিমান্বিত করে তোলেন। যেমন বিগত কয়েকদিন যাবত মসজিদে কিরাত ক্লাস হচ্ছে, মুসল্লিরা অনেকেই এই ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। সুরেলা কণ্ঠের তিলাওয়াতে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠছে।
অনেকে আজ শেষ মুহূর্তের উমরাহ্ করছেন। ঈশার পর হারাম সীমানার জনসমুদ্র হালকা হয়ে যেতে লাগলো। যারা আজ রাতে আমাদের মতো মিনার পথে রওনা দেবেন, তাঁরা হয়তো তাড়াতাড়ি হোটেলে ফেরত যাচ্ছেন। ধীরেসুস্থে বের হতে গিয়ে আমি কিছুটা দেরি করে ফেললাম। এদিকে সাফির ফোন করে করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
আমি তাড়াহুড়া করে হাঁটা দিলাম। যাবার পথে আমাদের দুজনের ফোনের ব্যালেন্স ভরতে হবে। আগামী কয়েকদিন ফোনে টাকা ভরার সুযোগ না-ও পেতে পারি। ওর ক্রমাগত ফোনের কারণে মোবাইল কার্ড কেনারও সময় পেলাম না। আসার পথে রাতের খাবার কিনে আনলাম। খাবার খেয়ে, গোসল করে, ইহরামের কাপড় পরে বাসের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। গিয়ে যদি দেখি আমার জন্য পুরো বাস ভর্তি সকলে যদি অপেক্ষা করে বসে থাকে, তাহলে ব্যাপারটি খুব লজ্জাজনক হবে। আমি আরো দ্রুত পা চালাতে লাগলাম …
পরবর্তী পর্ব: মিনার পথে পথ হারিয়ে
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।