দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মুসলিম ভূমিগুলো তিনটি পরষ্পর বিরোধী চুক্তির ভিত্তিতে ভাগ করার জন্য চিহ্নিত করা হয়-
১. মক্কার শরীফকে আরবভূমিগুলোর সমন্বয়ে খিলাফত প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ( ম্যেক্মেহন প্রতিশ্রুতি)
২. ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিজেদের মদ্ধে এই ভূমিগুলো ভাগ করে নেয় ( সাইক্স- পিকো চুক্তি)
৩. জায়োনিস্টদের ফিলিস্তিনে বাসভূমির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ( বেলফার ঘোষণা)
১৯১৯ সালের প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে বিভিন্ন দল তাদের নিজস্ব দাবি নিয়ে আলোচনা করতে আসে। টি . ই. লরেন্স তার কাছের বন্ধু ফয়সাল বিন হোসেন ( শরীফের তিন ছেলের একজন) সহ তাদের আরব খিলাফতের দাবি নিয়ে আসে। চেঈম ওয়িজমেনও সেখানে ছিল জায়োনিস্টদের জন্য ফিলিস্তিনের দাবি নিয়ে আর স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটেন ও ফ্রান্স সাইক্স পিকো চুক্তি নিয়ে কথা বলতে আসে।
বেলফার ঘোষণা/ কিং-ক্রেন কমিশন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই বিষয়গুলোর মধ্যে জায়োনিস্ট এর বিষয়ে নিরপেক্ষ ছিলেন এবং ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে নিরপেক্ষ গবেষণার মতামত দেন। এই গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন হেনরি চারচিল কিং এবং চার্লস র ক্রেন। এই দুজন আরবি ভাষার ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান রাখতেন এবং তারা তৎক্ষণাৎ আরবে ভ্রমণ করেন। সেখানে তারা কয়েক মাস অবস্থান করে বিভিন্ন জরিপ চালান ও বিভিন্ন গোত্রের সাথে কথা বলেন। এটি কিং-ক্রেন কমিশন নামে পরিচিত।
তারা এই সীদ্ধান্তে আসে যে, ফিলিস্তিনে অবস্থানকারী বর্তমান অধিবাসীদের অধিকার সম্পূর্ণ পদদলিত না করে সেখানে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। তাদের মতে, “জায়োনিস্টরা বিভিন্নভাবে ফিলিস্তিনে বসবাসরত সমস্ত অ-ইহুদিকে সম্পূর্ণভাবে তাড়াতে চাইছিল। উল্লেখ্য যে, শতকরা ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠী জায়োনিজম এর ঘোর বিরোধী ছিল। [1]
কিং ক্রেন কমিশন জোরালো ভাবে মতামত দেয় যাতে এই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। তাদের রিপোর্টটি খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট উড্র উইলসন পড়ে দেখতে পারেননি কারণ তিনি এই রিপোর্টটি পাবার পরদিন স্ট্রোক করেন এবং এর প্রকাশনা ১৯২২ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তাদের এই গবেষণার ফলাফল উপেক্ষা করা হয়েছিল যেহেতু এই ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে আরও অনেক ইন্ধন ছিল যা এর স্থায়ী ও ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে অগ্রাহ্য করে।
জায়োনিস্টদের তাদের কাঙ্খিত বাসভূমি দেয়া হয় ফিলিস্তিনে, যদিও তাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যা কিনা বর্তমান ইসরাইল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তবতা লাভ করে। তার পূর্বে লর্ড কার্জন ( যে কিনা ১৯১৯ সালে বেলফার চুক্তি অনুসরন করে) চাঈম উইজমেন এর ব্যাপারে মন্তব্য করেন, “ আমি মোটামোটি নিশ্চিত যে,… উইজমেন তোমাদের এক রকম কথা বলে বা তোমরা জাতীয় ঘর বলতে একরকম বুঝলেও সে ভিন্ন কিছুর পিছে ছুটছে। সে স্বপ্ন দেখে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের, একটি ইহুদি জাতির, কিছু অধীনস্থ আরব লোকবল ও আরও কিছু যা কিনা ইহুদিদের দ্বারা শাসিত হবে। ইহুদিরা হবে সেই রাষ্ট্রের কর্তা এবং সেভাবেই সে ব্রিটিশ প্রশাসন প্রভাবিত করছিল। সে এসব মূলত পর্দার আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রন করছিল ব্রিটিশ সাহায্যের অধীনে”। [২]
