আজকে একটা ছোট গল্প বলবো। নিজের ভাষায়, কিন্তু সত্য ঘটনার আলোকে। তার আগে কিছু প্রশ্ন করবো। প্রশ্নগুলো শোনার সাথে সাথে কিছুক্ষণ সময় মনে মনে উত্তর বের করার চেষ্টা করবেন। এরপর বাকি লেখাটা পড়বেন।
প্রশ্ন ১: আপনি কি আল্লাহকে ভালোবাসেন?
প্রশ্ন ২: এ ভালোবাসার জন্যে আপনি কী করেছেন?
প্রশ্ন ৩: আপনি কি বিয়ে করতে চান?
প্রশ্ন ৪: আপনি কেন বিয়ে করতে চান?
আমার লেখাটা ভালোবাসা নিয়ে। গল্পটাও ভালোবাসার। আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা নিয়ে, মানব মানবীর ভালোবাসা নিয়ে।
গল্প শুরু …
একটা ছেলে ছিলো। বাবা মায়ের একান্ত অনুগত। জীবনের একটা বড় সময় সে কষ্ট করেছে। দারিদ্র্যের কারণে প্রবাসে গিয়েছে। এক সময় সে অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়। তার বাবা ছিলো মাসজিদের ইমাম। বাবাকে সে বিয়ের কথা বলে। জীবনের এতগুলো বছর একাকীত্বে থাকার পর এবার সে বিয়ে করতে চাইছিলো। কিন্তু বাবার প্রতি তার এতটা আস্থা ছিল যে সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাবাকেই দেয় যেন তিনি একজন দ্বীনদার স্ত্রী খুঁজে বের করেন। এমনকি সে এটাও বলে দেয় যে বিয়ের আগে হবু স্ত্রীকে দেখারও তার প্রয়োজন নেই ।
অবশেষে বাবা পাত্রী খুঁজে বের করলেন। ছেলে দেশে ফিরলো বিয়ের জন্যে। কিন্তু বিয়ের রাতে ঘটলো ভিন্ন এক ঘটনা। স্বামী যখন স্ত্রীর মুখ দর্শনের জন্যে ঢাকানো মুখ থেকে পর্দাটা সরিয়ে নিলো তখন যেন তার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলো। “আমার বাবা আমার জন্যে এত অসুন্দর একটা মেয়ে ঠিক করলো?? এত বছর অপেক্ষার পর আমি এই পেলাম বাবার কাছে থেকে?”
প্রচণ্ড মানসিক দুঃখে ও অস্থিরতায় সে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘরে আসা নতুন মেয়েটি জানতো তাকে পছন্দ হয়নি তার স্বামীর। রাতের শেষভাগে সে স্বামীর গা ধরে নাড়া দিলো উঠানোর জন্য। স্বামী উঠতে চাইছিলো না। সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে উঠিয়ে দিলো।
ঘুম থেকে উঠার পর সে স্বামীকে বললো, “আমি জানি আপনি কতটা হতাশ এবং আমি এ-ও জানি যে আমি মোটেই সুন্দর নই। কিন্তু আপনি জানেন কি? আমি কেবল একটা কারণেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। আমি তো রাসূল (ﷺ) এর সেই হাদীসটিকে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছিলাম যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই পুরুষের উপর রহম করুন যে রাতে উঠে (সালাতের জন্য) এবং তার স্ত্রীকেও উঠিয়ে দেয়। যদি স্ত্রী না উঠতে চায়, তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে উঠায়। এবং আল্লাহ রহম সেই নারীর উপর যে রাতে উঠে (তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য) এবং তার স্বামীকেও উঠিয়ে দেয়। যদি সে না উঠতে চায় তবে তার মুখে পানি ছিটিয়ে উঠায়।’”
এ কথা বলার পর মেয়েটি বললো, “আল্লাহর কসম, আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে আপনি আমার ইচ্ছা পূরণ হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি আল্লাহর রাসূলের হাদীসটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকলেও মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে যেতাম এ ভেবে যে কেউ হয়তো আমাকে বিয়েই করবে না। আপনি কি এখন হাদীসের বাকি অংশ পুরণে আমায় সাহায্য করবেন? আপনার ইমামতিতে আমি সালাত পড়বো।”
অতপর ছেলেটি উঠলো। ওযু করে সালাতের ইমামতি করলো পেছনে তার নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে।
