রমাদান আসছে। কারও জন্যে এটা শুধুই আরেকটা রোযার মাস আর কারও জন্যে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার একটা সুযোগ। এই সুযোগ তার জন্যেও যিনি এখনো দ্বীনের পথে এক পাও বাড়াননি আবার তার জন্যেও যিনি মাশাআল্লাহ প্রতিনিয়ত রাসূলের দেখানো সুন্দর সুন্দর আমলের মাধ্যমে নিজের ঈমানকে করে তুলছেন আরও সমৃদ্ধ। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে চলাটা বড় কথা। সবাইকেই কোন এক দিন এই পথ চলাটা শুরু করতে হয়। কেউ পারিবারিক অনুশাসনের কারণে অনেক আগেই এই পথের সন্ধান পেয়ে যান আবার অনেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ পথে আসেন। এসবই আল্লাহর ইচ্ছা। তাই যা পিছনে ফেলে এসেছি তার জন্যে হা-হুতাশ না করে চলুন সামনের পথকে করি আলোকিত।
একআসুন না, এই রমাদানটা একটু ব্যতিক্রম করে তুলি! নিজেই নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই আর জিজ্ঞেস করি আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কি কি? আপনি এখনো নামাজেই নিয়মিত হতে পারেননি? বেশ তো, নামাজ দিয়েই শুরুটা হোক। আজকে এই ওয়াক্ত থেকে প্রতিজ্ঞা করে ফেলুন, এখন থেকে আর একটা ওয়াক্তও মিস দিবো না। যোহরের ১০ রাকাতের কথা ভাবলেই আলসেমি লাগে? শুধু ফরজটুকু দিয়েই শুরুটা করুন না। একটা পা এগিয়ে দেখুন না। আপনার সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা নিশ্চয়ই তার ক্রোধের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। অথবা নামাজটা পড়া হয় ঠিকই কিন্তু জামায়াতে আদায় করা হয়ে ওঠে না। বুস্ট হিসেবে যারা জামায়াতে সালাত আদায় করে না তাদের জন্যে নবিকরিম (সাঃ) এর হাদীসগুলোকে কাজে লাগান। এই সর্ম্পকিত বই, লেকচারগুলো মন দিয়ে শুনুন। পরের ওয়াক্ত সালাতটা ঘরে পড়ার আগে কথাগুলো ঠিকই আপনাকে ভাবাবে।
দুইকুর’আনটা অনেকদিন ধরে শিখবো শিখছি করেও শেখা হচ্ছে না? ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ কিছুদিন আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। আত্মসমর্পণ করার পর তিনি হয়তো সৃষ্টিকর্তার আরও নিকটবর্তী কীভাবে হওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর ছিলেন। তাই এই বয়স্ক ভদ্রলোক কী করলেন, জানেন? কুর’আন মুখস্থ করে ফেললেন। এই কুর’আন মুখস্থ করার জন্যে তাজা বয়স, তীক্ষ্ম মেধাশক্তি, দৃষ্টির স্পষ্টতা কিছুই হয়তো তার ছিলো না কিন্তু একটা জিনিস তার ছিলো একদম সহী শুদ্ধ, আর তা হলো নিয়্যত। জার্মান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ কতো ভাষা আমরা কষ্ট করে শিখে ফেলি সিভিটাকে একটু ভারি করার জন্যে। নিজের পারদর্শীতার তরবারিকে আরেকটু ধারালো করার জন্যে, সৃষ্টিকর্তার দেয়া যে মেধা নিয়ে আমাদের এতো বড়াই, তার দেয়া কিতাবটা পড়ার জন্যে কি আমরা একটু কষ্ট, একটু সময় দিতে পারি না? ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে খুব সহজ করে দিয়েছে। তাজবীদসহ কুর’আন শেখার বেশকিছু কোর্স অনলাইনে চালু আছে। এর জন্যে অনেক টাকা অনেক সময় কোনোটারই প্রয়োজন নেই। তবে, হ্যাঁ আপনার ইচ্ছাটার খুব বেশি প্রয়োজন আছে।
তিনবহুদিন ধরে পর্দা করবেন করবেন বলে শুরু করতে পারছেন না। অপেক্ষা কিসের? আজকে বাইরে যাওয়ার সময় মাথায় ওড়নাটা ভালোমতো দিয়ে বের হোন। দেখুন, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের তৃপ্তি এই রোদ-গরমের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। একবার চেষ্টা করেই দেখুন না। আপনার নামাজ, পর্দা সব-ই আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছে। শুধু গান শোনা, গীবত করা, অশ্লীল ভিডিও দেখাটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল হচ্ছে না। বিশ্বাস করুন, এই স্টেপটা পার হয়ে আসা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম না। তারাও একসময় হেডফোন ছাড়া এককদম চলতে পারতো না। বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে দেখা হবে আর ক্লাসের ঢংগী মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আলোচনা হবে না এমনটা স্বপ্নেও ভাবা যেতো না। সবাই যার যার টেস্ট পার করে আসে। যেটা আপনার জন্যে করা সহজ সেটা আপনার জন্যে টেস্ট না। এখন আপনিই ভেবে দেখুন, এই ছোট্ট টেস্টটা পার হওয়া কি খুব কষ্টসাধ্য?
উপরের সব ফিল্টারেই আপনি পার হয়ে গেছেন, আপনার দ্বীনি অবস্থা আশেপাশের অনেকের থেকে অনেক বেশি ভালো। তাহলে এটাই তো সুযোগ তাহাজ্জুদ, দোহার সালাত, মাসনূন দু’আ, যিকিরসহ আরও বেশি বেশি আমলের মাধ্যমে জান্নাতুল ফেরদৌসের পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার। হিজাবি থেকে নিক্বাবি হওয়ার, কুর’আন জানা থাকলে কুর’আন মুখস্থ করার, আশেপাশের মুসলিমদের ইসলাহ বা পরামর্শ দেয়ার, বিধর্মীদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানোর।
ভাবছেন, রমাদানটা আসুক, সব একবারে শুরু করবেন? আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুক। কিন্তু দয়া করে নিজেকে ধোঁকায় ফেলবেন না। শুরুটা আপনাকে হুট করেই করতে হবে। শয়তান বোকা নয়। এতো সহজে সে আপনাকে হাতছাড়া করবে না। এই রহমতের মাসে শয়তানো থাকবে শৃঙ্খলিত, শুধু আপনি আর আপনার নফস বা প্রবৃত্তি। আর কতো দিন নফসের কাছে পরাজিত হবেন, বলুন? নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাটা আজকেই এখুনি করে ফেলুন। তা নাহলে রোযার ৩০ তা দিন কোনমতে যাওয়ার পর ঈদের ফজর থেকে আপনি যে দূরত্বে এখন দাঁড়িয়ে আছেন, সেই দূরত্বেই আবার পৌঁছে যাবেন।
নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় পৌছানোর জন্যে জীবনে কতো কোচিং, কতো কোর্স করে ফেললেন। অথচ কানের গোড়ায় দিনে পাঁচবার ইমাম সাহেব সাফল্যের দিকে ডেকে চলেছেন সেদিকে যাওয়ার আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। অনেকগুলো বছর তো কেটে গেলো এলোমেলোভাবে। এবার আসুন না নিজেকে একটু গুছাই। সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা করার চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত নাকি একজন মুমিনের জন্যে আর কিচ্ছু হবে না। সেই সুন্দর মুহূর্তে আমাদের যেনো নিজের আমলনামা নিয়ে লজ্জিত বোধ করতে না হয়। আসুন না, এবারের রমাদান থেকেই সেই প্রস্তুতি নিই।
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না। অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। (সূরাহ আল-হাক্বক্বাহ: ১৮-১৯ )
লেখক: শারিকা হাসান
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।