পুরো ইউরোপ থেকে ১৯১৯ সালের পর থেকে ফিলিস্তিনের সীমানায় ইহুদিদের আসা শুরু হয়। সেখানে কিছু জমি ফিলিস্তিনিদের থেকে নেয়া অথবা দখল করা শুরু হয়। এর সাথেই জায়োনিজমের নামে অবিচার ও দখলদারিত্ব শুরু হয় যা কিনা আজও চলে আসছে। তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অগণিত ঘটনা, যুদ্ধ, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জায়োনিস্টদের সশস্র অভিযান এবং এসবের ফলে ফিলিস্তিনিদের উপর আসা প্রভাব সবারই জানা আছে এবং তা আলোচনার জন্য ভিন্ন ফিরিস্তি লেখা যাবে।
সাইক্স-পিকো : ফ্রান্স
ইতোমধ্যে সাইক্স- পিকো চুক্তি অনুমোদিত হওয়ায় সিরিয়া ফ্রান্সের অধীনস্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ফ্রান্স এখানে মারোনী খ্রিস্টানদের জন্য লেবানন নামের এক নতুন রাষ্ট্র তৈরী করে। এই ভূমীর কর্তৃত্বে ফ্রান্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল। এর মাঝে তারা সিরিয়ান বিদ্রোহ দমন করে ১৯২০ এর শেষের দিকে। তারা দ্রুজ ও আলাউই দের জন্য ও ভিন্ন রাষ্ট্র গঠন করে।
ফ্রান্স তার শাসনামলে এমন কাউকে খুজছিল যে কিনা তাদের অনুগত থেকে অন্যান্য সিরিয়ানদের শাসন করবে। তারা এরকম পেয়ে গেল আলাউইদের। তারা সেসময় আনপড়া অশিক্ষিত ছিল এবং একইসাথে হিংস্র ও নিষ্ঠুর। তারা প্রায়ই সুন্নি মুসলিমদের জমিজমা দখল করত ও তাদের হত্যা করত। সাধারণ সিরীয়রা তাদের হিংস্র আচরনে ভীত ছিল।
ফ্রান্স তাদের সামরিক, শিক্ষা ও বিভিন্ন সাহায্য দিয়ে ক্ষমতায় বসায়। মোটকথা, তারা তাদের “সভ্য” করে গড়ে তোলে তাদের মত করে এবং অন্যান্য সিরিয়দের উপর প্রাধান্য দেয়। আলাউইরা সেনাবাহিনীতে অধিক হারে যোগ দেয় ও তাতে তাদের বিস্তর প্রভাব গড়ে উঠে। এতে স্বাধীনতার পর তারাই ক্ষমতায় আসে। জনৈক ইতিহাসবিদ ডানিয়েল পাইপস, আলাউইদের ক্ষমতায় আসাকে ভারতের অস্পৃশ্যের মহারাজা বনে যাওয়ার সাথে তুলনা করেন। [৩]
ফ্রান্সের সাইক্স –পিকো চুক্তির এরূপ প্রয়োগের ফলাফল আজও স্পষ্ট। তাদের বংশধরদের মধ্যেই বর্তমানের খুনি বাশার আল আসাদ ও তার পিতা হাফিজ আল আসাদ এর প্রকাশ ঘটে যারা আজও তাদের অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে।
সাইক্স-পিকো : ব্রিটেন
ব্রিটেন তাদের নিজেদের জন্য এই চুক্তির সিংহভাগ রেখেছিল। তাদের দখলে ছিল ট্রান্সজর্ডান( বর্তমানের জর্ডান, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল), ইরাক ও আরব(হিজাজ)। ব্রিটিশরা এবার চিন্তা করছিল কিভাবে শরীফের উচ্চাখাঙ্খা ও ইহুদিদের ফিলিস্তিনে ভুমির ব্যাপারে সমঝতা করা যায়। শেষ পর্যন্ত তারা এই সীদ্ধান্তে আসল যে শরীফের তিন ছেলের মধ্যে এলাকা ভাগ করে দেয়া হবে যা কিনা শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের অধীনেই থাকবে। আলী বিন হোসেন হিজাজ/ আরব এর অধীকার পায় এবং নিজেকে হিজাজের রাজা ঘোষণা করে। তার শাসনামল ছিল অল্প কিছুদিনের, এক বছরের কিছু বেশি। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। তারপর আল সউদ পরিবার যারা কিনা এলাকা ও ক্ষমতা উভয়ই বৃদ্ধি করছিল তাকে উৎখাত করে মক্কা দখল করে। এতে মক্কায় ৭০০ বছরের হাশেমী ক্ষমতার পতন ঘটে। দুরভাগ্যবশত তবে কাঙ্খিত ভাবেই সউদ পরিবারও ব্রিটিশ কর্তৃক সমর্থিত হয়েই ক্ষমতায় যায় ও আজও ক্ষমতায় আছে।
আব্দুল্লাহ বিন হোসেন জর্ডানের কর্তৃত্ব পায় ও নিজেকে জর্ডানের হাশেমী রাজত্বের রাজা দাবী করে। এই রাজত্ব আজও বিরাজমান এবং যদি ক্ষমতায় থাকা সফলতা বুঝায় তাহলে ব্রিটিশ মনোনিত একমাত্র সফল নেতা। তার নাতি হোসেন ১৯৫২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত রাজা ছিল। হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ আজও জর্ডান শাসন করে।
শরীফের তৃতীয় ছেলে ফয়সাল বিন হোসেন ছিল টি ই লরেন্সের সবচেয়ে কাছের। তার দায়িত্ব পড়ে ইরাকের, যেখানে অধিকাংশ লোক তাকে চিনতই না। ফয়সাল আমৃত্যু, ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত শাসন করে। তার মৃত্যু বিষপ্রয়োগে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে গাজী ৬ বছর শাসন করে। গাজীর মৃত্যুর পর তার ছেলে ফয়সাল উত্তরাধিকারী নির্বাচিত ছিল কিন্তু সে ছিল বেশ ছোট। তাই গাজীর চাচাত ভাই তারপর ক্ষমতায় আসে ও ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।
দ্বিতীয় ফয়সালের ক্ষমতা ১৯৫৮ সালে সেনা বিদ্রোহের মাধ্যমে শেষ হয়। এ বিদ্রোহের নেতা ছিল আব্দুল করিম কাসিম যা কিনা সে বছরের জুলাই মাসে হয়েছিল। সে ফয়সালের পুরো পরিবারকে( নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ) প্রাসাদের আঙিনায় হত্যা করে। শাসক পরিবারের ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য সুলভ আচরন ছিল অভ্যুত্থানের কারন যার মধ্যে ১৯৫৬ সালের মিশর আক্রমণও ছিল। সাধারন জনগন তাদের মুসলিম ভাইদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল ব্রিটিশ আনুগত্যের তুলনায়। সেনা অভ্যুত্থান বা’স পার্টি কর্তৃক সমর্থিত ছিল যারা আশা করছিল, নতুন নেতা কাসিম তাদের প্যান- আরব দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থন করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তার বিপরীত। এতে তার ১৯৫৯ সালে আরেক আর্মি অফিসার সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে পুনরায় সামরিক অভ্যুত্থান এর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তবে ১৯৬৩ সালে আরেকটি সেনা অভ্যুত্থান ও বিভিন্ন দলের ক্ষমতার কোন্দল শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেন কে উপ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৬৮ সালে ক্ষমতা দেয়। সে অবশেষে ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করে শক্ত হাতে শাসন শুরু করে। তার শাসন এর পর আরও ২৪ বছর ছিল।
সেভ্রেস ও লাউসেন এর চুক্তি
শান্তি চুক্তির আরেকটি দিক ছিল উসমানী খিলাফতের সীমানার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন। রাশিয়া সাইক্স পিকো চুক্তির কোন পক্ষ না হওয়াতে সেভ্রেস এর চুক্তি ( যা কিনা ১৯২০ সালে ১৫ মাস সমঝতার পর গৃহীত হয়) অনুযায়ী ব্রিটিশদের তার নিয়ন্ত্রন দেয়। তুর্কিদের উপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাদের অর্থনীতি ব্রিটীশদের অধীনে চলে যায় এবং এর সামরিক শক্তি সীমাবদ্ধ রাখা হয় একে নিয়ন্ত্রনের জন্য।
এই চুক্তির সিদ্ধান্ত সমুহ জার্মানির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার চেয়েও বেশ কঠিন ছিল এবং এতে তা খুব বেশি দিন টিকে নি। এই চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনার সময় মিত্রবাহিনীর প্রক্সির সাথে তুরুস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলতে থাকে। মুস্তফা কামাল “আতাতুরক” এর নেতৃত্বে এই যুদ্ধ মিত্র বাহিনীকে পুনরায় নতুন সমঝোতায় আনতে সক্ষম হয়।
এই বিরোধের নিস্পত্তি ঘটে ১৯২৩ সালের লাউসেন এর চুক্তির মাধ্যমে ( যা কার্যকর হয় আগস্ট ১৯২৪ সালে)। এতে নতুন তুরুস্ক প্রজাতন্ত্রের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এটি ছিল পূর্বেকার উসমানী খিলাফতের সীমানার ছয় ভাগের এক ভাগ। এর সাথে খিলাফতের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে যা কিনা খলিফা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময় থেকে সেদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মাজিদ নির্বাসিত হন। মুস্তফা কামাল নতুন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়।
কামাল কট্টর বামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী ছিল। সে তুরুস্ক থেকে সকল আরব অথবা ইসলামিক প্রভাব ধ্বংস করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। সে খুব দ্রুত আরবীতে কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ করে এবং আজান ও নামাজ তুর্কি ভাষায় পড়ার নির্দেশ দেয়। সে হিজাব নিষিদ্ধ করে ও মাদ্রাসা বন্ধ করে। সে পরবর্তী প্রজন্ম স্কুল থেকেই কট্টর বামপন্থী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। তার এই বামপন্থী পরিবর্তন কয়েক দশক ধরে প্রভাব বিস্তার করে। বরং বিগত কয়েক বছর পুরো দেশে ইসলামি পরিবর্তনের কিছুটা জোয়ার এসেছে।
এসব আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই হাদিসটি মনে করিয়ে দেয়
অন্যান্য জাতিরা তোমাদের আক্রমনের জন্য সেভাবে পরষ্পরকে আহ্বান করবে যেমন একে অপরকে খাবার জন্য দাওয়াত দেয়। একজন জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কি আমাদের সংখ্যার স্বল্পতার জন্য হবে? তিনি উত্তর দিলেন, না, তোমরা হবে সংখ্যায় অনেক কিন্তু তোমরা ভেসে আসা আবর্জনার মত হবে এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় তুলে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ওয়াহহান ঢেলে দিবেন। কেউ একজন জিজ্ঞেস করল, ওয়াহহান কি ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি উত্তর দিলেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। [৪]
শেষ কথা
এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল ১৯১৪ সালের পরের ঘটনাপ্রবাহের প্রতি কিছুটা আলোকপাত করা যা কিনা আমাদের আজকের দেখা এই মুসলিম বিশ্বের রূপায়ন করে। এর প্রধান অংশ ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও তুরুস্ক। এর প্রভাব আমরা আজও বেশ ভালভাবেই অনুভব করছি। আরও উল্লেখ্য যে এসব ঘটনা বেশ সাম্প্রতিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ বেঁচে থাকা ব্যক্তি কেবল ২০১৩ সালে মারা যায়। এমনকি এটিও বলা হয় যে শেষ খলিফার কিছু বংশধর ২০১৪ তেও বেঁচে ছিল (এবং হয়ত এখনো বেঁচে আছে)।
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাই মুসলিমদের বেশ কিছু দুর্ঘটনা মুসলিমদের লোভ, অনৈক্য এবং অপরিপক্বতার প্রভাবেই ঘটেছে।। একই সাথে ইউরোপিয়ানদের আত্মকেন্দ্রিক ধারণা ও কপটতাও বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মুসলিম বিশ্ব আজ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। রাজনৈতিক দুরবলতা এবং পশ্চিমাদের আনুগত্য নিত্য ব্যাপার।
তবুও আশার অনেক কারণ আছে। আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে কয়েক প্রজন্ম পার হয়ে এসেছে। নাস্তিকতার ছত্রছায়ায় ইসলামকে কেবল কিছু উপাসনার অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আজ অনেক উদারপন্থী কথার প্রাধান্য দেয়া হয় সরকারি ও প্রচলিত প্রচার মাধ্যমে যা কিনা ইনশা আল্লাহ অকেজো হয়ে পড়বে। এসবের অধিকাংশই বৃথা। ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে ইসলাম জানার ও মানার হার বাড়ছে। পরিস্থিতি ১৯১৮ সালে এরূপ ছিল না। যদিও আলো বেশ দূরে দেখা যাচ্ছে, তবুও এই উম্মাহর অগ্রযাত্রা থেমে নেই এবং এটি কেবল একটি সময়ের ব্যাপার যে ইনশা আল্লাহ আমরা এই উম্মাহর সফলতা দেখতে পারব।
[1] www.hri.org/docs/king-crane/syria-recomm.html
[3] https://www.theatlantic.com/magazine/archive/1993/02/syria-identity-crisis/303860
[4] Sunan Abū Dāwūd
Largely based on a lecture by Shaykh Yasir Qadhi at the Memphis Islamic Centre:
www.youtube.com/watch?v=qh9awD5KwNY
উৎস: Islam21c.com (মূল আর্টিকেল লিন্ক)
অনুবাদক: মো: তৌসিফ রহমান
অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।