দু’টো দেশের কথা চিন্তা করুন। একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, বিশেষ করে গোল্ড এবং অন্যটি কিছুটা কম উন্নত। দু’টো দেশের মানুষই সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। প্রথমটি গোল্ডকে মুদ্রা বা কারেন্সি হিসেবে ব্যবহার করে আর দ্বিতীয়টি বার্টার (পণ্যের বদলে পণ্যের বিনিময় প্রথা) সিস্টেমে চলে। যা-ই হোক, প্রত্যেকটা দেশের মানুষ ভালোভাবেই চলছে, সৎভাবে জীবন যাপন করছে।

দূরের কোনো দেশ থেকে দু’জন ব্যক্তি একটা টাকার মেশিন নিয়ে ১ম দেশটিতে আসলো, এবং তাদের বললো গোল্ড ব্যবহার অনেক সমস্যাকর, ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এই দু’জন ব্যক্তি মানুষকে পরামর্শ দিলো সবাই যাতে সব গোল্ড জমা দিয়ে এর বিপরীতে পেপার মানি নিয়ে যায়। এক গোল্ডের বিনিময়ে একটা কাগুজে মুদ্রা। মোট ১০০০ গোল্ড জমা হলো এবং ১০০০ টি কাগুজে মুদ্রা সবাইকে দেওয়া হলো এবং বলা হলো যে, কেউ ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় কাগুজে মুদ্রা জমা দিয়ে গোল্ড নিয়ে যেতে পারবে।

মানুষ গড়ে সাধারণত ১০০ টার বেশি গোল্ড ব্যবহার করতো না, পেপার মানি দিয়েই সব কাজ করতো। কিছুদিন পর এই লোক দু’টি একটা অসৎ উপায় অবলম্বন করলো। তারা ২য় দেশটিকেও বার্টারের পরিবর্তে কাগুজে মুদ্রার পরামর্শ দিলো এবং যথারীতি আরো ১০০০ কাগুজে মুদ্রা ছাপিয়ে দিলো ঋণ হিসেবে, যা এক বছর পর ১৫% সুদ সহকারে ফেরত দিতে হবে। ২য় দেশের মানুষ তো খুব খুশি এই কাগুজে মুদ্রা দেখে।

যেহেতু প্রথম দেশের মানুষের জন্য গড়ে ১০০ টার বেশি গোল্ড রাখতে হচ্ছে না, মোট গোল্ডের ১০%। তাই এই দুই ব্যক্তি আরো ঋণ দেওয়া শুরু করলো, যার পরিমাণ এসে দাঁড়ালো ১০০০০ এ (১০০০/.১০=১০০০০)। এই দুইজন ব্যক্তি দু’টি দেশেই এসব ঋণ দিলো পূর্বের সুদের হারে। সোজা কথায় ১০০০ গোল্ডের বিপরীতে ইকোনমিতে মোট কাগজ ছাড়া হলো ১০০০০ টি, যার মধ্যে ৯০০০ টাকা ঢুকেছে আবার ঋণ হিসেবে।

বছর শেষে এই দুই ব্যক্তি সবাইকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য বললো, সুদ সহ ঋণের পরিমাণ এখন ১০৩৫০। (সুদ = ৯০০০×.১৫=১৩৫০)। কিন্তু এই দু’টি দেশে এক হাজার গোল্ড এবং বাকি ৯০০০ ফিয়াট মানি (যেই মানির বিপরীতে গোল্ড জমা নেই) সহ মোট মুদ্রার পরিমাণ ১০০০০। যেহেতু ঋণের (সুদ সহ) চেয়ে মুদ্রার সংখ্যা কম, তখন মানুষের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করলো, এই দু’টি শান্তির দেশে শুরু হলো অরাজকতা। যেভাবেই হোক, ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

কিন্তু কিছু লোক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলো, যেহেতু মোট মুদ্রার চেয়ে  ঋণের পরিমাণ  ৩৫০ টাকা বেশি, তাই অনিবার্যভাবেই কিছু লোক ব্যর্থ হলো। তখন এই টাকার মেশিন বানানো দুই ব্যক্তি কিছু লোকের সম্পদ হস্তগত করে নিলো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় আর কিছু লোককে আর কিছু কাগজ ছাপিয়ে দিলো (লোন রিশিডিউলিং/রিস্ট্রাকচারিং)। বছর ঘুরতে আবারও একই দশা। মোট ঋণ (সুদ সহ) কোনোভাবেই পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না, এভাবে এক জন এক জন করে সবার সম্পদ হস্তগত করে নেয়া হলো। এখন দূর দেশ থেকে টাকার মেশিন নিয়ে আগত এই দুই ব্যক্তি হয়ে বসলো এই দু’টো দেশের নিয়ন্ত্রক, শুধু একটা কাগজ ছাপানোর মেশিনের কল্যাণে। আর শান্তির এ দু’টো দেশে শুরু হলো দরিদ্রতা, ঋণ খেলাপী কার্যক্রম। আগে যারা সুখে শান্তিতে ছিলো, এখন সারা দিন পরিশ্রম করেও ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছেই, বাড়ছেই।

এবার একটু থামুন, এবং জাতীয় ক্ষেত্রে এই দু’টি মানুষের জায়গায় ব্যাংকগুলোর কথা চিন্তা করুন আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আইএমএফ কিংবা যারা ডলার ইউরো ছাপায় তাদের কথা মাথায় রাখুন। আর মাথায় রাখুন ১৯৭১ এ ব্রিটেন উডস কলাপস করার পরে কাগুজে মুদ্রার বিপরীতে পর্যাপ্ত গোল্ড না রেখে ডলার রাখার প্রথা শুরু হয়।

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

2 Responses

  1. রাতুল

    প্রথম দেশের মানুষের জন্য গড়ে ১০০ টার বেশী গোল্ড রাখতে হচ্ছে না, মোট গোল্ড এর ১০%। তাই এই দুই ব্যক্তি আরো ঋণ দেয়া শুরু করলো, যার পরিমাণ এসে দাঁড়ালো ১০০০০ এ (১০০০/.১০=১০০০০)।//
    এই কথাটুকুর মানে বুঝি নাই

    Reply
  2. Salman Shuvo

    “যেহেতু প্রথম দেশের মানুষের জন্য গড়ে ১০০ টার বেশি গোল্ড রাখতে হচ্ছে না, মোট গোল্ডের ১০%। তাই এই দুই ব্যক্তি আরো ঋণ দেওয়া শুরু করলো, যার পরিমাণ এসে দাঁড়ালো ১০০০০ এ (১০০০/.১০=১০০০০)।”
    এটা ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive