আর-রহমান এবং আর-রহিম আল্লাহর নামে
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট বিষয় ভাবা যাক। আমরা দ্বীনে আসার পর থেকে কয়টা রমাদ্বান পার করেছি? প্রতিটা রমাদ্বান কি আগের রমাদ্বানের চেয়ে ভালো কাটিয়েছি? নাকি রমাদ্বান শেষে একই আক্ষেপের আবর্তে বারবার ঘুরপাক খেয়েছি? আমার মনে হয়, আমরা বেশিরভাগ মানুষই রমাদ্বানের প্রকৃত হক আদায় করতে পারিনি। এর কারণ হলো, রমাদ্বানকে আমরা লাইট সুইচের মতো ভাবি। সুইচ দিলে যেমন সাথে সাথে লাইট জ্বলে, তেমনি রমাদ্বান আসলেই শয়তান বাঁধা পড়বে আর আমরা অটোম্যাটিক “ভালো মানুষ” হয়ে যাবো। অথচ বিষয়টা মোটেও এমন সহজ নয়। রমাদ্বানের যথার্থ হক আদায়ের চেষ্টা করতে হলেও আমাদের রজব মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। একজন সালাফ বলেছেন,
“রজব মাস হলো বীজ বপনের সময়, শা’বান মাস হলো বীজের যত্ন নেওয়ার সময় আর রমাদ্বান মাস হলো ফসল আহরণের সময়।”
সুবহানাল্লাহ ! কতই না সত্য কথা ! আমরা রমাদ্বানে বীজ বপন শুরু করে রমাদ্বানেই ফসল আহরণের স্বপ্ন দেখি বলেই দিন কয়েক পর ক্লান্ত হয়ে পড়ি আর ফসল আহরণ স্বপ্নই থেকে যায়। আর তাই রজব, শা’বান এবং রমাদ্বান মাসে আমাদের প্রস্তুতি এবং করণীয়গুলি আমরা এখানে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্।
(১) আল্লাহর কাছে দু’আর মাধ্যমে সাহায্য চান, যেন তিনি আপনার পরিকল্পনাকে সফল করেন
আল্লাহ যদি ইবাদাত ও আত্মশুদ্ধিকে সহজ না করে দেন, তবে আমাদের জন্য তা বাস্তবায়িত করা একান্তই কঠিন। এজন্য রমাদ্বানের পরিকল্পনার শুরুতেই আমাদেরকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে, যেন তিনি আমাদেরকে সফলভাবে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাওফিক দেন। রজব মাস থেকেই এজন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু’আ শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন।
(২) যাবতীয় বদভ্যাস ছেড়ে দিতে সচেতনভাবে চেষ্টা করুন রজব মাস থেকেই
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করুন যেসব বদভ্যাসে আপনি এখন আক্রান্ত, এবার রমাদ্বানের পর থেকে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর করবেন না। কিন্তু এই প্রচেষ্টা রমাদ্বানে শুরু করলে দেখবেন আপনাকে অনেক বেশি বেগ পেতে হচ্ছে এবং হঠাৎ করে এই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আপনি হতাশও হয়ে পড়তে পারেন। তাই রজব মাস থেকেই বদভ্যাসগুলি ছাড়ার চেষ্টা শুরু করলে অনেক বেশি মানসিক জোর নিয়ে আপনি রমাদ্বানে প্রবেশ করবেন এবং রমাদ্বানে আপনি অনেক সহজতা অনুভব করবেন। যেহেতু অভ্যাস পরিবর্তন করা খুব কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ, তাই রজব থেকেই এই মানসিক যুদ্ধ শুরু করাই হবে বুদ্ধিমান মুসলিমের কাজ।
(৩) বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার করতে থাকুন
রজব মাস থেকেই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার করতে থাকুন, যেন রমাদ্বানে একটি বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। এতে রমাদ্বানের প্রথম দিন থেকেই অসাধারণ মানসিক জোর অনুভব করবেন আপনি।
(৪) যথাসম্ভব কম কথা বলুন এবং সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দিন
রমাদ্বান মাসে সমস্ত গীবত এবং অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকার জন্য রজব মাস থেকেই কথা বলা কমিয়ে দিন। পারস্পরিক আলোচনায় গীবত পরিহার করুন এবং কারো উস্কানিতে উত্তেজিত না হয়ে শান্ত থাকুন। রমাদ্বান মাসে যেকোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় সামাজিক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন এবং একান্তভাবে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন। যেসব আত্মীয়দের সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই, তাদের সাথে যোগাযোগ নবায়ন করুন; তবে অবশ্যই এতে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করবেন না।
(৫) Ramadan Countdown
রমাদ্বানের কমপক্ষে ১০ দিন আগে থেকেই ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে বা বোর্ডে লিখে বা বড় কাগজে লিখে Countdown শুরু করুন। এতে আসন্ন রমাদ্বান উপলক্ষে আপনি একটা মানসিক উত্তেজনা অনুভব করবেন এবং রমাদ্বানের আগমনকে কেন্দ্র করে আপনার করণীয়গুলি গুছিয়ে নিতে ভিতর থেকে তাড়না অনুভব করবেন।
(৬) প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে ফেলুন রমাদ্বানের আগেই
যেসব সামগ্রী কেনাকাটায় প্রচুর সময় ব্যয় হয় এবং যেগুলো প্রিজার্ভ করা যায়, এমন সামগ্রীগুলি শা’বান মাসেই কিনে ফেলুন। রমাদ্বানে কেনাকাটায় অনর্থক সময় এবং অর্থ কোনোটাই ব্যয় করবেন না। এখন থেকেই মনে রাখবেন, রমাদ্বানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। কেনাকাটায় সময় ব্যয় করার চেয়েও অনেক মূল্যবান কাজ আপনাকে করতে হবে রমাদ্বানে।
(৭) Video Game, Television, Movie, Serial, Unnecessary Browsing ছেড়ে দিতে চেষ্টা করুন
এসব বিষয়ে আপনি অভ্যস্ত হয়ে থাকলে এই শা’বান থেকেই কমিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। এভাবে রমাদ্বানের আগেই সম্ভব হলে পুরোপুরি বন্ধ করে দিন অথবা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে নিয়ে আসুন। আর সমগ্র রমাদ্বানে এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন, এ কথা বলাই বাহুল্য।
(৮) Useless Apps এবং অপ্রয়োজনীয় বই-পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দিন
অনর্থক মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করে যেন রমাদ্বানের মহামূল্যবান সময়গুলি হেলায় নষ্ট না হয়, সেজন্য মোবাইল থেকে Useless Appsগুলি বন্ধ করে দিন। এছাড়াও কম্পিউটারে সময় নষ্ট করার মতো কিছু থাকলেও (যদিও সেগুলো হালাল হয়) সেগুলো ডিলিট করে দিন। অপ্রয়োজনীয় কিংবা অপকারী বইপত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়ে রমাদ্বান মাসে সময় নষ্ট করবেন না।
(৯) প্রয়োজনীয় Apps, Software, বই, তাফসীর কিংবা যেসব দাওয়াহ ম্যাটেরিয়াল আপনি বিতরণ করতে চান, সেগুলো সংগ্রহ করে নিন এখনই
