বিশাল ঐ আরশের মালিক ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করি যে তিনি যেন আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে পথ প্রদর্শন করেন। তিনি যেন আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আমরা যেন কঠিন বিপদেও অটল থাকতে পারি এবং আমাদের পাপের জন্য অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি।

এই তিনটির উপস্থিতিই রহমত এবং বরকত প্রকাশ করে। তাওহীদ বা একত্ববাদের ভিত্তিই হলো একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা এবং তাঁর প্রতি নিজেকে সমর্পিত করা। এটাই ছিল পিতা ইব্রাহীমের (আ) প্রচার করা ধর্ম। আল্লাহ্‌ বলেন,

IIRT Arabic Intensive

“আমার ইবাদাত করার জন্যই আমি মানব ও জ্বিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আয-যারিয়াত (৫১): ৫৬]

একবার যখন কেউ এটা বুঝতে পারে যে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতই আমাদের অস্তিত্বের উপস্থিতির কারণ, কেবল তখনই তাওহীদের গুরুত্ব কতোখানি তা অনুধাবন করা সম্ভব। ওযূবিহীন সালাত যেমন কোন গুরুত্ব রাখেনা, অপরিষ্কার থেকে যেমন পবিত্রতা অর্জন হয়না, ঠিক তেমনি শির্কের সাথে জড়িয়ে অন্যের দাসত্ব মেনে আল্লাহর ইবাদাত করাও কোন মূল্য বহন করেনা। আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা কোন ছোটখাট বিষয় নয়। নিঃসন্দেহে এতে করে একজনের সকল প্রকার উপাসনা ও আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তার জন্য যা অবশিষ্ট থাকবে তা হলো জাহান্নামের আগুন। এভাবে চিন্তা করলে একজন পরিষ্কার বুঝে যাবে যে আমাদেরকে একমাত্র সেই জ্ঞানই অর্জন করতে হবে আর তাই আমলে আনতে হবে যা আমাদের জাহান্নামের বিভীষিকা হতে রক্ষা করতে পারে। আল্লাহ্‌ বলেন,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে” [সূরা আন-নিসা (৪): ৪৮]

(তবে উল্লেখ্য যে, যদি কেউ শির্কের মতো সর্ব নিকৃষ্ট পাপ করেও মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর কাছে খাস দিলে তাওবা করে তবে আল্লাহর ইচ্ছায় সেও মাফ পেতে পারে)

তাই শির্কের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং তাওহীদের বীজ অন্তরে বপন করতে কুরআন নাযিল করা হয়েছিল। কুরআন থেকে তাই তাওহীদ যে চারটি কোণে আবদ্ধ বা চারটি মূলনীতি যার উপর প্রকৃত তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত তার জ্ঞান পাওয়া যায়।

প্রথম কোণ

প্রথমত, এটা বুঝতে হবে যে আরবের মুশরিকেরা যারা নবীর ﷺ প্রচারিত ইসলামের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারাও কিন্তু রিযিকদাতা, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহকে মানতো। কিন্তু তাই তাদেরকে মুসলমান দাবি করা চলেনা। কারণ, কোরআনে আছে,

“তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না?” [সূরা ইউনূস (১০): ৩১]

দ্বিতীয় কোণ

দ্বিতীয়ত, ইসলামকে অস্বীকারকারীরা এটা দাবি করে যে তারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য বস্তুকে এই জন্যই ডাকে যেন তাদের হয়ে ঐ সমস্ত জিনিস আল্লাহর কাছ থেকে তাদের জন্য সাহায্য নিয়ে আসে। আল্লাহ্‌ বলেন,

“জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” [সূরা জুমার (৩৯): ৩]

তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্‌ বলেন,

“আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনূস (১০): ১৮]

সুপারিশ দুই ধরনের। একটি জায়েয আরেকটি নাজায়েয। একমাত্র আল্লাহই যেসকল বিষয়ে সুস্পষ্ট ক্ষমতাধর সেসকল বিষয়ে আল্লাহর ব্যতীত কারো কাছে সাহায্য চাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও ঘৃণ্য কাজ। এর প্রমাণ কুরআনে আছে,

“হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যেদিন না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম।” [সূরা বাকারাহ (২): ২৫৪]

শুধুমাত্র সেই সুপারিশই গ্রহণযোগ্য যা স্বয়ং আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়। যেখানে সুপারিশকারী নিজে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য পায়। আল্লাহ্‌ বলেন,

 “কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?” [সূরা বাকারাহ (২): ২৫৫]

তৃতীয় কোণ

তৃতীয়ত, নবিজিকে ﷺ পাঠানো হয়েছিল এমন সব ধর্মাবলম্বী মানুষদের ভিতর যাদের কেউ দেবতাদের পূজা করতো, কেউ পূর্ববর্তী নবী-সাধকদের আরাধনা আবার কেউ গাছ-পালা, পাথর, চাঁদ-তারা-সূর্যের কাছে মাথা নত করতো। এরা সবাই-ই আল্লাহর নবী ﷺ এর প্রচার করা তাওহীদের বাণীর বিপক্ষে সারা জীবন যুদ্ধ করে গেছে। কুরআনে আছে,

“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)” [সূরা বাকারাহ (২): ১৯৩]

“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর।” [সূরা ফুস্সিলাত (৪১): ৩৭]

“তাছাড়া তোমাদেরকে একথা বলাও সম্ভব নয় যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীগনকে নিজেদের পালনকর্তা সাব্যস্ত করে নাও।” [সূরা আলে-ইমরান (৩): ৮০]

“যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন; আপনি পবিত্র! আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই পরিজ্ঞাত; আপনি তো আমার মনের কথাও জানেন এবং আমি জানি না যা আপনার মনে আছে। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত। আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা, আমি তাদের সম্পর্কে অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে আপনিই তাদের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ পরিজ্ঞাত। যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা আপনার দাস এবং যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।” [সূরা আল-মাই’দাহ (৫): ১১৬-১১৮]

“যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা আল-ইস’রা (১৭): ৫৭]

“তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে, এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষরা রেখেছো। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।” [সূরা আন-নাজম (৫৩): ১৯-২৩]

চতুর্থ কোণ

ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা বিশ্বাসে এবং ইবাদাতে আজকের দিনেও আল্লাহর সাথে শরীক করে তারা তো ইসলাম পূর্ববর্তী কাফির-মুশরিকদের থেকেও নিকৃষ্ট। কারণ, পূর্বেকার লোকেরা আল্লাহ্‌র পাশাপাশি অন্যকিছুর উপাসনা এজন্য করতো যে তারা এটা ভাবতো যে এগুলো তাদের জন্য সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে দিবে। আবার যখন তারা দুর্দশায় পতিত হতো তখন ঠিকই আল্লাহকে ডাকতো। কিন্তু এই যুগে যারা শির্ককারী তারা তাদের অবিশ্বাসে এতোটাই দৃঢ়চিত্ত যে সমৃদ্ধি বা বিপদ দূরীকরণ কোন কারণেই তারা আল্লাহর সাথে শরীক করা থেকে বিরত হবেনা। কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন,

“তারা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে।” [সূরা আল-আনকাবূত (২৯): ৬৫]

আল্লাহ্‌ যেন প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মাদ ﷺ, তাঁর সাহাবী এবং সকল অনুসারীদের উপর কিয়ামতের আগ পর্যন্ত শান্তি বর্ষণ করতে থাকেন।


উৎস: Four Basic Rules of Pure Monotheism

অনুবাদক: মুরসালিন নিলয়, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি

অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive