পাকিস্তান আমলে এই ‘মার্শাল রেস’ কথাটা খুব প্রচলিত ছিল। এর অরিজিনাল উৎপত্তি ব্রিটিশদের মাথা থেকে। ভারতবর্ষের যেই এথনিক জাতিগুলো ‘একটু যোদ্ধা টাইপ’, তাদেরকে তারা মার্শাল রেইস নাম দিছে। আর যারা ‘যুদ্ধ টুদ্ধ পারেনা বা সেডেনটারী লাইফস্টাইল’, বডি ভালনা, যুদ্ধের জন্য বীল্ট না, তারা হল ‘নন-মার্শাল রেস’। তো, ব্রিটিশদের মতে বাঙ্গালী হল ‘নন-মার্শাল রেস’, যুদ্ধটুদ্ধ পারেনা, বডি শেইপ ভাল না।
তো, যাই হোক, পাকিস্তান আমলেও বাঙ্গালীকে প্রাথমিকভাবে নন-মার্শাল রেস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙ্গালী কম নেয়া হয়। যদিও রাজনৈতিক আপত্তির কারণে পাকিস্তান আর্মিতে পরে বাঙ্গালীদের নেয়া হয় এবং এখন বাংলাদেশে আর্মি ভালই আছে।
কথা সেটা না, কথা হল, আসলে এই কনসেপ্টটি সাইন্টিফিকালী বা হিস্টোরিকালী বা ইসলামীকালী কতটুকু সত্য? আসলে কোন এথনিক জাতি কি মার্শাল বা নন-মার্শাল রেস হতে পারে কি পারেনা? সত্যটা কি? সেটাই একটু এনালাইসিস করতে চাই।
কয়েকটা তথ্য দিচ্ছি, সমগ্র মুসলিম উম্মাতের আর্মড ফোর্সের সবচেয়ে দুর্বল অংশ আসলে এয়ার ফোর্স। যেমন আপনি যদি আরব – ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনা করেন, দেখবেন ৫৭-৬৭-৭৪ সব জায়গায় আরবরা এয়ার ফোর্সে ভাল পারফর্ম করতে পারেনি। কয়েকগুন বেশী এয়ার এসেট, ভাল ফাইটার নিয়েও ইসরাইলের কাছে বেদম মার খেয়েছে। ইসরাইলী পাইলটরা আসলে সোভিয়েত-জার্মান-আমেরিকান প্রশিক্ষিত এবং আসলেই অনেক বেটার। আরবদের তুলনায় পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের পাইলটরা অনেক ভাল হবার সম্ভাবনা থাকায় ৬৭র যুদ্ধে পাকিস্তান আরবদের পক্ষে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
৬৭র আরব ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পরাজয় হলেও এক পাকিস্তানী পাইলট একহাতে এক সর্টিতে সবোর্চ্চ ৩টি ইসরাইলী ফাইটার প্লেন আকাশ থেকে ফেলে দেন। এটা উম্মতের সেকেন্ড হাইয়েস্ট রেকর্ড, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে। যেখানে একটা ইসরাইলী ফাইটার, দশটা আরব ফাইটার ফেলে দেয়, সেখানে এটা বিশাল প্রাপ্তি। মাত্র একটা ইসরাইলী ফাইটারকে আকাশে ফেলে দিয়ে হাফিজ আল আসাদ এমন জনপ্রিয়তা লাভ করে যে সে সিরিয়ার ক্ষমতায় পরে অধিষ্ঠীত হয় এবং তারই পুত্র বাশার আল আসাদ আজ সিরিয়ায় কি করতেছে আপনারা জানেন। তাহলে জাস্ট বুঝেন একটা ইসরাইলী ফাইটার ডগফাইটে ফেলা কি ব্যাপার!
সেইখানে তিন তিনটা ইসরাইলী ফাইটার এক পাকিস্তানী পাইলট ডগফাইট করে ফেলছে, ক্যান ইউ ইমাজীন? পাকিস্তানে উনি তখন ছিলেন এক জাতীয় বীর।
পাকি বলে গালি দিবেন না আবার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে। উনি পাকিস্তানী ছিলেন তখন। কারণ বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। আসলে উনি বাঙ্গালী। নাম সাইফুল আজম। কেউ উনারে মনে রাখেনি, আমরা অনেকে নামই জানিনা। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে আসেন এবং মিলিটারী ক্যারিয়ার শেষে উনি বিএনপির একজন সংসদ সদস্য হিসেবে পলিটিক্স করেন। আমেরিকা ঘোষিত দুনিয়ায় থাকা ২২ লিভিং ঈগল এর একজন ছিলেন, অথচ আমাদের বীর আমরা চিনিনা। কারণ আমাদের বামপন্থী সেক্যু সংবাদমাধ্যম আর্মি-নেভি-এয়ার ফোর্সকে হেইট করে। তাই পত্রিকায় উল্টা লেখে।
গেল একজন। এবার আসি ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রথমে পাকিস্তান এয়ারে সুবিধা করতে পারেনি। তখন এয়ার ফোর্স মুষড়ে পড়ে। এক ছোট অফিসার মাহমুদ আলম বড়দের কানে কানে গিয়ে কি কি যেন বলেন। তিনি বাঙ্গালী হওয়ায় একটু সাইজে খাট ছিলেন। তো বড় অফিসাররা তাকে টেবিলের উপর লেকচার দিতে উঠাইয়া দিলেন। মাহমুদ আলম ছোট খাট একটা লেকচার দিয়ে জাতিকে মোটিভেট করে বললেন যে, তিনি নিজেকে দিতে সুযোগ চান- “ওকে, তুমাকেই দায়িত্ব দেয়া হইলো, আগামীকাল তুমি ডগফাইটে প্রথমে থাকবা”।
তখন মাহমুদ আলম ছোট অফিসার। পরদিন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে মাহমুদ আলমকে বিমানে ডগফাইটে পাঠানো হয়। পৃথিবীর ইতিহাসের সবোর্চ্চ এয়ার কিল (এক হাতে সবচে’ কম সময়ে) সেইদিন হয়। মাহমুদ আলম ৫টা ইন্ডিয়ান ফাইটার একাই ফেলে দেন, মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে। প্রথমে নেতাকে, তারপর বিমান ঘুরে যাবার সময় ওনার সামনে ৪ টা ইন্ডিয়ান ফাইটার পড়ে যায় … ঠাঠাঠাঠা….. বাকি চারটা একসাথে শেষ! এটা উম্মাতের সবোর্চ্চ কিল, ইন এয়ার, সবচে কম সময়ে।
তবে সাইফুল আযমেরটার ভ্যালু বেশী কারণ ইসরাইলী পাইলটরা দুনিয়ার সেরা ফাইটার। আর ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্স এমনে সাইজে বড়, কিন্তু আকামা, কোয়ালিটি নাই। ইন্ডিয়ান পাইলটরে ইন্ডিয়ানরাই রেসপেক্ট করেনা, আমি কি করবো?!
তার মানে এই উম্মতের সবোর্চ্চ দুইটি এয়ার কিল আসলে বাঙ্গালিদের দখলে। অবাক না? নন-মার্শাল রেস? হাস্যকর।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অসম্ভব ভাল যুদ্ধ করে। এবং ভারতের বিশাল বাহিনীকে তার ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে ঠেকিয়ে রাখে। এ নিয়ে পাকিস্তানী জেনারেলদের অবাক করা কথাবার্তা ইন্টারনেট থেকে পড়ে নিন। ‘আমরা তো জানতাম বাঙ্গালি নন-মার্শাল’, ‘এরা এমন যুদ্ধ কিভাবে করলো? ‘ এরকম। সেই যুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান হিলাল-এ-জুরাত (বাংলাদেশের বীর প্রতীক টাইপ) পান, যুদ্ধে অপরিসীম বীরত্বের জন্য। পুরো বেঙ্গল রেজিমেন্টে অনেকেই অনেক পদক পায়।
এবার তিন নাম্বারে আসি….
১৯৬৫র ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে আসলে কে জিতেছে তা বলা কঠিন। তবে ভারত পাকিস্তান বেশ সমানেই লড়েছে। তো ৬৫র যুদ্ধে ভারতীয় চীফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন তখন, জয়ন্ত নাথ চৌধুরী, যার সাথে আইয়ূব খান লড়েছিলেন। খুব দক্ষ এবং বিখ্যাত ভারতীয় জেনারেল। এই সেই জয়ন্ত নাথ চৌধুরী যিনি অপারেশন পোলোতে হায়দ্রাবাদ আর্মিকে মাত্র ৬ দিনে পরাজিত করেছিলেন এবং হায়দ্রাবাদ ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। তারপর ভারত লাখ লাখ মুসলিম গণহত্যা চালায়, যা নিয়ে এখন ইভেন বিবিসি রিপোর্ট করেছে।
যাই হোক, সেটা কথা না। আসল কথা হল জয়ন্ত নাথ চৌধুরী আসলে বাঙ্গালী হিন্দু ছিলেন। মানে বাঙ্গালী ছিলেন। জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী (১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত ভারতের সামরিক বাহিনী প্রধান ছিলেন, তিনিও বাঙ্গালী। জন্ম কলকাতা অবশ্য। জয়ন্ত নাথের জন্ম হরিপুরে, আগে পিতামহ পাবনায় ছিলেন। সাইফুল আযম: পাবনায় জন্ম। মাহমুদ আলম: চট্টগ্রামে। জিয়াউর রহমান: বগুড়ায়।
পড়লেন নি বিপদে? বাঙ্গালী না নন-মার্শাল রেস? তাহলে কিভাবে ভারতের আর্মি চীফ হয়ে গেল, বড়জোর সৌলজার বা সাধারণ অফিসার হলে একটা কথা ছিল ? মানে মিলতেছেনা তো? একই সাথে বাঙ্গালী কিভাবে দুনিয়ার সেরা পাইলট হল? কোথায় জানি গন্ডোগল লাগতেছেনা?
এবার আসল তথ্যটা দি। কিভাবে এই নন-মার্শাল রেস হয়ে গেল বাঙ্গালী। আসলে সিরাজউদ্দৌলার বাংলা দখলের পর ব্রিটিশদের হাতে পুরো বেঙ্গল চলে আসে। তখন ব্রিটিশরা বাঙ্গালী যুবকদের দিয়ে বিশাল বেঙ্গল আর্মি তৈরী করে। ব্রিটিশ ম্যানেজমেন্ট এবং লীডারশীপের অধীনে বাঙ্গালীদের এক বিশাল আর্মি হয়। সমগ্র ভারতকে ব্রিটিশরা সেই বেঙ্গল আর্মি দিয়েই দখল করে।বাঙ্গালী যুদ্ধ না পারলে এটা কিভাবে সম্ভব? আসলে ভারতের সবগুলো জাতিই তো হারছে বাঙ্গালী সৌলজারদের সাথে, তাইনা? তার কারণ ব্রিটিশ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং লীডারশীপ। আর কিছুনা।
কিন্তু ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবগুলো বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। প্রায় হারতে হারতে জিতে যায় ব্রিটিশরা। পাঞ্জাব এবং অন্য অঞ্চলের সৌলজারদের দিয়ে ব্রিটিশরা এ বিদ্রোহ দমন করেছিল। এরপর ব্রিটিশদের ধারণা হয়, যে বাঙ্গালীরা বিদ্রোহ প্রবণ। যখন তখন বিদ্রোহ করে বসতে পারে। তাই যুদ্ধ শেষ হবার পরে সবগুলো বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেয়।
এরপর আজ পর্যন্ত বাঙ্গালীরা ইভেন ভারতেও কোন বেঙ্গল রেজিমেন্ট পায়নি। বাঙ্গালীরা অন্য কোন রেজিমেন্টে ভর্তি হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আসতে পারে, (যেমন জয়ন্ত নাথ চৌধুরী নিজে), কিন্তু বাঙ্গালীদের জন্য আলাদা কোন রেজিমেন্ট নাই। এখনও নাই। ভারত সরকার ভয় পায়, যে আলাদা রেজিমেন্ট হল পশ্চিমবঙ্গ সহ সব বাংলাভাষী অঞ্চল ভারত থেকে আলাদা হতে পারে, বাঙ্গালীদের কোন বিশ্বাস নাই, কখন বিদ্রোহ করে। মুঘল আমলেও এমন কথা প্রচলিত ছিল। যে বাঙ্গালী বিদ্রোহপ্রবণ। খালি সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করে। হালকা কিছু হইলেই।
এটা অবশ্য কিছুটা সত্য যে বাঙ্গালী বিদ্রোহপ্রবণ। যে কোন কারণেই হোক মানুষের বিদ্রোহ করার প্রবণতা বেশী। কিন্তু বাঙ্গালী যুদ্ধ পারেনা সেটা সত্য না। না পারলে ব্রিটিশরা কিভাবে বেঙ্গল আর্মি তৈরী করে সমগ্র ভারতবর্ষকে দখল করেছে। যুদ্ধ তারা ঠিকই পারে। তবে বিদ্রোহপ্রবণ হওয়ায়, ব্রিটিশরা বাঙ্গালীকে নন-মার্শাল রেস বানিয়ে একটা এক্সকিউজ দেয়, যেই এক্সকিউজের ফলে তারা আর বাঙ্গালী রেজিমেন্ট বানাবেনা।
আসলে বাঙ্গালী আর দশটা জাতির মতই। ঠিকমতন ডায়েট কন্ট্রোল করলে, ঠিকমতন এক্সারসাইজ করলে, ট্রেনিং নিলে, বাঙ্গালী অন্য জাতিগুলোর মত বা অনেক সময় তাদের থেকে ভাল যুদ্ধ করতে পারে। দুনিয়ার অন্য জাতিগুলোর জন্যও এটা সত্য। কাজেই মার্শাল রেস বা নন-মার্শাল রেস বলে কিছু নেই। সব জাতিই সমান। মোটাদাগে জেনেটিক্স সবই একরকম। বাঙ্গালী সাইজে ছোট-চিকনা পাতলা- এটা কোন সমস্যা না, সাইফুল আযম বা মাহমুদ আলমও সাইজে ছোট ছিল।
জার্মান জেনারেল রোমেলকে মনে আছে? ওয়ান অব দ্য বেস্ট জেনারেল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। অথচ সাইজে কি রকম চিকনা পাতলা, দেখলে মনে হয় বাঙ্গালীর চেহারা একটু সার্ফ এক্সেল দিয়া ধুইছে।
আসলে যেটা সত্য সেটা হল রেসের কারণে সেউ মার্শাল আসলে হয়না, বরং রুহের কারণে হয়। হ্যাঁ, সেই রুহের নাম দিলাম আজ মার্শাল রুহ। আসলে আপনি যদি আপনার রুহ বা মন বা সৌল কে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন, জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেন, আপনার রুহটি হবে মার্শাল রুহ। যে কেউ এরকম নিজের রুহকে মার্শাল রুহ বানিয়ে ফেলতে পারে। এভাবে যখন কোন একটি জাতি মার্শাল রুহের অধিকারী হয়ে যেতে পারে, তখনই তাকে দিয়ে যুদ্ধ হয়, বিশাল সামরিক বিজয় সংঘটিত হয়। সে কোন রেসের মানুষ, কি বাঙ্গালী কি জার্মান, কি ব্রিটিশ, কি আরব, এগুলা কোন ব্যাপার না।
শরীর সবারই সমান। আসল হল রুহ। মার্শাল রুহ।
আবার আরাম আয়েশে লিপ্ত হয়ে, ভুড়ি হয়ে গেলে, মার্শাল রুহ বিলুপ্ত হয়। আপনি যে রেইসই হন না কেন, পতন অনিবার্য। এজন্যই কখনও গ্রীকদের উত্থান হয়েছে, আবার পতন হয়েছে। রোমান দের? একই কাহিনী। আরব মুসলিমদের? একই কাহিনী। তুর্কি মুসলিমদের? কাহিনী একই । মঙ্গলদের? একই। উত্থান, পতন। পুরো জাতি এক সাথে ‘মার্শাল রুহ’ হয়ে গেলে উত্থান। এরপর খেয়ে খেয়ে ভুড়ি হয়ে গেলে, আরাম আয়েশে লিপ্ত হয়ে গেলে? পতন।
তাহলে মার্শাল রুহ, একটি জাতি ইচ্ছে করলে গ্রহণ করতে পারে বর্জন করতে পারে। এর সাথে রেস এর কোন সম্পর্ক নাই। যদি কোন একটি জাতি মার্শাল রেস হতো, তাহলে সেই জাতি সারাজীবন রাজত্ব করে যেতো, কখনও পতন হতোনা। কাজেই মার্শাল রেস কনসেপ্ট আসলে মিথ্যা। এটি জাতীয়তাবাদী একটা কনসেপ্ট। হিস্টরী পড়লেই বুঝবেন মিথ্যা।
আর এ ব্যাপারে ইসলামের কথা না বললেই নয়। ইসলাম আরবদের মতন একটি লাঞ্ছিত জাতিকে মার্শাল রুহ দান করে। ফলে তারা পারসিয়ান এবং রোমানদের পর্যুদস্ত করে। পরে আরবরা ছেড়ে দেয়। তখন তুর্কিরা গ্রহণ করে। ফলে তুর্কিরা ৬০০ বছর রাজত্ব করে। ভবিষ্যতে আবার কে কখন মার্শাল রুহ পেয়ে যায়, আল্লাহই জানেন।
খেয়াল করবেন, ইসলাম রুহের উপর কাজ করে বেশী, দেহের উপর কম। রসূল (স) সাহাবীদেরকে রুহানী প্রশিক্ষণ বেশী দিতেন, দৈহিক প্রশিক্ষণও দিতেন, তবে রোমান/পারসিয়ানদের মতন না। রোমান বা পারসিয়ানদের কোন রুহানী প্রশিক্ষণ ছিলনা। তবে ভয়াবহ শারিরীক প্রশিক্ষণ ছিল। যেমন একজন রোমান সৌলজার প্রায় ৪০ কেজি ওজন নিয়ে দিনে ৯ ঘন্টা হাঁটতো, জাস্ট একটা নরমাল মার্চে। যুগের পর যুগ সামরিক ট্রেনিং ছিল প্রতিটা সৌলজারের। তারপরও রোমান/পারসিয়ানরা পারেনি।
কারণ কি? কারণ মুসলিমরা ৫০ ভাগ সময় রুহের পিছনে এবং ৫০ ভাগ সময় দেহের পিছনে ব্যয় করেছে। কোন ইসরাফ (বাড়াবাড়ি) হয়নি। অথচ রোমানরা ১০০ ভাগ সময় দেহের পিছনে ব্যয় করেছে। কাজেই দৈহিক শক্তি অর্জন, প্রয়োজনের চেয়ে বেশী হয়ে গেছে, কিন্তু রুহানী শক্তি জিরো হয়েছে। দৈহিক শক্তির দিকে ইসরাফ হয়েছে। কিন্তু একদিকে ইসরাফ হলে আরেকদিকে নেগেটিভ ইসরাফ হয়। কাজেই রুহানী শক্তির দিক থেকে খুব কমতি হয়ে গেছে ওদের। সর্বমোট শক্তি (= দৈহিক + রুহানী শক্তি) মুসলিমদের বেশী হয়েছে। কাজেই মাত্র ৪০ হাজার মুসলিম বাহিনীর কাছে রোমান+পারসিয়ান আড়াই লক্ষ করে সৈন্য পরাজিত হয়েছে।
কাজেই আসল হল রুহ। মার্শাল রুহ। রুহকে মার্শাল বানান। যথেষ্ট হবে। রুহ হল আসল। দেহ আসলে রুহের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ। দেহ বানানো সোজা। রুহ বানানো কঠিন। বছরের পর বছর মুজাহাদা করে রুহ তৈরী হয়। দেহ তো মাত্র ৬ মাস – ১ বছরে বানিয়ে ফেলা যায়। তবে তাই বলে দেহকে একদম ছেড়ে দিলে হবেনা। সারাদিন ইবাদত বন্দেগী করে যদি আবার ভুড়ি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু দেহের দিক থেকে কমতি হয়ে যায়। সেটা যাতে না হয়। কাজেই মার্শাল রেস কেউ ইচ্ছা করলেও হইতে পারেনা, কিন্তু মার্শাল রুহ আপনি হবেন কিনা সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেই আপনি নিজের রুহকে মার্শাল বানিয়ে ফেলতে পারবেন। সিদ্ধান্ত আপনার।
দেখেন আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে রুহ কিভাবে মার্শাল করতে হয়, তার প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। এবং পরে মার্শাল রুহ কনসেপ্ট প্রমাণও হয়ে গেল দেখলেন। মুহাম্মদ (স) যে ওহী পেয়েছিলেন, তিনি যে নবী ছিলেন, তার কিন্তু এটাও একটা প্রমাণ। কারণ ১৯ শতক পর্যন্ত মানুষ কিন্তু জাতীয়তাবাদী ছিল, ইভেন এখনও আছে।
তাহলে বাঙ্গালী জাতির উন্নতি হলো না কেন? কারণ পুরো জাতির অধিকাংশ মানুষ তাদের রুহকে মার্শাল বানাতে পারেনি। একজন দুইজন বা অল্প সংখ্যক বানিয়েছে, কিন্তু পুরো জাতি একসাথে বানায় নি। জাতি বিভক্ত, ৫০ ভাগ ইসলামের পক্ষে, বাকি ৫০ ভাগ বিপক্ষে। এইজন্য। সেই সিরাজ উদ্দৌলার আমলেই ১০০ ভাগ মুসলিম ছিলনা। সিরাজের আমলে ইভেন ৩০-৪০ ভাগ মুসলিম ছিল। কেমনে হবে?
রুহকে মার্শাল বানাবেন কিভাবে?
১. সালাহ,
২, দুয়া এবং তাসবীহ পাঠ। খুব দরকারী, যদিও নফল কিন্তু দরকারী;
৩. অধিক পরিমাণে কুরআনের তিলাওয়াত এবং শ্রবণ।
৪. বড় পাপ থেকে দূরে থাকা, হয়ে গেলে তাওবাহ। সবসময় তাওবাহ এবং ইসতেগফার করা।
তাহলে আর দেরী কেন? রুহকে মার্শাল বানিয়ে ফেলুন। আপনি কালা না ধলা, মোটা নাকি চিকন, লম্বা নাকি খাটো, বডিশেইপ ভাল কি খারাপ, আপনি বাঙ্গালী নাকি জার্মান- এইসবের কোন ভ্যালু নাই। জেনেটিক্স সবই সমান। আসল হল রুহের শক্তি যেখান থেকে মোটিভেশন আর ইন্সপাইরেশন আসে। রুহের শক্তি থাকলে ডায়েট, এক্সারসাইজ করে সব ঠিক করে ফেলতে পারবেন।
It’s your Ruh that could be martial, not your body.
হয়তো আল্লাহ এই লাঞ্ছিত বাঙ্গালীদেরকে দিয়েই ভারতবর্ষকে গড়বেন? লাঞ্ছিত আরবদের দিয়ে যিনি রোমান পারসিয়ানদের গড়েছেন, তিনি অবশ্যই বাঙ্গালীদের দিয়েই ভারতবর্ষ গড়তে পারেন। কে জানে? অসম্ভব না। মার্শাল রুহ বানাইতে পারলেই হইলো। কে জানে? আল্লাহ মুর্দা হতে জিন্দাকে পয়দা করেন।
আল্লাহ মুস্তা’আন!
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।