আর রহমান এবং আর রহিম আল্লাহর নামে
একজন মুসলিম হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময়মত জামায়াতে আদায় করা আমাদের কর্তব্য। একদিকে ভোররাতের শান্তিময় ঘুমের তীব্র আকর্ষণ এবং অন্যদিকে ঈমানের দাবী-এই দুই এর টানাপোড়েনে আমাদের অনেকেই বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। তাই এই বিষয়ক উপকারী টিপস সম্বলিত অনেক লেখাও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে সহজলভ্য। তাহলে কেন এই লেখা? এখানে আমি মূলত বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স থেকে এই বিষয়ক লিখাগুলিকে একত্রিত করে তার সাথে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা মিশিয়ে মালা গেঁথেছি মাত্র।
ফজরের সময় ঘুম থেকে ওঠার টিপসগুলোকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি-
(1) Spiritual Tips
(2) Worldly Tips
আত্মিকভাবে মহান আল্লাহ’র সান্নিধ্যে আসতে না পারলে জাগতিক কোন কৌশলই আমাদেরকে ঘুম থেকে টেনে তুলতে পারবে না আর পারলেও তা হবে অনিয়মিত। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগের সময়টায় আমাদেরকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। মনে রাখবেন, রাতে আমরা কী অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছি তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে যে আমরা ফজরে জেগে উঠতে পারব কিনা। তাই এই সময়টা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যেসব কাজ আপনাকে করতে হবে-
(১) দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন যে ফজরে আপনি অবশ্যই অবশ্যই উঠবেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও ইচ্ছাশক্তি না থাকলে কোন লেকচার, বই, নোট, আর্টিকেল কিছুই কাজে আসবে না। এই ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তোলার জন্য ফযরের সালাত জামায়াতে আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত এবং সময়মত সালাত না আদায় করার শাস্তি সংক্রান্ত হাদীসগুলি পড়ে দেখতে পারেন। এমন একটি হাদীস আমরা এখানে উল্লেখ করছি-
জাবির (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কেউ বিছানায় শয়ন করে তখন একজন ফেরেশতা ও একজন শয়তান তার কাছে আসে। ফেরেশতা বলেঃ কল্যাণ ও মঙ্গল দিয়ে (দিনের) সমাপ্তি করো। আর শয়তান বলেঃ অকল্যাণ দিয়ে সমাপ্তি করো। যদি ঐ ব্যক্তি আল্লাহর যিকর করে নিদ্রা যায় তাহলে সারারাত ঐ ফেরেশতা তাকে দেখাশোনা ও হেফাযত করেন।” [সহীহ ইবনু হিব্বান ২/৩৪৩, সনদের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।]
(২) পাপ থেকে সারাদিনই দূরে থাকতে হবে তবে বিশেষভাবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোন কাজ করবেন না। ঘুমানোর আগে ভিডিও গেম-সিনেমা-গান-সিরিয়াল-খেলা ইত্যাদি দেখবেন না কিংবা অহেতুক আড্ডা দিবেন না।
(৩) ইশার সালাতের পর লম্বা আলোচনা কিংবা প্রোগ্রাম রাখবেন না। চেষ্টা করুন, ইশার সালাতের পর যথাসম্ভব কথা কম বলতে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে।
(৩) সালাতের ন্যায় পরিপূর্ণভাবে ওজু করুন।
(৪) বিতর সালাত আদায় করুন। কুনূতের সময় আল্লাহর কাছে দূয়া করুন যেন ফজরে জেগে উঠতে পারেন। আন্তরিকভাবে আল্লাহর সাহায্য চান।
(৫) সামান্য পরিমাণ হলেও কুরআন তিলাওয়াত করুন। বিশুদ্ধ হাদীসে পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে সূরা মূলক, সূরা সাজদা, সূরা ইসরা, সূরা যুমার, সূরা বাকারাহ এর শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি তিলাওয়াত করেছেন। [তিরমিযী, আলবানী-সহিহুল জামি ২/৮৭৯]
(৬) বিশুদ্ধ দোয়ার বই থেকে ঘুমানোর পূর্ব মুহূর্তের দোয়াগুলি মুখস্ত করে নিন। সবগুলি না পারলেও সাধ্যমত মুখস্ত করে ঘুমানোর আগে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করুন। ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির এর “রাহে বেলায়াত” বইটি হতে পারে এজন্য সহায়ক একটি বই।
