ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে আসছি ‘মানুষ পরিবর্তনশীল’। আর বাস্তব জীবনে কথাটা খুবই সত্য। আর এই পরিবর্তন পজিটিভ ও নেগেটিভ উভয় ধরনের হতে পারে। পজিটিভ পরিবর্তন সেগুলোই, যেগুলো কেবল আল্লাহর দিকে হয়। যেমন- কেউ অমুসলিম থেকে মুসলিম হওয়া, নাস্তিক থেকে আস্তিক হওয়া, খারাপ থেকে ভালো হওয়া, মন্দ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। আর তেমনি কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এই লিখাটি (ইনশা আল্লাহ)।
একসমবয়সী পাঁচটা তরুণ ছেলের প্রতিদিনের একটা জমজমাট আড্ডার টপিক- ‘ক্লাসের কোন মেয়েটা কতটুকু সুন্দরী, কে বেশি স্মার্ট, কে কাকে চাইই’ থেকে একটা ছেলে হঠাৎ কারো মুখে এসব প্রেম-ভালোবাসা আর কুদৃষ্টির ব্যাপারে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা জানতে পেরে এই আড্ডা থেকে দূরে সরে আসা এবং নিজেকে বদলাতে শুরু করাই কিন্তু ভুল থেকে সঠিক দিকে পথচলা। আবার একটা মেয়ে আল্লাহকে ভয় করে ক্লাসের সবচেয়ে সুদর্শন ও স্মার্ট ছেলেটার সাথে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কটা থেকে যখন নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলো এবং নিজেকে ইসলামী জীবনব্যবস্থায় অভ্যস্ত করতে শুরু করলো, সে-ও কিন্তু দিক পরিবর্তন করে নিলো এবং আল্লাহর পানে ছুটে চললো। এই পরিবর্তন কখনো সাময়িক, আবার কখনো ধারাবাহিক হতে পারে। তবে জীবনকে আল্লাহর রঙে সজ্জিত করে তুলতে অবশ্যই ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।
দুইআরবি হরফ চিনতে ব্যর্থ হওয়া ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া ছেলে/মেয়েটা জীবনের মাঝপথে এসে আরবি পড়তে চাওয়া, শিখতে চাওয়া শুধু এই ভেবে যে তার প্রতিপালকের কথাগুলো (কুরআনুল কারীম) আরবি ভাষায়। সে বুঝতে পেরেছে তার সৃষ্টিকর্তার কথাগুলো তার জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই তার এই দিক পরিবর্তন। আবার মেডিকেল পড়ুয়া কোনো ছেলে/মেয়ের পড়াশোনার অধিক চাপ থাকা সত্ত্বেও কুরআন হিফজ্ করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও এক ধরনের পরিবর্তন। সে তার মেডিকেল পড়াশোনার মনোযোগ থেকে আল্লাহর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে সাহায্য করেছেন।
তিননতুন কোনো মুভির সন্ধানে ব্যস্ত থাকা ছেলে/মেয়েটা যখন এসব মুভি ছেড়ে নতুন কোনো ইসলামিক বইয়ের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে উঠে, সে-ও দিক পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তার রব্বের দিকে চলতে শুরু করেছে। আর এই পরিবর্তন আল্লাহভীরুতার জন্যই। আবার বেনামাজী কোনো ব্যক্তি নামাজের অপরিহার্যতা বুঝতে পেরে ফরয সালাতে নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি তাহাজ্জুদে প্রায় দাঁড়ানোটাও বিরাট পরিবর্তন। যা তাকে তার রব্ব পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে।
চারসুদ খেতে/দিতে অভ্যস্ত ব্যক্তি সুদের ভয়াবহতা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর নিকট তাওবাহ করে যাবতীয় সুদী লেনদেন বর্জন করা কিংবা কোনো ধনী ব্যক্তি যাকাতের অপরিহার্যতা বুঝতে পেরে পূর্ণ যাকাত দিতে শুরু করা- সবই আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। তারা বুঝতে পেরেছে পার্থিব ব্যবসার চেয়ে আখিরাতের ব্যবসা অধিক লাভজনক। আর এ ব্যবসা-ই পবিত্রতার ও বৃদ্ধির।
পাঁচদ্বীন নিয়ে উদাসীন কোনো দম্পতির হঠাৎ দ্বীনে ফিরে আসা, সন্তান-সন্ততির ইসলামী জীবনব্যবস্থা নিয়ে সচেতন হওয়া কিংবা একমাত্র বাচ্চাটাকে ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে তোলাও আখিরাতের জন্য বীজ রোপণ করা, আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া। আবার ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্বেও একজন সরকারি কর্মকর্তা হারাম উপার্জন বর্জন করে করে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করাও পবিত্রতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। যা তাকে নি’য়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে (ইনশা আল্লাহ)।
আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের এরকম বহু ঘটনা আমরা জানি ও শুনে থাকি, কিন্তু খুব কমই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অথচ এগুলো আমাদের চলার পথে প্রেরণা ও উৎসাহ হওয়া উচিত। যখনই হতাশা কিংবা ভীরুতা আমাদের উপর চেপে বসবে, তখনই তা আমাদের নতুন কোনো পথ দেখাবে। নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে। আর এ পরিবর্তন নতুন কোনো দিকে নয়, বরং এটাই আমাদের ফিতরাত যা আমরা জন্মসূত্রে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা হতে পেয়েছি। তাই এই পরিবর্তন কোনো লজ্জা কিংবা হীনমন্যতার কিছু নয়, বরং সত্য ও বিজয়ের।
সবশেষে হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেই শেষ করছি-
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” [বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুস স্বালিহীন: ৯৭]
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন (আমিন)।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।