লোকে প্রায়ই জানতে চায় ‘সালাত কেনো পড়া লাগবে?’ অথবা ‘হিজাব পরতে হবে কেনো? শালীনভাবে চললেই তো হয়!’

এমনকি ইসলাম মেনে চলা ব্যক্তিরাও অনেক সময় এসব কাজ মন থেকে করে না। কারণ আমরা এগুলোকে বোঝা মনে করে পালন করি। এসব না করলে জাহান্নামে পুড়তে হবে কিনা! অথচ আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর যেসব হুকুম ফরয করেছেন সেগুলো আমাদের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ। এ কথাটা উপলব্ধি করতে পারলে ইবাদাত করা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।

IIRT Arabic Intensive

আল্লাহ কেনো আমাদের সালাত পড়তে বলেন, সওম রাখতে বলেন? কেনো গীবাত থেকে দূরে থাকতে, মদ পান না করতে, হিজাব পরতে বলেন? আমাদের উপর এসব আরোপ করে আল্লাহর কী লাভ?

আপনাদের অনেকেই হয়তো এসব প্রশ্ন দেখে বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু অনেকেই যে এসব জিজ্ঞাসা অন্তরে পুষে রাখেন তা তাঁরা নিজেরাও স্বীকার করেন না। এভাবে প্রশ্নকে দমিয়ে রাখা ঠিক না। এগুলোকে বরং সন্তোষজনক জবাব দিয়ে থামাতে হয়।

আল্লাহ কোরআনে বলেন

“কেউ সৎকাজ করলে নিজের কল্যাণার্থেই তা করে। আর কেউ অসৎকাজ করলে তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা জাসিয়া(৪৫): ১৫]

একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, “হে আমার বান্দারা! তোমরা আমার কোনো লাভ বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখো না। হে আমার বান্দারা, তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা মানুষ ও জিন যদি সম্পূর্ণ ধার্মিকও হয়ে যাও, এতে আমার রাজত্বের কিছুই বাড়বে না। হে আমার বান্দারা, তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা মানুষ ও জিন যদি সবচেয়ে বিদ্রোহীও হয়ে যাও, তাতে আমার রাজত্বের কোনোই ক্ষতি হবে না। হে আমার বান্দারা, যদি তোমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল জিন ও মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে আমার কাছে কিছু চাও আর আমি তা তোমাদের দিয়ে দেই, তাহলে সাগর থেকে সুঁচের আগায় করে আনা পানির চেয়ে বেশি কিছু আমার খাজানা থেকে কমবে না। হে আমার বান্দারা, তোমাদের আমলসমূহের বদলাই আমি দিয়ে থাকি। কাজেই, যে কল্যাণ লাভ করলো, সে যেন আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানায়। আর যে অন্য কিছু লাভ করলো, সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।” (মুসলিম)

আমরা কোনো নেক আমল করলে এতে আল্লাহ তা’আলার সামান্যতম উপকারও আমরা করছি না। বরং আমরা নিজেদের লাভের জন্য তা করছি। সালাত পড়লে আমাদের কী লাভ হয়? আসুন দেখি আল্লাহ কী বলেন।

▪ সালাত আমাদের অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে

“আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকির সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা করো।” [সূরা আনকাবুত(২৯): ৪৫]

▪ সালাত হলো গায়েবি সাহায্য লাভের মাধ্যম

“হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা বাক্বারাহ(২): ১৫৩]

▪ সালাত গুনাহ মুছে দেয়

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমাদের কারো ঘরের পাশে যদি একটি নদী থাকে আর সে সেই নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে বলে মনে করো?” সাহাবাগণ বললেন, “কোনো ময়লাই থাকবে না।” তিনি বললেন, “সালাতের উদাহরণ এরই মতো। আল্লাহ এর দ্বারা বান্দার গুনাহসমূহ মুছে দেন।” (তিরমিযি)

▪ সালাত হলো আত্মার পরিশুদ্ধি

“…আপনি কেবল তাদেরই সতর্ক করতে পারেন যারা তাদের রব্বকে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। আর যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। আর আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।” [সূরা ফাতির(৩৫): ১৮]

এগুলো সালাতের অল্পকিছু উপকারিতার উদাহরণমাত্র। আল্লাহ আল-হাকিমের জ্ঞানের পরিধি আমাদের কল্পনার বাইরে।

আল্লাহর উপর আস্থা রাখলে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানবো যে, আল্লাহ আমাদের যা করতে বলেছেন তা আমাদের ভালোর জন্যই। আর এরকম আস্থা গড়ে তুলতে পারলে ইবাদাত করা সহজ হয়ে যাবে।


উৎসঃ “Why Do We Pray?” (মূল আর্টিকেল লিংক)

অনুবাদঃ আরমান নিলয়, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি

অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive