কোন দার্শনিক ও নাস্তিক যদি বলে, আমি স্রষ্টার অস্তিত্ব, তাঁর নাম এবং তাঁর সিফাত কোন কিছুই সাব্যস্ত করি না, বরং সৃষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করি। তার জবাবে বলা হবে যে, বিবেক ও বোধশক্তি দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে, অস্তিত্বশীল প্রত্যেক বস্তুই হয়তো নিজে নিজেই অস্তিত্ব লাভ করে, না হয় নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হয় না। অস্তিত্বশীল প্রত্যেক বস্তুই হয় অ-সৃষ্ট -চিরন্তন-অনাদি-অবিনশ্বর-সদা বিদ্যমান আর তা না হলে উহা হবে এমন সৃষ্টি, যা একসময় অস্তিত্বশীল ছিল না, কিন্তু পরে উহা অস্তিত্ব লাভ করেছে। সেই সঙ্গে বিবেক-বোধশক্তি দ্বারা আরো সাব্যস্ত যে, অস্তিত্বশীল প্রত্যেক বস্তু হয় সৃষ্ট এবং স্রষ্টার প্রতি মুখাপেক্ষী আর তা না হলে উহা হবে অ-সৃষ্ট এবং স্রষ্টার প্রতি অমুখাপেক্ষী। অস্তিত্বশীল প্রত্যেক বস্তু হয় অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষী, আর না হয় স্বনির্ভর বা অন্যের প্রতি অমূখাপেক্ষী। যেই বস্তু নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল নয়, তার পক্ষে নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল বস্তুর সাহায্য ছাড়া অস্তিত্বে আসা অসম্ভব। প্রাক্তন-চিরন্তন-অবিনশ্বর সত্তার সাহায্য ব্যতীত কোন নশ্বর বস্তুর অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায়না। সৃষ্টি কখনো স্রষ্টা ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করেনা। অভাবগ্রস্ত কখনো অভাবহীনের সাহায্য ছাড়া টিকে থাকতে পারে না।
পরস্পর বিপরীতমূখী দু’টি বস্তু সম্পর্কিত উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এমন এক অস্তিত্বশীলের অস্তিত্ব সাব্যস্ত হয়, যা নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল, অবিনশ্বর-চিরন্তন, সদাবিদ্যমান, স্রষ্টা এবং অন্যের প্রতি অমূখাপেক্ষী। সেই অবিনশ্বর-চিরন্তন সত্তা ব্যতীত অন্যরা তার ব্যতিক্রম। ইন্দ্রিয়, বিবেক, বোধশক্তি ও বাস্তবতা দ্বারা এমনসব বস্তুর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, যা নশ্বর এবং অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এসেছে। আর নশ্বর বস্তু কখনো নিজে নিজেই অস্তিত্বে আসতে পারেনা, সে চিরন্তন, অবিনশ্বর এবং অন্যের স্রষ্টা হতে পারেনা। সেই সঙ্গে সে অন্যের সাহায্য ব্যতীত টিকে থাকতেও পারেনা। সুতরাং বাস্তবতা ও বোধশক্তি দ্বারা দু’টি বস্তুর অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো। একটি আবশ্যিক এবং অন্যটির অস্তিত্ব সম্ভাব্য, একটির অস্তিত্ব অনাদি-প্রাক্তন-চিরন্তন-অবিনশ্বর এবং অন্যটির অস্তিত্ব নতুন-নশ্বর। অস্তিত্বশীল এই দু’টির একটি অমুখাপেক্ষী, অন্যটি অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষী, একটি স্রষ্টা, অন্যটি সৃষ্টি। দু’টি বস্তুই অস্তিত্বশীল ও বিদ্যমান হওয়ার দিক থেকে একই রকম। অর্থাৎ দু’টিরই অস্তিত্ব রয়েছে। অস্তিত্বশীল থাকার ক্ষেত্রে উভয়ই সমান। আর এটিও জানা কথা যে, উভয়ের অস্তিত্বের প্রকৃতি, স্বভাব ও বৈশিষ্ট পরস্পর সমান নয়। উভয়ের অস্তিত্বের প্রকৃতি ও স্বভাব যদি পরস্পর সমান হয়, তাহলে যা হওয়া আবশ্যক, যা হওয়া সম্ভব এবং যা হওয়া অসম্ভব -এইসব ক্ষেত্রেই উভয়টি পরস্পর সমান হয়ে যাওয়া আবশ্যক হবে। অস্তিত্বশীল দু’টি বস্তুর হাকীকত যদি একই রকম হয়, একটি চিরন্তন-অবিনশ্বর হওয়া আবশ্যক হবে এবং অন্যটির চিরন্তনতা আবশ্যক হবেনা, একটি হবে স্রষ্টা, অন্যটি স্রষ্টা হবে না এবং একটি হবে অমুখাপেক্ষী এবং অপরটি হবে মুখাপেক্ষী। আর যদি উভয়ের অস্তিত্বের প্রকৃতি ও স্বভাব পরস্পর সমান হয়, তাহলে উভয়ের প্রত্যেকটিই চিরন্তন-অবিনশ্বর হওয়া আবশ্যক হবে এবং একই সাথে চিরন্তন-অবিনশ্বর হবেনা। নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হবে এবং নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হবেনা, স্রষ্টা হবে এবং স্রষ্টা হবেনা, অভাবহীন-অমূখাপেক্ষী হবে এবং অভাবহীন-অমূখাপেক্ষী হবেনা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে উভয় বস্তুর অস্তিত্বের প্রকৃতি ও স্বভাব পরস্পর সমান নির্ধারণ করা হলে পরস্পর বিপরীতমুখী দু’টি বস্তু একসাথে একত্রিত হওয়া আবশ্যক হয়। সুতরাং বিবেক ও বোধশক্তি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা জানা গেল যে, উভয় বস্তুর অস্তিতের প্রকৃিত ও স্বভাব পরস্পর সমান নয়। শরীয়তের দলীল দ্বারা উক্ত ধারণা বাতিল।
উপরোক্ত দলীল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অবিনশ্বর এবং নশ্বর একদিক থেকে পরস্পর সমান। অর্থাৎ উভয়েরই অস্তিত্ব রয়েছে। অন্যদিক থেকে পরস্পর ভিন্ন। অর্থাৎ অবিনশ্বরের অস্তিত্বের প্রকৃতি ও স্বভাব নশ্বরের প্রকৃতি ও স্বভাব থেকে ভিন্ন। সুতরাং যে ব্যক্তি উভয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করলো, সে বিবেক-বোধশক্তি ও বাস্তবতার দলীল-প্রমাণকে বাতিল করে দিল এবং একটি বাতিল কথা বলল। আর যে ব্যক্তি অবিনশ্বর ও নশ্বরের অস্তিত্বের প্রকৃতি ও স্বভাবকে পরস্পর সমান মনে করলো অবিনশ্বরের সিফাতকে নশ্বরের সিফাতের সাদৃশ্য করে ফেলল এবং সেও একটি বাতিল কথা বলল। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।
লেখকঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী স্নাতক সম্পন্ন করেছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরাবিয়া থেকে। বর্তমানে তিনি জুবাইল দাওয়া সেন্টার, সৌদি আরাবিয়াতে কর্মরত আছেন।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।
বিষয়টা অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাযাকাল্লাহু খইর।