কমাণ্ড সেন্টার ও অন্তর্গুরুর নেপথ্যের কাহিনী
কমাণ্ড সেন্টার, অন্তর্গুরু –কোয়ান্টাম মেথডের সাথে জড়িত এই বিষয়গুলোর বাস্তব সংঘটনের কথা তো অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু আসলে কিভাবে এগুলো ঘটে তার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে আমাদের জানতে হবে জ্বীনদের সম্পর্কে।
এখানে উল্লেখ্য যে জ্বীনজগতে বিশ্বাস আমাদের ঈমানের অংশ, কারণ পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বহু জায়গায় এদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অথচ আমরা অনেকেই মুসলিম হওয়া স্বত্ত্বেও জ্বীনের অস্তিত্বের বিষয়টা ভুত-প্রেতের সাথে মিলিয়ে ফেলি এবং এগুলোকেও কুসংস্কার বা অবৈজ্ঞানিক হিসেবে অস্বীকার করে বসি। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে আমাদের প্রত্যেকের সাথে একজন ক্বারীন জ্বীন আছে যার কাজই হল মানুষকে খারাপ কাজ করতে উৎসাহিত করা। [1]
সার্বক্ষনিক সঙ্গী হবার কারনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকের ক্বারিন তার জীবনের সব খুটিনাটি সম্পর্কেই জানে। কোয়ান্টামের যারা অনেক উপরের লেভেলে পৌঁছে যান, তাদের অধিকাংশের আসলে জ্বিনদের সাথে যোগাযোগ থাকে। তারা তাদের সাহায্যকারী জ্বিনের মাধ্যমে ব্যক্তির ক্বারিনের সাথে যোগাযোগ করে অতীত বা বর্তমানের তথ্যগুলো সংগ্রহ করে। আর তারপর সেগুলো জানিয়ে ব্যক্তিকে তাক লাগিয়ে দেয়।
জ্বীনরা যেহেতু যে কোনো মানুষের বেশ ধরে আসতে পারে, তাই যাকে অন্তর্গুরু হিসেবে চাওয়া হচ্ছে তার রূপ ধারণ করাও তার জন্য কোনো ব্যাপার না।
কিন্তু এভাবে জ্বীনদের সাথে যোগাযোগ কি ইসলামে অনুমোদিত?
উত্তর হচ্ছে একদম না। কারণ সুলায়মান (আ:) ব্যতীত আর কোনো মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালা জ্বীনদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেননি।[2] তাই মেডিটেশনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার এমন লেভেলে পৌঁছে যাওয়া যায় যে জ্বীনরা পোষ্য হয়ে যায় এমন দাবী করা যাবে না। বরং জ্বীনদের সাথে এইসব ব্যক্তিদের সম্পর্কের স্বরূপ হচ্ছে ‘পারষ্পরিক সমঝোতার’, বলা যায় এক ধরণের চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের শিরকপূর্ণ ও কুফরি কাজ করে।[3] তখন এসব শয়তানের অনুসারী জ্বীনরা তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের উপর সন্তুষ্ট হয় এবং বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে তাদের সহায়তা করে।
কোয়ান্টামের আরো দিক: মাটির ব্যাংক
কোয়ান্টাম মেথড তাদের শিক্ষার্থীদের যে একটা কাজে খুব বেশী উদ্বুদ্ধ করে তা হল মাটির ব্যাংকে টাকা দান করা। এই টাকা কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশনের মাধ্যমে নানা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয় বলে দাবী করা হয়। ওদের একটা আলাদা ওয়েবসাইট[4] আছে যেখানে মাটির ব্যাংকে দান করার ফলে কে কি উপকার পেয়েছে সেটার লিস্ট দেয়া আছে। একটি মাত্র ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হল-
‘‘২০০৭ সালে আমার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় জটিলতা দেখা দেয়। অপারেশনের জন্যে সবাই প্রস্তুত। আমার স্বামী মাটির ব্যাংকে কিছু টাকা মানত করলেন। হঠাৎ একজন নার্স অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে আমাকে দেখে বললেন, নরমাল ডেলিভারি হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় আমার একটি ফুটফুটে সন্তান হলো। আর্থিক সংকটের কারণে স্বামীর একার পক্ষে সব খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাচ্চাকে রেখে কাজে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুজনেই মাটির ব্যাংকে কিছু টাকা দান করলাম। হঠাৎ একটা কোম্পানি থেকে কাজের প্রস্তাব এলো যেখানে বাচ্চাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার ও দেখাশোনার ব্যবস্থা আছে।[5]
মাটির ব্যাংকের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
আমরা যদি মাটির ব্যাংক সংক্রান্ত সকল উপকারিতার লিস্টগুলো ভালো করে খেয়াল করি, তাহলে দেখবো যে এখানে পরোক্ষভাবে বলা হচ্ছে মাটির ব্যাংকে দান মানুষের কল্যাণ করতে পারে। অথচ ইসলামী শিক্ষা হল কল্যাণ একমাত্র আল্লাহ পাকের কাছ থেকেই আসে, আর কারও জন্য কোন ক্ষতি নির্ধারিত হলে সেটাও একমাত্র আল্লাহ তা’আলার নিয়ন্ত্রণে, আল্লাহর সাথে এতে কোন অংশীদার নেই।
এখানে একটা বিষয় বুঝাটা খুব জরুরী। দান সাদাকা করা ইসলামের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং খুবই পছন্দনীয় ইবাদাত। কিন্তু অন্য সকল ইবাদাতের মতই আমরা এটা করি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য, পরকালে পুরষ্কারের আশায়। অবশ্যই ইসলামের সকল ইবাদাতেরই দুনিয়াবী উপকারিতা আছে- রোযা রাখলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যাকাত দিলে সম্পদে বরকত আসে…কিন্তু এই আশায় কিন্তু আমরা ইবাদাতগুলো করি না। এখন কেউ যদি ওজন কমানোর জন্য রোযা রাখে, তাহলে অবশ্যই তার নিয়্যত ত্রুটিযুক্ত এবং সে কিন্তু এটার জন্য সওয়াব পাবে না। আমাদের জীবনে যদি কোনো বিপদ আপদ বা ঝামেলা থাকে তাহলে দান করে সেই ইবাদাতের উসীলায় বিপদ থেকে বাঁচার আল্লাহর কাছে দুআ আমরা করতেই পারি, তবে বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে তাহলে দান করবো এমন চিন্তাকে হাদীসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।[6] তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো যে দান করার মান্নত করলে সেটা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে সেটা খেয়াল রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আমরা এতক্ষণ কোয়ান্টামের ব্যাপারে যা জানলাম তাতে এদের প্রচার ও প্রসারে কি আমাদের অবদান রাখা উচিৎ?
কোয়ান্টামের আরো দিক: কুরআনের মর্ম বাণী
২০১৪ সালের দিকে সম্ভবত কোয়ান্টামের যে প্রধান কর্তা ব্যক্তি- মহাজাতক, ঊনি আল-কুরআনের মর্ম বাণী নামে কুরআনের অনুবাদ নামে বের করেন। ওদের ওয়েবসাইটে গেলে বইটা, ঊনার করা তাফসীরের অডিও ডাউনলোড করা যায়। আমার সেগুলা শোনার সময় বা রুচি কোনোটাই হয় নাই। একজন মানুষ যার ইসলাম সম্পর্কে ব্যাসিক জ্ঞানটুকু নেই, যার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ইসলাম নিয়ে ইচ্ছামত ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে[7] তার করা কুরআনের অনুবাদ কতটুকু বিভ্রান্তিকর হবে তা সহজেই অনুমেয়। আসুন নিচের ছোট্ট উদাহরণটি দেখি:
সূরা বুরুজের (৮৫ নং সূরা) অনুবাদে বুরুজ শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে রাশিমালা। একটা পুরোপুরি ভুল অনুবাদ। কারণ বুরুজ শব্দের প্রকৃত অর্থ বড় তারকা। তবে যে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে জ্যোতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে ভাগ্য গণনার বই পাওয়া যায়[8], সেখানে যে এ ধরনের অনুবাদ করা হবে তা সহজেই অনুমেয়। এরকম আরো অজস্র ভুল ব্যাখ্যা ওদের ওয়েবসাইটেই আছে যেখানে চিন্তা ভাবনা-গবেষণা করা অর্থ্যাৎ আরবী তাফাক্কুর শব্দের অর্থকে ধ্যান হিসেবে চালিয়ে দিয়ে দাবী করা হচ্ছে কুরআনের বহু জায়গায় নাকি সরাসরি মেডিটেশনের কথা বলা হয়েছে![9] এই অনুবাদ কিভাবে করেছেন সেটা ঊনি নিজেই বলছেন-
কোরআন পড়েছি বহুবার। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝিনি, ভেতরে ডুব দিতে পারিনি কখনও। যখন এক গভীর মূহূর্তে কোরআনের গভীরে ডুবে গেলাম, আয়াতগুলো যেন কথা বলতে শুরু করলো । শিহরিত, চমকিত হলাম। এক জীবনে যা চাই সবই সাজানো রয়েছে কুরআনে। (পৃ: ২৩)
তাই কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া স্বত্তেও আল্লাহতে সমর্পিত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মনিমগ্ন হয়ে ধ্যানের স্তরে তাঁর কালামের মর্মবাণী উপলব্ধি করেছি আর বিস্মিত, চমকিত হয়েছি। ( পৃ: ২৫)
এখান থেকে এই বই, এই প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ব্যাপারে আমরা কি উপসংহারে পৌঁছাবো তা ঠিক করার ভার পাঠকের।
ইসলাম নিয়ে টানাহেঁচড়া:
কোয়ান্টাম মেথড বিশ্বাস করে সব ধর্মের মূল বাণী একই।[10] এটা ইসলামের ধারণার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একটু কমন সেন্স খাটালেই আমরা দেখবো যে ইসলামের মূল মেসেজ হল ইবাদাত আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে শরীক না করা। হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিস্টান এই প্রত্যেকতা ধর্মেই যেখানে আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়েছে সেখানে কিভাবে সব ধর্ম একই হতে পারে?
তাই ধর্ম থেকে যদি অবজেকশন আসে, তাহলে কোয়ান্টামের ব্যাপারে অবজেকশন শুধু ইসলাম ধর্ম থেকেই আসবে। এসব ধ্যান, নির্ভানা এগুলো হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুষঙ্গ। এখন যেহেতু তারা বাংলাদেশে ব্যবসা চালাচ্ছে, ইসলামের সাথে এটার এক ধরণের Compatibility প্রতিষ্ঠা করার প্রাণপণ চেষ্টা তাদের মাঝে বিদ্যমান। তাদের ওয়েবসাইটে ‘ধর্মের আলোকে মেডিটেশন’ শিরোনামে লেখায় আমরা সেটা দেখতে পাই যেখানে ইসলাম নিয়ে হাবিজাবি নানা কথা বলা হয়েছে, যেটার ব্যাপারে আমরা অলরেডি আলোকপাত করেছি।
ধ্যান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তারা নবী রাসূলরা ধ্যান করতেন এমন দাবী করছেন-
ইতিহাসের দিকে তাকান, হযরত ইব্রাহীম (আ) আত্মনিমগ্ন হলেন। তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলো-কে আমার স্রষ্টা? একদিন, দুইদিন, তিনদিন, চারদিন পাঁচদিন-তিনি তাঁর প্রশ্নের উত্তর পেলেন এবং সেই নতুন জ্ঞান তাঁর অনুসারীদের মাঝে প্রচার করলেন।
হযরত মুসা (আ) সিনাই পাহাড়ে চলে গেলেন, আত্মনিমগ্ন হলেন। স্রষ্টার সাথে তাঁর কথা হলো। স্রষ্টার বাণী লাভ করলেন এবং সেই বাণী নিয়ে এসে তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্ত করলেন।
যিশুখ্রিষ্ট বা হযরত ঈসা (আ) মাঝে মাঝে পাহাড়ে চলে যেতেন। আত্মনিমগ্ন হতেন এবং স্রষ্টার বাণী এনে মানুষের মাঝে, অনুসারীদের মাঝে প্রচার করতেন।[11]
এইসব তথ্য কোন বিশুদ্ধ উৎস থেকে জানা যায় না, তাদের এই দাবীর কোন রেফারেন্স দেয়া নেই।
