সূত্রপাত
বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। এ দিনটি বাংলাদেশে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। আসাম ও ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও উৎসবে অংশ নেয়।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো, হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। কাজেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব।
ইতিহাস
ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতো। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলতো না। এতে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল “ফসলি সন”, পরে “বঙ্গাব্দ” বা “বাংলা বর্ষ” নামে পরিচিত হয়।
তখন প্রত্যেকে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়, যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। তবে পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সনের পূর্বে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।
যেভাবে পহেলা বৈশাখকে বরণ করা হয়
শির্ক মিশ্রিত আচার-অনুষ্ঠান
রমনা বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রস্তুত, প্রস্তুত শ্রোতারা। অপেক্ষা কেবল সূর্য উঠার। কেন? সূর্য উঠার অপেক্ষা কেন? মুসলিম কি সূর্য উঠার জন্য অপেক্ষা করতে পারে? অথচ সেই সময় ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত সালাত পড়াও নিষেধ। হাদিসে এসেছে
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। (তা হলো) : সূর্য উদয়ের সময় হতে তা উপরে না উঠা পর্যন্ত; ঠিক দুপুর বেলায় সূর্য পশ্চিম দিকে না ঢলে পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় তা সম্পূর্ণ ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছেন। [সুনানে আবু দাউদ, ৩১৯]
সূর্য উঠার সাথে সাথেই রবি ঠাকুরের প্রার্থনামূলক সঙ্গীত “এসো হে বৈশাখ এসো … ” দিয়ে শুরু হবে বর্ষবরণ। রবি ঠাকুরের প্রার্থনা কি এক আল্লাহর কাছে?!! নাকি পৌত্তলিকদের রীতি অনুযায়ী বৈশাখকে ঐশ্বরিক সত্ত্বা হিসেবে কল্পনা করে তারই কাছে? (এখানে একটা কথা বলে রাখি, তা হলো রবি ঠাকুর প্রার্থনা করবে তার বিশ্বাস অনুযায়ী, এটাই স্বাভাবিক। সে যাকে মানে, তাঁর কাছে সে প্রার্থনা করবে। এটা রবি ঠাকুরের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু মুসলিম মান্য করে এক আল্লাহ্কে, তাই সে প্রার্থনা করবে আল্লাহ্রই কাছে।)
ওহে মুসলিম! তুমি কি সেইভাবে প্রার্থনা করবে, যেভাবে রবি ঠাকুর প্রার্থনা করেছিলো? উত্তরটা তোমার সুস্থ বিবেকের উপর ন্যস্ত করলাম।
এই গানটির মধ্যে শির্ক স্পষ্ট। কারণ তার একটি কলি হলো “অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা”। অর্থাৎ, আগুনে গোসল দিয়ে গোটা জগত পবিত্র হোক। আগুন পবিত্র করার ক্ষমতা রাখে, এ বিশ্বাস হিন্দুদের। (এখানে একটি বিষয় clear করি। তা হলো, হিন্দুরা যেসব জিনিসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা তা রাখতেই পারে। এটা তাদের ইচ্ছা এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু মুসলিমদের আক্বীদাহ বিশ্বাস আর হিন্দুদের আক্বীদাহ বিশ্বাসের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। তাই মুসলিমরা তাদের বিশ্বাস নিয়ে থাকবে আর হিন্দুরা থাকবে তাদের বিশ্বাস নিয়ে। আমার এই লেখাটির দ্বারা কোনো প্রকার ভুল না বোঝার জন্য আহ্বান করা হলো।)
ওহে মুসলিম! তুমিও কি সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী?!! আশা করি তুমি তা নও।
তোমাকে আমি কুরআনের আয়াত স্মরণ করিয়ে দেই।
অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শির্কও করে। [সূরাহ ইউসুফ (১২):১০৬]
আর যারা শির্ক থেকে বেঁচে থাকতো, আল্লাহ তাদেরকে সাফল্যের সাথে মুক্তি দেবেন, তাদেরকে অনিষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। [সূরাহ আয-যুমার (৩৯):৬১]
সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র
এই দিনকে ঘিরে অনেক রকমের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তার মধ্যে গান বাজনা অন্যতম আকর্ষণ। আর গান ও বাদ্যযন্ত্র ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। আর বর্তমানে যেসব গান আমাদের মাঝে প্রচলিত, যেমন- আইটেম সং, র্যাপ সং আর ভালবাসার গান নামে যা শুনি বা দেখি (video song), তাতে সুস্পষ্ট অশ্লীলতা বিদ্যমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴾وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ﴿
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। [সূরাহ লুকমান (৩১): ৬]
বেশিরভাগ তাফসীরকারকগণ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবন মাস‘উদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন: তা হচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: তা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
আর হাদীসের ভাষ্য হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখো, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম। (জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮)
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে, যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন,
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮)
‘আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,
পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে, তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাছাতুল লাহফান, ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী, ১৪/৫২)
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবাগণের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে। সহীহ বুখারীতে আছে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ বলেন,
আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে। (সহীহ বুখারী হাদীস : ৫৫৯০)
