আদনান একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। ভার্সিটি লাইফ শেষ করে দেশের বাইরে চলে যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য। ফিরে এসে এখন দেশে বিরাট ব্যবসা করে। স্রষ্টা সম্পর্কে সে সংশয়বাদী। স্রষ্টা আছে? নাকি নেই? এই বিষয়ে সে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে না। কিন্তু তার পরিবার ধার্মিক। তাই তারা তাদের ছেলের জন্য ধার্মিক মেয়ে খুঁজছিলো, যাতে সে তাকে ঠিক করতে পারে।
অপরদিকে, ফাতিমা একজন তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন শিক্ষিত মেয়ে। ভার্সিটিতে মলিকুলার বায়োলজিতে পড়েছে। মলিকুলার বায়োলজিতে পড়লেও ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ থাকার কারণে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনাও করেছে। সাধ্যমতো ইসলাম প্র্যাক্টিস করার চেষ্টা করে। এখনো সম্পূর্ণ প্র্যাক্টিসিং হতে পারেনি। কিন্তু আশায় থাকে এমন একজন জীবনসঙ্গীর, যে তার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবে। কিন্তু তার পরিবার তেমন ধার্মিক নয়। আর মেয়ের ইচ্ছার প্রাধান্য দেবার মতো মানসিকতাও নেই।
পারিবারিকভাবেই বিয়ে হলো। ছেলের বাহ্যিক অবস্থা দেখে ফাতিমা বিয়েতে রাজি ছিলো না। কিন্তু আজকালকার সমাজের খুব কম পিতা-মাতা বিয়ের ক্ষেত্রে তাদের ছেলে-মেয়ের মতামতের গুরুত্ব দেয়। অনেক পিতা-মাতা এটা বোঝেই না যে, জোর করে তাদের উপর পাত্র বা পাত্রী চাপিয়ে দেওয়া তাদের উপর অবিচার। এতে একজন ছেলে হিসেবে অনেক কিছু করার থাকলেও মেয়েদের তেমন কিছু করার থাকে না। মেয়েরা বাবা-মা’র কথা চিন্তা করে নিজের অপছন্দ সত্ত্বেও মেনে নেয়। ফাতিমাও তাদের মধ্যেই একজন।
বিয়ের কিছুদিন পরে আদনানের সংশয়ের ব্যাপারে জেনে ফাতিমা প্রচণ্ড ধাক্কা খায়! এই অবস্থায় কী করা উচিত? বাবা-মাকে জানাবে কি না? কীভাবে তাকে ঠিক করা যায়? সবসময় এসব চিন্তা করতে করতে অনেক দিন চলে যায়। ফাতিমা মাঝে মাঝে ইসলামের যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করতো। কিন্তু আদনানের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিলো না।
বৃহস্পতিবার রাত। আদনান ও ফাতিমা ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ ফাতিমার ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইলে সময় দেখলো চারটা পনেরো বাজে। চোখ দুটি মুছে অন্যদিকে ফিরে দেখে আদনান ঘুমাচ্ছে। সে আদনানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর ভাবছে কীভাবে আদনানকে সংশয় থেকে ফিরিয়ে আনা যায়। আদনান বাম দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে নড়েচড়ে পাশ ফিরে ডান কাত হয়ে ঘুমাতে থাকলো। ফাতিমা দেখছে আর আল্লাহ তা’আলার নিয়ামতের কথা চিন্তা করছে। মানুষ যদি একপাশ হয়ে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকে, তাহলে তার অন্য পাশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাবে! আল্লাহ যদি মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় পার্শ্ব পরিবর্তন না করাতেন? ব্যাপারটি যদি মানুষের ঐচ্ছিক হতো? তাহলে তো রাতে বারবার ঘুম থেকে উঠে পাশ পরিবর্তন করে ঘুমাতে হতো। অন্তর থেকেই ফাতিমা শুকরিয়া আদায় করলো।
“ব্যাপারটি আদনানকে ডেকে একটু বুঝিয়ে বলি। দেখি ও কী বলে।”-এই চিন্তায় তখনই আদনানকে ডাকলো। কিন্তু আদনান সাড়া দিলো না। ফাতিমাও নাছোড়বান্দী।
-“এই আদনান। আদনান। এই আদনান।”
– “হুম।”
-“একটু উঠবা?”
আদনান উঠে চোখ মুছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, “কেবল চারটা তেইশ বাজে। এখন ডেকে তুললে কেন?”
-“উম, একটি বিষয়ে কথা বলতাম।”
-“এই রাতে? কাল সকালে বললে হতো না?”
-“না। যে ব্যাপারে কথা বলবো, সেটি তোমার ক্ষেত্রে শুধু রাতেই ঘটে। কারণ তুমি দিনে আর কখনো ঘুমাও না।”
-“ঘুমানো নিয়ে আবার কী বলবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
ফাতিমা বললো, “আচ্ছা, আমি বুঝিয়ে বলছি। দেখো তুমি বাম কাতে শুয়ে ছিলে, কিছুক্ষণ পরে পাশ ফিরে ডান কাত হয়ে শুলে। এ ব্যাপারে কি কখনো ভেবে দেখেছো? চিন্তা করো, এই কাজের নিয়ন্ত্রণ যদি তোমার হাতে আল্লাহ তা’আলা দিয়ে দিতেন, তাহলে তোমার ঘুমাতে কতই না সমস্যা হতো! ঘুম থেকে উঠে উঠে তোমার পাশ ফিরে শুতে হতো। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা ঘুমন্ত অবস্থাতেই তোমার পাশ পরিবর্তন করে দেন, যাতে তুমি ঠিক মতো ঘুমাতে পারো, তোমার দেহের কোষগুলোর যেন কোনো ক্ষতি না হয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে সূরা কাহফ এর ১৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে।’ দেখো তিনি তাঁর বান্দার জন্য কত সুবিধা করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।”
ফাতিমা একবার যখন কিছু বলার জন্য মনস্থির করে, তখন সেটি বলেই ছাড়ে। আজও আদনান বুঝতে পেরেছে যে, ফাতিমার কথা না শুনে আজ আর ঘুমানো যাবে না। তাই দীর্ঘ সময় জেগে থাকার প্রস্তুতি নিলো আদনান। তারপর কিছুটা বিরক্তির সুরে আদনান বললো, “আরে এটা তো মানুষের একটা প্রোটেক্টিভ সিস্টেম! মানুষ যখন এক দিকে অনেকক্ষণ চাপ দিয়ে থাকে, তখন সেখানে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। এই অবস্থা অনেকক্ষণ থাকলে সেখানের টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সেখান থেকে ব্রেইনে সিগনাল যায়। তখন আমরা অন্যদিকে ফিরে শুই। এটাকে এত গভীরভাবে ভাবার কী আছে?”
ফাতিমা বললো, “সে তো ঠিকই। কিন্তু দেখো, কোনো কিছুই কি একা একা হয়? সব কিছুরই তো নিয়ন্ত্রক থাকে, তাই না?”
আদনান বললো, “হুহ! কে বলেছে তোমাকে কোনোকিছু একা একা হয় না? এই যে তুমি আর আমি এবং এই বিশাল জীবজগৎ তো নিজে থেকেই তৈরি হয়েছে! এখানে প্রকৃতিই ভাইটাল রোল প্লে করে।”
-“মানে?”
আদনান বললো, “মানে হলো, প্রথমে এই পৃথিবীতে প্রাণ বলতে কিছুই ছিলো না। প্রাথমিকভাবে, বিবর্তনবাদীদের মতে যখন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো না, তখন এককোষী অণুজীব সৃষ্টি হয়। তারপরে এককোষী অণুজীব থেকে বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভব। সেখান থেকে আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হয়ে এই পৃথিবীর সমস্ত জীবজগৎ। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় একটি ভাইটাল ফোর্স কাজ করে যেটি তাদের জটিল অবস্থার দিকে দিকে ধাবিত করতে সহায়তা করে। আর জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তাদের অতিবাহিত জীবদ্দশাতেই।[১] যেমন ধরো, খাটো গলাবিশিষ্ট জিরাফ থেকে লম্বা গলাবিশিষ্ট জিরাফ তৈরি হয়েছে। কারণ এটি এর জীবদ্দশায় উঁচু উঁচু গাছ থেকে পাতা খেতে খেতে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছে।”
ফাতিমা হেসে দিয়ে বললো, “কী? তাই নাকি? তুমি কয় যুগ আগের বিবর্তন সম্পর্কে বলছো? বর্তমানে জিনতত্ত্ব অনুযায়ী, জীবের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় জিনের মাধ্যমে বাহিত হয়, জীবের জীবদ্দশাতে এর কোনো পরিবর্তন হয় না। যদিও হয়, সেটি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে।”
আদনান বিরক্ত হয়ে বললো, “আরে আমাকে শেষ করতে দাও! বিজ্ঞানের কোনোকিছুই একবারে প্রমাণিত হয় না। একটার পর একটা গবেষণা হয়। কিছু ভুল প্রমাণিত হয়। আবার নতুন কিছু উদ্ভাবিত হয়। এভাবেই চলতে থাকে। জীবের জীবদ্দশায় এর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় – এই তত্ত্বটি মূলত ল্যামার্ক দিয়েছিলেন। তাঁর তত্ত্বে কিছু ভুল থাকায় পরবর্তীকে চার্লস ডারউইন নতুন কিছু তত্ত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘সকল প্রজাতিই তাদের একটি পূর্বপূরুষ থেকে এসেছে এবং সময়ের আবর্তনের কারণে যুগ যুগ ধরে পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে থাকতে এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।’[২] তিনি একটি দ্বীপে দেখেছিলেন সেখানে একই ধরনের কিছু পাখির ভিন্নরকম ঠোঁট। কোনোটা বড়, কোনোটা ছোট, কোনোটা তীক্ষ্ণ, কোনোটা আবার একটু চওড়া। পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন হয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো যোগ হয়েছে। একে ন্যাচারাল সিলেকশান বলে।”
আদনানের কথার মাঝে ফাতিমা বললো, “ওয়েট…ওয়েট। আমার জানামতে এটা ভ্যারিয়েশান। একটি জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহের সর্বোচ্চ কতটুকু পরিবর্তন হতে পারবে, সেটি তার জিনে সংরক্ষিত থাকে। আর এটা সীমাবদ্ধ। একে বলা হয় ‘জেনেটিক পুল’। এভাবে জীবের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু এর কারণে তো একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে পরিবর্তিত হবে না। ডলফিন কখনো বাঘ হবে না। আর বাঘ কখনো ঈগল হবে না, তাই না? তাই এগুলো ইভোলিউশানের প্রমাণ হতে পারে না!”
আদনান বললো, “আবার কথার মাঝে বাম হাত দিলে! আমাকে শেষ করতে দাও। ডারউইনের এই তত্ত্বেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিলো। এর পরে বিবর্তনবাদীরা তাঁর এই তত্ত্বের সাথে মিউটেশানকে যুক্ত করে নতুন তত্ত্ব দেন। এবং তখন থেকে এটি নিও-ডারউইনিজম নামে পরিচিত। তুমি কি জানো মিউটেশান কী?”
ফাতিমা উত্তর দিলো, “আমাদের দেহের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে জেনেটিক তথ্যের বাহক হিসেবে ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে ডি.এন.এ নামক নিউক্লিক এসিড। ডি.এন.এ’র মধ্যে থাকে জিন। জিন হলো, বংশগতির আণবিক একক, যা জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। জিন প্রজাতির তথ্যধারণ করে এবং প্রাণীর কোষ বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমেই প্রজাতির গুণ অব্যাহত থাকে। মিউটেশান হলো এই জিনে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা ভাঙন। মিউটেশান কোষ বিভাজনের সময়, অতিবেগুনি রশ্মিতে বা রাসায়নিক পদার্থের কারণে হতে পারে।”
আদনান বললো, “বাহ! ভালোই তো জানো দেখছি। তোমাকে বোঝাতে তাহলে সহজ হবে। পৃথিবীর এই দীর্ঘ সময়কালে জীবজগতের শুরু থেকে এভাবে একটার পর একটা এলোমেলো মিউটেশান হতে হতে জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে। আর এভাবে বৈশিষ্ট্য যোগ হতে হতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর অতিক্রম করার ফলে আমাদের মতো উন্নত প্রাণীর আবির্ভাব। এবার বুঝেছো?”
