পারসিয়ানরা তখন বেশ পরাক্রমশালী। রোমানদের হারিয়ে নাস্তানাবুদ করে দিলো। জেরুজালেমসহ বিজিত সাম্রাজ্যের অধিকাংশ ভূখণ্ড থেকে রোমানদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হলো।
তখন ৬১৫ কি ৬১৬ খ্রীষ্টাব্দ। মক্কাতে কুরাইশদের তীব্র অত্যাচারে মুসলিমরা নির্যাতিত, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত, রক্তাক্ত। কুরাইশরা মূর্তিপূজা করতো বলে আগুনের পূজারী পারসিকদের বিজয়ে তাদের উল্লাস আর আনন্দিত হওয়া ছিলো খুবই স্বাভাবিক। উল্টোদিকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেলেও শেষ নবী ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী হওয়ায় রোমান খ্রীষ্টানদের প্রতিই ছিলো নির্যাতিত মুসলমানদের অকুণ্ঠ সমর্থন। রোমানদের নির্মম পরাজয়ের এই টান টান উত্তেজনার সময়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। আয়াতগুলোর বাংলা অনুবাদের প্রতিটা কথা খুঁটিয়ে দেখা যাক:
“রোমানরা নিকটবর্তী দেশে পরাজিত হয়েছে এবং নিজেদের এ পরাজয়ের পর কয়েক বছরের মধ্যে তারা বিজয় লাভ করবে৷ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আগেও আল্লাহরই ছিলো৷ পরেও তাঁরই থাকবে৷ আর সেদিনটি হবে এমন দিন যেদিন আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ে মুসলমানরা আনন্দে উৎফুল্ল হবে৷” [সুরা রূম (৩০): ২-৪]
মুসলিমদের কাছে আল্লাহর দেওয়া এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে বিস্ময়ে মক্কার অবিশ্বাসীদের চোয়াল ঝুলে পড়ে। বলে কী এরা! পারসিয়ানদের মতো পরাক্রমশালীরা হারবে! তাও কিনা আবার রোমানদের কাছে! রোমানরা এইভাবে গো-হারা হেরে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরেও! এর চেয়ে অবিশ্বাস্য কথা এই সময়ে আর কী-ই বা হতে পারে? কয়েক বছর কেন, কয়েক যুগেও যে ওদেরকে পরাজিত করার চিন্তা পুরোপুরি হাস্যকর! রোমানরা নাকি আবার এমন দিনে বিজয়ী হবে যেদিন আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ে মুসলমানরাও আনন্দে উৎফুল্ল হবে! হাঃ হাঃ হাঃ!
এই নিয়ে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহুকে ধরে বসলো মক্কার কাফিরদের একজন। এই আয়াতের সত্যতা নিয়ে সে বিশাল একটা বাজি ধরলো উনার সাথে।
ঘটনার ৬ বছর পর মক্কার কাফিরদের তীব্র অত্যাচারে জীবন বাঁচাতে মুসলমানরা মদীনাতে হিজরাত করতে বাধ্য হয়। এমনকি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও তারা খুন করে ফেলতে যায়। আল্লাহর রাহমাতে উনি নিরাপদে মাদীনাতে চলে যেতে সক্ষম হন। এক আল্লাহর কথা জানাতে গিয়ে ঘর-বাড়ি ছাড়তে হলো। ছাড়তে হলো আত্মীয়-পরিজন। ব্যবসা-ক্যারিয়ার, ধন-সম্পত্তি সব ফেলে যেতে হলো মুসলমানদের। ঠাঁই মিললো মদীনায়।
কিন্তু মদীনায় গিয়ে ঠাঁই মিললেও, শান্তি মিললো না। হিজরাতের দুই বছর পর মক্কার অবিশ্বাসীরা ১০০০ সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে বসে হাতে গোণা মুসলমানদেরকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যে। বদরের প্রান্তরে মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান জান বাজি রেখে মুখোমুখি হয় এই বিপুল সংখ্যক সৈন্যের। এই সামান্য ক’জন সৈন্য নিয়েও মুসলমানরা ছিলেন অকুতোভয়। তাঁরা জানতেন, বিজয়ের সাথে সৈন্য সংখ্যার কোনো সম্পর্কই নেই, বরং বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই আল্লাহর উপরেই ছিলো উনাদের সবটুকু ভরসা। আর আল্লাহও তাঁদেরকে সাহায্য করলেন।
এই বেখাপ্পা অসম যুদ্ধে মুসলিমরাই জিতে গেলো।
আজিব আর অসাধারণ এক বিজয়!
যে বিজয় এক আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
বদরের যুদ্ধে আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ে মুসলিমরা যখন আনন্দে উৎফুল্ল, ঠিক সেইদিনই তাদের কাছে আরেকটা অসাধারণ খবর পৌঁছুলো। পারসিয়ানদের হারিয়ে দিয়ে রোমানরাও বিজয়ী হয়েছে।
আট বছর আগে নাজিল হওয়া কুরআনের বাণী যে সত্য হবেই হবে, এ তো জানা কথাই। এই বাণী যে একমাত্র সেই আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে যিনি সকল ক্ষমতা আর কর্তৃত্বের নিরঙ্কুশ অধিকারী। যিনি অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সব জানেন।
যিনি উপাসনার জন্যে একমাত্র যোগ্য সত্ত্বা।
(ততদিনে জুয়া খেলা হারাম ঘোষিত হয়ে আয়াত নাযিল হওয়ায় বাজিতে জয়লাভ করে প্রাপ্ত উট আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সদকা করে দেন।-সম্পাদক)
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।