Listen to আমাকে কি আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন? | www.muslimmedia.info byMuslim Media on hearthis.at
ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন একজন মিসরীয় দাঈ (preacher) আমর খালিদ। তিনি বলেছেন ৩ দিন আগে তিনি একটি মেইল পেয়েছেন একজন অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম নারীর কাছ থেকে। নাম তার সারাহ। মেইলের বর্ণনাটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করলাম …
মেয়েটি জন্মগতভাবে লেবানিজ। তার বাবা মুসলিম আর মা খ্রিস্টান। তার জীবনের প্রথম ১০ বছর কাটে লেবাননে। কিন্তু পড়াশোনার জন্য আসে অস্ট্রেলিয়াতে। অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর ইসলামের সাথে তার সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। তার একমাত্র পরিচয় ছিলো সে একজন মুসলিমাহ। কিন্তু সে জানতো না কুরআন কী, সালাত কীভাবে আদায় করে, তার জীবনে ধর্মের কোনো প্রভাবই ছিলো না। এই সময় তার মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর সে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। তার মা-বাবা তাকে ফেলে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেন। সে এখানে পুরো একা। নিজের খরচ যোগাতে সে সকালে ভার্সিটিতে ক্লাস করে, সন্ধ্যায় বারে কাজ করে। বয়ফ্রেন্ডও জুটিয়ে ফেলে। নিজেকে আস্তে আস্তে ওয়েস্টার্ন লাইফের সাথে মিশিয়ে ফেলে। এমনকি হারাম কাজ করতেও সামান্যতম লজ্জাবোধ করতো না সে।
সে সামান্য অ্যারাবিক জানতো। এইবার সে নিউজিল্যান্ডে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং চ্যাম্পিয়নও হয়। সে এইবার বিভিন্ন ম্যাগাজিনে মডেল হিসেবে যোগ দেয়। এই সময় সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা এক লেবানিজ ফ্যামিলির সাথে দেখা করে। তাদের বাসায় সে রমাদ্বানের সময় টিভিতে একটা ইসলামিক এপিসোড দেখে, যেটি ছিলো নম্রতা ও ভদ্রতা সম্পর্কে। সে অনুষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ঠিকানা বের করে। তারপর সেই অনুষ্ঠানের দাঈ আমর খালেদকে উপরোক্ত মেইলটি করে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে কি আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন?”
একজন ক্ষুধার্ত মানুষের পাকস্থলি যেমন খাবারের জন্য অপেক্ষা করে, ঠিক তেমনি একজন মানুষও এক সময় তার প্রকৃত মালিকের খোঁজে বের হয়। মেয়েটি জিজ্ঞেস করে কীভাবে সে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইবে। আমর খালেদ তাকে তাওবাহ করার পদ্ধতি জানিয়ে দেন।
২ দিন পরে মেইল করে মেয়েটি জানায় সে আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ করেছে। “আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে যাবো না এবং তার সাথে দেখাও করবো না।” তার ২ দিন পর সে জানতে চায়, “আমি কীভাবে সালাত আদায় করবো?” তার ২দিন পর সে কিছু কুরআনের অডিও টেপ চায়।
অনেকদিন পর মেয়েটি আবার মেইল করে জানায় সে বিউটি টাইটেল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারপর শাইখকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়ে মেয়েটি জানায় সে হিজাব করা শুরু করেছে।
হিজাব শুরু করার ২ দিন পরে সে মাথায় ব্যথা অনুভব করে। সে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার ডায়াগনোসিস করে জানান তার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে এবং সে বেশিদিন বাঁচবে না। সে অপারেশনের জন্য হসপিটালে ভর্তি হয়। অপারেশনের পর ডাক্তার জানায় তার অপারেশন ২০% সাকসেসফুল হয়েছে।
ডাক্তার এই কথা বলার পর সারাহর কাছ থেকে আনসার শুনতে চায়। সারাহ বলে, “আমি আমার আল্লাহ্র সাথে দেখা করতে খুশি আছি। আমি খুশি যে, আমি আমার অসুস্থতা বুঝার আগেই আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ করতে পেরেছি। আমি জানি না কীভাবে আমার বাবা মা আমার এই অবস্থা জানতে পারবেন। আমি যদি সুস্থ হই, তবে আমি সেই ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করবো। কারণ এই সাইটটি আমার ইসলামে আসার জানালা খুলে দিয়েছে।” কিন্তু আল্লাহ্র ফায়সালা ছিলো ভিন্ন। মেয়েটি মাত্র ২২ বছর বয়সেই দুনিয়া থেকে চলে যায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি’উন। তাকে নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মৃত্যুর আগে সে আমর খালিদকে একটি চিঠি লিখে যায়।
আমি আমার জীবনের ২২টি বছর আমার রবের কাছ থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু আমি মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে তাওবাহ করে আল্লাহ্র পথে ফিরে আসি। আমি আপনাকে বা যারা ইন্টারনেটে লিখেন, তাদের কাউকে চিনি না। আমি আপনাদের কাছে মিনতি করি, যেন আপনারা আমার জন্য আল্লাহ্র কাছে দয়া ও ক্ষমার দু’আ করেন। এবং আমার মায়ের জন্যও দু’আ করবেন, যেন মহান আল্লাহ উনাকে সঠিক পথ দেখান। তিনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।”
– সারাহ
[Companions of Prophets ইউটিউব চ্যানেলে আসা একটি সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে লেখা।]
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।