ছেলেটি পরে একদিন আল্লাহর কসম করে বলেছিলো, “তাহাজ্জুদ শেষ করে যখন আমি তার মুখের দিকে তাকাই আমার যেন মনে হচ্ছিল আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারীটার সামনে বসে আছি।”
গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু গল্পটি থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। হে আমার ভাইয়েরা, হে আমার বোনেরা। জগতের মূল উদ্দেশ্য তো রাব্বুল ইজ্জাত ওয়াল জালাল কে ভালোবাসা। আপনার সঙ্গী তো কেবল সেই ভালোবাসায় আপনাকে সাহায্যই করতে পারে, এর বেশি নয়। আপনি যতদিন একা, আছেন ততদিন একাই ভালোবেসে যেতে হবে আল্লাহকে।
এবার শুরুতে যে প্রশ্ন করেছিলাম তাতে আসি। আপনি কি আসলেও আল্লাহকে ভালোবাসেন? আমরা যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করে থাকি, তবে আমাদের যাচাই করে দেখা উচিত কতদিন আমরা রাতের নির্জনে উঠে আল্লাহর সাথে কথা বলেছি।
তাহাজ্জুদ নিয়ে যদি আপনি স্কলারদের কথা শোনেন, তবে দেখবেন অধিকাংশই ভালোবাসার কথা নিয়ে আসছেন। আপনি যদি তাহাজ্জুদ না-ই পড়েন তবে আল্লাহকে ভালোবাসার কথা একটা ডাহা মিথ্যা- এটাই সবার এক কথা। কারণ আমরা যাকে ভালোবাসি, তাদের সাথে সময় কাটাতে আমাদের ভালো লাগে। সাইকোলজিস্টরা বলেন রাতের শেষ অংশ হচ্ছে স্পিরিচুয়ালিটির সময়। এ সময় মানুষ তাদের আবেগ ইমোশনগুলো শেয়ার করতে চায়। তাই মুমিন বান্দার ভালোবাসার জন্যেও আল্লাহ এ সময়টাই চয়ন করে দিয়েছেন। সূরা মুযযাম্মিলের ওই আয়াতগুলো খুব ভালো লাগে যেখানে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল তাঁর প্রিয় হাবিবকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “হে বস্ত্রাবৃত! গভীর রাতে দাড়ান কিছু অংশ বাদ দিয়ে। অর্ধরাত্রি অথবা তদাপেক্ষা কিছু কম। অথবা তদাপেক্ষা কিছু বেশি … [সূরা মুযযাম্মিল (৭৩): ১-৪]
এই যে শেষ লাইনে “তদপেক্ষা কিছু বেশি” এ দ্বারা কী বোঝায়? এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা। যেন তিনি তার প্রিয় হাবিবকে বলছেন, “আরো কিছুক্ষণ আমার নিকটে থাকলে আমি আরো খুশি।” ভালোবাসার মানুষকে কি সহজে যেতে দিতে মন চায়? আর এই ভালোবাসা যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার তো তুলনাই চলে না।
এই রাতের সালাত আপনাকে এক অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে। আল্লাহ কোরআনে বলেন, “রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়তো বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে উচ্চতম প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাবেন।” [সুরা বানি ইসরাইল (১৭): ৭৯]
আমরা কি চাই না এই প্রশংসিত স্থান? চাই না সেই সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা যিনি কোরআনে নিজেকে প্রেমময় হিসেবে বলেছেন? (দেখুন সূরা বুরুজ ১৪)।
অবশ্যই চাই। সেই রহমান রহীম ওয়াদুদ এর ভালোবাসা পেতে আমাদের রাতের সালাতে মনোযোগী হতে হবে। ঈমান ও আমলে সালেহর পথে এগিয়ে যেতে হবে। তখন আল্লাহই আমাদের ভালোবাসবেন। আল্লাহ বলেন, “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালোবাসা দেবেন।” [সূরা মারইয়াম (১৯): ৯৬]
আর এই ভালোবাসার নিদর্শন হচ্ছে রাত্রি জাগরণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায়…” [সূরা সাজদা (৩২): ১৬]
লেখার শুরুতে আরো দুটি প্রশ্ন করেছিলাম। সেই দুটোর উত্তর নিয়েও চিন্তা করবেন। শুধুমাত্র আল্লাহকে ভালোবাসার জন্যে যে সিদ্ধান্ত নিবেন, তা-ই কাজে লাগবে আর দুনিয়াবি সকল প্রাপ্তি ধুলোয় মিশে যাবে একদিন। এখনো কি সময় আসেনি ভেবে দেখার?
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।