এগুলির সবই ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য Spiritual Tips. প্রথমেই এগুলো আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন। আমরা ধরে নিচ্ছি আপনি এগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এরপর নিজের টিপসগুলো ট্রাই করে দেখুন-
(১) ১.৫ ঘন্টা ঘুমের নিয়ম
ঘুমানোর সময় থেকে ১.৫ ঘণ্টার গুণিতকে এলার্ম সেট করুন। ধরুন, আপনি ১২ টায় ঘুম যাবেন। তবে এলার্ম সেট করুন ৩(১.৫X২) টায় বা ৪:৩০(১.৫X৩) টায় বা ৬(১.৫X৪) টায় [ফযরের সময় অনুযায়ী]। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১.৫ ঘণ্টায় একটি Sleep Cycle শেষ হয় এবং তখন জেগে ওঠা সহজ হয়। এই হিসাবটি করবেন বিছানায় শোয়ার সময় থেকে নয় বরং আপনার ঘুমিয়ে পড়ার আনুমানিক সময় থেকে।
(২) দুপুরের ঘুম
দুপুরে খাবার পর ২০ মিনিট একটি পাওয়ার ন্যাপ নেওয়ার অভ্যাস করুন।
(৩) এ্যালার্ম এর অভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনার এলার্মটি বিছানা থেকে এমন দূরে রাখুন যেন তা বন্ধ করার জন্য হেঁটে যাওয়ার দরকার হয়। বিছানা থেকে হাত বাড়িয়ে বন্ধ করার দূরত্বে এলার্ম ঘড়ি/মোবাইল রাখবেন না।
(৪) পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাস করুন
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে জেগে ওঠার অভ্যাস হয়ে গেলে এলার্ম ১৫ মিনিট এগিয়ে নিয়ে আসুন। প্রথমে ৫ টায় ওঠার অভ্যাস হলে ৪:৪৫ এ ওঠার চেষ্টা করুন। এরপর ৪:৩০ এ…এভাবে ধীরে ধীরে তাহাজ্জুদে ওঠার চেষ্টা করুন। একদিনের ভেতর তাহাজ্জুদে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না। এভাবে চেষ্টা করলে ২-১ দিন হয়ত সফল হবেন কিন্তু এরপর আবার আগের নিয়মে ফিরে যেতে হবে। তাই ধীরে ধীরে জেগে ওঠার সময় এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
(৫) বিছানায় যা করা যাবে না
বিছানায় শুয়ে যাওয়ার পর মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। Wi-Fi connection থাকলে অফ করে দিন।
(৬) বেশি করে পানি পান করুন
ঘুমানোর আগে স্বাভাবিক অভ্যাসের চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি খেয়ে নিন। এতে সম্ভাবনা আছে যে আপনার ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে উঠতে না চাইলেও আপনি উঠতে বাধ্য হবেন। ঘুম থেকে জেগে ওঠার এই কৌশল দালিলিকভাবে প্রমাণিত না হলেও পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি।
(৮) নিজেকে শাস্তি দিন
সময়মত উঠতে না পারলে নিজেই নিজের শাস্তি নির্ধারণ করুন। বড় অঙ্কের টাকা দান করুন কিংবা কয়েকদিন সিয়াম রাখুন। অর্থাৎ শাস্তিটি এমনভাবে নির্ধারণ করুন যেন আপনার কষ্ট হয়। এতে কিছুতেই আপনার বিছানায় থাকতে ইচ্ছা হবে না।
সময়মত ফজরে উঠতে পারা আল্লাহর একটি নিয়ামত এবং এই নিয়ামত একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসতে পারে- এই বিশ্বাস পরিপূর্ণভাবে রেখে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব টিপস আমরা আলোচনা করেছি সেগুলো পালন করতে হবে। আর আত্মিক ও আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া এসব কৌশল বৃথা। তাই Spiritual Tools গুলি মনেপ্রাণে অর্জনের জন্য আমরা প্রথমে সচেষ্ট হব এবং এরপর এসব টিপস অনুসরণ করব ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহই ভালো জানেন।
সাহায্য নেওয়া হয়েছে যেখান থেকেঃ
২. How I consistently wake up 45 minutes before adhan
৩. Ten tips to wake up for fazr
৪. Five feasible formulae for fixing fazr flawlessly
আর আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।
আলহামদুলিল্লাহ্… আমি নিজে কখনই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না। 🙁 এই আর্টিকেলটা আশা করি অনেক কাজে দিবে।
A’s salamu Alaykum Warahmatullah I want to learn more about the islamic history.