তাদের একটা খুব কমন যুক্তি হচ্ছে যে রাসূল (সা.) হেরা গুহায় গিয়ে ধ্যান করতেন। এখানে আমাদের স্পষ্টভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন যে –
- রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ঠিক কি করতেন, যা করতেন সেটাকে ধ্যান বলে আখ্যায়িত করা যায় কিনা এ ব্যাপারে আমাদের কোন বিস্তারিত তথ্য জানা নেই।
- যদি বা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, রাসূল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন, তবে তা করতেন নব্যুয়তের আগে। নব্যুয়তের আগে তাঁর করা কোন কাজ আমাদের জন্য শরীয়াতের উৎস নয়। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে ঊনার সাহাবীদের মাঝে এর প্রচলন ছিল না।
কেন ইসলাম নিয়ে টানাহেঁচড়া
আল্লাহই ভালো জানেন তবে আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের দেশে সঠিক ইসলামী জ্ঞানের চর্চা খুবই কম, আবার মানুষ একটু ধর্ম ভীরু টাইপ। তাই যে কোনো কিছুকে যদি ইসলামী লেবাস ধরে প্যাকেটজাত করা যায় তাহলে ব্যবসাটা ভালো হয়। ওদের ওয়েবসাইটে দেখবেন রামাদ্বান নিয়ে বহু কথা, সাজেশনের মাঝে ধর্ম পালন করতে উৎসাহ দেয়া……এতে সাধারণ মানুষের হৃদয় আর্দ্র হয়, তারা ভাবে আহা ঊনারা তো আল্লাহ রাসূলের পথে চলার কথাই বলছেন। আদতে ঊনারা যা বলছেন সেটা যে কত ভয়ংকর একটা পথ, সেটা বুঝার মত বুদ্ধিবৃত্তিক ম্যাচুরিটি আমাদের দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের নেই।
নামায ও মেডিটেশন কি তুলনাযোগ্য?
যারা মেডিটেশনের পক্ষে এবং বিপক্ষে, উভয় দলই নামাযের সাথে মেডিটেশনের একটা তুলনা করে থাকেন। যারা বলেন মুসলিমদের মেডিটেশনের দরকার নেই, তারা বলেন নামায পড়লেই তো হয়। নামাযই একধরণের মেডিটেশন। এসব কথা বলার আগে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে-
- প্রাথমিকভাবে আমরা নামায পড়ি আল্লাহর আদেশ পালন করতে– পরকালে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নামাযের ব্যাপারে।
- নামায দ্বীন ইসলামের একটি রুকন।
- নামায কোন শরীর চর্চার পদ্ধতি নয়, যদিও বা তা দৈহিক সুস্থতার জন্য সহায়ক।
অর্থ্যাৎ নামাযের সাথে মেডি্টেশনের মৌলিক পার্থক্য এর উদ্দেশ্য এবং এর উৎসে। কোয়ান্টামের ওয়েবসাইটে আমরা দেখবো যে নানা চলচ্চিত্র তারকা, গায়িকা এদের কথা বলা হয়েছে যে কোয়ান্টাম করে তারা সুফল পেয়েছেন, তাদের পারফরমেন্স ভালো হচ্ছে। এখন এটা তো কখনো সম্ভব না যে নামায পড়ে কারো এসব হারাম কাজের পারফরসেন্স ভালো হবে। তাই নামাযকে মেডিটেশনের সাথে তুলনা করাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অপমানজনক মনে করি।
আর কোয়ান্টামের মানুষজন দাবী করেন-
হুদরিল ক্বালব ছাড়া নামাজ হয় না। শুধু রুকু-সেজদা দিলে নামাজ হয় না, শুধু সূরা-কেরাত পড়লে নামাজ হয় না। নামাজের জন্যে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হুদরিল ক্বালব, একাগ্রচিত্ততা। এই হুদরিল ক্বালব কীভাবে সৃষ্টি করতে হয় তা মেডিটেশনে শিখানো হয়।
এখানে কিন্তু সূক্ষ্মভাবে একটা ভয়ংকর দাবী করা হয়েছে। সালাত In its original form, যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন, আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিতে পারে না, আমাদের ‘অতিরিক্ত’ কিছু দরকার। আমরা যদি একটু পড়াশোনা করি, তাহলে বুঝবো যে এটাই exactly বিদআতের সংজ্ঞা। বিদআত চেনার জন্য নিচের ধাপগুলো খুব সাহায্য করে আমাকে-
