অগ্রীম সারমর্ম
১। ভাষা নিয়ে অনেক মজার মজার ফ্যাক্ট আছে।
২। মানুষের প্রতি আল্লাহ্র বড় একটি অনুগ্রহ হলো ‘ভাষা’।
৩। ভাষাকে তার স্থানে রেখেই একে ভালোবাসা উচিত।
৪। দ্বীন ইসলামকে সরিয়ে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ভাষাকে বসানো অনুচিত।
রেসিং কারের হর্ন
অনেক আগে একটা রেসিং গেইম খেলেছিলাম, যেটার অদ্ভুত একটা দিক ছিলো সুবোধ প্রতিপক্ষ। যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বী গাড়ির পেছনে গিয়ে হর্ন বাজালে সেটা সরে আপনার গাড়িকে সাইড দিয়ে দেবে! অনেকদিন পর এই জিনিসটা মনে ওঠার পর হঠাৎ মাথায় আসলো, “আচ্ছা রেসিং কারে কি সত্যি সত্যিই হর্ন থাকে?” গুগল সার্চ করে জানলাম থাকে না। প্রথম কারণ, প্রতিযোগিতার মাঠে কার এত ঠ্যাকা পড়েছে হর্ন শুনে আপনাকে সাইড দিয়ে দেবে? দ্বিতীয় কারণ, হর্ন না থাকলে গাড়ির অপ্রয়োজনীয় ওজন হ্রাস পায়। স্পীড বাড়ে।
আক্ষরিক অর্থ ও রূপক অর্থ
এই দুইরকম অর্থ ও এদের মধ্যকার পার্থক্যের ব্যাপারে আমরা সবাইই কমবেশি জানি। এগুলো যেকোনো ভাষার খুব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। “নজরুলের কলম খুবই শক্তিশালী।” এই বাক্যে ‘কলমে’র আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে এর অর্থ দাঁড়াবে নজরুল যেই কলম দিয়ে লেখে, তা অনেক শক্ত। এই কলম দিয়ে বাড়ি মেরে মানুষের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া যায়। মাথাও ফাটে, কলমও ভাঙে না। আর যদি ‘কলমে’র রূপক অর্থ বা ভাবার্থ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় নজরুলের লেখালেখির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তার লেখায় অন্যায়ের প্রতিবাদ থাকে, যা প্রচারিত হলে অন্যায়কারীরা ভয়ে কেঁপে ওঠে।
রূপক অর্থ ও রূপক অর্থ
কিন্তু আক্ষরিক অর্থ আর রূপক অর্থের (বা ভাবার্থের) মধ্যকার এই পার্থক্যরেখাটা অস্পষ্ট হতে শুরু করে আরেকটু গভীরে তলিয়ে দেখলে। আমরা আসলে যেগুলোকে আক্ষরিক অর্থ বলি, তার অনেকগুলোই আসলে আক্ষরিক হতে পেরেছে আমরা সেগুলোর ‘রূপকতা’ ভুলে গেছি বলে। যেমন, এই লেখার প্রথম অনুচ্ছেদে ‘হর্ন’ শব্দটি লক্ষ করুন। গাড়ির যেই যন্ত্রাংশের সুইচ টিপলে প্যাঁ-পুঁ শব্দ বের হয়, সেটাকেই হর্ন বলা হয়েছে। এখানে হর্ন অবশ্যই আক্ষরিক অর্থ। কিন্তু হর্নের আরেকটি অর্থ শিং। একসময় মানুষ পশুর শিং বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতো, যেটাকে বাংলায় শিঙ্গা বলে। দুই দিক ফুটো করে সরু দিকটায় ফু দিলে পুরু দিকটা থেকে আওয়াজ বের হয়। তারপর একসময় পশুর শিং এর বদলে সেই আকৃতিতে ধাতব যন্ত্র তৈরি করে সেগুলো বাজানো শুরু হয়। আধুনিক ট্রাম্পেট বা স্যাক্সোফোন এই প্রজাতিরই বাদ্যযন্ত্র। যানবাহনেও একসময় হর্নের ব্যবহার শুরু হয়। একসময় সেগুলো ছিলো হর্ন আকৃতির যন্ত্রের সাথে লাগানো রবার পাম্প। ফুসসস করে পাম্পে চাপ মারলেই হর্নে বাতাস ঢুকে প্যাঁ করে ওঠে। আধুনিক যুগে হর্ন হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র। নাম কিন্তু ওটাই আছে – ‘হর্ন’ বা ‘শিং’। তাহলে এই হর্ন কি আক্ষরিক অর্থ, না রূপক অর্থ বলুন দেখি!
শুধুই রূপক
বিষয়টাকে আরো প্যাঁচানো যাক। ‘ভাষা’ জিনিসটাই আসলে রূপক। ধরুন, ‘গাছ’ জিনিসটা আপনাকে আমি কতরকমে বোঝাতে পারবো? আমি মুখে ‘গাছ’ উচ্চারণ করে আপনাকে শোনাতে পারি। কাগজে বা কোনো ডিভাইসে বা অন্য কোথাও লিখে আপনাকে দেখাতে পারি। অথবা গাছের ছবি এঁকে আপনাকে দেখাতে পারি। ইত্যাদি। কোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু ‘গাছ’ শব্দটা বা এর ছবিটা সেই সত্যিকারের গাছটা নয়। আপনার-আমার মাঝে ভাবের আদান-প্রদান হওয়ার জন্য কিছু চিহ্ন আবিষ্কার করা লেগেছে, মুখঃনিসৃত আওয়াজের কিছু প্যাটার্ন আবিষ্কার করা লেগেছে, যেগুলো দিয়ে আমি আপনাকে ‘গাছ’ জিনিসটা রূপকভাবে বোঝাতে পারবো। এসকল লিখিত চিহ্ন ও মুখঃনিসৃত আওয়াজের প্যাটার্নগুলোর সমষ্টিই হলো ‘ভাষা’।
আবার এই চিহ্ন বা প্যাটার্নগুলো কেন এভাবেই তৈরি হলো, কেন অন্য কোনোভাবে তৈরি হলো না – তারও কোনো সন্তোষজনক জবাব নেই। এই পুরো প্রক্রিয়াটাই arbitrary. ‘গাছ’কে কেন ‘গাছ’ বলা হয়? কেন ‘মাছ’ বা ‘গাল’ বলা হয় না? কারণ একদল মানুষ একমত হয়েছে যে, গাছকে ‘গাছ’ বলা হবে। এটাই কারণ। আর কোনো কারণ নেই। আবার অন্য আরেকদল মানুষ একমত হয়েছে যে একে ‘tree’ বলা হবে, ‘free’ বা ‘troo’ বলা হবে না। এমনকি আপনি-আমি যে হর্নের আওয়াজকে ‘প্যাঁ-পুঁ’ বলতে একমত হলাম, অন্য আরেক দল একমত হয়েছে যে একে ‘honk’ বলা হবে।
ভালোর জন্যই
এই জায়গায় এসে হয়তো ভাষা জিনিসটাকেই একটা ঝামেলার জিনিস মনে হতে পারে। আসলে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। ‘ভাষা’ জিনিসটা না থাকলে শুধু ‘গাছ’ বোঝানোর জন্য আপনাকে আমার টেনে সেই গাছের কাছে নিয়ে দাঁড় করানো লাগতো। সেখানে “এই গাছটা কাটতে হবে” এই পুরো বাক্যটা বোঝাতে বোঝাতে হয়তো পুরো জীবনই খরচ হয়ে যেত। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা এই জিনিসটাকে যে আমরা ‘গাছ’ বলে নাম দিতে পারলাম, ধারালো বস্তু দিয়ে সেটার কাণ্ডে আঘাত করার প্রক্রিয়াটাকে যে ‘কাটা’ বলে নাম দিতে পারলাম, এই নাম দিতে পারার কারণে আমাদের জীবনটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এটা আল্লাহ্র অপার অনুগ্রহ। তিনি মানুষকে ‘নাম দেওয়ার’ প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। সকল বস্তুর নাম জানার এই বৈশিষ্ট্যটা তিনি ফেরেশতাদের শিক্ষা দেননি। সামহাউ এই ক্ষমতাটা ফেরেশতাদের সিস্টেমে আদামের (‘আলাইহিসসালাম) তুলনায় সীমিতভাবে ইন্সটল করা।
এবং তিনি আদামকে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন ও বললেন, “এ বস্তুগুলোর নাম আমাকে বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।” তারা বললো, “আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” তিনি বললেন, “হে আদাম! এ জিনিসগুলোর নাম তাদেরকে জানিয়ে দাও।” যখন সে এসকল নাম তাদের বলে দিলো… [সূরাহ আল-বাকারাহ (২):৩১-৩৩]
আদ-দাহহাক বলেন, “এবং তিনি আদামকে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন” আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “অর্থাৎ, যেসব নাম মানুষ ব্যবহার করে। যেমন- মানুষ, জীবজন্তু, আকাশ, মাটি, স্থল, সমুদ্র, ঘোড়া, গাধা ইত্যাদি সহ সকল প্রজাতির নাম।”
ইবনু আবি হাতিম এবং ইবনু জারির বর্ণনা করেন, সা’ইদ ইবনু মা’বাদ থেকে আসিম বিন খুলাইব বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাসকে (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, “’এবং তিনি আদামকে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন।’ আল্লাহ্ কি তাঁকে থালাবাসন ও পাত্রের নামও শিখিয়েছেন?” তিনি জবাব দেন, “হ্যাঁ। এমনকি গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত বায়ুর নামও শিক্ষা দেন।”
অর্থাৎ আল্লাহ্ আদামকে (‘আলাইহিসসালাম) সবকিছুর নাম, তাদের বৈশিষ্ট্যের নাম ও ক্রিয়াকর্মের নামও শিখিয়ে দিয়েছেন, যা ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বায়ু নির্গমনের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন।[১]
নামকরণ ও ক্ষমতা
নাম দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায়। ডিসকোর্সকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই নামকরণের প্রক্রিয়াটাকেও নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা মানুষরা দোয়েলকে নাম দিয়েছি ‘দোয়েল’, ‘magpie’ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন শব্দ। দোয়েল নিজে কিন্তু জানে না যে তাকে এই নাম দেওয়া হয়েছে। আবার মানুষের নিজেদের ভেতরই নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্বটা দেখুন। ব্রিটিশরা বিভিন্ন দেশ শাসন করার সময় ব্রিটিশ ব্যক্তিদের নামে সেসব দেশের রাস্তাঘাট বা এলাকার নামকরণ করে। বাংলাদেশি হয়েও তাই আমরা আবিষ্কার করি আমাদের একটা জেলার নাম Cox’s Bazaar. একবার এক এক দল ক্ষমতায় আসলে দেখা যায় তারা স্কুল-কলেজের নাম পাল্টে নিজ নিজ দলের নেতার নামে নামকরণ করতে থাকে। নামকরণের এই প্রক্রিয়া নিয়ে ইসলামি শক্তি ও কুফরি শক্তিগুলোর মধ্যেও একটা নীরব লড়াই চলতে থাকে। যেটাকে কেউ বলে ‘মুক্তমন’, সেটাকে অন্য কেউ বলে ‘জাহিলিয়্যাহ’। যে কাজটাকে কেউ বলে ‘সাহসী কাজ’, সেটাকে অন্য কেউ বলে ‘নোংরামি’ বা ‘অশ্লীলতা’। যাকে কেউ বলে ‘আতাতুর্ক (তুর্কিদের পিতা)’, তাকে কেউ বলে ‘মুরতাদ্দ কামাল পাশা’। আরবরা যার জ্ঞানের কারণে নাম দিয়েছিলো ‘আবুল হাকাম’, ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করায় মুসলিমরা তাকে ডাকি ‘আবু জাহল’।
জান্নাতিদের ‘ভাষা’, কবরের সওয়াল-জওয়াবের ‘ভাষা’
একটা ‘হাদীস’ অনেকে শুনে থাকবেন, “আরবদের তিনটি কারণে ভালোবাসো। আমি একজন আরব, কুরআন আরবি ভাষার এবং জান্নাতবাসীদের ভাষা হলো আরবি।” ইবনুল জাওযি বলেছেন যে, এই হাদীসটি জাল (বানোয়াট)। ইমাম আয-যাহাবিও একে জাল বলেছেন। শাইখ আল-আলবানি বলেছেন এটি জাল হাদীস।
পারস্যদের সাথে আরবদের জাতিগত বেশ শত্রুতা আছে। একটা ধারণা প্রচলিত হয়ে যায় যে জান্নাতিদের ভাষা হবে আরবি আর জাহান্নামিদের ভাষা হবে ফারসি। ইবনু তাইমিয়্যা এ ধারণা খণ্ডন করেছেন যা মাজমু’ আল-ফাতাওয়া গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। সাহাবাগণ কখনও এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাননি। এর আলোচনাটাই অপ্রয়োজনীয়। কবরে কোন ভাষায় প্রশ্ন করা হবে, আল্লাহ্ কোন ভাষায় বিচারদিবসে মানুষের সাথে কথা বলবেন, জান্নাতি-জাহান্নামিদের ভাষা কী হবে – এ নিয়ে কুরআন-হাদীসে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায় না।[২]
ইবরাহীম (‘আলাইহিসসালাম) ছিলেন ইরাকি। তাঁর ছেলে ইসমাঈল (‘আলাইহিসসালাম) পরে জুরহুম গোত্রের লোকদের কাছে আরবি শেখেন। কুরআনে উল্লেখিত এমন বেশ কয়েকজন নবীর ভাষাই আরবি ছিলো না। কিন্তু কুরআন আরবি ভাষায় নাযিল হওয়ায় সেখানে তাঁদের কথাগুলো আরবিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবেই আরবি হাদীসে কবরের সওয়াল-জওয়াবের কথা আরবিতে বলা হয়েছে। এখন বাস্তবে সেসব যে ‘ভাষা’তেই হোক না কেন, তা মানুষের বোধগম্য হবেই। এই ব্যবস্থা করে দেওয়া আল্লাহ্র কাছে কঠিন কিছু না। মজার ব্যাপার হলো, সাহাবাগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এসব জিনিস খুব সহজেই বুঝতেন এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় তর্কে লিপ্ত হতেন না।
ভাষা নিয়ে মাতবরি: একটি সেক্যুলার দর্শন
আল্লাহ্ মানুষকে ভাষার মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান করার ক্ষমতা দিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। কিন্তু ভাষা নিয়ে মাতবরি করার অধিকার দেননি। এক পুরুষ ও এক নারী থেকেই আমরা সবাই এসেছি। কালক্রমে আমাদের মধ্যে এসেছে নানারকম ভাষা ও জাতীয়তা। কিন্তু ভাষা-জাতীয়তা নির্বিশেষে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো আল্লাহ্কে কে কতটুকু ভয় করে, অর্থাৎ তাকওয়া।
কামাল পাশা চেষ্টা করেছিলো আযানকেও আরবি থেকে পাল্টে তুর্কি বানিয়ে ফেলতে। পাকিস্তানিরা চেষ্টা করেছিলো উর্দুকে একটা আসমানী রূপ দিয়ে সেটা বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে। অহংকার পতনের মূল হলেও আমাদেরকেও শেখানো হয় বাংলা নাকি আমাদের অহংকার। ভাষা নিয়ে এসকল অযথা টানাহ্যাঁচড়ার পেছনে একটাই আদর্শ কাজ করে। শ্রেষ্ঠত্ব ও ঐক্যের যে ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়ানুগ বিধান ইসলামে রয়েছে, তার বিপরীতে কাউন্টার ন্যারেটিভ দাঁড় করানো। একইরকম টানাহ্যাঁচড়া জাতীয়তাবাদ আর সংস্কৃতি নিয়েও করা হয়। কারণ ইসলামের সর্বব্যাপী আইডেন্টিটির বিরুদ্ধে আরেকটা আইডেন্টিটি দাঁড় করাতে হলে অনেকগুলো উপাদান এক জায়গায় জড়ো করতে হয়, একটা দিয়ে পুরো ইসলামকে ঠেকানো যায় না। অথচ এই সকল কাউন্টার ন্যারেটিভই ভেতর থেকে দুর্বল। জাতীয়তা ও সংস্কৃতির আলাপটা আরেকদিন ইনশা আল্লাহ্। এখানে ভাষার ব্যাপারটা দেখি।
ভাষা কখনও স্থির থাকে না। এটি নদীর মতো গতিপথ পরিবর্তন করতে থাকে। আজকে আমরা যেসব ভাষা দেখি, সবই আগের কোনো না কোনো ভাষা থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। এমনকি অন্য ভাষার বিকৃত রূপ থেকেও এসেছে। ‘প্রাকৃত’ ভাষার ‘অপভ্রংশ’ থেকে বাংলার সৃষ্টি। এভাবেই সামনেও আরো পরিবর্তিত হবে, বিকৃত হবে, বিলুপ্ত হবে, এক ভাষার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরেক ভাষা দাঁড়াবে। চর্যাপদ নিয়ে অনেক টানাহ্যাঁচড়া আছে। বাঙালিরা বলে চর্যাপদ বাংলা ভাষায় লেখা, কেউ বলে উড়িয়া, কেউ বলে আসামি। কিন্তু মূলকথা হলো, বাংলা, উড়িষ্যা, আসামের একটা মানুষও এখন চর্যাপদ পড়ে এর একটা অক্ষরও বুঝতে পারবে না! ভাষার মতো সদা পরিবর্তনশীল ফ্লুইড একটা জিনিস নিয়ে মাতবরি করা, ‘অহংকার’ করা, ‘গরব’ করাটা আসলে বড় বেশি অযৌক্তিক।
ব্যাকরণ ও বানান পুলিশ ডিপার্টমেন্ট
ভাষার ফ্লুইডিটি নিয়ে আলোচনা করে মনে হতে পারে যে সঠিক ব্যাকরণ ও বানান নিয়ে পুলিশিং করাটাও বুঝি খারাপ কিছু। ভাষা তো পরিবর্তিত হবেই। এখানে সঠিক বানান, সঠিক ব্যাকরণ এসব আবার কী? এর উত্তর হলো, দীর্ঘমেয়াদে ভাষা নামক নদীকে গতিপথ পরিবর্তনে বাধা দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু প্রতিটা যদু-মধুকে যথেচ্ছ অনুমোদন দিয়ে রাখলে সেই নদী পাড় ভাঙতে ভাঙতে মানুষের ঘর-বাড়ি বিলীন করে ফেলতে পারে। তাই ব্যাকরণ ও বানান পুলিশ ডিপার্টমেন্টেরও দরকার আছে।
১। তাফসির ইবনু কাসির, আল কুরআন বাংলা (তাফসির এবং শব্দার্থ) app
২। https://islamqa.info/en/83262
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।