পর্ব ০১ | পর্ব ০২ | পর্ব ০৩ | পর্ব ০৪

আর-রহমান এবং আর-রহিম আল্লাহর নামে

IIRT Arabic Intensive

সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের এই সিরিজের চতুর্থ এবং সর্বশেষ পর্বে উপনীত হওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। এই পর্বে আমরা আলোচনা করব সূরা কাহফে বর্ণিত যুল কারনাইনের ঘটনাটির মাঝে নিহিত শিক্ষা। এই ঘটনাটি সূরা কাহফের ৮৩-৯৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এই ঘটনার মূলকথা হলো- “ক্ষমতার পরীক্ষা”। এছাড়াও এর মাঝে আমাদের জন্য নিম্নোক্ত শিক্ষা রয়েছে-

(১) যুল কারনাইনের প্রকৃত পরিচয়ঃ

বর্তমান সময়ের অনেকেই বলে থাকেন আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট-ই হল কুরআনে বর্ণিত যুল কারনাইন। দার্শনিক ও শাফিঈ মাযহাবের উল্লেখযোগ্য ‘আলিম ফখরুদ্দিন আর রাযী সন্দেহাতীতভাবে এই মত পোষণ করেছেন। কিন্তু এটি সঠিক নয় কারণ কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি থেকে বোঝা যায় যুল কারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিম শাসক। অথচ স্বয়ং প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাস থেকে জানা যায় আলেক্সাণ্ডার ছিলেন একজন গ্রীক মূর্তিপূজারী। সুতরাং কিছুতেই যুল কারনাইন এবং আলেক্সান্ডার একই ব্যক্তি হতে পারেন না।

যুল কারনাইনের পরিচয় সম্পর্কে বিশুদ্ধ যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হলো- একদা আলী (রা) কে যুল কারনাইনের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, “তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন ন্যায়পরায়ণ বান্দা যিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করতেন। এই কাজের জন্য এক পর্যায়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। এতে তিনি মারা যান। আল্লাহ অলৌকিকভাবে তাঁকে জীবিত করেন। তিনি পুনরায় আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেওয়া শুরু করলে আবারও তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। এবার তিনি মারা যান। এজন্য তাঁকে বলা হয় যুল কারনাইন।”

এই বর্ণনাটি দুটি পৃথক এবং নির্ভরযোগ্য সনদে ইমাম তাবারী তাঁর তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। এও বলা হয়ে থাকে যে, তিনি যেহেতু পূর্ব এবং পশ্চিমে পৃথিবীর দুই শীর্ষ প্রান্ত ভ্রমণ করেছেন তাই তাঁকে যুল কারনাইন বলা হয়।

(২) যুল কারনাইনের ভ্রমণস্থলঃ

যুল কারনাইন ঠিক কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছিলেন সে সম্পর্কে কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ বলেন-

“চলতে চলতে যখন সে সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছলো তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলো… ” [সূরা কাহফ(১৮): ৮৬]

“এরপর সে চলতে লাগলো। চলতে চলতে এক পর্যায়ে সূর্যোদয়ের স্থানে পৌঁছলো এবং সেখানে এমন এক জাতিকে দেখতে পেলো সূর্য থেকে যাদের কোন আড়াল নেই।” [সূরা কাহফ(১৮): ৮৯-৯০]

“এরপর সে অন্য পথ ধরলো। চলতে চলতে দুই পর্বতের মধ্যবর্তী এমন এক স্থানে পৌঁছ্লো যেখানকার লোকেরা কোনো কথা বুঝতো না।” [সূরা কাহফ(১৮): ৯২-৯৩]

যুল কারনাইনের ভ্রমণ সম্পর্কে আল কুরতুবি সুন্দর একটি বাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন-

“তিনি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমে এবং পূর্বে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের স্থানে যাননি। কারণ, সূর্য সর্বদাই ঘূর্ণায়মান।… এখানে বোঝানো হয়েছে পূর্ব এবং পশ্চিমে যতদূর সভ্যতার অস্তিত্ব রয়েছে তিনি ততদূরই ভ্রমণ করেছেন।” [আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন]

অনেক মুফাসসির দাবী করেন, তিনি পশ্চিমে আটলান্টিক সমুদ্র পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন কারণ সমুদ্র পারাপারের নৌযান তখন ছিলো না। কিন্তু ইতিহাসবিদেরা বলেন, ফারাওদের সময়ই মিশর থেকে আমেরিকায় নৌপথে জাহাজে চলাচল করার ইতিহাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ওইসব মুফাসসিরদের দাবী সত্য নয়। হতে পারে পশ্চিমে তিনি আমেরিকা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন।

“…সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলো…” এখানে অনেকে কুরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল খুঁজে পায়। একটু সহজভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায়, সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত দেখার সময় যেমন মনে হয় সমুদ্রে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, এখানেও তা-ই বোঝানো হয়েছে। যুল কারনাইন এমন কোন জায়গা থেকেই সূর্যাস্ত দেখেছিলেন। সূর্য আক্ষরিক অর্থে কাদার মধ্যে ডুবে গেছে তা বোঝানো হয়নি এখানে।

পূর্ব-পশ্চিমে ভ্রমণ শেষে তিনি উত্তর দিকে যাত্রা করেন। ৯২ নং আয়াতে তাঁর উত্তরে যাত্রার কথাই বলা হয়েছে। মোট কথা, তিনি কোথায় ভ্রমণ করেছিলেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু কুরআন-হাদিসে বলা হয়নি, এ সম্পর্কিত সকল তথ্যই ‘আলিমগণের বাখ্যা। আমাদের উচিত তাঁর ভ্রমণস্থল নিয়ে অধিক গবেষণা না করে তাঁর ভ্রমণ থেকে শিক্ষা আহরণের দিকে মনোনিবেশ করা।

(৩) ক্ষমতা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষাঃ

মহান আল্লাহ বলেন-

“নিশ্চয়ই আমি তাকে জমিনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং সকল বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।” [সূরা কাহফ(১৮): ৮৪]

ইবনে কাসির (র) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ আল্লাহ তাঁকে সুবিশাল ক্ষমতা এবং একজন রাজার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই দিয়েছিলেন। সুতরাং পূর্ব থেকে পশ্চিমের সমস্ত রাজ্য, তাদের রাজাগণ এবং সমস্ত জাতির লোকেরা তাঁর অধীনস্থ হয়ে যায়। এই আয়াতের ‘সাবাব’ শব্দের বাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, এর অর্থ হল-‘জ্ঞান’। অর্থাৎ যুল কারনাইনকে বিপুল পরিমাণ জ্ঞানও আল্লাহ দান করেছিলেন। এত বিশাল ক্ষমতা ছিল মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য একটি পরীক্ষা।

(৪) মুসলিম শাসকদের করণীয়ঃ

কিন্তু এই বিশাল ক্ষমতা তাঁকে তাঁর করণীয় থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।  মহান আল্লাহ বলেন-

“… … আমি বলেছিলাম-“হে যুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারো অথবা তাদের সাথে দয়ার আচরণ করতে পারো”।” [সূরা কাহফ(১৮): ৮৬]

এটি ছিল মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য আরেক পরীক্ষা। তিনি বিজিত সাম্রাজ্যে আতঙ্ক বিস্তার করেন নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হন তা যাচাই করা ছিলো আল্লাহর উদ্দেশ্য। কিন্তু এই পরীক্ষায়ও যুল কারনাইন সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। ফাসিক রাজাদের মত তিনি প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ না নিয়ে বলেন-

“যে কেউ সীমালঙ্ঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিবো। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যাবে এবং তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দিবেন। তবে যে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদানস্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তার প্রতি আমি ব্যবহারে নম্র কথা বলবো।” [সূরা কাহফ(১৮): ৮৭-৮৮]

ক্বাতাদাহ (র) বলেন, এখানে সীমালঙ্ঘন (যুলম) বলতে কুফর এবং শির্ক বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা কুফর এবং শির্কের উপর অটল থাকবে একজন মুসলিম শাসক তাদের জন্য শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করবেন। তবে এ থেকে বলা যাবে না যে, অমুসলিমদেরকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে হবে কিংবা ইসলাম গ্রহণ না করলে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কিন্তু মুসলিম ভূমিতে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী কাফির-মুশরিকদের জন্য শাসক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। এখানে হয়তো সেটাই বোঝান হয়েছে। আল্লাহু আ’লাম। একইভাবে, কেউ যদি ঈমান গ্রহণ করে এবং সৎ আমলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করে তবে তাকে আর শাস্তি দেওয়া যাবে না।

(৫) যুল কারনাইনের প্রজ্ঞাঃ

আলোচ্য আয়াতে লক্ষ্যণীয় একটি বিষয় হলো যে- যুল কারনাইন যখন শাস্তির কথা বলেছেন তখন প্রথমে নিজের দেওয়া শাস্তির উল্লেখ করেছেন আর যখন পুরষ্কারের কথা বলেছেন তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কারের কথা বলেছেন। কিন্তু কেন ? এর কারণ হলো, মুমিনদের জন্য সবচেয়ে আকাঙ্খিত আর মুখ্য বিষয় হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া প্রতিদান অর্থাৎ জান্নাত। কিন্তু দুনিয়াবী প্রাপ্তি মুমিনের জন্য মুখ্য বিষয় নয়। আবার কাফির মুশরিকরা যেহেতু পরকালে বিশ্বাসই করে না তাই দুনিয়াবী শাস্তিকেই তারা বেশি ভয় করে, পরকালের শাস্তির ভয়ে তাদের বিশ্বাস নেই। এজন্য ঈমানদারগণকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য তিনি প্রথমে আল্লাহর পুরষ্কারের কথা এবং কাফিরদেরকে ভয় দেখানোর জন্য প্রথমে নিজের দেওয়া শাস্তির কথা বলেছেন।

(৬) কারাগার নির্মাণের বৈধতাঃ

মহান আল্লাহর বাণী-

“তারা বলল, “হে যুল কারনাইন! নিশ্চয় ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে বিনিময়ে কিছু দেবো যেন আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রাচীর গড়ে দেন?”।” [সূরা কাহফ(১৮): ৯৪]

রাসূলুল্লাহ (সা) এবং আবু বাকর (রা) এর সময় কোন কারাগার ছিল না। উমার (রা) এর খিলাফতকালে প্রথম কারাগার নির্মিত হয়। এই আয়াত থেকে কারাগার নির্মাণের বিষয়টি সাহাবীগণ ইজতিহাদ করেছিলেন। এছাড়াও এখান থেকে অপরাধী ব্যক্তিদেরকে আটক রাখা এবং তাদেরকে স্বেচ্ছাচারিতা থেকে জোরপূর্বক বিরত রাখার বিষয়টিও শিক্ষা পাওয়া যায়।

(৭) অধীনস্থদের দেখভাল করা মুসলিম শাসকদের অবশ্য কর্তব্যঃ

ইয়াজুজ মাজুজ থেকে জনপদের লোকেরা আশ্রয় চাওয়ায় যুল কারনাইন বলেছিলেন-

“আমার প্রতিপালক আমাকে এই বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দিবো।” [সূরা কাহফ(১৮): ৯৫]

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়-

▪ রাজ্যের অধীনস্থ লোকদের জান, মাল ও অধিকার রক্ষা এবং ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা একজন শাসকের জন্য বাধ্যতামূলক, এমনকি তার নিজের সম্পদ ব্যয় করে হলেও।

▪ এই কাজে শাসককে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-

• কিছু লোককে অন্য লোকের উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। প্রত্যেককে সমান চোখে দেখতে হবে।

• সবচেয়ে অভাবী লোকটা থেকে সাহায্য বিতরণ শুরু করতে হবে, এরপর ক্রমান্বয়ে অপেক্ষাকৃত কম অভাবীদের দিতে হবে।

• প্রত্যেক অভাবীকে তার চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে।

▪ সত্যিকার প্রয়োজন ছাড়া বৈধভাবেও কারও অর্থ নেওয়া ঠিক নয়। একান্ত প্রয়োজনে নিতে হলেও তা কল্যাণমূলক কাজে খরচ করতে হবে।

(৮) কিয়ামাতের একটি বড় নিদর্শনঃ

ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন কিয়ামাতের একটি বড় নিদর্শন। যুল কারনাইন বলেছিলেন-

“… … যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন তিনি সেটিকে চূর্ন-বিচূর্ণ করে দিবেন এবং আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।” [সূরা কাহফ(১৮): ৯৮]

এ থেকে জানা যায়, কিয়ামাতের পূর্বে ইয়াজুজ-মাজুজের দেওয়াল আল্লাহ ভেঙ্গে দিবেন এবং তারা জমিনে পুনরায় ছড়িয়ে পড়বে। হাদিস থেকেও কিয়ামাতের লক্ষণ হিসেবে ইয়াজুজ-মাজুজের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।

সূরা কাহফে আলোচিত চারটি সত্য ঘটনার অন্তর্নিহিত শিক্ষা আলোচনা এখানেই শেষ হলো। আল্লাহ আমাদেরকে যেন তৌফিক দেন যাতে এগুলো নিছক গল্প হিসেবে না পড়ে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে এগুলো প্রয়োগ করতে পারি। আমীন। এর যা কিছু সঠিক তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর যা কিছু ভুল তা আমাদের দুর্বলতা ও শয়তানের প্ররোচনা। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive