বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আজকাল সেক্যুলার সমাজবিদগণ বলে থাকেন যে, ইসলাম নারীকে বন্দী করে রাখে, অর্থ উপার্জন করতে অনুৎসাহিত করে, সম্পত্তিতে পুরুষের অর্ধেক অংশ প্রদান করে, সর্বোপরি ‘ইসলাম’ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পেছনে অন্যতম অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এই অপূর্ব ধর্মটি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের প্রচণ্ড অভাবের কারণে, অনেকেই এ ধরনের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে যাই।
আর এই ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করেই বর্তমান সমাজে নারী আন্দোলনের একটি মূল প্রতিপাদ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, “নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি” নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। তাদের ভাষ্যমতে, কেবল মাত্র এই ‘মুক্তির’ ফলেই এক জন নারী প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে। সভায়, বক্তৃতায়, কাগজে, কলমে এসব শুনতে যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ মনে হলেও সাধারণ মানুষের জীবনে এই আইডিয়া কতটা কার্যকর হয়, তা সর্বদা প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে যায়। কারণ, এখানে “অর্থনৈতিক মুক্তি”র সঠিক সংজ্ঞা কখনোই সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে দেওয়া হয় না।
নারীবাদীরা ক্রমাগত বলতে থাকেন, চাকরি বা ব্যবসার মধ্য দিয়ে আয়-উপার্জন করলেই নারীমুক্তি সম্ভব! কিন্তু আসলেই কি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা ব্যবসা করলেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে ও আমরা নিজস্ব উপার্জন দ্বারা কি সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনতা বা সম্মান অর্জন করতে পারি? তাহলে আজ শিক্ষিত কিংবা উপার্জনকারী নারীরাও কেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন? কেন নিজের আয়ের উপর বেশিরভাগ নারীরই কোনো স্বাধীনতা থাকছে না?
নারীর সত্যিকার অর্থনৈতিক ‘স্বাবলম্বিতা’র সংজ্ঞা ও ‘বাস্তব’ প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে হলে, সর্বপ্রথম আমাদেরকে সেক্যুলার সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া “নারীমুক্তি”র অবাস্তব ধারণার গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে তবেই ‘ইসলামে’ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে, তা বোধগম্য হবে।
নিম্নে ইসলামের আলোকে নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার কিছু বিশেষ দিক উল্লেখ করছি:
নারীর উপার্জনে নারীর অধিকার
সেক্যুলার সমাজব্যবস্থা নারীকে ঘর থেকে বের করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানোকেই বিশাল সাফল্য অর্জন মনে করে। তারা কি একবারও ভাবেন ক’জন মহিলার ব্যক্তিগত উপার্জনের ওপর স্বাধীনতা রয়েছে? বেশিরভাগ পরিবারে যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের পয়সার ওপর ছড়ি ঘোরায়, তা নিশ্চয় আমাদের অজ্ঞাত নয় (আমি সিংহভাগ কর্মজীবী নারীদের দুর্দশার কথা বলছি। এর ব্যতিক্রম আছে, তবে সে ধরনের নারীর সংখ্যা অতীব নগন্য)!
আমাদের চারদিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাবো, মহিলারা বাইরে কাজ করলেও ঘরে এসে তাদের ঠিকই রান্নাবান্না করতে হয়, সন্তানের, শ্বশুরবাড়ির ও পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়, সামাজিকতাও মেইন্টেইন করতে হয়। তাদের কিন্তু চাকরি করার উসিলায় এসব কোনো ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয় না।
অথচ পতিপ্রবর অফিস থেকে আসার পর পুরো সময়টা ঠ্যাং এর ওপর ঠ্যাং তুলে টিভি রিমোট হাতে নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন। শেষমেশ দেখা যায়, কর্মজীবী নারীদের সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে অফিস করার পর বাসায় এসে ঘরের সকল কাজই করতে হয় এবং মাস শেষে নিজের বেতনের অর্ধেক বা পুরো অংশ স্বামীর হাতে তুলে দিতে হয়।
সমাজে ক’জন নারী আছেন যাদের উপার্জন নিয়ে স্বামীকে জবাবদিহিতা করতে হয় না, বেতনের টাকা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারেন ও সঞ্চয় করতে পারেন? কিংবা ক’জন সৌভাগ্যবতী নারী আছেন যারা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের মা-বাবার প্রতিপালন করতে পারেন অথবা নিজের ভাইবোনকে দিতে পারেন?
আমাদের বাসার দরিদ্র বুয়া থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করা মহিলাদের সকলেরই কম বেশি একই দশা। স্বামী নামের কর্তা পুরুষ স্ত্রীদের সকল উপার্জনের উপর নির্বিকারভাবে প্রতিনিয়ত কর্তৃত্ব ফলিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সেক্যুলার সমাজ ব্যবস্থা নারীদের কর্মক্ষেত্রে আনার মাধ্যমেই তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে, কিন্তু ‘উপার্জনের’ উপর নারীদের অধিকার তারা কখনোই সুনিশ্চিত করতে পারেনি।
অপরদিকে ইসলাম ধর্ম নারীদের সত্যিকারের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে!
ইসলাম মতে –
■ নারী যা উপার্জন করবে, তাতে শুধুমাত্র তার অধিকার থাকবে।
■ নারীর উপার্জনে স্বামীর কোনো হক নেই।
■ নারী তার সংসারের জন্য ব্যয় করতে বাধ্য নয়।
■ মহিলারা প্রয়োজনে স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে, কারণ স্বামীকে প্রতিপালন তার দায়িত্ব নয়।
■ আবার স্বামী কিন্তু স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবে না, কারণ স্ত্রী প্রতিপালন তাদের উপর আল্লাহ্ তা’আলার অর্পিত দায়িত্ব। আল্লাহ্ সুরাহ নিসার ৩৪ নাম্বার আয়াতে পুরুষদের নারীর maintainer বলেছেন।
■ একজন স্ত্রীর নিজস্ব আয় থাকলেও, তার স্বামী তাকে ভরণপোষণ করতে ও হাতখরচ দিতে বাধ্য।
■ এছাড়াও পুরুষের প্রতি “আয়-রোজগার’ করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু নারী যেহেতু সন্তানধারণ ও প্রতিপালনের মতো অসম্ভব মর্যাদাজনক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেন, তাই তাঁর জন্য ‘উপার্জনে’র ব্যাপারটি কখনোই বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কারণ আল্লাহ্ কাউকে শক্তির অতিরিক্ত বোঝা দেন না।
■ অপরপক্ষে উপার্জন করা বাধ্যতামূলক করা না হলেও, ইসলামে স্বামী, বাবা, পুত্র, ভাই ইত্যাদি পুরুষ সদস্যগণের নিকট থেকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সমাজের থেকেও নারীর আর্থিক সুবিধা ও অধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।
দেনমোহর
আল্লাহ্ পুরুষদের ওপর স্ত্রীদের দেনমোহর প্রদান বাধ্যতামূলক করেছেন। বিবাহের অন্যতম শর্ত এই দেনমোহরের মূল সৌন্দর্য আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, এমনকি এর সঠিক অর্থটিও অনেকের জানা নেই। প্রচলিত সমাজে ‘দেনমোহর’ শব্দটি হয়ে গেছে স্টেটাস সিম্বলের প্রতীক। অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র ডিভোর্স হলে দেনমোহর প্রদান করতে হয়। বাবা মা-রা তাঁদের কন্যার জন্য উচ্চ দেনমোহর ধার্য করেন মূলত দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে।
১) সামাজিকভাবে নিজেদের প্রতিপত্তি জাহির করার জন্য, এক্ষেত্রে কাবিন পরিশোধের তাগাদা কোনো পক্ষের মাঝেই থাকে না। কাবিন শুধু মাত্র একটি লোক দেখানো রেওয়াজে পরিণত হয়।
২) অনেক অভিভাবক ভাবেন কাবিনের অংক বেশি হলে তাঁদের কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, স্বামী তাকে তালাক দেবার আগে দশবার চিন্তা করবে। এই বুদ্ধি অনেক সময় বুমেরাং হয়ে ফেরত আসে। অল্প কাবিন হলে অত্যাচারী স্বামী হয়তো মেয়েটিকে অনেক আগেই মুক্তি দিয়ে দিতো, কিন্তু কাবিন পরিশোধের ভয়ে তখন লোকটি স্ত্রীকে তালাকও দেয় না, আবার সারা জীবন ধরে অত্যাচার করতে থাকে।
ইসলামের আলোকে দেনমোহরের সৌন্দর্য:
■ কাবিন আল্লাহ্র তরফ থেকে নির্ধারণ করা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে মেয়েদের সম্মানিত করা হয় ও বিয়ের প্রথম দিনেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়।
■ দেনমোহর হলো স্ত্রীর নিকট স্বামীর ঋন। স্বামী এই ঋন পরিশোধে বাধ্য। এর সাথে তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই।
■ স্ত্রী-কে স্পর্শ করার আগেই দেনমোহর দিয়ে দেওয়া উচিৎ। অথবা স্ত্রীর সম্মতিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করা যায়।
■ কাবিনের টাকার উপর স্ত্রী ছাড়া আর কারো কোনো অধিকার নেই। মেয়ের বাবা অথবা স্বামীরও কোন অধিকার নেই এই অর্থে।
■ অনেক মেয়ে ভাবেন স্বামীর নিকট থেকে কাবিন নেওয়া একটি লজ্জাজনক বিষয়। তাই বাংলাদেশে একটি নিয়ম প্রচলিত হয়ে গেছে। তা হলো, স্বামীরা বাসর রাতে স্ত্রীকে কাবিন মাফ করে দিতে অনুরোধ করেন ও স্ত্রীরা লজ্জায় তা মাফ করে দেন। অথচ এটি আল্লাহ্র বিধানকে গুরত্বহীন মনে করার শামিল।
■ তবে কোনো স্ত্রী যদি কারো প্ররোচনায় না পড়ে স্বেচ্ছায় কাবিনের কিছু অংশ অথবা সম্পূর্ণ অংশ মাফ করে দেয়, তাহলে স্বামী তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করতে পারবে। আল্লাহ্ বলেছেন, “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” [সুরাহ নিসা (৪): ৪]
Prophet (sw) said: “The best of mahrs is the simplest (or most affordable).” Narrated by al-Haakim and al-Bayhaqi, classed as saheeh by al-Albaani in Saheeh al-Jaami’, 3279.
যৌতুক ও বিয়ের খরচ:
ইসলামে দেনমোহরের এত সুন্দর বিধান থাকা স্বত্ত্বেও সমাজে এখন উল্টো ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। পাত্র কাবিন তো পরিশোধ করেই না, উল্টো কন্যাপক্ষ থেকে উপহারের নামে যৌতুক নেয় আর মেয়ের বাবার ঘাড়ে একরাশ বরযাত্রী খাওয়ানোর বোঝা চাপিয়ে দেয়। ইসলামে যৌতুক নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কনেপক্ষকে যে কোনো রকমের জুলুম করাকে যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সকলে তা বেমালুম ভুলে যায়।
আমরা কি জানি, আমাদের ধর্মে মেয়ের পক্ষ বিয়ের খরচ দিতে পর্যন্ত বাধ্য নয়? এমনকি ছেলের বাবা-মায়েরও দায়িত্ব নয় বিয়ের খরচ বহন করা! ছেলের দায়িত্ব হলো বিবাহের ভোজস্বরূপ ওয়ালিমার আয়োজন করা ও কাবিন পরিশোধ করা!
উত্তরাধিকারী হিসেবে নারী কেন পুরুষের অর্ধেক পায়
আল্লাহ্ যে বিধান ঠিক করে দিয়েছেন, তা আমাদের মনেপ্রাণে মেনে নিতে হবে। কারণ সেই বিধানেই সকলের কল্যাণ নিহিত। তাঁর wisdom এর পুরো গভীরতা বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরও মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দিয়ে মেয়েরা কেন পুরুষের তুলনায় কিছুটা কম সম্পত্তি পায় তার কিছু মাহাত্ম্য নির্ণয়ের চেষ্টা করেছে।
■ যেহেতু নারীদের পরিবারের ভরণপোষণ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, তাই এক জন নারী যে পরিমাণ সম্পত্তি পাবে তা অন্যদের জন্য ব্যয় করতে সে বাধ্য নয়।
■ অপরদিকে পুরুষের সম্পত্তির ওপর তার স্ত্রী ও পরিবারের হক রয়েছে। এছাড়া অভাবী মহিলা নিকটাত্মীয়ের দায়িত্বও পুরুষকে দেওয়া হয়েছে।
■ এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম পেলেও, যেহেতু তাদের উপর পরিবারের প্রতিপালনের আর্থিক কর্তব্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি, তাই নারীর পুরো অর্থ একান্তভাবেই তার থাকছে।
■ আবার পুরুষ একটু বেশি পেলেও, তাকে সবার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে ও নিজের অংশ থেকে সবাইকে দিতে হচ্ছে। ফলে তার অংশ পুরোটা তার কাছে থাকছে না।
ছাত্রজীবনে ম্যানেজমেন্টে পড়েছিলাম কোনো মানুষকে দায়িত্বের অনুপাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও সেই একই কাজটিই কিন্তু করা হয়েছে। নারী ও পুরুষকে তাদের প্রতি নির্ধারিত করে দেওয়া দায়িত্বের অনুপাতে আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
অন্যান্য ধর্মের নারীসংক্রান্ত বিধানগুলো দেখলে ইসলামে নারীর মর্যাদার বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
যেমন, খ্রিষ্ট ধর্মে মহিলাদের ভাবা হয় আদি পাপের মূল কারণ। দু-এক শতাব্দী আগেও এই ধর্মে মহিলাদের বিয়ে করার মাধ্যমে স্বামীরা তাদের সকল সম্পত্তির মালিক হয়ে যেতো।
আবার ভবিষ্যতে যৌতুক দেবার আতঙ্কে হিন্দুধর্মে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে সকলের মুখ কালো হয়ে যায়। এই একবিংশ শতাব্দীতেও ভারতে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার হার আশংকাজনক হারে বেশি! ভারতে এমন অঞ্চলও আছে, যেখানে পুরুষরা বিবাহের জন্য স্ত্রী খুঁজে পাচ্ছে না, অনেক সময় কয়েকজন ভাই মিলে একজন নারীকে বিবাহ করছে অথবা অন্যান্য অঞ্চল থেকে ‘মেয়ে মানুষ’ ক্রয় করে আনছে!
অতি সম্প্রতি হিন্দু মেয়েদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু সেই আইনের তেমন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সব দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলাম মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার সাথে সাথে, তাদের আর্থিক ক্ষমতায়নও নিশ্চিত করেছে। নিজস্ব উপার্জনের ওপর তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। জাহিলিয়্যাত যুগে প্রচলিত যৌতুককে নিষিদ্ধ করে দেনমোহরের বিধান প্রদানের মাধ্যমে নারীদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি তাকে সম্মানিত করেছে।
প্রাক-ইসলামি যুগের কথা তো আমরা সকলেই জানি। সেসময় মেয়েদের সম্পত্তির অংশ দেওয়া তো দূরের কথা বরং মেয়েদেরকেই সম্পত্তির মতো বিলি বণ্টন করা হতো। আর বর্তমান আধুনিক যুগেও ভিন্ন ধর্মের ভেতর নারীসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অপমানমূলক ধারণা পোষণ করতে দেখা যায়।
এসবের তুলনায় ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই নারীকে পিতা-মাতার সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট অংশের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করা হয়েছে এবং এই উত্তরাধিকারী নির্বাচনের সময় অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণভাবে প্রত্যেকের অংশও সুনির্ধারিত করা হয়েছে।
আমাদেরকে আল্লাহ্ এত সম্মান ও অধিকার দেবার পরেও, সমাজে সঠিক ইসলাম চর্চা না হবার কারণে নারীরা প্রতি পদে পদে অনবরত ধাক্কা খাচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে। বেগম রোকেয়া এত শত বছর আগেও বুঝতে পেরেছিলেন নারীমুক্তির অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে নারীশিক্ষা, অবশ্য সেই শিক্ষায় ইসলামের ছোঁয়া থাকতে হবে।
আমরা আমাদের ধর্ম ও ধর্মে প্রদত্ত অধিকারের ব্যাপারে শিক্ষিত হই না বলেই আমাদের ওপর এত নির্যাতন করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের অধিকারের ব্যাপারে আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে এবং পরিবারের অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। আল্লাহ্ যেন আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের তৌফিক দেন ও ইসলামের আলোয় আলোকিত হবার সৌভাগ্য দেন। আমিন।
উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে:
https://islamqa.info/en/12911, https://islamqa.info/en/10680
https://islamqa.info/en/2378, https://islamqa.info/en/3119
https://islamqa.info/en/10525, https://islamqa.info/en/47057
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।