খুব অবাক লাগে!
সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোও যখন অসীম মমতা নিয়ে কপালে হাত রাখেন, তখন কী যে ভালো লাগে! স্পর্শ, ছুঁয়ে দেওয়ার মাঝেই এই অদ্ভুত ম্যাজিকটা লুকোনো। কাউকে ছুঁয়ে দেওয়ার মানেই হচ্ছে আমি এখন তার সবচাইতে কাছে আছি। এই কাছে থাকার উৎসটা হলো ভালোবাসা। ছুঁয়ে দেওয়ার ফলে একটা ভালোলাগা অনুভূত হয় ভেতরে। জ্বর আসলে আব্বু-আম্মু যখন পরম আদরে কপালে হাত দিয়ে দেখেন, তখন এই ভালোলাগা বিদ্যুতের মতো সবার ভেতরে বয়ে যায়। প্রিয় মানুষটা আর আমার মাঝখানে সামান্যতম ফাঁকা জায়গাও নেই, একটুও না, এই সত্যটা আমাদের অবচেতন মনের ক্যানভাসটাতে আনন্দের আকাশী জলরঙে একটা হালকা টান দিয়ে যায়! মৃদু মৃদু ভালো লাগতে শুরু করে!
এই যে স্পর্শকে এত সত্য, এত জীবন্ত মনে হয়, সেই স্পর্শে কিন্তু কেউ আমাদেরকে সত্যি সত্যি ছুঁয়ে দিতে পারে না। দুইজনের শরীরের লক্ষ লক্ষ এটমের বাইরের দিকে থাকা ইলেক্ট্রনগুলো পরস্পরকে তীব্র বিকর্ষণ করে ভেতরের দিকে চেপে যায়। একটা মানুষের ইলেক্ট্রন আরেকটা মানুষের ইলেক্ট্রনকে স্পর্শ করতে পারে না। ফলে, মাঝখানে ঠিকই একটা বি-শা-ল দূরত্ব থেকে যায়। হোক না তা ইলেক্ট্রনের সাপেক্ষে! এটাই সত্যি। শুধু আমরাই জানি না, বুঝি না এই দূরত্বের সত্যকে। আমরা বুঝে উঠতেই পারি না কখনো যে, দুনিয়াটা আসলেই একটা ভয়াবহ বিভ্রান্তির জায়গা। গভীর ভ্রান্তি!
আমরা না জানলেও কিন্তু এটাই সত্যি। আমাদের জানা বা অজানা থাকার ফলে কিন্তু সত্যটা বদলে মিথ্যে হয়ে যায় না। সত্যের জায়গায় সত্য অবিরাম অটল থাকে। আমরাই কেবল আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানের গণ্ডিতে তাকে ধরতে পারি না, বুঝতে পারি না। আমরা যে সত্যি সত্যি কত্ত অসহায়, সেটা অনুধাবন করার মতো জ্ঞান আর ক্ষমতাও আমরা রাখি না। হ্যাঁ, আমরা এতটাই অসহায়!
যিনি সব সত্যকে ধারণ করে আছেন, সব সত্যি সত্যি যেমন আছে তেমন হয়ে থাকার আসল কারণ আর আদি উৎস যিনি, আমাদের জন্যে তাঁর রয়েছে তীব্র মায়া আর স্নেহ! জগতের অকুল পাথারে তাই আমাদের জন্যে সত্যিকারের প্রয়োজনীয় কিছু সত্য তিনি তাঁর কথামালায় জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথামালায় একটা কথা[১] জানতে পেরে বুকটা অদ্ভুত শুন্য হয়ে গেলো। তীব্র হাহাকার আর শুন্যতায় বুকের আকাশটা হঠাৎ করেই পুরোপুরি খালি হয়ে গেলো। দুনিয়াটা ভ্রান্তি, মায়া ছাড়া আর কিচ্ছু না। যা অনুভব করছি, উপভোগ করছি, সবই আসলে ভ্রান্তি! এটাই সত্য! এটাই রিয়েলিটি, বাস্তবতা। যেমনটা হয় ছুঁয়ে দেওয়ার সময়। ছুঁয়ে দেওয়ার ফলে আমাদের মনে হতে থাকে যে, আমাদের মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। অথচ এই মনে হওয়াটা কেবলই আমাদের শরীরে কিছু ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল আর কেমিক্যাল রিয়্যাকশানের ফলাফল। কী অদ্ভুত আর অভূতপূর্ব ডিজাইন করেই না আমাদেরকে এই পরীক্ষার হলে পাঠানো হয়েছে! সত্যিই অসাধারণ!
জানি, আমি এইখানে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। পরীক্ষা দিতে বসেছি। তবু পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে কঠিন কঠিন সব আনকমন প্রশ্ন দেখে মনটা উদাস হয়ে যায়। গ্রানাইট পাথরের মতো কঠিন সব সৃজনশীল প্রশ্ন দেখে ভয় আর উৎকণ্ঠায় মন আঁধারে আঁধারে ঘিরে আসে। যদিও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমরা বুকের ভেতরে ভয় পেলেও বিশ্বাসীদের জন্যে সত্যি সত্যিই ভয়ের কিছু ঘটবে না। তবুও ভয় কাটে না। ভয় যে কাটবে না, এটা তিনিও জানেন। তবুও তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করতে ভুলেননি।
আমার পরীক্ষার শেষ সময় কবে জানি না। পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিয়ে সব ছেড়েছুড়ে এক দৌড়ে চলে যেতে ইচ্ছে হয়। আবার এদিকে কিছুই যে ঠিকঠাকমতো লিখতে পারিনি, যা লিখেছি তাও সবই ভুলেভালে ভরা সেটাও জানি। চারপাশের পরীক্ষা নামক দায়িত্বগুলোর তীব্র চাপ, সেই সাথে অতীতের পৃষ্ঠায় ভুল উত্তর লিখে আসার কারণে এই পৃষ্ঠার অংকটার উত্তর না মেলা! প্রতিটা ক্ষণ যে কী ভয়াবহ! কী যে ভয়ঙ্কর!
এই ভয়ঙ্কর জায়গা থেকে হয় আরো নিচে, আরো অকল্পনীয় ভয়ঙ্করে অনন্তের জন্যে তলিয়ে যাওয়া; আর নয়তো ধৈর্য রেখে দাঁতে দাঁত চেপে পরীক্ষা দিতে থাকলে উপরে উঠে যাওয়া। নিজের বাসায়। নিজের সত্যিকারের বাসায়, যেখান থেকে এইখানে আসার পরে কেবলই খারাপ লাগে দিবারাত্রি।
জানি না আরো কতদিন বাকি! শুধুই স্বপ্ন দেখি বাসায় ফিরে যাবার। নিজের বাসায়। আমাদের সত্যিকারের বাসা।
[১] আল-কুরআন, সূরাহ আল-হাদীদ, ২০ নং আয়াতের শেষ বাক্যটা।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।