- প্রথমেই দেখতে হবে তা ইবাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা। হতে পারে তা কোন কথা, কাজ বা বিশ্বাস।
- ইবাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট হলে দেখতে হবে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাহাবীরা এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতেন কিনা।
- যদি না জেনে থাকেন, তবে তাঁর উৎস ওহী নয়। আর ইসলামে সকল ইবাদাতের উৎস একমাত্র ওহী।
- যদি জেনে থাকেন, তবে তাঁরা তার উপর আমল করেছিলেন কিনা। যদি না করে থাকেন, তবে সেটাই উচিত সিদ্ধান্ত, কারণ তাঁরাই শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম এবং আমাদের অনুসরণীয় আদর্শ।
কেন মেডিটেশন আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে
একথা অনস্বীকার্য যে ইসলাম পালনের ফলে যে শান্তি আমাদের জীবনে অবধারিতভাবে আসার কথা ছিলো, আমরা অনেকেই সেটার স্বাদ পাই নি। আমাদের মাঝে যে শূন্যতা বিরাজ করছে, সেটা পূরণ করার আশ্বাস দিয়েই কোয়ান্টাম আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মত ব্যবসা করতে পারছে।
কিন্তু কেন এই শূন্যতা?
কারণ খুব সহজ। আমরা জানিনা আমরা নামাযে কী পড়ি। আমরা আল্লাহর কাছে কাঁদতে, ঊনার সাথে কথা বলতে জানি না, আমরা জানিনা আসলে ইসলাম আমাদেরকে কিসের পথে ডাকে। যারা দাবী করেন তারা কোয়ান্টামের মাধ্যমে নেশা ছাড়তে পেরেছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন, যা কিছু ইতিবাচক তাদের এখানে শেখানো হয়, এর প্রত্যেকটি অর্জন করার নিজস্ব, আরো ফলপ্রসূ মেকানিজম ইসলামে আছে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর যে কথা বলতে বলতে ওরা গলা ফাটিয়ে ফেলে, তা ইসলামের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আমি এমন হাজারটা উদাহরণ দিতে পারবো, কিন্তু তাতে এই লেখার কলেবর আরো বেড়ে যাবে যেটা কাম্য নয়।
আলোচনার সারাংশ
মেডিটেশনের একাধিক ধাপ আছে। প্রথম ধাপে যা বলা হয়, করা হয়, তাতে শিরক সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে আছে যখন দাবী করা হয় যে মানুষের মনই সকল ক্ষমতার উৎস। সেগুলো বাদ দিয়ে, এমনি ব্যায়াম বা অন্যান্য মোটিভেশনাল টেকনিক, অ্যাপ্রোচের মত মেডিটেশনের কিছু সুফলের কথা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হয় পরের ধাপ গুলোতে যখন কমাণ্ড সেন্টার, অন্তর্গুরু এসব কন্সেপ্ট সামনে আসে, এগুলোতে শিরকের উপস্থিতি আর সূক্ষ্ম নেই, স্পষ্ট হয়ে গেছে।
শেষ কথা-আমাদের করণীয়
এক কথায় যদি আমাদের করণীয় বলতে হয়, তবে তা হল দ্বীন শিক্ষা করা। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে যে দ্বীন শিক্ষার রাস্তা কোন কালেই মসৃণ ছিলনা। তাবে-তাবেঈদের মত আমাদের হয়তোবা হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই করতে উটের পিঠে চড়ে মাসের পর মাস ভ্রমণ করতে হবে না, তবে আজকের অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে Click করে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে উৎসটা সহীহ কিনা। আলেমের অধীনে Systematic উপায়ে দ্বীন শিক্ষার কোন বিকল্প কখনও ছিলনা, এখনও নেই। আমাদের নিজেদের আরবী শিখতে হবে, বাচ্চাদের শিখাতে হবে, নিদেন পক্ষে জানতে হবে যে কুরআনে, সালাতে আমরা কী বলছি। আর তাহলেই ইসলামের মোড়কে উপস্থাপিত কোনো কিছু আমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।
[1] “তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যার সাথে তার সহচর জ্বীন নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি। তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল (সঃ)? তিনি বলেনঃ আমাকেও। তবে আল্লাহ আমাকে তার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন, এখন সে আমাকে শুধু ভাল করতে বলে।” [মুসলিমঃ ২৮১৪)
[2] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একটি শক্তিশালী জ্বিন গতরাত্রে আমার নামায নষ্ট করার জন্য আমার ঔদাস্যের সুযোগ নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে আমার আয়ত্তে করে দিলেন, সুতরাং আমি তার গলা টিপে ধরলাম। আমি সংকল্প করলাম, মসজিদের খুঁটিসমূহের কোন এক খুঁটিতে তাকে বেঁধে রাখি। যাতে সকালে তোমরা সকলে তাকে দেখতে পাও। অতঃপর আমার ভাই সুলাইমানের দুআ স্মরণ হল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান কর, যার অধিকারী আমার পরে অন্য কেউ হতে পারবে না।’ (সূরা সাদঃ ৩৫) সুতরাং আল্লাহ তাকে নিকৃষ্ট অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন।” (বুখারী ১২১০, মুসলিম ১২৩৭নং)
[3] যেমন- কুরআনের মুসহাফের উপর বাথরুম করা, সেটা দিয়ে শৌচকাজ করা, অন্য মানুষ বা পশুপাখির রক্ত পান, বিশিষ্ট কোনো মানুষের রক্ত হাজির করা (ফলে তারা তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, অনেক সময় করে), জ্বীনদের সিজদাহ করা, তাদের কাছে বিপদে আশ্রয় চাওয়া, তাদের নামে প্রাণী উৎসর্গ করা ইত্যাদি।
[4] www.charity.quantummethod.org.bd
[5] www.charity.quantummethod.org.bd
[6] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মান্নত আদম-সন্তানের জন্য তার তাকদীরের নির্ধারিত বস্তুর অতিরিক্ত কিছু বয়ে আনে না, বরং তার জন্য নির্ধারিত তাকদীরই তার উপর বিজয়ী হয়। অতএব এর দ্বারা কৃপণের কিছু আর্থিক খরচ হয় মাত্র। ফলে ইতোপূর্বে তার জন্য যা সহজ ছিলো না তা তার জন্য সহজ হয়ে গেলো। আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যি বলেছেন, তুমি খরচ করলে আমিও তোমার জন্য খরচ করবো।বুখারী ৬৬০৯, ৬৬৯৪, মুসলিম ১৬৪০
অর্থ্যাৎ এখানে যে মান্নত করছে তাকে কৃপণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এমনিতে সে আল্লাহর পথে দান করতে চায় না, কিন্তু বলে যে আল্লাহ যদি তাকে অমুক দেন তাহলে দান করবে।
[7] হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে যে নবীজী (স) বলেছেন: সৃষ্টি সম্পর্কে এক ঘণ্টার ধ্যান ৭০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ( মেশকাত) ।এই হাদীসটিকে স্কলাররা জাল হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। www.quantum.quantummethod.org.bd
[8] www.publication.quantummethod.org.bd
[9] www.quantum.quantummethod.org.bd
[10] www.quantum.quantummethod.org.bd
[11] এগুলো আগে কোয়ান্টামের ওয়েবসাইটে হাজারো প্রশ্নের জবার শিরোনামে ছিলো। এখন ওয়েবসাইটটি নতুন করে সাজানো হয়েছে, সেখানে হাজারো প্রশ্নের জবাব নামে ৩টা বই ডাউনলোড করা যায়। ৩টা বই এর কোন পার্টে এটা এখন আছে সেটা বের করার সুযোগ লেখকের হয়নি কারণ তাহলে ৩টা বই পুরোটা পড়তে হবে যেটা স্রেফ সময় নষ্ট বলে তিনি মনে করেন।
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।