কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং হিফয করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দর নেক আমলগুলোর মধ্যে একটি। নবীজি (সা:) আমাদেরকে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করতে বলেছেন, যাতে আমরা ভুলে না যাই। অর্থাৎ কেউ তা বারবার তিলাওয়াত করলো কি না, মুখস্থ রাখলো কি না, তা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা। একইভাবে কুরআন মুখস্থের পর ভুলে যাওয়া একটি নিন্দনীয় কাজ। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর কিতাবকে ছোট করে দেখা এবং এর থেকে দূরে সরে যাওয়া প্রকাশ পায়।
কুরআন ভুলে যাবার ব্যাপারে ফতোয়া দিতে গিয়ে আলিমগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলেছেন যে, কুরআন ভুলে যাওয়া একটি কবীরা গুনাহ। কেউ মতামত দিয়েছেন যে, এটা অবশ্যই একটি গুনাহের কাজ এবং নাফরমানী। তবে তা কবীরা গুনাহ নয়। আবার কারো মতে, এটি কুরআন ভুলে যাওয়া মানুষের উপর বিপর্যয় হিসেবে পতিত হয়েছে যা তার দ্বীনি চেতনার উপর কুপ্রভাব বিস্তার করেছে। অথবা ব্যক্তির কৃতকর্মের জন্য এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একটি সাজা যদিও এটা কোনো কবীরা গুনাহ বা পাপের পর্যায়ে পড়ে না। এই বিষয়ে এই দর্শনই অপেক্ষাকৃত অধিক গ্রহণযোগ্য।
যা-ই হোক, যে একবার কুরআন মুখস্থ করেছে তার জন্য তা তিলাওয়াত করতে ভুলে যাওয়াটা বা এ ব্যাপারে উদাসীন থাকা মোটেই সমীচীন নয়। বরং কুরআনের নির্দিষ্ট অংশ তিলাওয়াত করা তার দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই থাকা উচিৎ, যাতে সে তা মনে রাখতে পারে এবং ভুলে না যায়। আর এর বিনিময়ে সাওয়াব এবং কুরআনের হুকুম-আহকাম দ্বারা উপকৃত হবার আশা রাখতে হবে।
কুরআনের কিছু অংশ ভুলে যাওয়া একে অবহেলা করার কারণে হয়। তবে কিছু অবহেলা অন্যান্য কিছু অবহেলার থেকে কম জঘন্য বলে ইবনুল কয়্যিম (রহ) তাঁর আল-ফাওয়া’য়িদ নামক গ্রন্থের ৮২নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যদি কুরআন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কুরআন ভুলে যাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে একটি ঘোরতর দুর্বিপাক। এটি সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি আরো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কুরআন পড়ে ভুলে যাওয়া ব্যক্তির জন্য তাই কিছু উপদেশ:
– তার মুখস্থ করা সূরাগুলো আবার ঠিকমতো মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত পড়তে হবে।
– আবার যাতে ভুলে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং পুনঃপাঠ জারি রাখতে হবে।
– মুখস্থ করা চালু রেখে তার উন্নতির দিকে নজর দিতে একজন ভালো শিক্ষকের শরণাপন্ন হতে হবে।
– সে বড় যেসব অংশ মুখস্থ করেছে (যেমন পারা বা হিযব ইত্যাদি) সেগুলোর পুনঃপাঠের পাশাপাশি পুরো সূরা আয়ত্তাধীন করার চেষ্টা করতে হবে। তাই যা আগে পড়া হয়েছিল, এভাবে আবার তা পাঠ করে সম্পূর্ণ সূরা মু্খস্থ করতে সহজ হবে।
– ভুলে যাওয়া ছোট অংশের ক্ষেত্রে (যেমন দুই-তিনটি আয়াত) সেগুলো মনে করার চেষ্টা করে কষ্ট করার দরকার নেই।
উপরে বলা পরামর্শ অনুযায়ী শুধু ভুলে যাওয়া বড় বড় অংশ এবং সূরার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। আর ছোট অংশ ভুলে যাওয়ার কারণে বা পুনঃপাঠ না করার কারণে তার কোনো পাপ হবে না। তার অবস্থা তাকে নিজেই নিরীক্ষণ করতে হবে আর যা-ই অপরাধ হয়ে থাকুক না কেন, তার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তার দুর্বলতার অংশটুকু সংশোধন করতে হবে। আর যে কারণে সে আখিরাতের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েছিল এবং পার্থিব বিষয়াবলিতে জড়িয়ে পড়েছিল, তা থেকে ফিরে পুনরায় আখিরাতের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। কারণ এটিই উত্তম এবং চিরস্থায়ী।
পাশাপাশি তার উচিৎ এখনই যতটুকু আবার তার মুখস্থ হয়েছে, তার উপর কাজ করা। কারণ সে এখনো উদ্যমী আছে এবং কখন আবার সে খেই হারিয়ে ফেলে তার ঠিক নেই। ইবনুল মুবারাক আযযুহদ (১/৪৬৯) গ্রন্থে লিখেছেন যে ইবনে মাস’উদ(রা) বলেন,
“এই হৃদয়গুলো কখনো কখনো উদ্যমী ও দৃঢ়চিত্ত হয়। আবার কখনো মন্থর হয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। তাই উদ্যম আর দৃঢ়তার সর্বোচ্চ ব্যবহার কর এবং মন্থর ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দাও।”
কুরআন ভুলে যাওয়া ব্যক্তি যখন নিজ ভুল বুঝতে পেরে আবার কীভাবে তা অর্জন করা যায় সেই বিষয়ে তালাশ করে বেড়ায়, তখন নিঃসন্দেহে তা হৃদয়ের মন্থর ও বিক্ষিপ্ত অবস্থার পর আবার দৃঢ় উদ্যমের লক্ষণ। এমন পরিস্থিতিতে যে-ই থেকে থাকুক না কেন, আর এতটুকুও দেরি না করে এখনই উচিৎ পুনরায় মুখস্থ করা শুরু করে দেওয়া।
আর যদি সে তার ব্যস্ততা, কাজ-কর্ম এবং পবিবারের ভরণ-পোষণে আয়-উপার্জন বা এ ধরনের কারণে অবসর সময় ব্যতীত পাঠ করার অবকাশ না পেয়ে থাকে, তাহলে তার উপর কোনো দোষ বর্তাবে না।
আল্লাহু আলাম।
উৎস: ইসলাম কিউ এ ডট ইনফো (মূল আর্টিকেল লিঙ্ক)
অনুবাদ: মুরসালিন নিলয়
অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।