ক্লাসে স্যারের প্রশ্ন: তোমাদের মধ্যে কারা কারা একদম গ্রাম থেকে এখানে (ভার্সিটি) ভর্তি হয়েছো?
(কয়েকজন হাত তোলার পর) … তোমরা নিশ্চয় এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছো যে, ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ার সময় তোমাদের চাচা, মামা বা অন্য কোনো আত্মীয় তোমাদের বিবাহ দেওয়ার জন্য বা বোরখা পরার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। (স্যার ক্লাসে একটা টপিক নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন।)
আজ বাসায় আসতে আসতে হঠাৎ স্যারের এই আলোচনা মাথায় আসলো। এ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো; এই আশায় যে, আল্লাহ এর মাধ্যমে কাউকে এ জাতীয় বিষয়গুলোর গুরুত্ব বুঝবার তাওফিক দেবেন।
শুরুতে আমি এ ধরনের কয়েকটা দিক তুলে ধরবো, তারপর প্রধান আলোচনায় যাবো।
প্রশ্ন ০১: ভাইয়া, দাড়ি রাখছেন কেন?
উত্তর: মাদ্রাসায় পড়েছি তো, তাই।
প্রশ্ন ০২: আপু, বোরখা/হিজাব পরেন কেন?
উত্তর: আব্বা/আম্মা ছোটবেলা থেকে পরিয়েছেন তো, তাই।
এবার আসল কথায় আসি। মুসলিম হিসাবে এটাই স্বাভাবিক যে একজন ভাই দাড়ি রাখবেন, একজন বোন হিজাব পরবেন। কিন্তু এমন উত্তর (প্রশ্ন ০১ ও প্রশ্ন ০২) যখন পরিণত কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়, তখন তা আর স্বাভাবিক না। বরং তা পুরোই অস্বাভাবিক। আর সত্যিকার অর্থে আজ পৃথিবীতে মুসলিমদের করুণ অবস্থার জন্য এ জাতীয় মানসিকতা অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহর বান্দা হিসাবে একজন মুসলিম তার জীবনের প্রত্যেকটা কাজ করবে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য। সেক্যুলার পড়াশুনা থেকে শুরু করে ইসলামিক পড়াশুনা, চাকরি করা, বিবাহ করা সহ যত ধরনের কার্যক্রম একজন মানুষের জীবনে কল্পনা করা সম্ভব, তার কোনোটাই এই ডোমেইনের বাইরে যাবে না। আর যখন এ ধারণা পরিপূর্ণ রেখে কোনো কাজ করা হবে, তখন তার প্রত্যেক কাজের জন্য সে পুরুষ্কৃত হবে। আল্লাহ সূরাহ নাহলের ৯৭ নং আয়াতে বলেন
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেবো, যা তারা করতো।
একই কাজ একজন করছেন সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য, অপরদিকে অন্যজন করছেন সমাজের রীতি-নীতি পালনের জন্য, বাবা-মাকে সন্তষ্ট রাখার জন্য। এ দুজনের কাজ বাহ্যিক দৃষ্টিতে একই হলেও তা সমান নয়। যখন বাবা-মা’র সন্তষ্টি, সমাজের রীতি-নীতি মেনে চলার জন্য হিজাব পরা হবে, তখন তার পরিণতি হয় হিজাবে পরিবর্তন। যেমন আগে মুখ ঢাকা থাকলে এখন খোলা, আগে পুরো শরীর আবায়া দিয়ে ঢাকা থাকলে এখন তা পরিবর্তন করে শুধু মাথা ঢাকা, অথবা সুযোগ অনুযায়ী তা ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে তা সমাপ্ত হয়। আর অপরদিকে যে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালনের জন্য হিজাব পরিধান করে, তার কাছে তা পূর্ণাঙ্গ রুপ পায়।
অপরদিকে যে ভাইয়েরা দাড়ি রাখেন মাদ্রাসায় পড়েছেন বলে, তাদের অবস্থাও অনুরূপ। হয়তোবা দাড়িকে বিভিন্ন আকৃতি, আগে বড় থাকলে পরে ছোট, অথবা তা কেটে ফেলার মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়। কিন্তু যে ভাই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালনের অংশ হিসাবে তা রাখেন, তা তাঁকে শেষ পথ পর্যন্ত নিয়ে যায়। এখানে আমি শুধু দাড়ি আর হিজাবের কথা বললাম। এমনিভাবে আরও অনেক বিষয়ের দিকে লক্ষ করলে একই অবস্থাই পরিলক্ষিত হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, দাড়ি কতটুকু রাখতে হবে বা মুখ ঢাকা আবশ্যক কি না, এ নিয়ে বিভিন্নরকম ফিকহি মত থাকতে পারে। সাধারণ কোনো মানুষ হয়তো নির্ভরযোগ্য কোনো মুজতাহিদ আলিমের মতামত শুনে ইখলাস সহকারে চিন্তাভাবনা করলো, তারপর সেই মতটি তার কাছে অধিক সঠিক মনে হওয়ায় সেটি অনুসরণ করেলো – এমনটা হতেই পারে। এক্ষেত্রে মুজতাহিদ ভুল করলেও এক নেকি পান এবং সাধারণ মানুষ তাঁর অনুসরণের কারণে দায়মুক্ত হয়ে যান। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ফিকহি মত অনুসরণ করা আর সামাজিক রীতিনীতির চাপে পড়ে কোনো কাজ করা এক কথা নয়। ফিকহি মত অনুসরণের উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, অপরদিকে সামাজিক রীতিনীতির অনুসরণের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর কাছে এই দুই প্রকার মানুষের প্রতিদানও ভিন্নরকম হবে।
সবশেষে কথা এবং অনুরোধ একটাই, আপনি কেন মুসলিম আগে তা জানুন। কুরআনকে যদি সৃষ্টিকর্তার সর্বশেষ বাণী হিসাবে মেনে নিয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করুন স্রষ্টা এই পৃথিবীতে পরীক্ষার অংশ হিসাবে আপনাকে যদি অন্য ধর্মালম্বী কোনো পরিবারে পাঠাতেন, তাহলে কি আপনি সত্যের অনুসন্ধান করে আজ মুসলিমই থাকতেন? আর যখন এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন, তখন জীবনের প্রত্যেক কাজ আপনা-আপনিভাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ ও তাঁকে খুশি করার জন্যই করা হবে।
এইচ, এম, রাহাত-বিন-ইসলাম
০১ জমাদিউস সানি, ১৪৩৬ হিজরি | ২২ মার্চ, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।