সূরা দুহা মক্কায় অবতীর্ণ প্রথম দিককার সূরাগুলোর অন্যতম। এটি এমন এক সময় নাযিল হয়েছে যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের ভবিষ্যত নিয়ে ভয়াবহ মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এই সূরার মূল বিষয় হচ্ছে আশা ও আশাবাদী মনোভাব, যে কারণে এটি আত্মোন্নয়নমূলক শিক্ষার জন্য চমৎকার একটি সূরা।
সূরা দুহার অনুবাদঃ
১। শপথ পুর্বাহ্নের,
২। শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়,
৩। আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি।
৪। আপনার জন্য ইহকাল অপেক্ষা পরকাল শ্রেয়।
৫। আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
৬। তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
৭। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর আপনাকে পথ প্রদর্শন করেছেন।
৮। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
৯। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না;
১০। সওয়ালকারীকে ধমক দিবেন না।
১১। এবং আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
পাঠ এক: আশাবাদী হওয়া
এটি এই সূরার অন্তর্নিহিত বিষয় এবং এই সূরার প্রাথমিক শিক্ষাও এটাই। মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রতি আমাদের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। নৈরাশ্যবাদী লোকদের মত হওয়ার আমাদের সাজে না। বরং আমাদের জীবন পরিচালিত করতে হবে আল্লাহর সাহায্য এবং ক্ষমার আশা করে।
আমাদের নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগই আশাবাদের আলোকে প্রসারিত হতে হবে। যদি আমরা আমাদের সংকল্পে সৎ থাকি আর সেই উদ্যোগটি যদি সার্বিকভাবে উম্মাহর জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে সবশেষে আল্লাহই আমাদেরকে সাহায্য করবেন। এই মনোভাবই আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নেবে।
পাঠ দুই: কৃ্তজ্ঞ হওয়া
আশাবাদী মনোভাব বজায় রাখার জন্য এই সূরা আমাদেরকে অতীতের সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন আল্লাহ তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করেছিলেন। আমাদের নিজেদের জীবনেও এমন অনেক সময় গেছে যখন আল্লাহ আমাদের সাফল্যকে মঞ্জুর করেছেন, আবার খারাপ পরিস্থিতিকে ঘুরিয়েও দিয়েছেন। সেসব সময়ের স্মৃতিচারণ করে আমাদের অবশ্যই কৃ্তজ্ঞ হওয়া উচিত। আর আল্লাহ আমাদেরকে সামনের পদক্ষেপগুলোতে সহযোগিতা করতেই থাকবেন এই আশাবাদ ধরে রাখার জন্য ওই স্মৃতিগুলোকে প্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
পাঠ তিন: দানশীল হওয়া
স্বার্থপর আর বস্তুবাদী হওয়া একজন মুমিনের লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্যগুলো উম্মাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া উচিত। আর তার জন্য একটা উপায় হলো দয়ালু হওয়া। দানশীলতা মুসলিম বিশ্বকে উজ্জীবিত করে এবং সম্মিলিত উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেয়। দয়ালু ব্যক্তি আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত বলেই তার সম্পদ বৃদ্ধি পায়। যে ব্যক্তি ওই দান গ্রহণ করে সে-ও রহমত প্রাপ্ত হয়। ফলে তার কাছে দিনযাপনের কিছু অর্থও চলে আসলো।
দানের মধ্যে শুধু লাভই আছে, কোন লোকসান নেই। এরসাথে জড়িত সবাই উপকৃত হয়। পূর্ণতার আবেশে আবিষ্ট হয়। আমাদের অবশ্যই সেসব পথ আর সেসব লক্ষ্য উদ্দেশ্য পরিহার করা উচিত যা আমাদেরকে চরম স্বার্থপর আর বস্তুবাদী বানিয়ে দেবে। অপরের সেবা করার প্রতি থাকবে আমাদের মনোযোগ আর সেটা শুরু হবে দয়ালু হওয়ার মাধ্যমে।
পাঠ চার: সমাজ গঠনে অবদান রাখা
দয়াশীলতার কারণে উম্মাহকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি হয়। একজন মুসলিমের লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত যেটা উম্মাহর জন্য উপকারী এবং উম্মাহর উন্নয়ন সাধন করে। প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে অপরের উপকারের কথা চিন্তা করে। যদি আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হয় উম্মাহকে সাহায্য করা, তাহলে আল্লাহ আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, সম্পদে এবং সময়ে বারাকাহ দান করবেন। যেহেতু আমরা একক উম্মাহ এবং আমরা সবাই এই উম্মাহকে উন্নতির শিখরে দেখতে চাই, সেহেতু এরকম সেবাই আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নেবে
সব মিলিয়ে, ভবিষ্যতের ব্যাপারে ইতিবাচক হোন। আপনার জীবনে আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করুন। দয়ালু হোন। উম্মাহকে সাহায্য করুন। সূরা দুহা থেকে আমরা এই শিক্ষাগুলোর সারকথা পেতে পারি। এই ধারণাগুলো আমাদেরকে একক উম্মাহ হিসেবে ইহসানের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
উৎস: Islamic Self Help (মূল আর্টিকেল লিংক)
অনুবাদ: উম্মে আফরাহ, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি
অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।