আপনার পছন্দের ক্বারীর তিলাওয়াত কিংবা কুরআন-হাদীস সংক্রান্ত যেসব Apps আপনি পছন্দ করেন, সেগুলো ডাউনলোড করে প্রস্তুত করে নিন এখনই। যেসব দাওয়াহ ম্যাটেরিয়ালস বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিতরণ করতে চান, সেগুলো কেনার জন্য রমাদ্বানে দৌড়াদৌড়ি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এখন থেকেই সেগুলো কিনে গুছিয়ে রাখুন কোনটা কাকে দিবেন। রমাদ্বানে আপনি যে তাফসীর পড়তে চান, তা এখন থেকেই কিনে/সফটকপি ডাউনলোড করে রাখুন, যেসব ইসলামিক ভিডিও দেখতে চান, সেগুলো এখন থেকেই ডাউনলোড/সংগ্রহ করে নিন। আমরা আগেই বলেছি, রমাদ্বানে অপ্রয়োজনীয় Net Browsing একেবারেই করবেন না, একেবারেই না।
(১০) বেশি বেশি সিয়াম রাখুন
রমাদ্বানের আগেই নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে রমাদ্বানের জন্য প্রস্তুত করতে রজব থেকেই সপ্তাহে দু’দিন (সোম এবং বৃহস্পতিবার) এবং শা’বান থেকে আরও বেশি বেশি সিয়াম রাখুন। শা’বান মাসে বেশি বেশি সিয়াম রাখা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ। এতে রমাদ্বানে আপনি অনেকটা আরামদায়কভাবে প্রবেশ করতে পারবেন এবং প্রথম থেকেই রমাদ্বান উপভোগ করবেন ইনশাআল্লাহ্।
(১১) “প্রতিদিন একটি দু’আ”
প্রতিদিনের জন্য একটি করে মোট ৩০টি স্পেশাল দু’আ প্রস্তুত করে রাখুন, যেগুলো আল্লাহর কাছে আপনি খুব বেশি বেশি চাইবেন। প্রতিদিনই আপনি সাধ্যমতো সবকিছু চাইবেন, কিন্তু ঐ একটি বিষয় ঐ দিনে আরও বেশি চাইবেন। এভাবে ৩০ দিনের জন্য ৩০টি দু’আ প্রস্তুত করে নিন এখনই।
(১২) ঝটপট লিখে ফেলুন কিছু দু’আ/যিকর
প্রতিদিন ১টি করে হলেও দু’আ মুখস্থ করার চেষ্টা করুন রমাদ্বানে। বড় দু’আ হলে অন্তত দু’আর একটি অংশ মুখস্থ করুন। এভাবে পুরো ৩০ দিনে আপনি কয়টি এবং কী কী দু’আ/যিকর মুখস্থ করতে চান, সেগুলো গুছিয়ে লিখে ফেলুন। এতে রমাদ্বানে খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করতে হবে না।
(১৩) Action Plan with Quraan
রমাদ্বান কুরআনের মাস। এই মাসে কুরআনের প্রতি যেন আমরা ইনসাফ করতে পারি, সেজন্য শা’বান থেকেই কিছু বিষয় গুছিয়ে নিতে হবে আর কিছু বিষয় রমাদ্বানে শুরু করতে হবে।
■ রমাদ্বানে প্রতিদিন কুরআন মুখস্থ এবং তিলাওয়াত ও অর্থসহ অধ্যয়নের জন্য দিনের পৃথক দুটি সময় ঠিক করুন। সেটি হতে পারে এমন – আপনি ফজরের পর মুখস্থ করবেন আর মাগরিবের পর তিলাওয়াত এবং অর্থসহ অধ্যয়ন করবেন। নিজের সুবিধামতো দুটি পৃথক সময় শুধুমাত্র কুরআনের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এই সময়ে আর অন্য কিছুই করবেন না।
■ প্রতিদিন কয় পাতা/পারা আপনি তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করতে চান এবং কতটুকু মুখস্থ করতে চান, তা এখনই সুস্পষ্টভাবে ঠিক করে ফেলুন। রমাদ্বানে এই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকুন। কিছুতেই “আজ কম করে কাল পুষিয়ে দেবো” এমনটা ভাববেন না, কিছুতেই না।
■ কতটুকু কুরআন আপনি তিলাওয়াত করবেন আর কতটুকু মুখস্থ করবেন, তা ঠিক করবেন আপনার সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে বাস্তবতার নিরিখে। মুখস্থ করার অভ্যাস না থাকলে অল্প অল্প করে মুখস্থ করুন, একটানা বেশি তিলাওয়াত করতে না পারলে সামান্যই করুন। জুয আম্মার ছোট সূরাহগুলি মুখস্থ না থাকলে সেগুলি দিয়ে আগে শুরু করুন। নিজের সামর্থ্যের অতিরিক্ত কিছু ঠিক করবেন না, তাহলে শুধু হতাশাই আসবে।
■ কুরআনের অর্থ পড়ার সময় গভীরভাবে মনোনিবেশ করুন কুরআনের বাণীর প্রতি, যতটুকুই পড়বেন সেটুকুর তাফসীর পড়বেন কিংবা তাফসীরের অডিও/ভিডিও লেকচার দেখবেন। কতটুকু পড়লেন, তার চেয়েও বড় কথা কতটুকু বুঝলেন এবং আমল করলেন। তাই শুধু “কুরআন খতম” এর দিকে মনোযোগ না দিয়ে যতটুকুই পড়া হবে, ততটুকুই বুঝে আমল করার চেষ্টা করুন। কুরআন নিয়ে চিন্তা করার জন্য দুটি বই খুব সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ্- একটি হলো খুররম মুরাদ এর কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা এবং আরেকটি জামাল জারাবযো-র একটি বই এর ভাবানুবাদ কুরআন অধ্যয়নের সঠিক পন্থা (অনুবাদক-মোঃ এনামুল হক)।
■ কুরআন অধ্যয়নের প্রতি সন্তানদেরকে আগ্রহী করে তোলার জন্য বাবা-মায়েরা পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন।
■ নিজে যতটুকুই কুরআন পড়ে বুঝবেন, তা পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করবেন। কুরআন নিয়ে বেশি বেশি পারিবারিক হালাকা আয়োজন করুন, কুরআনের আলোচনায় ঘর মুখরিত রাখুন।
■ তারাউইহ-র সালাতে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট অংশের তাফসীরে একবার চোখ বুলিয়ে যান।
(১৪) সুহুর এবং ইফতার করুন হালকাভাবে
সুহুরের মাঝে বারাকাহ আছে। তাই নিয়মিত সুহুর খাবেন তবে হালকা। ক্ষুধার কষ্টে ইফতারে অতিভক্ষণ করবেন না। আবার অনেক সময় ইফতার করতে করতেই আমাদের মাগরিবের জামাত ছুটে যায়। তাই খেজুর ও দুধ কিংবা খেজুর ও পানি দিয়ে হালকা ইফতার করুন। এরপরই সালাতে চলে যান। সালাতের পর মডারেট খাবার গ্রহণ করুন। ইফতারের পর অতিরিক্ত খেলে তারাউইহ-র সালাতে মনোযোগ দিতে পারবেন না।
(১৫) প্রতিদিন কিছু দান/সাদাকাহ করুন, তা যত সামান্যই হোক না কেন
(১৬) অতিরিক্ত রান্নার জন্য অধীনস্থদের চাপ দিবেন না
আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায় মেয়েরা রমাদ্বানে রান্না নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে যান যে, তাঁদের এই ব্যস্ততার কারণে অনেক ইবাদাহ করতে পারেন না। এই বিষয়ে হাজব্যান্ডদের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। বেশি বেশি রান্নার জন্য চাপ দেওয়া এবং ঘরের সমস্ত কাজের ভার স্ত্রীর উপর চাপিয়ে তাকে রমাদ্বানের মাহাত্ম্য থেকে বঞ্চিত করবেন না। বাসায় যথাসম্ভব কম রান্না করুন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় স্ত্রী ও অধীনস্থদেরকে বেশি বেশি ইবাদাতের সুযোগ করে দিন।
(১৭) রমাদ্বান মাসে দিনে দ্রুত সময় অতিবাহিত করার জন্য যেসব কাজ কখনোই করবেন না
অভুক্ত অবস্থায় দ্রুত সময় অতিবাহিত করার জন্য অনেকেই ফালতু আড্ডা দেন। এতে পরচর্চা ও পরনিন্দা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই অনর্থক আড্ডা, ক্ষুধা টের না পাওয়ার জন্য দিনের বেলা বেশি বেশি ঘুমানো অথবা টিভি দেখা (এটি আমরা আগেই বলেছি) পরিহার করুন। সিয়াম রেখে ঘুমালে সিয়াম “হালকা” হয়ে যায় বলে যে কথা প্রচলিত আছে, তার ভিত্তি নেই। কিন্তু রমাদ্বানের মত এত মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাসে কেন আমরা ঘুমিয়ে বা টিভি দেখে সময় অতিবাহিত করবো?
(১৮) আত্মোন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু পড়াশোনা করুন নিয়মিত
প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন আত্মোন্নয়ন সংক্রান্ত পড়াশোনার জন্য। এজন্য কী কী বই পড়তে চান এবং প্রতিদিন কতটুকু পড়তে চান, তা শা’বান মাসেই ঠিক করে নিন। নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে মনোনিবেশ করুন এই সময়টায়। আপনি কোন কোন পাপে নিমজ্জিত আছেন, কোন কোন আবশ্যিক কাজগুলি এখনও করতে পারছেন না, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করুন। প্রতিদিন তালিকায় চোখ বুলান, কীভাবে পাপগুলি ছেড়ে দেওয়া যায় এবং আবশ্যিক কাজগুলি দ্রুত শুরু করা যায় তার কৌশল নিয়ে ভাবুন। এজন্য আপনি কী কী করতে পারেন তা লিখুন এবং ধীরে ধীরে সেগুলো বাস্তবায়ন করা শুরু করুন। একদিনেই বিশাল পরিবর্তন আশা করবেন না। ধীরে ধীরে নিজের পরিবর্তন খেয়াল করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি দাড়ি রাখতে চেয়েও পারছেন না কিংবা হিজাব ধরতে চেয়েও পারছেন না এমন অবস্থায় থাকেন, তবে মনে করুন এই রমাদ্বান আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।
(১৯) রোযাদারকে ইফতার করান
এজন্য বাসায় ইফতার পার্টি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি নিকটস্থ মাসজিদ, মাদ্রাসা বা ইয়াতিমখানায় ইফতার পাঠিয়ে দিতে পারেন কিংবা ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও পাঠিয়ে দিতে পারেন। বাসায় আয়োজন করতে চাইলে সীমিত আকারে এমনভাবে করুন যেন রমাদ্বানের মূল লক্ষ্য ‘ইবাদাত’ থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়।
(২০) গৎবাঁধা তারাউইহ থেকে বেরিয়ে আসুন
সুপার স্পীডে তারাউইহ পড়ার অভ্যাস থাকলে এই রমাদ্বান থেকে সেটি ছেড়ে দেন। তারাউইহ-র আসল উদ্দেশ্য শারীরিক ব্যায়াম নয় বরং কুরআন তিলাওয়াত এবং এর অর্থ নিয়ে ভাবা। আবার তারাউইহতে কুরআন খতম দেওয়াও জরুরী নয়। তাই কোন মাসজিদে তারাউইহতে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তা খোঁজ নিন এবং সেখানে যান।
(২১) ইখতিলাফি মাস‘আলার বিতর্ক পরিহার করুন
ইখতিলাফি মাস’আলার বিতর্কে জড়িয়ে রমাদ্বানের আসল উদ্দেশ্য ও মাহাত্ম্যকে ভুলে যাবেন না। যেই ‘আলিমকে আপনার বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মনে হয়, তাঁর মত অনুসরণ করুন, অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করুন। রমাদ্বান যদি আমাদের মাঝে বিতর্ক বৃদ্ধি করে, তবে বুঝতে হবে রমাদ্বানের উদ্দেশ্যই আমরা বুঝিনি।
(২২) শেষ ১০ দিন ও রাতে বিশেষ গুরুত্ব দিন
শেষ ১০ দিন ও রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনগুলিতে টেলিভিশন, সিরিয়াল, মুভি, মিউজিক ইত্যাদি আরও কঠোরভাবে পরিহার করুন। ফালতু আড্ডা, গল্প, হাসি-তামাশা করবেন না, বিশেষত রাতে। সম্ভব হলে ই’তিকাফ করুন। সেক্ষেত্রে কোন মাসজিদে ই’তিকাফ করবেন, তা রমাদ্বানের আগেই ঠিক করে নিন। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও (দরকার হলে কেনাকাটা) রমাদ্বানের আগেই শেষ করে ফেলুন। ই’তিকাফ করতে না পারলে বাসায় সারারাত সালাত, যিকর, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে মগ্ন থাকুন। বেশি বেশি তাওবাহ করুন, অতীত জীবনের সমস্ত পাপের কথা ভাবুন, সেজন্য অনুতপ্ত হোন, ক্ষমা চান। পাপের জীবনে ফিরে না যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন এবং আল্লাহর কাছে সেজন্য সাহায্য চান। রমাদ্বানের পর এই নতুন জীবন যেন অব্যাহত রাখতে পারেন সেজন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য কামনা করুন।
আল্লাহু আ’লাম।
যেসব সোর্স থেকে সাহায্য নিয়েছি:
লেকচার
What if this is my last Ramadan: Sheikh Tawfique Chowdhury
Getting the most out of Ramadan: Sheikh Bilal Philips
The soul of Ramadan: Sheikh Bilal Philips
Ramadan Action Plan: Nouman Ali Khan
The Month of Forgiveness: Nouman Ali Khan
Victory & Preparation- Execution of your best Ramadan: Yasir Qadhi
Make this Ramadan your best Ramadan: Sheikh Muhammad As Salaah
Preparing for Ramadan: Mufti Menk
রমাদান দ্বারপ্রান্তে: আমরা কি প্রস্তুত? – নাসিল শাহরুখ
এছাড়াও রমাদ্বান প্রস্তুতির উপর বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ। বিশেষত উস্তাদ ইসমাইল কামদারের Ramadan Prep (Part 1&2) লিখাটি আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। ব্রাদার মুসাফির শহীদ এবং সিস্টার নুসরাত রহমানের রমাদ্বান প্রস্তুতির উপর লিখাগুলো আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি তাদের সকলের ঋণ স্বীকার করছি।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।