মঙ্গল শোভাযাত্রা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরের শাহবাগ-রমনা এলাকায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই শোভাযাত্রায় চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম বহন করা হয়। বিশেষ করে বাঘ, হরিণ, পেঁচা ইত্যাদি। আর এইগুলো বহন করে আনার উদ্দেশ্য যদি এই থাকে যে, এইগুলো মঙ্গল আনতে পারে; তাহলে এহেন বিশ্বাস সুস্পষ্ট শির্ক। কারণ মঙ্গল ও সমৃদ্ধির বিধাতা একমাত্র আল্লাহ্। তাই কোনো মুসলিম বাঘ, হরিণ, পেঁচা ইত্যাদির মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। আর শিরকের ব্যাপারে উপরে আলোচনা হয়েছে, তারপরও এখানে আবারও স্মরণ করিয়ে দেই।
মহান আল্লাহ্ বলেন,
…নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই। [সূরাহ আল-মায়িদাহ (৫):৭২]
একই মর্মে হাদীসে এসেছে,
যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম হা/২৬৬৩)
একটি ধোঁকা
বাঙ্গালী জাতিকে একটি মুখরোচক স্লোগান দিয়ে চরম ধোঁকার মধ্যে রেখেছে নামধারী কিছু বুদ্ধিজীবী। স্লোগানটি হলো, পহেলা বৈশাখ নাকি হাজার বছরের ঐতিহ্য!! কত বড় ডাহা মিথ্যা কথা তা একটু ইতিহাস দেখলেই বুঝা যায়।
■ আইয়ুব সরকারের আমলে ১৩৭২ বঙ্গাব্দে (১৯৬৫) রবীন্দ্রসঙ্গীত তথা বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার বিরোধিতার প্রতিবাদস্বরূপ বৈশাখের প্রথম দিনে ‘ছায়ানট’ জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ – এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করার মাধ্যমে প্রথম এ উৎসব শুরু করে।
■ ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পহেলা বৈশাখকে সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন এবং জাতীয় উৎসব হিসাবে স্বীকৃতি দেন। (দেশের সব জাতির সমন্বিত উৎসবের নাম জাতীয় উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যা সকলেই পালন করেন।)
■ ১৯৮৩ সালে দৈনিক দেশ ও সাপ্তাহিক বিপ্লব পত্রিকার কয়েকজন সম্পাদক মাটির সানকিতে করে ‘পান্তা-ইলিশ’ খাওয়ার রীতি চালু করেন।
■ ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘চারুপীঠ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
■ এরশাদের আমলে অর্থাৎ ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাবির চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্ররা বাংলা সনের নতুন দিনে স্বৈরাচারের পতন এবং যাবতীয় অমঙ্গলের হাত থেকে মুক্ত হবার প্রত্যয়ে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলে একটি শোভাযাত্রা বের করে। ১৯৯৬ সালে এই ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে নাম লাভ করে। এই শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের বিরুদ্ধ প্রতীক হিসেবে বিশালকায় পুতুল, হাতি, কুমির, পাখি, ও ঘোড়াসহ বিচিত্র জানোয়ারের মুখোশ এবং সাজসজ্জাসহ বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য ব্যবহার করা হয়।
■ জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা (Intangible) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
এবার পাঠক আপনিই বলুন, উৎসবটি কি হাজারো বছর আগের?
তাঁরা আরও বলে থাকেন যে এটি নাকি সার্বজনীন উৎসব। আসলে এর সত্যতা কতটুকু চলুন দেখি নিই।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকাণ্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সনের পূর্বে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।
ইসলাম ধর্মে উৎসবের রুপরেখা
উৎসব বলতে সাধারণত সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায়। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্টভাবে মুসলিমদের উৎসব নির্ধারন করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন
প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (আনন্দ উৎসব) রয়েছে। আর এটা আমাদের ঈদ (আনন্দ উৎসব)। [সহীহুল বুখারী, ৯৫০ মুসলিম, ৮৯২]
আনাস ইবনে মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন (মদীনায়) আসলেন, তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিলো। তিনি বললেন, এ দুটো দিনের তাৎপর্য কী? তারা বললো, জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন, ইয়াওমুদ্দুহা (ঈদুল আযহা) ও ইয়াওমুল ফিতর (ঈদুল ফিতর)। [সুনান আবু দাউদ]
হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সব উৎসবকে বাতিল করা হয়েছে। এবং উৎসব হিসেবে মুসলিমদের জন্য হাদীসে উল্লেখিত দিন দুইটি নির্ধারণ করা হয়েছে। সাথে সাথে অমুসলিমদের অনুকরণে উৎসব পালনেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
ইবন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
যে ব্যক্তি কোনো কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাঊদ, হাদীস ৩৯৮৯)
এছাড়াও একজন মুসলিম যেকোনো দিন আনন্দ উদযাপন করতে পারে, তবে সেটা হতে হবে ইসলামের গণ্ডির ভিতর।
যেহেতু লেখার ইতি টানতে হবে, তাই মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু কুরআনের আয়াত ও হাদীস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আর আমি মনে করি বুদ্ধিমানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ হবে বলে আশা রাখি।
হাদীস থেকে
১) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, কোনো কিছুকে অশুভ মনে করা শির্ক। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৬৮৭)
২) বুরাইদাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত নবী ﷺ (কোনো কিছুকে) অশুভ লক্ষণ মানতেন না। (আবূ দাঊদ, হাদীস ৩৯২২)
৩) ইবন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কাওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাঊদ, হাদীস ৩৯৮৯)
কুরআন থেকে
১) নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। অতএব, তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। [সূরাহ আল-আন’আম (৬):১৫৩]
২) ‘যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। [সূরাহ আন-নূর (২৪):১৯]
৩) অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। [সূরাহ যিলযাল (৯৯): ৭,৮]
এখন একজন মুসলিম হিসেবে আপনি নিজেই ঠিক করুন যে, আপনি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের পথ অনুসরণ করবেন নাকি অন্য কারও দেখানো পথ।
১। বই- বাংলা নববর্ষ অজানা বৈশাখ
৩। উকিপিডিয়া
লেখক: মুহাম্মাদ সবুজ আহমেদ
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।