ফাতিমা বললো, “তোমার কথা বুঝেছি। কিন্তু আমার জানামতে এলোমেলো মিউটেশানে কোনো নতুন তথ্য যোগ হয় না। আর এভাবে এলোমেলো মিউটেশানে সার্বিকভাবে একটি প্রাণীর তেমন উপকার হয় না।”
আদনান বললো, “কেন? জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমেই নতুন তথ্য যোগ হয়। আর কে বলেছে মিউটেশানে প্রাণীর উপকার হয় না? কেন! তুমি পড়নি যে, মিউটেশনের ফলে একটি কোষের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, আবার একটি কোষের কার্যক্ষমতা বেড়েও যেতে পারে? তাহলে শোনো। ‘PCSK9’ জিনের মিউটেশান বহনকারী মানুষ হৃদরোগে কম ভোগে যখন এই জিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। কারণ তাদের লিভার বেশি পরিমাণ ‘LDL’ শোষণ করতে পারে। এতে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে। এছাড়াও মানুষের রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন থাকে। এই হিমোগ্লোবিনের ‘S’ চেইনে মিউটেশান ঘটলে লোহিত রক্তকণিকার আকারে হালকা পরিবর্তন আসে। এতে মানুষের ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এগুলো তো উপকারী মিউটেশান। তাই না?”
ফাতিমা বললো, “এগুলো তোমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। জিন ডুপ্লিকেশনের কার্যকারিতা নিয়ে বিখ্যাত বায়োকেমিস্ট মাইকেল বেহে’র রিসার্চ পেপার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘জিন ডুপ্লিকেশনের কোনো নির্দিষ্ট কার্যকারিতা নেই’।[২.১] আর নতুন তথ্য বলতে আমি বুঝিয়েছি, বিবর্তনের ধারাতে একটি নতুন কার্যকারি অঙ্গাণু তৈরির জন্য ডি.এন.এ’তে যে পরিমাণ তথ্য দরকার হয়। আর র্যান্ডম বা এলোমেলো মিউটেশানে এমন ফাংশানাল তথ্য যোগ হবার উদাহরণ প্রকৃতিতে নেই। আর এটা সম্ভবও নয়। এই সেদিনের কথা চিন্তা করো। আমি বাইরে থেকে আসার পরে দেখলাম তোমার অবস্থা খারাপ। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করাতে বললে যে, ‘লাগেজে কেন লক দিয়ে গিয়েছো? তোমার লাগেজে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছিলো। এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও আমি লক খুলতে পারিনি।’ এখন দেখো, ওই লাগেজের লকে চারটি ডায়াল ছিলো। প্রত্যেক ডায়ালে এক থেকে দশ পর্যন্ত ডিজিট ছিলো। আমি এখানে একটি কম্বিনেশান সেট করেছি। ধরো সেটা, ‘1 4 3 8’ ছিলো। তাহলে এটা হলো, আমার দেওয়া একটি ফাংশানাল বা কার্যকর তথ্য। এখন, লক’টি এই কম্বিনেশান ছাড়া আর কোনো কম্বিনেশানে খুলবে না। তুমি যদি এই সংখ্যাটি নিজের ইচ্ছামতো উল্টাপাল্টা কম্বিনেশান তৈরি করে বের করতে যাও, তাহলে কমপক্ষে হলেও তোমার দশ হাজার কম্বিনেশান তৈরি করতে হবে। যেটি তৈরি করা এক ঘণ্টায় তোমার জন্য সম্ভব নয়। একইভাবে এলোমেলো মিউটেশানের ফলে আমাদের দেহের একটি মধ্যম আকৃতির কার্যকর প্রোটিন তৈরি করতে ১০৭৭ টি কম্বিনেশান তৈরি করতে হবে, যা আমাদের মিল্কিওয়ের মোট অণুর সংখ্যা থেকেও বেশি।[৩] যেটি ঘটার জন্য তিন বা চার বিলিয়ন বছর সময় পর্যাপ্ত নয়। আমাদের দেহে তাহলে কত বিচিত্র ধরণের কার্যকর প্রোটিন রয়েছে। তাহলে এত ফাংশানাল প্রোটিন র্যান্ডম বা এলোমেলো মিউটেশানের ফলে তৈরি হবার সম্ভাবনা কতটুকু? নেই বললেই চলে! বুঝেছো?[৩]”
ব্যাপারটি মনে হলো, আদনানের চিন্তার জগতে সজোরে আঘাত করেছে। কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে আদনান। তখন ফাতিমা বললো, “তারপরে তুমি বলেছো, ‘মিউটেশানে একটি কোষের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, আবার একটি কোষের কার্যক্ষমতা বেড়েও যেতে পারে।’ একটি কোষের কার্যকারিতা বাড়লেই কি সেটা আমাদের জন্য উপকারী হয়? আচ্ছা ধরো, তোমার অগ্নাশয়ের ‘আলফা’ কোষে মিউটেশান হওয়ার ফলে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেলে তোমার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে। তখন তুমি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হবে। এতে কি উপকার হলো? তারপরে তুমি কিছু উপকারী মিউটেশানের উদাহরণ দিলে। আমি সেগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছি। তুমি বলেছো, কারো যদি ‘PCSK9’ জিনের মিউটেশান হয়, তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা আছে। আমাদের দেহের বিভিন্ন কাজে, যেমন- কোষঝিল্লি, হরমোন, ভিটামিন-ডি ইত্যাদি তৈরিতে কোলেস্টেরলের দরকার হয়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে গেলে আমাদের দেহের এই কাজগুলোতে সমস্যা হবে। এর ফলাফল প্রধানত আমাদের ব্রেইনে গিয়ে পড়ে। আমাদের মধ্যে তখন বিষণ্ণতা, হিংস্রতা ও বিভিন্ন মস্তিষ্কের রোগ, যেমন- পারকিনসন্স ডিজিজ ডেভেলপ করতে পারে। এজন্য সাধারণ মানুষের জন্য এই জিনের মিউটেশান উপকারী নয়।[৪] তারপরে তুমি বললে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন চেইনে মিউটেশান হলে নাকি ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হ্যাঁ, তোমার কথা ঠিক। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। হিমোগ্লোবিনের ‘S’ চেইনে মিউটেশান হলে যে রোগ হয়, তাকে বলা হয় ‘সিকেল সেল অ্যানিমিয়া’। সিকেল সেল অ্যানিমিয়া’র রোগীদের হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তারা জটিল শ্বাস – প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগে। এছাড়াও হাড়ে ব্যথা, রক্তশূন্যতা, হার্ট ফেইলিওর, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হতে পারে।[৫] একদিক থেকে উপকারী হলেও অন্যদিকে এসব মিউটেশান ক্ষতিকর ইফেক্ট ফেলে। আচ্ছা আদনান, ‘গরু মেরে জুতা দান’ কাকে বলে জানা আছে?”
আদনান কিছুটা ভড়কে গেল। তারপর বললো, “হ্যাঁ, জানি! কিন্তু এই প্রসঙ্গ এখানে আসলো কেন? আমি কি এগুলো কিছু জিজ্ঞাসা করেছি?”
ফাতিমা বললো, “র্যান্ডম মিউটেশানও আমাদের গরু মেরে জুতা দান করে। এ তো সেই যুক্তির মতো হয়েছে যে, এক ব্যক্তি জন্মানোর সময় একটি পা নিয়ে জন্মেছে। এক ব্যক্তি বললো, এটা তার জন্য ভালো হয়েছে। পা নষ্ট হওয়ার কারণে সে মটর সাইকেল চালাতে পারবে না, তাই সে রাস্তায় দূর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত। এরকম যুক্তিকে তো যুক্তিই বলা যায় না, বরং কুযুক্তি বলাও ভুল! আরেকটি বিষয় হলো, প্রতিটা মিউটেশানই একটি দুর্ঘটনা। বেশিরভাগ সময়ই এটা এত পরিমাণ ক্ষতি করে যে, আমাদের কোষ সেটাকে ঠিক করতে পারে না। একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা এলোমেলোভাবে পরিবর্তন এলে সেটা ভালো কিছু দেয় না। যেমন, ভূমিকম্প হলে একটি সুন্দর বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারে পরিবর্তন আসবে। এতে কখনোই তার স্ট্রাকচার সুন্দর হবে না। আর তেমনই আমাদের দেহে মিউটেশান হলে, সেটার ফলাফল ভালো কিছু সাধারণত হয় না। যেমন- Mongolism, Down syndrome, Albinism, Dwarfism, cancer ইত্যাদি মিউটেশান ঘটিত রোগগুলো তো আমাদের চারপাশেই আমরা দেখতে পাই।[৬] তোমরা তো শুধু বিজ্ঞানীদের দোহাই দাও। বলো যে, এত এত বিজ্ঞানী ন্যাচারাল সিলেকশান এবং র্যান্ডম মিউটেশানের মাধ্যমে মানুষের উৎপত্তিকে বিশ্বাস করে। কিন্তু প্রচুর বিজ্ঞানী এবং ডাক্তার যে, এই প্রক্রিয়ার মানুষের উৎপত্তিকে রূপকথার গল্প মনে করে, সেটা তোমরা কৌশলে এড়িয়ে যাও![৭] এভাবে প্রায় সকল স্থানেই বিবর্তনবাদী প্রোপাগ্যান্ডিস্টেরা দ্বিমুখিতা দেখায়।”
“তাহলে কি উপকারী মিউটেশান নেই? ব্যাক্টেরিয়া যে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, এটা তো তাদের জন্য উপকারী। তাহলে?” আদনানের প্রশ্ন।
ফাতিমা বললো, “হ্যাঁ, উপকারী কিছু আছে। প্রাণীদের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে কিছু কিছু পরিবর্তন আসে। এবং এটি জিনের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের অনুপাতের মাঝে পরিবর্তনের ফসল। একে বলা হয় মাইক্রো ইভোলিউশান।[৮] যেমন, ফিঞ্চ পাখির ঠোঁট ছোট-বড় হওয়া, ব্যাক্টেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি, ফ্লু ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইন, প্রাণীর গায়ের রঙ এবং ডিজাইন, পশমের পরিমাণ, চোখের মনির রঙ, উচ্চতা ইত্যাদি। এই ছোট ছোট পরিবর্তনে ফিঞ্চ পাখি তো টিয়া পাখি হয়ে যায় না। E. Coli ব্যাক্টেরিয়া তো Shigella বা Salmonella হয়ে যায় না। আবার ফ্লু ভাইরাস এইডস ভাইরাস হয়ে যায় না। শুধু তাদের মধ্যে কিছু ভ্যারিয়েশান আসে। বিবর্তন বলতে তুমি এগুলো বোঝালে, আমার তাতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তুমি যদি বিবর্তন বলতে সেই এককোষী জীব থেকে ন্যাচারাল সিলেকশান এবং অনিয়ন্ত্রিত র্যান্ডম মিউটেশানের ফলে মানুষসহ সম্পূর্ণ জীবজগতের উৎপত্তি বোঝাও, অর্থাৎ যাকে ম্যাক্রো ইভোলিউশন বলে, তাহলে আমার এখানে ঘোর আপত্তি আছে!”
এতটুকু শোনার পরে আদনান বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুম থেকে মুখে পানি দিয়ে আবার বিছানায় এসে বসলো। তারপর উৎসুক মনে জিজ্ঞাসা করলো, “তাহলে এত এত ফসিল রেকর্ড আছে। সেগুলোর কী হবে?”
ফাতিমা বললো, “ফসিল কী প্রমাণ করেছে? আচ্ছা ক্যাম্ব্রিয়ান এক্সপ্লোশান কী? বলো তো!”
এগনোস্টিক হবার সুবাদে ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও বিবর্তন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলো আদনান। তাই ফাতিমার করা প্রশ্নটিও অজানা ছিলো না। তাই প্রশ্নের উত্তরে আদনান বললো, “জিওলজিকাল টাইম স্কেলে খুব ক্ষুদ্র একটি সময়ে ভূস্তরে প্রাণীজগতের প্রায় ২০টি পর্বের প্রাণীর একত্রে আগমন ঘটে। একে ক্যাম্ব্রিয়ান এক্সপ্লোশান বলে।”
ফাতিমা বললো, “এই তো খুব সুন্দর জানো। আচ্ছা, তাহলে ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডে হঠাৎ করে এত জটিল জটিল প্রাণীর আবির্ভাবের ব্যাখ্যা তো র্যান্ডম মিউটেশান ও ন্যাচারাল সিলেকশান দিয়ে দেওয়া যায় না। যেখানে একটি ফাংশানাল প্রোটিন তৈরি হবার সম্ভাবনা ১০৭৭-এ একটি মাত্র। আর এই পিরিয়ডে এত জটিল সব প্রাণীর এত ফাংশানাল প্রোটিন নতুনভাবে র্যান্ডম মিউটেশানের ফলে আসা কীভাবে সম্ভব? সুতরাং, ‘ইউনিভার্সাল কমন অ্যানসেস্ট্রি’ তো এখানেই থেমে যায়। বেশি দূরে যাবার দরকার নেই। আর একটি প্রজাতি থেকে আস্তে আস্তে বিবর্তিত হয়ে অন্য একটি প্রজাতি হতে গেলে এর মাঝে দুই প্রজাতির কিছু মিক্সড বৈশিষ্ট্যের প্রাণী বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। একে বলে ট্রানজিশনাল স্পিশিস। এই ক্যাম্ব্রিয়ান পিরিয়ডে যে সমস্ত প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছে, সেগুলো হঠাৎ করেই তাদের কমপ্লেক্সিটি নিয়ে উদ্ভব হয়েছে। এদের কোনো অ্যান্সেস্ট্রাল স্পিশিসের ফসিল পাওয়া যায় না।[৯] এবং প্রি-ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ডের প্রাণী থেকে যে ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ডের প্রাণী হয়েছে, আর এর মাঝে যে ট্রানজিশনাল স্পিশিস ছিলো – এমন কোনো প্রমাণ বিজ্ঞান মহলে নেই।[১০] এমনকি এখন পর্যন্ত এরকম ট্রানজিশনাল স্পিশিসের সন্ধান মেলেনি। বিবর্তনবাদীরা কিছু কুমির জাতীয় প্রাণীর চোয়ালে অবস্থিত নাকের ছিদ্রের অবস্থানের পরিবর্তন দেখিয়ে, বিভিন্ন প্রাণীর হাতের অস্থির মিল দেখিয়ে ট্রানজিশনাল স্পিশিসের প্রমাণ দেখাতে চায়। কিন্তু এখানে কমন ডিজাইনারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
আদনান জিজ্ঞাসা করলো, “কমন ডিজাইনার বলতে আবার কী বুঝালে তুমি?”
ফাতিমা বললো, “ধরো, তুমি দুইটি গাড়ি তৈরি করলে। একটির সাইলেন্সার দিলে পাশে। এবং আরেকটির সাইলেন্সার দিলে পিছনে। এখন কি আমি বলবো যে, এই প্রথম গাড়ি থেকে দ্বিতীয় গাড়ি বিবর্তিত হয়েছে? নাকি বলবো যে, দুটি গাড়িই তুমি তৈরি করেছ কিন্তু ডিজাইনে একটু ভ্যারিয়েশান এনেছ?”
আদনান উত্তর দিলো, “দুটোই আমি তৈরি করেছি। কিন্তু জড় বস্তুর সাথে তুমি জীবকে মেলাতে পারো না।”
ফাতিমা বললো, “জড় বস্তুর সাথে জীবকে মেলানো যায় না সত্যিই। কিন্তু প্রত্যেকটা প্রাণীই প্রিভিয়াসলি ডিজাইনড। আর এই ডিজাইনগুলো আমাদের কোষের নিউক্লিয়াসের অবস্থিত ক্রোমোজমের ভিতরে ডি.এন.এ’তে থাকে। তাই ওই কুমির জাতীয় প্রাণীর নাকের ছিদ্রের অবস্থানের পার্থক্যও একজন ডিজাইনারের দুটি আলাদা ডিজাইন। আমরা যখন কোনো সফটওয়্যার দেখি, এর পিছনে একজন প্রোগ্রামারের কথা চিন্তা করি। যখন কোনো গাড়ি দেখি, এর পেছনে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার গাড়ি তৈরিকারীর কথা ভাবি। আমাদের ডি.এন.এ’তে বিদ্যমান তথ্যগুলোও কোনো এলোমেলো তথ্য নয়। এগুলোতে রয়েছে নিখুঁত নকশা। দেখো, আমাদের দেহের প্রত্যেকটি কোষেই কিন্তু একই রকমের ডি.এন.এ থাকে। কিন্তু আমাদের হৃদপিণ্ডের কোষ আলাদা, লিভারের কোষ আলাদা, কিডনির কোষ আলাদা। এটার কারন হলো আমাদের প্রত্যেক কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ডি.এন.এ এর জিন একেক কোষে একেক ভাবে সক্রিয় হয় আর এই তথ্য আগে থেকেই প্রত্যেক কষে বিদ্যমান। এই তথ্য তাহলে কে দিল? এ থেকেই জীবনের উৎপত্তির পিছনে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্ব বোঝা যায়। বুঝলে?”
আদনান কোনো কথা বললো না। ফাতিমা আবার বলতে শুরু করল, “আচ্ছা তুমি শেয়ারে যে সফটওয়্যার ফার্মটা চালাও, সেখানে নিশ্চয়ই কিছু প্রোগ্রামার কাজ করে। তাই না?”
“হুম।” মাথা নাড়িয়ে বললো আদনান।
ফাতিমা বললো, “আচ্ছা। তাহলে সেই প্রোগ্রামার ঠিকই জানে যে, কীভাবে কোডিং করলে সফটওয়্যারে কেমন ইফেক্ট আসবে। এখন, তুমি যদি একটি বাচ্চাকে সেখানে কোডিং করতে বসিয়ে দাও, যার কোনো বুদ্ধি নেই, তাহলে কী-বোর্ড চেপে অনেক অক্ষর সে তৈরি করতে পারবে। কিন্তু তুমি সফটওয়্যারে যেমন ইফেক্ট চাচ্ছো, সেটা পাবে না। তাহলে আমাদের ডি.এন.এ’র এত পরিমাণ তথ্যের সুনির্দিষ্ট কোডিং কি প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং এলোমেলো মিউটেশানের ফলে বাহ্যিক প্রভাব ছাড়াই নিজ থেকে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব? যদি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হও, তাহলে এখানে কোনো সম্ভাবনাই তুমি দেখবে না।”
ফাতিমাকে থামিয়ে আদনান বললো, “কিন্তু আমাদের সাথে শিম্পাঞ্জির ডি.এন.এ’র ৯৬ শতাংশ বেস পেয়ারের মিল পাওয়া যায়।[11] এটা কি প্রমাণ করে না যে, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে?”
ফাতিমা হেসে দিয়ে বললো, “তাহলে তো কলা এবং তোমার পূর্বপুরুষও এক। কারণ কলার সাথেও তোমার অনেক জেনেটিক মিল। হা হা। আসলে, এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে! মানুষের ডি.এন.এ’তে ৩.২ বিলিয়ন বেস পেয়ার আছে। এর চার শতাংশ হয় ১২ কোটি ৮০ লক্ষ। তাদের সাথে আমাদের ডি.এন.এ’র বেস পেয়ারে মাত্র ৪ শতাংশ পার্থক্যের কারণে সম্পূর্ণ জিনোমে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ বেস পেয়ারের পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। এত বিপুল পরিমাণ পার্থক্য কি প্রজাতি আলাদা হবার জন্য যথেষ্ট নয়?”
আদনান বললো, “ও, এভাবে তো চিন্তা করিনি!”
ফাতিমা বললো, “তোমাকে তাহলে অন্যভাবে চিন্তা করাই। কলার সাথে মানুষের জেনেটিক সিমিলারিটি ৬০ শতাংশ।[১২] কিন্তু কলার সাথে আমাদের কিছু কি মেলে? যদি জেনেটিক সিমিলারিটি একই পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি হবার প্রমাণ বহন করে, তাহলে আমাদের সাথে কলার ৬০ শতাংশ মিল থাকার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা ১ শতাংশ’ও নয়। তাহলে কেন এমন হলো? জানতে চাও?”
আদনান বললো, “বলো, শুনি!”
ফাতিমা একটু নড়েচড়ে বসল। তারপর বললো, “আসলে সম্পূর্ণ জিনোমের মাত্র ১.৫ শতাংশ প্রোটিন এনকোড করে। অবশিষ্ট ৯৮.৫ শতাংশই কোনো প্রোটিন কোড করে না।[১৩] এই অংশকে আগে ‘ডার্ক ম্যাটার অব দ্য জিনোম’ বা ‘জাঙ্ক ডি.এন.এ’ বলা হতো। এবং এই ‘জাঙ্ক ডি.এন.এ’কে বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে প্রচার করা হতো। কিন্তু ২০০৭ সালে বিবর্তনবাদীদের হতাশ করে আবিষ্কৃত হলো, ‘জাঙ্ক ডি.এন.এ’র কাজ। বিভিন্ন প্রাণীর ডি.এন.এ’র বেস পেয়ারগুলোতে প্রচুর মিল পাওয়া গেলেও, এই ‘জাঙ্ক ডি.এন.এ’ বা ডি.এন.এ’র নন-কোডিং অংশই মূলত এত বৈচিত্র্যের কারণ। এই নন-কোডিং অংশই জিন এক্সপ্রেশানে সহায়তা করে এবং আর্কিটেকচারাল প্ল্যানিং করে।[১৪] এখন বুঝেছো যে, শিম্পাঞ্জির সাথে ৯৬ শতাংশ মিল থাকলেও আমরা একে অপরের থেকে অনেক আলাদা?”
“আরো শুনতে চাও?” আদনানকে চুপ থাকতে দেখে আবার প্রশ্ন করলো ফাতিমা।
আদনান বললো, “তুমি আর কী জানো?”
ফাতিমা বললো, “আরো অনেক কিছুই জানি। তাহলে একটু জেনেটিক্স দিয়ে বিবর্তনবাদের অযৌক্তিকতা তুলে ধরি। ‘এপ’ জাতীয় প্রাণীর একটি কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮ এবং মানুষের ৪৬। বিবর্তনবাদীদের ধারণা যে, এপ জাতীয় প্রাণীর ১২ এবং ১৩ নং ক্রোমোজোম একত্রিত হয়ে হয়ে মানুষের ২ নং ক্রোমোজোম হয়েছে। এজন্য শিম্পাঞ্জির ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮ থেকেছে এবং মানুষে কমে ৪৬ হয়েছে। এটি দিয়ে তারা কমন অ্যানসেস্ট্রি প্রমাণ করতে চাইলো। কিন্তু পরবর্তীতে সেটাও ভুল প্রমাণিত হলো।[১৫] যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেয়া হয় যে, কোনো এক সময় ফিউশানের মাধ্যমে ‘এপ’-এর ২৪ জোড়া ক্রোমোজোম ফিউজড হয়ে মানুষে ২৩ জোড়ায় পরিণত হয়েছে, তাহলে এরকম উদাহরণ প্রকৃতিতে এখনো অনেক থাকার কথা। অর্থাৎ, বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় থাকা একই স্পিশিসের ভিন্ন ভিন্ন সদস্যের মধ্যে প্রায়ই ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ক্রোমোজোম পাওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এখন পর্যন্ত প্রকৃতিতে একই স্পিশিসের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ক্রোমোজোম সংখ্যার ‘সুস্থ-সবল’ প্রাণীর উদাহরণ একটিও পাওয়া যায় না। আর যদি অসুস্থ স্পিশিস জন্মায়, তাহলে ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’-এর নীতি অনুযায়ী সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রজাতি আর সামনে আগাবে না। সো স্যাড!”
আদনান এবারও চুপ। ফাতিমাই আবার বললো, “আচ্ছা, তর্কের খাতিরে আবারো ধরে নিলাম যে, কোনো এক সময় ‘এপ’-এর ২৪ জোড়া ক্রোমোজোম ২৩ জোড়ায় পরিণত হয়েছিলো। এখন ধরো, একটি মাদী ‘এপ’ এর সাথে একজন পুরুষ মানুষের বিয়ে হলো। এখন ‘এপ’-মায়ের গর্ভে ‘24 X/X’ ডিম্বাণুর সাথে যখন ‘এপ’ থেকে বিবর্তিত পুরুষ মানুষের ‘23 X/Y’ শুক্রাণুর মিলন হবে, তখন কি এদের বাচ্চা সুস্থ হবে? এম্ব্রায়োলজি ও জেনেটিক্স বলছে তা কখনোই হবে না। কেননা, প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা স্পিশিসের মধ্যে আছে জেনেটিক ব্যারিয়ার, যার কারণে এক স্পিশিসের সাথে অন্য স্পিশিসের হাইব্রিড করা যায় না। কারণ তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাইগোটের গর্ভপাত ঘটে। কিছু কিছু প্রাণীতে হাইব্রিডাইজেশান করা গেলেও স্বাভাবিক কোনো প্রাণী জন্মায় না। তখন তাদের প্রজনন ক্ষমতাই থাকে না।[১৬] তাহলে স্পিশিস সামনে আগাবে কী করে?”
আদনান বললো, “তাহলে একই প্রজাতিতে ভিন্ন ক্রোমোজোম সংখ্যার প্রাণী কি মোটেই পাওয়া যায় না?”
ফাতিমা বললো, “পাওয়া যায়। তবে সেগুলো সুস্থ হয় না। সবক্ষেত্রেই তারা রোগাক্রান্ত হয় ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে। যেমন, মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টি বা ২৩ জোড়া। প্রতিটি জোড়াকে এক থেকে শুরু করে ২৩ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়। যদি শুধু ১টি ক্রোমোজোম বা একটির কিছু অংশ গিয়ে অন্য ক্রোমোজোমে যোগ হয়, তাহলে বেশ কয়েকটি রোগ হতে পারে। তার মধ্যে ডাউন সিন্ড্রোম, পাটাউ সিন্ড্রোম, এডওয়ার্ডস সিনড্রোম, ট্রাইসোমি, মনোসোমি ইত্যাদি।[১৭] এগুলো সবই ভয়াবহ জেনেটিক রোগ। সুতরাং, এসব অসুস্থ স্পিশিস ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’-এর নীতি অনুযায়ী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রজাতি আর সামনে আগাবে না। সুতরাং, আমরা এবং বর্তমানে উপস্থিত বানর জাতীয় প্রাণীগুলো একই পূর্বপূরুষ থেকে আগত – এই চিন্তা মাথা থেকে আউট করে ফেলো।”[১৮]
আরো কিছুক্ষণ নীরবতার পর ফাতিমা বললো, “এখন আমি মলিকুলার বায়োলজি থেকে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের পক্ষে কিছু প্রমাণ দিই?”
“না থাক! আর শুনতে ইচ্ছা করছে না।” এই বলে আদনান অনেকক্ষণ ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে থাকলো। তারপরে শেষ অস্ত্র ছাড়লো। বললো, “আচ্ছা, তাহলে তুমি কি আমাকে এমন কিছু পিয়ার রিভিউড জার্নালের আর্টিকেল দেখাতে পারবে, যেখানে ডারউইনিজমকে রিফিউট করেছে এবং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে সাপোর্ট করেছে?”
ফাতিমা বললো, “আদনান, এটা কিন্তু লজিক্যাল ফ্যালাসি। আমি তোমাকে যেখান থেকেই তথ্য দেইনা কেনো, আমার দেওয়া তথ্যগুলো যদি সঠিক হয়, তাহলেই তোমার মেনে নেওয়া উচিত। পারলে তুমি আমার দেওয়া তথ্যগুলোর বিপরীতে তথ্য নিয়ে এসো। কিন্তু সেটা না করে তুমি জার্নালের রেফারেন্স কেনো চাও?”
আদনান বললো, “আমি ওগুলো কিছু বুঝতে চাচ্ছিনা। তুমি আমাকে জার্নালের আর্টিকেল দাও!”
ফাতিমা বললো, “আলোচনায় না পেরে উঠলে এটাই তো তোমাদের শেষ অস্ত্র! ঠিকাছে, তাহলে কাল তোমাকে জার্নালের আর্টিকেল প্রিন্ট করে এনে দিবো, ইনশা-আল্লাহ।[১৯] এখন বলো তো, আমার এত বকবকানির পরও কি তোমার মনে হয় না যে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীজগৎসহ মানুষের উৎপত্তির পিছনে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত রয়েছে? যেকোনো বিবেকবান মানুষই সেটা স্বীকার করবে। তাই আমরাও সেই সত্ত্বাকে বিশ্বাস করি। এবং, তাঁকে ‘আল্লাহ’ নামে ডাকি। যিনি এই বিশ্বজগতের অধিপতি। সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। কোনো কিছুই নিজে নিজে হয় না তাঁর হুকুম ছাড়া। তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। কাউকে জন্ম দেননি বা কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।”
এতটুকু বলে ফাতিমা থেমে গেলো। তখন আদনান বললো, “এটা সূরা এখলাস না?”
ফাতিমা বললো, “বাহ! ভালোই জানো দেখছি। এখলাস না, সূরা ইখলাস। তাহলে আদনান, তুমি কি আজ থেকে এই এলোমেলোভাবে নিজে নিজে হয়ে যাওয়া রূপকথাতে আর বিশ্বাস করো? নাকি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনে বিশ্বাস করো?”
“এখনই না। জার্নালের রিসার্চ পেপারগুলো দাও। তারপর ভেবে দেখবো। এবং আমি আরো অনেক কিছুই জানি। তাই আমার আরো অনেক প্রশ্ন আছে। পরে তোমার সাথে আলোচনা করবো। এখন ঘুমাই। সকালে অফিস আছে।” এই বলে আদনান শুয়ে পড়লো।
পাশের মসজিদগুলো থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছিলো। প্রতিদিন কতবার মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকা হয়! কিন্তু কতজনের সৌভাগ্য হয় নিজের রবের ডাকে সাড়া দেবার?
[বিঃদ্রঃ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এরকম ঘটনা অবাস্তব নয়। কিন্তু ইসলামিক শরী’য়াহ অনুযায়ী একজনের কুফরি প্রকাশ পাওয়ার পরে তার সাথে সংসার করা জায়িয নয়। এগুলো প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিছক কিছু গল্প। আদর্শিকভাবে কিছু এখান থেকে গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হলো। আমাদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু যেন শুধু গল্পের প্রধান তথ্যগুলো নিয়েই থাকে।
বিজ্ঞান এবং বিবর্তন সম্পর্কে যাদের ধারণা কম, তাদের এই গল্পের অনেক কিছুই বোধগম্য না-ও হতে পারে। কারণ, এ ব্যাপারে পড়াশোনা না থাকলে অনেক টার্ম বোধগম্য হবে না। লেখাটিতে বিবর্তন সংক্রান্ত কিছু শব্দ ইংরেজিতে ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে এসমস্ত শব্দকে বাংলায় অনুবাদ করলে মূলভাব হারিয়ে যায়। তারপরেও ধীরেসুস্থে পড়লে ইনশা-আল্লাহ কিছুটা হলেও বুঝতে সহজ হবে। এমন অনেক সাইন্টিফিক আর্টিকেল রয়েছে, যেগুলো বিবর্তনকে সাপোর্ট করে। তারা বস্তুবাদে ডুবে থাকার কারণে বস্তুপ্রেম থকে বেরিয়ে আসতে পারে না। যেভাবেই হোক, সৃষ্টির বস্তুবাদী ব্যাখ্যা তারা দাঁড় করাবেই। এজন্যই বিজ্ঞানের বিভিন্ন নতুন শাখা তৈরি হবার সাথে সাথে যখন বিবর্তন প্রশ্নের মুখে পড়ে, তখনই তারা বারবার নতুন নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। ম্যাক্রো ইভোলিউশানের কোনো এক্সপেরিমেন্টাল এভিডেন্স নেই। এবং কেউ কোনোদিন এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি। সুতরাং, আমরা একে ফ্যাক্ট বলতে পারছি না। সমস্ত জ্ঞান তো আল্লাহ তা’আলারই কাছে। লেখাটিতে যা কিছু সঠিক, তার সবটুকুই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে। আর যা কিছু ভুল, তার সবটুকুই আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে।]
তথ্যসূত্র ও গ্রন্থাবলি:
[১] https://lamarcksevolution.com/evolution-an-introduction/
[২] https://www.darwins-theory-of-evolution.com/
[২.১] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2286568/
[৩]https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0022283604007624
Probability’s Nature and Nature’s Probability: A Call to Scientific Integrity; By Dr Donald E. Johnson
[৪] https://articles.mercola.com/sites/articles/archive/2013/07/29/pcsk9-cholesterol-drug.aspx
[৫] Davidson’s principles and Practice Of Medicine; 22th edition; page: 1032
[৬] https://en.wikipedia.org/wiki/Genetic_disorder
[৭] Probability’s Nature and Nature’s Probability: A Call to Scientific Integrity; By Dr Donald E. Johnson; page: 54
[৮] উল্টো নির্ণয়, মোহাম্মদ তোয়াহা আকবর; অধ্যায়: নানান রূপের ইভোলিউশান; পৃষ্ঠা: ৪৬-৫২
[৯] Darwin’s Doubt: The Explosive Origin of Animal Life and the Case for Intelligent Design By Stephen C Mayer; Page: 16,121(EPUB Version)
[১০] Darwin’s Doubt: The Explosive Origin of Animal Life and the Case for Intelligent Design By Stephen C Mayer; Page: 21(EPUB Version)
[১১] https://www.genome.gov/15515096/2005-release-new-genome-comparison-finds-chimps-humans-very-similar-at-dna-level/
[১২]https://www.getscience.com/content/how-genetically-related-are-we-bananas
[১৩] Robin’s and Cortan Pathologic Basis of Disease by Kumar, Abbas, Aster; South Asian Edition; Volume: 01; page: 01
[১৪] Robin’s and Cortan Pathologic Basis of Disease by Kumar, Abbas, Aster; South Asian Edition; Volume: 01; page: 02
[১৫].https://www.researchgate.net/publication/271528587_Alleged_Human_Chromosome_2_Fusion_Site_Encodes_an_Active_DNA_Binding_Domain_Inside_a_Complex_and_Highly_Expressed_Gene-Negating_Fusion
[১৬] https://en.wikipedia.org/wiki/Hybrid_(biology)
[১৭] Langman’s medical embryology By T.W. Sladder(9th Edition); Chapter: 02; Page: 21-11
[১৮] জেনেটিক্সের আলোচনাটুকু সদালাপ ব্লগের শামসুল আরেফিন ভাইয়ের লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা।
[১৯]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3246854/
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21243963
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/15321723
http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0019103513000791
http://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0002246
http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1571064506000224
http://www.annualreviews.org/doi/abs/10.1146/annurev.genet.36.040202.092802?journalCode=genet &
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2217542/
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।