বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

আলহামদুলিল্লাহ। আসসলাতু ওয়াসসালামু ’আলা রাসূলিল্লাহ।

IIRT Arabic Intensive

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভালবাসাগুলোকে লিখে ফেলতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব … ?

বলুন, আমার পালনকর্তার কথা লিখার জন্যে সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায়, তবে আমার পালনকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে, সাহায্যার্থে অনুরুপ পরিমাণ সমুদ্র এনে দিলেও [সূরাহ আল-কাহফ (১৮):১০৯]

এক দিনটি ছিল সোমবার। যুহরের পর বসে বসে ফেসবুকিং করছি। সাধারণত খাবারের পেইজে আমি ফলো দিয়ে রাখি না। আমাদের পূর্ববর্তীগণ মধু মিশ্রিত পানি কিংবা দুই আইটেম খাবার দেখলেই কেঁদে ফেলতেন, সেখানে আমরা আছি কীভাবে ভালো খাবার খাওয়া যায় সেই খোঁজে। এই ভেবে অ্যাভয়েড করার ট্রাই করি। কিন্তু সাজেশনে খাবারের পেইজ দেখে আনমনে স্ক্রল করছি। বিভিন্ন পিঠা, রান্না করা খাবার, আঁচার, নারকেলের নাড়ু আরও অনেক কিছুই ছিলো। দেখছি আর আম্মুর কথা মনে পড়ছে। আম্মু যখন বেঁচে ছিলেন, ছোটবেলায় এই নাড়ুগুলো বানাতাম দুজন মিলে। একসময় কান্না চলে আসলো। যাদের মা নেই, তারাই একমাত্র বুঝতে পারবে তার ভালবাসা কী, আর রান্না করা খাবার কী জিনিস। কিন্তু আমার রব, তাঁর ভালবাসা তো অফুরান, তিনি একটা ব্যবস্থা করেই দেন। তিনি তো আর-রাযযাক, আল-ওয়াদুদ।

একটু পর এক জুনিয়রের রুমে গেলাম কাজে, সে জোর করে ধরে আপেল দিয়ে দিলো। আরেক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা, সেও বললো রুমে আয়, কোনোদিন তো আসিস না। ও দুপুরের খাবার খাচ্ছিলো। এমনি কথা বলতে বলতে বলল, ওখান থেকে বক্সটা বের কর, সারপ্রাইজ … বক্সের ভেতর নারিকেলের নাড়ু। কিন্তু আমি তো রোজা রেখেছি, আরেকদিন খাবো। আরে তাই নাকি! এরকম রোজাদার তো আর পাওয়া যাবে না। সবগুলো নিয়ে যা, ইফতারের জন্যে। আমি কী বলবো? আমি ততক্ষনে স্পিচলেস। তার রুমমেটও বিস্কিটের প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। আর আমি আমার রবের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে গেলাম। একটুখানি মন খারাপ, আর রব্বে করিম সাথে সাথে এত কিছু উপহার দিলেন। কেঁদেই ফেললাম রুমে এসে। এখনই শেষ নয়। একটু পর এক ফ্রেন্ড মেসেজ দিলো রাতে ওর সাথে খেতে, গরুর মাংস রান্না করে পাঠিয়েছেন আন্টি, আবার কেঁদে ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ। আমি এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কীভাবে আদায় করবো জানি না! আলহামদুলিল্লাহ।

দুই বাবা অনেক অসুস্থ। ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, কিছুতেই ভালো হচ্ছেন না। কয়েকদিন সাথে থেকে দেখাশোনা করলাম। একটু অবস্থা ভালো হলে আমি চলে গেলাম ক্যাম্পাসে, সম্ভবত এক্সাম ছিলো। কিন্তু বাবা পুরোপুরি সুস্থ না। কী করবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

রাতে দাঁড়িয়ে গেলাম আমার রবের সামনে, দু’আ ছাড়া কিছুই করার ছিলো না। সকালে বাবা কল দিয়ে বললেন, ব্যথা কমেছে। ঠিক রাত সাড়ে তিনটার দিক থেকে ভালো বোধ করছেন। আল্লাহু আকবার, আবার স্পিচলেস হয়ে গেলাম। ওই মুহূর্তে আমি সিজদায় ছিলাম। আল্লাহু আকবার, রাতের সালাত, অব্যর্থ তীর। আমি জানি না এই পাপী বান্দার দু’আ কবুলের কারণে এমনটা হয়েছে কি না। তবে অসুস্থতা সেরে উঠেছে, সেটাই বড়। আলহামদুলিল্লাহ। জানি না কীভাবে এর শুকরিয়া আদায় করবো।

অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? [সূরাহ আর-রহমান (৫৫):৭৭]

এত ভালবাসেন আমাদের রব। অভিভূত হয়ে যাই চিন্তা করতে গেলে। প্রতি মুহূর্তে তাঁরই ভালোবাসা। নিঃসন্দেহে আমিই অকৃতজ্ঞ, পাপী। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তিন ডক্টরের চেম্বারে বসে আছি সিরিয়ালে। নরমালি এই ডক্টর স্টুডেন্ট পড়ান, সাথে রোগী দেখেন। আজকে দুজন ডাক্তার, স্টুডেন্ট নেই। এর আগেও অনেকবার দেখিয়েছি এখানে। স্কিনের ডাক্তার। নিকাব খুলতে হয়, কিছু করার নেই। ফ্রেন্ড বাইরে বসে আছে। ইম্প্রুভমেন্ট হয়েছে কি না, ঔষধ চেঞ্জ করতে হবে কি না এগুলো একজন ডাক্তার লিখছিলো, আরেকজন লাইট দিয়ে স্কিনের ইম্প্রুভমেন্ট দেখছিলো। এক পর্যায়ে সে গালে হাত দিতে গিয়েছে, আমি তেমন কিছু মনে করিনি, যেহেতু স্কিনের প্রব্লেম আর আমি পেশেন্ট। সে আমাকে বলছে আমি নাকি সরে গিয়েছি, আমি নাকি অন্যরকম কিছু মনে করেছি। বলছে, এরকম মেন্টালিটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি তাকে বললাম, দেখুন, আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না। আমি কিছু মনে করে ইন্টেনশোনালি সরে যাইনি। বাট সে নাছোড়বান্দা। আরেকজন ডাক্তার বসে বসে ঔষধ লিখছে। ওয়াল্লাহি, লাইফে অপমান হয়েছি খুবই কম। আর এই লোক ভুল অপবাদ দিয়ে অপমান করলো। স্পিচলেস হয়ে গেলাম। প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সাথে থাকা ফ্রেন্ডকেও কিছুই বললাম না। নিজের উপরই রাগ হতে লাগলো।

বাসায় এসে সালাত আর অঝোরে কান্না করে ফেললাম। এরকম কেন করলো বুঝতেই পারলাম না। আমি কোনো বদদু’আও করলাম না, কিন্তু রাত পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেলো। এত মন খারাপ ছিলো, কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করছিলো না। শুধু আল্লাহকেই বললাম।

এর অনেকদিন পর। এই ঘটনা ততদিনে ভুলেই গিয়েছি। এক বান্ধবীর সাথে কথা হচ্ছিলো ফেইসবুকে। ও সেইম ডাক্তার দেখায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর দেখাতে গিয়েছে কি না ডাক্তার। বললো, গিয়েছিলো, কিন্তু ওই ডাক্তারকে আর মহিলা পেশেন্ট দেখতে দেয় না হাসপাতাল থেকে। আমি পুরাই স্পিচলেস হয়ে গেলাম। বললাম, কেন দেখতে দেয় না? বললো, তা বলেনি কিন্তু ও খোঁজ নিয়ে জেনেছে উনার নাকি প্রব্লেম আছে।

আল্লাহু আকবার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাকে কত বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, বুঝতে পারলাম। আবার আমি কমপ্লেইনও করিনি, কিন্তু ঠিকই উনার মহিলা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি আবার সিক্ত হয়ে গেলাম রবের ভালবাসায়! আমরা ভুলে যাই, কিন্তু আমাদের রব কখনো ভুলে যান না।

পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং এই যে সমুদ্র, এর সাথে যদি আরও সাতটি সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয় তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরাহ লুকমান (৩১):২৭]


লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

(মানুষ গুনাহ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে ও নেক আমলে উৎসাহিত হবে, এরকম আশা থাকলে নিজের গুনাহ বা নেক আমলের কথা প্রকাশ করা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জায়েয রয়েছে। কা’ব বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়া ও তা থেকে তাওবাহ করার জন্য নিজের প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেছেন, যা প্রায় সব সীরাত ও তাফসীর গ্রন্থে পাওয়া যায়। – সম্পাদক)

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive