প্রতি রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফাতিমা আমাকে বিষয়ভিত্তিক কিছু হাদিস পড়ে শোনায়। আজ শুনছিলাম অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে। প্রাচী বারবার আমাদের রুমে ঢুকছিলো আর বের হচ্ছিলো। বিষয়টি লক্ষ করে আমি ওকে ডাক দিলাম। বললাম, “কীরে, কী হয়েছে তোর? একবার আসছিস আবার যাচ্ছিস! ঘটনা কী?”
-“তেমন কিছু না।” প্রাচীর উত্তর।
-“কিছু তো হয়েছে। নাহলে তো এভাবে ঘুরঘুর করতি না। কিছু বলবি?”
-“ফাতিমার সাথে কথা ছিলো।”
-“আচ্ছা, বসো এখানে। আর কয়েকটি হাদিস পড়ে তোমার কথা শুনছি।” বলে ফাতিমা আবার হাদিস পড়তে শুরু করলো।
হাদিস পড়ার সময় ফাতিমা খুবই মনোযোগী থাকে। এই সময়টুকু কোনোমতেই ও কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করে না। প্রাচী এসে ফাতিমার পিছনে বসে মোবাইল চাপতে লাগলো। আমি হাদিস শোনায় মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ বিভিন্ন হাদিস পড়ার পরে একটি সুন্দর হাদিস পড়ে ফাতিমা গ্রন্থটি বন্ধ করলো। হাদিসটি ছিলো, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো মুসলিম ভাইকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যায়, তাহলে তাহলে সে জান্নাতের একটি ঘরে প্রবেশ করবে।’[১] ভ্রাতৃত্বকে ইসলাম কত সুন্দরভাবে মূল্যায়ন করেছে! বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ প্রাচী প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা ফাতিমা, কাল তুমি বলেছিলে মোহাম্মদ কুষ্ঠ রোগীদের থেকে পালাতে বলেছে যেভাবে সিংহ দেখলে মানুষ পালায়। তাই তো?”
-“হুম, বলেছেন।”
-“কেন? কুষ্ঠরোগীদের দেখে এত ঘৃণা করার কী আছে?”
-“এতে ঘৃণার কী দেখলে?”
-“এখানে শুধু ঘৃণা নয়, চরম মানবতার লঙ্ঘন রয়েছে।”
-“তাই নাকি? তো কেন তোমার এমন মনে হলো?”
প্রাচী বললো, “কুষ্ঠ তো খুব একটা ছোঁয়াচে নয়। কিন্তু মহাজ্ঞানী মোহাম্মদ ছড়াচ্ছেন এর উল্টো বক্তব্য। বাস্তবেও আমরা প্রতিদিন যখন রাস্তায় বের হই, তখন কি চারপাশে কুষ্ঠ রোগীর ছড়াছড়ি দেখি? উত্তর হলো, না। তীব্রভাবে ছোঁয়াচে হলে সারা পৃথিবী কুষ্ঠরোগীতে ভরে যেত। তাহলে এভাবে গুরুত্বের সাথে তার থেকে পালাতে বলে ঘৃণা ছড়ানোর কী দরকার?”
ফাতিমা বললো, “খুব একটা ছোঁয়াচে নয়। কিন্তু ছোঁয়াচে তো? কুষ্ঠ রোগী থেকে জীবাণু আরেকজনের দেহে প্রবেশ করতে তো পারে, যারা তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। আর আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় রোগ তো হতেই পারে। তাই নয় কি?”
প্রাচী বললো, “হ্যাঁ, সেটা পারে। কিন্তু তাই বলে এভাবে বলে তো উনি মানবতার লঙ্ঘন করেছেন। কুষ্ঠ রোগীদের থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে তিনি কুষ্ঠ রোগীদের সমাজ থেকে বিতাড়িত বা একঘরে করে ফেলতে চেয়েছেন। কোথায় এই রোগীদের চিকিৎসা করে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কথা, সেখানে মোহাম্মদ তাদেরকে সমাজচ্যুত করে ফেলে তাদের সেই আমলে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এটা কি মানবতার লঙ্ঘন নয়?”
ফাতিমা একটু বিরক্তির সুরে প্রাচীর প্রশ্নের উত্তরে বললো, “আরে বাবা, ওই সময়ে তো কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা ছিলো না। তাহলে সেসময় কীভাবে এর ট্রিটমেন্ট দিবে? আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদকে ﷺ যতটুকু জানিয়েছেন, তিনি ততটুকুই জেনেছেন। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জানাননি। এজন্য তিনি এর চিকিৎসা জানতেন না। এই রোগ হলে আগে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। এজন্য এটা থেকে সতর্ক থাকতে বলা তো দোষের কিছু না!
ফাতিমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রাচী বললো, ‘ঠিকাছে, ট্রিটমেন্ট জানতো না বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে এভাবে সমাজ থেকে আলাদা করার পাঁয়তারা করা কি মানবতাবিরোধী নয়?”
-“তুমি শুধু একটি হাদিস পড়ে এসে মুহাম্মাদকে ﷺ দোষারোপ করছো। এটা কি তোমার ঠিক হচ্ছে?”
-কেন ঠিক হচ্ছে না? এদের সাথে মমতা দেখানোর কোনো কথা কি মোহাম্মদ বলেছে?”
-“হ্যাঁ, বলেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার এক কুষ্ঠরোগীকে কাছে ডেকে নিয়ে একসাথে খেয়েছেন এবং বলেছেন, ‘খাবার খাও। আমি আল্লাহ্র উপর ভরসা করছি এবং তাঁর উপর নির্ভর করছি।’[২] এবার কী বলবে?”
প্রাচী কিছুটা বিব্রত বোধ করলো। বললো, “এটা কী করে সম্ভব? নিজেই পালাতে বলে আবার নিজেই কাছে ডেকে নিয়েছেন? মোহাম্মদ তো তাহলে দুই কথা বলতো!”
ফাতিমা এতক্ষণ নরমালি কথা বলছিলো। এবার একটু নড়েচড়ে বসল। ছোট্ট একটি কাশি দিয়ে ফাতিমা বলা শুরু করলো, “তোমাকে তো কালই বললাম যে, সেই সময়ে আরবে কুষ্ঠরোগ নিয়ে অনেক রকম কুসংস্কার কাজ করতো। মানুষ মনে করতো এদের কাছে গেলেই তারা রোগাক্রান্ত হবে। পক্ষান্তরে রোগ সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা হলো, সব রোগের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আর বাহ্যিক কারণ শুধুমাত্র উসিলা। এছাড়া কিছু নয়।[৩] রোগের নিজের কোনো ক্ষমতা নেই, আল্লাহ তা’আলাই বিভিন্ন মাইক্রো-অর্গানিজমের মধ্যে সংক্রমণের ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই আল্লাহ্র ইচ্ছা ছাড়া এসব জিনিস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না। এজন্যই দেখা যায়, কোনো মহামারী কবলিত এলাকায় অনেক মানুষই সুস্থ থাকে। রাসূলুল্লাহ’র ﷺ আল্লাহ তা’আলার প্রতি ইয়াক্বিন শক্ত ছিলো। তিনি সম্পূর্ণই আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করে একসাথে খেয়েছেন। কিন্তু অনেকের আল্লাহ তা’আলার প্রতি ইয়াক্বিন শক্ত থাকে না। সেই ব্যক্তি যদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে তার আক্বিদা নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য তাদের সতর্ক থাকতে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের কুষ্ঠ রোগীদের থেকে পালাতে বলেছেন। এবং নিজেও অনেক সময় কুষ্ঠ রোগীর আনুগত্য দূর থেকে নিয়েছেন।[৪] এটা সাহাবাদের প্রাক্টিক্যালি শেখানোর জন্য। আর এই পালানো বলতে তো দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া নয়। এর অর্থ কাছে যেন না যাওয়া হয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। বুঝতে পেরেছো?”
প্রাচী চুপ করে কী যেন ভাবছে। নতুন প্রশ্ন খুঁজছে মনে হয়। প্রাচী উত্তর না দেওয়ায় ফাতিমা আবার বলা শুরু করলো, “প্রাচী, আরবে প্লেগ আর কুষ্ঠ রোগ নিয়ে যে ভয় কাজ করতো, সেটা বলার বাইরে। তাদের কাছে কেউ যেতই না। একঘরে করে রাখতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ বলেছেন, রোগ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। অর্থাৎ, রোগের নিজস্ব সংক্রমণ ক্ষমতা নেই। আল্লাহ রোগ সৃষ্টি করলেই রোগ হয়।[৫] এতে বিভিন্ন বস্তু বা ফ্যাক্টর বাহ্যিক কারণ অর্থাৎ ‘আসবাব’ হিসেবে থাকতেও পারে, আবার না-ও পারে।[৬] তারপরে নিজে কুষ্ঠ রোগীর সাথে খেয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাতে তাঁর মানবিকতাই প্রকাশ পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এরকম আশ্বাস না দিলে কেউ তাদের সেবাও করতো না। কেউ মরে গেলে কবর দিতেও যেত না। তাই এসব ক্ষেত্রে ইসলামি আক্বিদা অনুযায়ী কেউ যদি এই বিশ্বাসের উপর অটল থাকে যে, আল্লাহ তা’আলা রোগ না দিলে আমাকে কোনোকিছুই রোগাক্রান্ত করতে পারবে না, তাহলে তাদের সেবা শুশ্রূষা করতে সে এগিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং, এতে আরও মানবতার রক্ষা হয়েছে, লঙ্ঘন নয়। আর তোমার ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা পরিষ্কার হয়েছে। তুমি তোমার অন্তরকে আরও প্রশস্ত করো, তাহলে আর মেনে নিতে সমস্যা হবে না।”
“সেটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু মোহাম্মদ বলেছে, শুধুমাত্র বুধবারেই কুষ্ঠ রোগ হয়। এরকম কথার অসারতা আশা করি তোমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। রোগ তো যেকোনো দিনেই হতে পারে। এমন অবৈজ্ঞানিক কথা তো গ্রহণযোগ্য না! হা হা হা!” কালক্ষেপণ না করে দ্রুত পরের প্রশ্ন ছুঁড়লো প্রাচী।
ফাতিমা উত্তরে বললো, “যে হাদিসে বুধবারে কুষ্ঠরোগ ছড়ানোর কথা এসেছে, সেই হাদিসটি দ্বয়িফ অর্থাৎ দুর্বল। তুমি চাইলে সনদ চেক করতে পারো।[৭] সুতরাং, সেটি এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করার কিছু নেই। হা হা করে হেসে এখন নিজেই বোকা সাজলে!”
প্রাচীর মধ্যে ভাবের কোনো পরিবর্তন এলো না। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই আবার প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা, তাহলে মোহাম্মদ কুষ্ঠরোগীদের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছে কেন? এতে কি তাদের অবজ্ঞা করা হয় না?”
ফাতিমা হেসে দিয়ে দিয়ে বললো, “প্রাচী, তুমি না কালো ভূত। তোমার চেহারার দিকে তাকাতেই আমার অনেকসময় ভয় লাগে। মনে হয় চিৎকার করে পালিয়ে যাই!”
এরকম অবজ্ঞা করায় প্রাচী কষ্ট পেয়েছে মনে হলো। কাঁদো কাঁদো সুরে বললো, “ভাইয়া, দেখছো! ফাতিমা আমাকে কী বললো? আমাকে নাকি ভূতের মতো দেখতে?”
ফাতিমার এমন কথায় আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু ফাতিমা তো এভাবে কাউকে কষ্ট দেয় না। মুখ কালো করে জিজ্ঞাসা করলাম, “ফাতিমা, একেকজনের চেহারা তো একেক রকম হতেই পারে। তাই বলে কাউকে এভাবে কষ্ট দেওয়া ঠিক না!”
ফাতিমা প্রাচীকে জিজ্ঞাসা করলো, “কষ্ট পেয়েছো?”
প্রাচীর চোখ দুটি পানিতে ছলছল করছে। আসলেই মন খারাপ করেছে। দ্রুত ফ্রিজ থেকে একটি পার্ক চকলেট এনে দিলাম। খেয়ে যদি একটু মন ভালো হয়। এসে দেখি ফাতিমা ফোনে কী যেন খুঁজছে। কিছুক্ষণ পরে প্রাচীকে ডেকে এই ছবিটি দেখিয়ে বললো, “দেখো তো প্রাচী, ইনাকে কেমন লাগে।”
মেয়েরা এমনিতেই একটু কুৎসিত ছবি দেখে ভয় পায়। তাই ছবিটি দেখে প্রাচী “অ্যাঁ” বলে চোখ বন্ধ করে চিৎকার শুরু করলো। এবং বলতে থাকলো, “এগুলো সরাও আমার সামনে থেকে। আমি এগুলো দেখতে পারি না।”
আমি বললাম “আরে এত ভয় পাবার কী আছে? এদিকে তাকা। তোদের বিতর্ক তো এখনো শেষ হয়নি।”
প্রাচী বললো, “আগে ওকে ওই ছবি আমার চোখের সামনে থেকে সরাতে বলো!”
ফাতিমাকে মোবাইল সরাতে বললে ও সরিয়ে নিলো। তারপর বললো, “আচ্ছা প্রাচী, তুমি যদি এই লোকের সামনে থাকা অবস্থায় এমন করতে, তাহলে এই লোকটা কষ্ট পেতো না?”
-“হ্যাঁ, মনে হয় পেতো।”
-“তুমি যেমন তোমাকে কুৎসিত বলায় কষ্ট পেয়েছো, এদের কাছেও ব্যাপারটি কষ্টকর ছিলো। এই লোকটি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। এরকম চেহারা নিয়ে বাইরে বের হলে অনেকেই তাকে দেখে তোমার মতো রিঅ্যাক্ট করতো। অনেকে খারাপ কথা বলতো। কারণ সাধারণ লোকের কাছেও তার চেহারা দেখতে খারাপ লাগতো। তখন তার কাছে ব্যাপারটি মোটেও সুখকর হতো না। তখন সে নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা মনে করতো। হীনমন্যতায় ভুগতো। একা একা কষ্ট পেতো। এজন্য রাসূলুল্লাহ হয়তো তাদের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন, যাতে সে অন্যকেও কষ্ট না দেয় এবং নিজেও কষ্টভোগ না করে। প্রাচী, আর কত? এভাবে ব্লগ পড়ে ইসলামের ভুল উপস্থাপনগুলো বিনা যাচাইয়ে গিলে এসে অপপ্রচার করে বেড়াও! নিজের কাছে কি খারাপ লাগে না? মুসলিম পরিবারে জন্মে ইসলাম সম্পর্কে জানার এত সুযোগ-সুবিধা থাকতেও যদি বাতিল পন্থায় ইসলামকে জানো, তাহলে তোমাকে আমি দুর্ভাগাই বলবো। একটু নিবিষ্ট মনে চিন্তা করো তো! যেটা করছো, তার আউটকাম কী।”
আজ অনেক অস্ত্র নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সব ফিউজড। ফাতিমার কথাগুলো শুনে চুপ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরে অনেকটা নরম কণ্ঠে প্রাচী বললো, “আপাতত আমি আর কিছু জানি না। তবে তোমার প্রশংসা করবো আজ। মায়ের মুখে সব রিলিজিয়নের ব্যাপারেই শুনেছি। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকেই তাদের ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে বিপদে ফেলেছি। অনেকে এগুলো সহ্য না করতে পেরে ওভার রিঅ্যাক্ট করতো। কিন্তু এক্ষেত্রে তুমি একটু ব্যতিক্রম। ইসলামের উপর তোমার খুবই সাজানো গোছানো একটা কনসেপ্ট আছে। এজন্য তোমাকে সাধুবাদ জানাই। আমি একটু এমনই। কখনো হারতে পছন্দ করি না। এজন্য তোমার সাথে তর্কে জেতার জন্য বারবার সুযোগ খুঁজেছি। কিন্তু বারবার হেরে গিয়েছি। তোমার চিন্তার বিশুদ্ধতা আমাকে ইসলাম নিয়ে ভাবতে অনুপ্রেরণা দিলো। এতদিন মায়ের শেখানো জিনিস বিনা কথায় বিলিভ করতাম। এখন থেকে এই বিষয়গুলোতে আমি পড়াশোনা করবো। কোনো সমস্যা হলে অজ্ঞদের কাছে না গিয়ে বিজ্ঞ লোকের থেকে জেনে নিবো। কোনোদিন কোনো কথায় বেয়াদবি করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।”
-“সকল প্রশংসা এই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ যাকে পথ দেখান, সে-ই পথ পায়। তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ সঠিক পথ দেখাতে পারে না। অন্ধকার আর আলো কি এক? না, কক্ষনো না। আলো এমন জিনিস যা চারিদিক আলোকিত করে। তুমি ভালো করে পড়াশোনা করো। আল্লাহ চাইলে সঠিক পথ পাবে।” বলে ঝলমলে চোখে ফাতিমা প্রাচীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
পাশে বসে অবুঝদের মায়াভরা কণ্ঠে বোঝানোর এক মনোরম দৃশ্য দেখতে পেলাম। আর কি সুযোগ হবে এমন? নিজের প্রশংসায় ফাতিমার খুশি হবার কথা না। কিন্তু ঘটনা এবার ঘটলো তার উল্টো! কষ্টে অর্জিত সামান্য জ্ঞান প্রচারে যদি কারো চিন্তার দরজা খুলে যায়, সেটিই তো ওর পাওয়া। আর উত্তম প্রতিদান তো আল্লাহ তা’আলার কাছেই।
[ইসলামিক শরী’য়াহ অনুযায়ী কোনো মুসলিমের জন্য তার ফুফাতো বোন এবং কোনো মুসলিমাহ’র জন্য তার ফুফাতো ভাই মাহরাম নয়। এদের প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের পর্দা করা ফরজ। এবং কথা বলার সময় হিজাব মেইন্টেইন করা জরুরী। এখানে এগুলো কিছুই হয়নি। এক্ষেত্রেও গল্পটি শুধুমাত্র একটি গল্প হিসেবেই পড়ার অনুরোধ রইলো। সমস্ত জ্ঞান তো আল্লাহ তা’আলার কাছেই। লেখাটিতে যা কিছু ভুল, তা আমার ও শয়তানের পক্ষ হতে এবং যা কিছু কল্যাণ, তার সবটুকুই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে।]
[১] আল-আদাবুল মুফরাদ (ইমাম বুখারি); ইসলামিক ফাউন্ডেশন; পৃষ্ঠা: ২৪৩
[২] সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩৫৪২; জামে তিরমিজি, হাদিস নং-১৮১৭
[আবূ ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি গারীব বা দূর্বল। আমরা শুধু ইউনুস ইবনু মুহাম্মাদ-আল-মুফাযযাল ইবনু ফাযালার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমেই এ প্রসঙ্গে জেনেছি। মুফাযযাল ইবনু ফাযালা (রহঃ) বসরার একজন শাইখ (হাদীসের উস্তাদ)। আর অপর একজন আল-মুফাযযাল ইবনু ফাযালা আছেন তিনিও বসরার শাইখ এবং তিনি বসরার এই শাইখের চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। শুবাও এ হাদীসটি হাবীব ইবনুশ শহীদ-ইবনু বুরাইদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং তাতে আছে, উমার (রাঃ) জনৈক কুষ্ঠ রোগীর হাত ধরলেন…..। আমার মতে শুবার হাদীসটিই অনেক বেশী সুপ্রমাণিত ও সহীহ।(তিরমিযির টীকা)]
শরহে আকীদাহ আত-তাওহীদ গ্রন্থেও উক্ত হাদিস থেকে দলিল দেওয়া হয়েছে। হাদিসের সনদে দূর্বলতা থাকলেও সম্ভবত ঘটনার নির্ভরযোগ্যতা রয়েছে। আল্লাহু ‘আলাম।
[৩] ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ (মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন); অধ্যায়: রোগ সংক্রামণ সম্পর্কে আকিদা; পৃষ্ঠা: ১৭৮-১৮১।
সহিহ বুখারি (বাংলা অর্থ এবং ব্যাখ্যা: মাওলানা আজিজুল হক ); ১৩ম সংস্করণ; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড; খণ্ড: ০৬; পৃষ্ঠা: ২২৩-২৩১।
[৪] সুনানে ইবনে মাজাহ; অধ্যায়: চিকিৎসা; হাদিস নং- ৩৫৪৪ (ihadis.com)
[৫] Sharh Kitaab at-Tawheed, 80/2
[৬] সহিহ বুখারি (বাংলা অর্থ এবং ব্যাখ্যা: মাওলানা আজিজুল হক ); ১৩ম সংস্করণ; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড; খণ্ড: ০৬; পৃষ্ঠা: ২২৪-২২৫
[৭] Sunan Ibn Majah (Dar As-Salam Publication); Volume: 04; Book: 31; Chapter: Medicine; Hadith no:3489,3498
E-Link (Please search between 45-55 no. Hadith): https://sunnah.com/ibnmajah/31
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।