স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা করেন কে তাঁর নির্দেশ মান্য করে আর কে তাঁর অবাধ্য। তিনি যেভাবে চান সেভাবে পরীক্ষা করেন। এক সৃষ্টিকে অন্য সৃষ্টির সাথে সংযুক্ত করে তিনি এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেন।

মানুষের পৃথিবীতে অবস্থান এ পরীক্ষার জন্যই[১]। আল্লাহর অনুসারীদের এবং সীমালঙ্ঘণকারীদের নির্ণয়স্বরূপ তিনি এ পরীক্ষার ক্ষেত্রকে তৈরি করেছেন অনেক সত্তা সমন্বয়ে। তারমধ্যে অন্যতম হল শয়তান, যারা জিন জাতিভুক্ত। যাদের ক্ষমতা-শক্তি মানুষের থেকে ভিন্ন। মানুষ যখন আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায় তখন তারা মানুষের উপর প্রভাব রাখতে পারে। ভুল কাজকে মানুষের সামনে সঠিক করে তুলতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে তাদের দলভুক্ত করে নেয়। ফলশ্রুতি উভয়ের জাহান্নাম। আর যখন মানুষ আল্লাহর নির্দেশ মেলে চলে, সকল কাজে আল্লাহর কাছে শয়তানের বিপক্ষে আশ্রয় চায়, আল্লাহ তাকে সথিক পথে অবিচল রাখেন। পরীক্ষাতে শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত আর মানুষ জান্নাতপ্রাপ্ত হয়।

IIRT Arabic Intensive

এই পরীক্ষার উপকরণের মধ্যে সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াভহ হল মাসীহ দাজ্জাল। যার ব্যাপারে সকল নবী তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন।

মাসীহ দাজ্জাল কে?

মাসীহ দাজ্জাল (المسيح الدجل) দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম শব্দ মাসীহ, আরবি মাসাহা (مَسَحَ) থেকে নির্গত। যার ভাবার্থ আশীর্বাদ প্রাপ্ত। আর দাজ্জাল শব্দের অর্থ ধোঁকাবাজ, প্রতারক। একত্রে মাসীহ দাজ্জাল অর্থ দাড়ায় – আশীর্বাদ প্রাপ্ত ধোঁকাবাজ।

মূলত দাজ্জাল হবে শয়তানের[২] আশীর্বাদ প্রাপ্ত। আল্লাহ শয়তানকে এ সময়ে এমন ক্ষমতা দিবেন যা পুরো সৃষ্টির ইতিহাসে শুধুমাত্র ফেরেশতাদের হাতে ছিল। যেমনঃ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ, ফসল উৎপাদন ইত্যাদি।

শয়তান তখন এ ক্ষমতার দ্বারা পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি প্রেরণ করবে যে মানুষকে প্রতারিত করবে, নিজেকে প্রথমে নবী পরে স্রষ্টা বলে দাবি করে[৩] মানুষকে তার অনুসারি করবে।

তাহলে মাসীহ দাজ্জাল এই ব্যপারটাতে মূলত দুটি জিনিসের সমন্বয় রয়েছে – প্রথমত. শয়তানের দাজ্জাল রুপ অর্থাৎ শয়তানের প্রতারনা করার ক্ষমতা এবং দ্বিতীয়ত. শয়তানের মানব প্রতিনিধি মাসীহ দাজ্জালের মাধ্যমে মানুষের সাথে প্রতারণা।

মাসীহ দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য?

মাসীহ দাজ্জাল হবে আদম সন্তানের মধ্য থেকে শয়তানের মাসায়হ প্রাপ্ত ব্যক্তি। তার সম্পর্কে সতর্ক করতে রাসুল (সঃ) তার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে ঈমানদাররা তাকে চিনতে পারে এবং তার দ্বারা প্রতারিত না হয়।

সে বয়সে একজন যুবক হবে, গায়ের রং সাদা লালচে হবে। লম্বায় খাটো হবে। ঘন কোঁকড়ানো চুল এবং চওড়া কপালযুক্ত হবে। বুকের উপরের ভাগ প্রশস্ত হবে। ডান চোখ অন্ধের মত ত্রুটিযুক্ত হবে যা দেখতে ভাসমান আঙুরের মত লাগবে। দুই চোখের মাঝখানে তার কাফের হওয়া চিহ্নিত থাকবে – যা আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখে শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলেই বুঝতে পারবে।

সে বন্ধ্যা হবে। তার কোন সন্তান-সন্ততি থাকবে না।

মাসীহ দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হাদিসসমূহ

১. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন আমি আমাকে কা‘বা গৃহ তাওয়াফরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। এমন সময় সোজা চুলওয়ালা একজন পুরুষকে দু’জন পুরুষের মাঝে দেখলাম, যার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বলল, ইবনু মারইয়াম। এরপর আমি ফিরে আসতে লাগলাম। এ সময় একজন লাল রঙের মোটাসোটা, কোঁকড়ান চুলওয়ালা, ডানচোখ কানা ব্যক্তিকে দেখলাম। তার চোখটি যেন ভাসমান আঙুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? তারা বলল, এ হচ্ছে দাজ্জাল। তার সঙ্গে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান। আর ইবনু কাতান হল বনূ মুস্তালিক গোত্রের খুযাআ বংশের একজন লোক। [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নং ৭০২৬]

২. ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। শোন! দাজ্জালের ডান (চোখ) কানা হবে। তার চোখ যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭০৯৫]

৩. নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত আঙ্গুরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০৬]

৪. উবাদা ইব্‌ন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণনা করেছি, এতসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না। (জেনে রাখ!) মাসীহ্‌ দাজ্জাল হবে বেঁটে, তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথার চুল হবে কুঞ্চিত, আর সে হবে কানা। তার চোখ হবে সমতল, যা উপরে উঠে থাকবে না এবং নীচে থাকবে না। এরপরও যদি তোমরা সন্দীহান হও, তবে জেনে রাখ! তোমাদের রব কানা নন। [সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৪২৬৯]

৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিথ্যা মসীহ – সে হবে একচোখা, কপাল থাকবে চওড়া এবং বুকের উপরেরভাগ হবে প্রশস্ত। সে ন্যুব্জ দেহী হবে। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৭৫৬৪]

৬. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের বাম চোখ কানা হবে। (তার দেহে) ঘন চুল হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০০]

৭. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন নবী প্রেরিত হন নাই যিনি তার উম্মতকে এই কানা মিথ্যুক সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফের শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে। [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৬৬৪৬] অন্য এক বর্ণনাতে রয়েছে – দাজ্জালের দু’ চোখের মধ্যস্থলেك ف ر অর্থাৎ كافر (কাফির) লেখা থাকবে। [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং ৭২৫৩]  হুযায়ফা (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি তা পড়তে পারবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০১] 

৮. দাজ্জালের কোনো সন্তান হবে না, যেমনটি আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যিনি তার এবং ইবনে সায়াদের মধ্যে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করেছেন, যিনি তাকে বলেছিলেন: “তুমি কি শোননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তার কোন সন্তান হবে না? …” আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি বললাম, হ্যাঁ …’” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭০৮৪] 

উপরের হাদিসগুলো থেকে লক্ষ্য করা যায় বেশিরভাগ তার ডান চোখ অন্ধ বা ত্রুটিযুক্ত হবে বলেছে আবার কোন কোন বর্ণনাতে তার বাম চোখকে অন্ধ বা ত্রুটিযুক্ত বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনাই সহিহ। কিছু আলেম এই বর্ণনাগুলো একত্রিত করেছেন। কাদি আইয়াদ বলেছেনঃ “দাজ্জালের উভয় চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। তার ডান চোখ হবে ক্ষতবিক্ষত (ممسوحة) এবং নিস্তেজ, দেখতে অক্ষম, যেমনটি ইবনে উমরের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আর বাম চোখ এমন হবে যেটি চামড়ার মোটা ভাঁজে ঢাকা থাকবে এবং এটিও ত্রুটিযুক্ত হবে।” সুতারং তার বাম এবং ডান উভয় চোখেই ত্রুটি থাকবে। কারণ হাদিসে ব্যবহৃত আরবি শব্দ (أعْوَرٌ) ত্রুটিযুক্ত যেকোন কিছুকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় এবং বিশেষকরে চোখ দুর্বল হলে তা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। মোটকথা তার একচোখ অকার্যকর এবং অন্যটি ত্রুটিযুক্ত হবে।

কোন জায়গা থেকে মাসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব হবে?

দাজ্জাল বের হবে ইহুদিদের মধ্য থেকে। তার অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী[৪]। তার আবির্ভাবের ব্যাপারে হাদিসে মক্কার পূর্বদিকে অবস্থিত বর্তমান ইরানের (অতীত খোরাসান) ইহুদি জনবহুল ইস্ফাহান শহরের কথা বলা হয়েছে[৫]

আবার দাজ্জাল নিয়ে সাহাবি ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সঃ) তার অবস্থানের ব্যপারে বলেছেন – “সে সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে না বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন।”[৬]

এখানে বর্ণিত সিরিয়া সাগর মক্কার উত্তর দিকে, ইয়েমেন সাগর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। কিন্তু পূর্ব দিকের কোন সাগর তিনি উল্লেখ করেননি অথচ বার বার পূর্ব দিকের কথা বলেছেন।

এ বর্নাগুলোর সমন্বয়ে বলা যায় সে কোন জায়গা থেকে পৃথিবীতে প্রকাশ ঘটাবে হবে তা নির্দিষ্ট নয় কিন্তু তার আবির্ভাবের সাথে ইরানের ইস্পাহান শহর এবং ইহুদিদের সম্পৃক্ততা থাকবে।

ইরানের ইস্পাহান শহর আদি যুগ থেকে ইহুদিদের আবাসস্থল। ৭২৭ খ্রিষ্টপূর্ব হতে দফায় দফায় অ্যাসিরিয়ান এবং ব্যাবিলনীয় রাজারা তাদেরকে জেরুজালেম হতে বন্দী করে দাস হিসাবে সেখানে নিয়ে আসত[৭]। ধীরে ধীরে তারা পার্সিয়ান সভ্যতা এবং সংস্কৃতির সাথে মিলে যায়।

১৯৪৮ সালে ইরানে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল ১৫০০০০[৭]। ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হবার পর এই সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ইস্ফাহান সহ ইরানের ইহুদিরা ইসরাইলে পাড়ি জমাতে থাকে আর ইরানে ইহুদিদের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে ইসরাইলে ইরানি ইহুদির সংখ্যা ২৫০০০০[৮] আর ইরানে মাত্র ৮৫০০[৭]

বর্তমানযুগে ইহুদি অর্থই ইসরাইল। এছাড়া হাদিসেও দাজ্জালকে হত্যার কথা বলা হয়েছে “লুদ” [৯] শহরে, যেটা ইসরাইলেরই অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।

পৃথিবী শেষ জামানাতে অবস্থান করছে। রাসুল (সঃ) থেকে বর্ণিত কেয়ামতের ছোট আলামতগুলোর প্রায় সবই প্রকাশ পেয়েছে। ধীরে ধীরে বড় আলামতগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করবে। আর বড় আলামতগুলোর অন্যতম হল দাজ্জালের বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সব মিলিয়ে বলা যায় পৃথিবীতে তার প্রকাশ ঘটবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল থেকে। ইসারাইলে বসবাসরত ইস্পাহানী ইহুদিদের মধ্য থেকে তার আবির্ভাব হবে এবং সে দেশের ইহুদিরাই হবে তার মূল অনুসারী।

দাজ্জালের সময়কাল

হাদিসে দাজ্জালের পৃথিবীতে অবস্থানকাল নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে ৪০ দিন। কিন্তু শুরুর দিকে ১ দিন মানুষের গননায় ১ দিনের মত নয় বরং তা বছরের মত দীর্ঘ, এরপরের ১ দিন মানুষের গননায় মাসের মত দীর্ঘ, এরপরের ১ দিন সপ্তাহের মত দীর্ঘ। বাকি দিনগুলো মানুষের গননানুযায়ী হবে[১০]

প্রথমদিকের সময়কালের দীর্ঘতা বুঝাতে রাসুল (সঃ) সেই একদিনে মানুষের গণনাতে ১ দিনের সালাতের হিসাব নয় বরং তার গননানুযায়ী সালাতের হিসাবের কথা বলেছেন[১]। অর্থাৎ দাজ্জালের সে একদিন মানুষের গণনাতে যদি ৫০ বছরের সমান হয় তাহলে সালাতের হিসাব হবে সে ৫০ বছরের।

মাসীহ দাজ্জাল আবির্ভাবের প্রসেসে প্রথমে মুক্তি ঘটবে বন্দী শয়তান দাজ্জালের। সে তখন পৃথিবীতে চলে আসবে। পৃথিবীতে তার অবস্থান দীর্ঘকাল বছরের পর বছর হবে। আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করবে এবং এক পর্যায়ে সে তার মানব প্রতিনিধিকে মাসায়াহ দিয়ে পৃথিবীতে বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। এই মাসীহ দাজ্জাল পৃথিবীতে চলে আসার পর বাকি দিনগুলো পৃথিবীর গননানুযায়ী হবে।

দাজ্জালের ফিতনাসমূহ

আদম (আঃ) কে সৃষ্টির পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনাই হবে সবথেকে বড় ফিতনা। কারণ তাকে যে অলৌকিকতা দেয়া হবে তা দিয়ে সে মানুষকে মুগ্ধ করবে।

তার কাছে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। কিন্তু তার জান্নাত আসল জাহান্নাম এবং জাহান্নাম আসল জান্নাতের অংশ। তার কাছে থাকবে নদীভর্তি পানি, পাহাড় সমপরিমান রুটি। সে আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণের, তখন বৃষ্টি হবে। পৃথিবীকে আদেশ দিবে ফল-মূল, শাক-সবজি, ফসলাদির, সে তা করবে। পৃথিবীর ধন-সম্পদ তাকে অনুসরন করবে। বাতাস যেভাবে মেঘকে বেগে চালিত করে সেভাবে সে দ্রুত একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাত্রা করবে। এভাবে সে অন্যান্য অলৌকিক, বিস্ময়কর কাজ করবে। এর সবই সহিহ হাদিসে রয়েছে যা নিচে উল্লেখিত হল।

১. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। (মুলতঃ) তার জাহান্নাম জান্নাত হবে এবং তার জান্নাত জাহান্নাম হবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০০]

২. হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি দৃশ্যত সাদা পানি এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নি মনে হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত আগুন মনে হবে এবং (এই) চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন তা থেকে পানি পান করে। তা হবে ঠাণ্ডা পানি। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০১]

৩. দাজ্জাল সম্পর্কে নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ)’র হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবাগণ বলেছেন: হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! দাজ্জাল পৃথিবীতে তার গতির দ্রুততা কেমন হবে? তিনি বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর ঈমান আনয়ন করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে।

এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায় অধিক লম্বা, কুঁ’জ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্থায় তাদের নিকট ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে। অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার অনুগমন করবে, যেমন মৌমাছি তাদের সর্দারের অনুগমন করে।

অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দু’ফাঁক করে ফেলবে। অতঃপর সে পুনরায় তাকে ডাকবে। যুবক দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০৬]

৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি তার সম্পর্কে আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তার মাঝে এও বলেছেন যে, দাজ্জাল আসবে তবে মদিনার প্রবেশপথে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মদিনার সংলগ্ন বালুময় একটি স্থানে সে অবস্থান গ্রহণ করবে। এ সময় তার দিকে এক ব্যাক্তি গমন করবে। যিনি মানুষের মাঝে উত্তম। কিংবা উত্তম ব্যাক্তিদের একজন। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তূই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাঁর হাদীস বর্ননা করেছেন। তখন দাজ্জাল বলবে, তোমরা দেখ আমি যদি একে হত্যা করে আবার জীবিত করে দেই তাহলে কি তোমরা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। এরপর সে তাকে হত্যা করবে এবং পুনরায় জীবিত করবে। তখন সে লোকটি বলবে, আল্লাহর কসম! তোর সম্পর্কে আজকের মত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম না। তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু সে তা করতে সক্ষম হবে না। [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৬৬৪৭]

৫. আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জাল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে এক বেদুঈনকে বলবে, আমি যদি তোমার পিতা-মাতাকে তোমার সামনে জীবিত করে তুলতে পারি তবে তুমি কি এই সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব? সে বলবে, হাঁ। তখন (দাজ্জালের নির্দেশে) দু’টি শয়তান তার পিতা-মাতার অবয়ব ধারণ করে হাযির হবে এবং বলবে, হে বৎস! তার অনুগত্য করো। সে-ই তোমার রব। [সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ৭/৪০৭৭]

দাজ্জালের ফিতনা হতে সুরক্ষা

রাসূল (সঃ) তার উম্মতকে ভন্ড মাসীহ (মাসীহ দাজ্জাল) হতে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি উম্মতকে স্পষ্ট এক পথের উপরে রেখে গেছেন। একমাত্র অবাধ্য ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ সে পথ থেকে বিচ্যুত হবার নয়। এমন কোন ভালো জিনিস নেই যার নির্দেশনা তিনি দেননি, আবার এমন কোন মন্দ জিনিস নেই যার সম্পর্কে তিনি সতর্ক করেননি। যে বিষয়গুলোতে তিনি সতর্ক করেছেন তার মধ্যে অন্যতম দাজ্জালের ফিতনা। কিয়ামত আসার পূর্বে এটি হল সবচেয়ে বড় ফিতনা যার মুখোমুখি এ উম্মত হবেই। প্রত্যেক নবি তার উম্মতকে একচোখা দাজ্জালের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (সঃ) একমাত্র নবি যিনি তার উম্মতকে অধিক সতর্ক করেছেন। উম্মতকে সতর্ক করতে আল্লাহ তাকে দাজ্জালের অনেক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে বলেছেন কারণ তিনিই সর্বশেষ নবি হওয়াতে নিঃসন্দেহে এই উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।

দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নবি (সঃ) এর নির্দেশিকা –

এখানে রাসূল (সঃ) থেকে বর্ণিত কিছু নির্দেশিকার উল্লেখ করা হল যা তিনি তার উম্মতকে এই বড় ফিতনা থেকে রক্ষাস্বরুপ বলে গিয়েছেন।

১. ইসলামকে মেনে চলা। সঠিক বিশ্বাস রাখা এবং আল্লাহর “নাম ও গুনাবলীসমূহ” রপ্ত করা, যে নাম ও গুনাবলী আল্লাহ বাদে অন্য কারো থাকতে পারে না। দাজ্জাল একজন মানুষ হবে যে খাবে এবং পান করবে, যা থেকে আল্লাহ অনেক উপরে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেউ তার রবকে দেখতে পাবে না, [১] কিন্তু দাজ্জাল যখন আবির্ভূত হবে তখন সকল মানুষ, হোক ঈমানদার বা কাফের সবাই তাকে দেখতে পাবে।

২. আল্লাহর কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। বিশেষত সালাতে। সহিহ হাদিসে উম্মুল মুমেনিন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর এ দুয়া করতে বলেছেন – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ “আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম ওয়ামিন আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-তি ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল”– (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি ) [১]

৩. সূরা কাহাফের আয়াত মুখস্তকরন। দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পেতে রাসুল (সঃ) সূরা কাহফের শুরুর ১০ আয়াত মুখস্ত করতে বলেছেন। অন্য কিছু বর্ণনাতে শেষের দিকের আয়াতের কথা বলা হয়েছে। মোট কথা হল শুরু থেকে ১০ আয়াত অথবা শেষ থেকে ১০ আয়াত।

এ ব্যাপারে যেসকল হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে তার মধ্যে রয়েছে সহীহ মুসলিমে নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) বর্ণিত দীর্ঘ হাদিস, যাতে বলা হয়েছে – “… তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ পাঠ করে।” [১]

সহীহ মুসলিমে আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যাক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।” [১]

ইমাম নওয়াবী (রহঃ) বলেন – এর কারণ হল এই সূরার শুরুতে বিস্ময়কর এবং আল্লাহর নিদর্শনসম্পৃক্ত বর্ণনা রয়েছে। যে কেউ এগুলো নিয়ে চিন্তা করবে সে দাজ্জালের ফিতনা দ্বারা প্রতারিত হবে না। এবং এই সূরার শেষে আল্লাহ বলেন “যারা কুফরী করেছে তারা কি মনে করেছে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে (প্রভু) গ্রহণ করবে?” (১৮:১০২)।[১]

সূরা কাহফের এটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অন্য হাদিসে এ সূরাকে পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষকরে শুক্রবারে। আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।“[১]

প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এই সুরাটি পড়া। একইসাথে মুখস্ত করা এবং বারবার তেলাওয়াত করা, বিশেষত সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন শুক্রবারে।

৪. দাজ্জাল হতে পলায়ন করা এবং তার থেকে দূরে অবস্থান করা। সর্বোত্তম হল যে স্থানে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না সে স্থানে বসবাস করা। যেমন – মক্কা, মদীনা[১]। দাজ্জালের আবির্ভাব হলে ঈমানদারদের উচিত হবে তার থেকে দূরে থাকা। কারণ আল্লাহ তাকে যে আলৌকিকতা দিবেন মানব জাতিকে পরীক্ষা করার জন্য তা দিয়ে সে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দাজ্জালের খবর শুনবে, সে যেন তার থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর শপথ! একজন ব্যক্তি তার কাছে যাবে নিজেকে ঈমানদার মনে করে, কিন্তু সে দাজ্জালের অনুসারী হয়ে যাবে তার অলৌকিকতার ধুম্রজালে পড়ে।”[১]

দাজ্জালের ধ্বংস

ভন্ড মাসীহ দাজ্জাল সত্যিকার মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর হাতে নিহত হবে।

দাজ্জাল পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে তার অসংখ্য অনুসারী তৈরি করবে। তার ফিতনা দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। একমাত্র সত্যিকার অর্থে ঈমানদার ছাড়া কেউ তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে না।

এ সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সিরিয়ার দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের সাদা মিনারের উপর অবতরণ করবেন এবং আল্লাহর মুমিন বান্দারা তার চারপাশে সমবেত হবে। তিনি তাদেরকে দাজ্জালের দিকে নিয়ে যাবেন। দাজ্জাল তখন বায়তুল মাকদিসের (জেরুজালেম) দিকে যাত্রা করবে। ঈসা (আঃ) তাকে বায়তুল মাকদিসের কাছে ইসরাইলের লুদ (Lod – اللد) শহরের ফটকে ধরে ফেলবেন। ঈসা (আ)-কে দেখামাত্র সে পানিতে লবণ যেভাবে গলে যায় সেভাবে বিগলিত হতে থাকবে। অর্থাৎ তার ক্ষমতা-শক্তির আঁধার শয়তানেরা তাকে ছেড়ে পালাতে থাকবে। তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ আমার কিছু বোঝাপড়া আছে, যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নাই। তিনি তাকে ধরে ফেলবেন এবং হত্যা করবেন। সে মুহূর্তে তার অনুসারীরা তাকে ছেড়ে পলায়ন করবে, কিন্তু মুসলিমরা তাদেরকে ধাওয়া করে হত্যা করবে।

দাজ্জালের মৃত্যু সম্পর্কিত হাদিসসমূহ

১. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দাজ্জালকে খোঁজ করে ধ্বংস করে দিবেন। [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১১৪]

২. মুজাম্মা ইবন জারিয়া আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দাজ্জালকে লুদ শহরের (বর্তমান ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত) দ্বার প্রান্তে হত্যা করবেন। [সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ২২৪৭]

৩. ইমাম আহমাদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বলেছেন: ‘দাজ্জালের আবির্ভাব এমন সময়ে হবে যখন মানুষের মাঝে ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি কম থাকবে এবং জ্ঞান কমে গেছে… তারপর ‘ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ভোরের আগে অবতরণ করবেন এবং লোকদের ডেকে বলবেন, ‘হে লোকসকল, এই শয়তান মিথ্যাবাদীর বিরুদ্ধে বের হতে কি তোমাদের বাধা দিচ্ছে?’ তারা বলবে, ‘এই লোকটি জিন’। তখন সালাতের সময় হয়ে যাবে, ইকামাত দেওয়া হবে এবং তাকে বলা হবে, হে আল্লাহর রূহ, সামনে এগিয়ে যান (সালাতে ইমামতির জন্য)। তিনি বলবেন ‘তোমাদের ইমাম এগিয়ে যাক এবং তিনি তোমাদেরকে নামায পড়াক।’ তারপর তারা সালাত আদায় সম্পন্ন করে দাজ্জালকে ধরতে বের হবে এবং যখন তারা দাজ্জালকে দেখতে পাবে, তখন সে পানিতে লবণের মতো গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তার কাছে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। এসময় গাছপালা, এমনকি পাথরও ডেকে বলবে, ‘হে আল্লাহর রূহ, এখানে একজন ইহুদী!’ যারা তাকে অনুসরণ করেছিল তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে, কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৪৪২৬]

তথ্যসূত্র

[১] সূরা মূলক, ৬৭:২

[২] মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৪৪২৬

[৩] সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ৭/৪০৭৭

[৪] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১২৫

[৫] মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১২৯৩১

[৬] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১১৯

[৭] Wikipedia: Persian Jews

[৮] Wikipedia: Iranian Jews in Israel

[৯] সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ২২৪৭

[১০] সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং ৭২৬৩

[১১] সূরা আশ-শূরা, ৪২:৫১

[১২] সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং ১২১১

[১৩] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১০৬

[১৪] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ১৭৫৬

[১৫] شرح صحيح مسلم للنووي

[১৬] মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নং ২১৭৫

[১৭] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৭১১৯

[১৮] সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নং ৪২৬৮

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

One Response

  1. মুরসালিন নিলয়

    জাঝাকাল্লাহ রাহাত ভাই। অনেক কিছুর ব্যাখ্যা একত্রিত অবস্থায় পেলাম। সময় ঘনিয়ে আসছে। আল্লাহর কাছে রক্ষা চাই এই উম্মাতের জন্য।

    Reply

Leave a Reply to মুরসালিন নিলয় Cancel Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive