এক“আর পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা করো। ডিনার রেডি হয়ে গিয়েছে, খেয়ে যাও।” আন্টি বললেন।
“না আন্টি, দেরি হয়ে গিয়েছে এমনিতেই … বাসায় গিয়ে খাবো ইনশাআল্লাহ। জাজাকিল্লাহু খাইর।” সামান্য হেসে জবাব দিলো ভাতিজা ।
এক ঘণ্টার মতো পেরিয়েছে সেলিম চলে যাওয়ার পর। এমন সময় আন্টি একটা ফোন কল পেলেন:
“জ্বি হ্যাঁ। কী! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’উন।” আন্টি প্রচণ্ড বিস্মিত হয়ে বললেন। সেলিম হাইওয়েতে এক দ্রুতগামী গাড়ির আঘাতে সেখানেই নিহত হয়েছে।
“যদি সেলিম কে যেতে না দিতাম!” অশ্রুসিক্ত চোখে আন্টি বললেন, “কিছুক্ষণ আগেই ও এখানে ছিলো … কেন যে যেতে দিলাম!”
দুইআয়শা আনমনে স্মৃতির রাজ্যে বিচরণ করছিলো … আজকেও তার স্বামী দেরি করে ফিরবে। এক ঝড়ো হওয়ার মতো তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার বিবাহিত জীবনের নানা উত্থান পতনের ঘটনাগুলো। “এই মানুষটা আমাকে কী দিতে পেরেছে? কেন সে সব সময় দেরি করে? সে এখন আমাকে আর ভালোও বাসে না। কেন যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম! আগে যদি জানতাম!”
তার মনে পড়ে, তার এক চাচাত ভাই আহমদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু তখন সে সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে বরং ফাওয়াদকেই পছন্দ করেছিলো … সে তখন ছিলো এক ধনী ব্যবসায়ী। এখন অবস্থা বিপরীত … আহমদ যেখানে টাকা নিয়ে ফুর্তি করছে তখন ফাওয়াদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
হঠাৎ বেল বাজলো। আয়শা বাস্তবে ফিরে আসলো। তার অর্থহীন চিন্তাগুলোর কথা ভেবে অপ্রস্তুত বোধ করলো। ফাওয়াদ এসেছে, মুখে মৃদু হাসি।
তিন“মন খারাপ কেন?” গরম চায়ের কাপ তার হাতে দিতে দিতে বললো তার স্ত্রী।
“তেমন কিছু না,” উত্তর দিলো সে … চুক্তিটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে। “যে প্লটটা আমি কিনলাম, তার দাম বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই সেই কবে থেকে … অথচ পাশেই যে আরেকটা প্লট আমাকে অফার করা হয়েছিলো, তা এখন আকাশ-চুম্বী … সেটাই যদি আমি কিনতাম!”
চার“যদি এটা করতাম, যদি ঐটা না হতো …” এই কথাগুলো আমরা দৈনন্দিন জীবনে অহরহ বলে থাকি। আমাদের মনের আক্ষেপ, নেতিবাচক ভাবনা আর হতাশা প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা এগুলো বলি। আমাদের দ্বীন এত অসাধারণ যে, তা শুধু আমাদের ধর্মীয় উপাসনার নানা নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হয় না। বরং আমাদের জীবনের অতি ক্ষুদ্র বিষয়গুলোতেও সঠিক আচরণের নির্দেশনা এতে রয়েছে। আমাদের শিক্ষক রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মনোমুগ্ধকর হাদীসের মাধ্যমে এসব অর্থহীন বিলাপ আর আক্ষেপ করার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“যদি কোনোকিছু (কষ্ট বা বিপদ আপদ) তোমার উপর আপতিত হয়, তবে সেই অবস্থায় এ কথা বোলো না যে ‘ইশ! যদি আমি এ কাজটা করতাম!’ বরং বলো, ‘আল্লাহ তা নির্ধারণ করেছেন বলেই এমনটা ঘটেছে। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা-ই ঘটে থাকে।’ কেননা, ‘যদি’ কথাটি শয়তানের কুমন্ত্রণার দ্বার খুলে দেয়।” (মুসলিম ৪/২০৫০)
এই হাদীস থেকে আমরা শিখলাম যে, আমাদের ভালো-মন্দ সবকিছু আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর সেটা পূর্বনির্ধারিত। আমাদের জন্মের বহু বছর আগেই তা আমাদের তাকদীরে লিখা হয়ে গিয়েছে। তাই অতীত নিয়ে বিলাপ না করে বরং বর্তমানের কথা চিন্তা করা আর সন্তুষ্ট থাকার মাঝেই কল্যাণ আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মহাজ্ঞানী (আল-‘আলিম) এবং প্রেমময় সত্তা (আল-ওয়াদুদ)। হয়তো তিনি যা দিয়েছেন, তার মাধ্যমেই আমাদের আরো বড় কোনো বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। কোনো মা কখনোই তাঁর সন্তানকে ভারী বোঝা বহন করতে দেন না। আমাদের মহান রাব্বুল ‘আলামিনও তাঁর বান্দাদেরকে কখনোই এমন কষ্টে আপতিত করেন না, যা সহ্য করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাঁর ভালোবাসা সত্তরজন মায়ের সম্মিলিত ভালোবাসার চেয়েও উত্তম। তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন। তিনি শুধু আমাদের পরীক্ষা করেন যে, আমরা কতটা কৃতজ্ঞতা আর ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে পারি।
যখনি এ ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় আসবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, “কাদ্দার আল্লাহু ওয়া মাশা-আ ফা’আল।” “আল্লাহই নির্ধারণকারী; এবং তিনি যা চান, তা-ই করেন।” আমরা মানুষেরা এ বিশাল মহাবিশ্বের নিয়মকানুনের শতকরা পাঁচ ভাগ সম্পর্কেও অবহিত নই। কীভাবে আমরা জানবো যে, তাঁর সকল পরিকল্পনার মাঝে কী মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে?
এই শিক্ষাগুলোই এক জন মুমিনকে অনুপম চরিত্রের অধিকারী করে তোলে। সে সকল পরিস্থিতিতেই সন্তুষ্ট থাকে।
“মুমিনের বিষয়টি কতই না উত্তম! সবকিছুতেই তার জন্য কল্যাণ নিহিত। যখন সে প্রাচুর্যের অধিকারী হয়, তখন সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, যা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর যখন সে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়, তখন সে ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করে, যা তার জন্য অধিকতর কল্যাণ বয়ে আনে।” (রিয়াদ্বুস সলিহীন)
আসুন, এই হাদীসগুলোকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নেই, যা আমাদের জীবনে সকল মুহূর্তে সুখ, তৃপ্তি আর আশার সঞ্চার করবে। আমাদের জন্য যা নির্ধারিত, তা এক সময় না এক সময় অবশ্যই আসবে। আর যা আমাদের ভাগ্যে নেই, তা কখনোই হবে না।
উৎস: Islamic Online University Blog (মূল আর্টিকেল লিংক)
অনুবাদক: দিহান চৌধুরী, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি
অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।
[…] এবং যা চেয়েছেন তা-ই করেছেন।” কেননা যদি শব্দটি শাইতানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। (সহীহ […]