– সব মিলিয়ে টোটাল ২ বিলিয়ন ডলার দেয়া হচ্ছে। নগদে দেয়া হচ্ছে।
– কিসের বিনিময়ে?
– বিনিময় হিসেবে তোমাকে তোমার কাছে থাকা বেস্ট দুটো ক্যামেরা দিয়ে দিতে হবে।
– এ আর এমন কি? উম্মম, আমার কাছে একটা মোবাইলে থাকা ক্যামেরা আছে, আর আব্বুর মোবাইলেও একটা আছে। ওটাসহ ম্যানেজ করে দিয়ে দেবো।
– উঁহু, উঁহু! এইগুলো না। তোমার কাছে থাকা বেস্ট দুটো ক্যামেরা দিয়ে দিতে হবে। তোমার চোখ দুটো।
– কিইইই?
এহ! শখ কত! চোখ দিয়ে দিবো!! আমি কি পাগল নাকি পেট খারাপ? কি করবো বিলিয়ন ডলার দিয়ে? লাগবে না তোমার বিলিয়ন ডলার, দূরে গিয়ে মুড়ি খাও। আমার চোখ আমার কাছেই থাকুক ভাই। ধন্যবাদ।

এরকম মোট কতটা অমূল্য ডিভাইস আমার কাছে আছে? আমি কি একটারও দাম দিয়েছি? একটাও কি আমি নিজে অর্জন করেছি? যোগ্যতার অর্জন? উঁহু! একটাও না। এগুলোর একটাও আমি ডিজার্ভ করতাম না, করি না। তাহলে?
তাহলে আর কি?
গিফট। উপহার। এত এত্ত দাম্ উপহার আমরা কখন পাই? কার কাছ থেকে পাই? যে আমাদের ভালোবাসে। তীব্র, সুতীব্র ভালোবাসে।

IIRT Arabic Intensive

এমনও হতে পারে কেউ একজন এরকম অমূল্য ডিভাইস দু’টি কম পেয়েছে। তারপরেও সে কি ভুলেও বলতে পারবে, তিনি আমাকে কম ভালোবাসেন? নাহলে আমাকে দুটো কম দিলেন কেন? নাহ! যদি কেউ বলে থাকে তাহলে সে অলরেডি পাওয়া একগাদা উপহারের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। যা পেয়েছে তার জন্যে ধন্যবাদ তো দেয়ইনি, এমনকি ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাবোধটুকুও তার মাঝে নেই।

আচ্ছা আমরা এরকম কি কি গিফট পেয়েছি? অসাধারণ একটা ব্রেইন পেয়েছি, যেটা দিয়ে না দেখে, না শুনেও আমরা শুধু চিন্তা করে করে অনেক কিছু বুঝে ফেলতে পারি, আবিষ্কার করে ফেলতে পারি। আছে স্নায়ু। অনুভূতির উচ্চাসনে নিয়ে যেতে যাদের জুড়ি নেই। শুনতে পাওয়ার জন্যে দুই দুইটা কান। আর কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ তা আগে আগে বুঝে যাওয়ার জন্যে একটা নাক। টেস্ট বাড না থাকলে খাবার বা পুষ্টির স্বাদ বোঝাই হতো না। আলু, পটল, তিতা করলা আর বিরিয়ানি সবগুলোর আবেদন একই রকম হতো।

এভাবে বাতাস থেকে ছেঁকে ছেঁকে অক্সিজেনকে আলাদা করে রক্তে মেশানোর জন্যে দুইটা ফুসফুস নামের মেশিন, রক্তগুলোকে সারা শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দিতে সবল একটা পাম্প মেশিন যাকে আমরা হার্ট বলি, রক্তকে ছেঁকে ময়লা আর আবর্জনা পরিশোধন করতে দুটো কিডনি, পরিপাকের জন্যে জট্টিল সব মেশিনে ভর্তি একটা ফান্ডাবুলাস পরিপাকতন্ত্র আরো কত কি!!! এর একটাও যদি আমার না থাকতো, আমার কিই বা বলার ছিলো? কিচ্ছু বলার ছিলো না। এই সবগুলোই আমাকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে কিছুদিনের জন্যে। শুধু এই প্রত্যেকটা নিয়ে দুই মিনিট করে গভীর ভাবনায় কখনো ডুব দিয়েছি কখনো? যারা একবার হলেও ডুব দিয়েছে নিশ্চয়ই এত কিছু পাওয়ার আনন্দে, এত এত গভীর ভালোবাসা অনুভব করে তাদের চোখ দিয়ে পানি নেমে এসেছে।

শারীরিক এই উপহারগুলোই শুধু নয়। সেই ভালোবাসার জন, আমার জন্যে এই বিশাল মাটির গোলককে কত শত রঙেই না রাঙিয়েছেন। রাঙিয়েছেন এর উপরে ছড়ানো আকাশের সামিয়ানা। সূর্যের আলোকে ঝুম বর্ষায় নেমে আসা পানির ফোঁটায় ফোঁটায় সাত রঙে চিরে নিয়ে দিগন্তে ছড়িয়ে দেয়ার নিয়ম করে দিয়েছেন সেই অসাধারণ শিল্পী। চারপাশের জগতকে এমন একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন যাতে আমরা বাঁচতে পারি, থাকতে পারি, দেখতে পারি, আর বুঝতে পারি তাঁকে। এত অসাধারণ একজন আর্কিটেক্ট, এত্ত অসাধারণ একজন ইঞ্জিনিয়ার আর বায়োলজিস্ট আমাদের মত এত তুচ্ছ সৃষ্টিকে এত অসাধারণ ভালোবেসে নিজের অটোগ্রাফ, নিচের সিগনেচার, নিজের অস্তিত্বের চিহ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন চারিপাশে। আমাদের ভিতর থেকে বাইরের বিস্তৃত দিগন্তে সেই আর্টিস্টের সিগনেচার ছড়ানো। সবটুকু চিহ্ন দিয়ে আমাদের এত পরম মমতায় আগলে রেখে শুধু একটাই চাওয়া তাঁর-

আমরা যেন তাঁকে চিনি। তাঁর ভালোবাসাকে অনুভব করি। অনুভব করি আমরা না চাইতেই কি কি করেছেন তিনি আমাদের জন্যে। তিনি শক্ত খুলি দিয়ে সযত্নে ঘিরে রেখে একটা শক্তিশালী মস্তিস্ক দিয়েছেন যা দিয়ে আমরা গভীরভাবে ভাববো, অনুভব করবো তাঁকে।
ভালোবাসবো তাঁকে। কৃতজ্ঞতায় বুকটা ভরে উঠবে।

যদি কৃতজ্ঞ না হই, ভালো না বাসি তাহলে? তাহলে আর কি? যে ভালোবাসে, তাঁর ভালোবাসাতো আর যাকে ভালোবাসা হয় সেই মানুষটা ভালোবাসলো কি বাসলো না, তার উপর নির্ভর করে না। আমি যদি আমার আব্বু আম্মুকে ভালো না-ও বাসি, আমার জন্যে তাঁরা যে এত এত্ত করেছেন তাঁর জন্যে কৃতজ্ঞ না-ও হই, তার পরেও আমার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা কমবে না। তাঁরা আমার জন্যে যা করার তা করেই যাবেন, করেই যাবেন। আমাদের জীবনকে এই আব্বু আম্মুর মতো অসাধারণ দুটো অমূল্য উপহার দিয়ে যিনি সাজিয়ে দিয়েছেন তিনি আমাদের আসলেই কতটা ভালোবাসেন সেই অনুভূতি কি আমাদের এই শক্তিশালী মস্তিষ্কও ধারণ করতে পারবে? পারবে না। আমরা তাঁকে ভালো না বাসলেও তিনি খেতে দেবেন, রাতে শান্তিতে ঘুমুতে দেবেন। দুনিয়া জুড়ে তাকিয়ে দেখো। যারা তাঁকে মানেনা, গালি দেয়, তাঁর কথা শোনে না, তাদেরকে কি তিনি চাইলে মূহুর্তেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেন না? পারেন। কিন্তু তিনি করেন না। আমাদের কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসায় তাঁর অসীম করুণা আর সু-বি-শা-ল সাম্রাজ্যের একটা কণা বাড়েও না, কমেও না। কিছুই যায় আসে না তাঁর। কিন্তু আমাদের?

হ্যাঁ। আমাদের যায় আসে। তিনি তো আমাদের অন্ধকারে রাখতে চাননি কোনদিন। তাই সত্যের আলোতে ভিজিয়ে দিতে বারবার তিনি আমাদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নিয়েছেন, তাঁর মাধ্যমে আমাদের কাছে সত্য কথাগুলো পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর দেয়া মস্তিস্ক ব্যবহার করে আমরা বুঝে যাই, জেনে ফেলি যে তিনি আছেন, তিনি একজনই। এরপর আমরা চাইলে উনাকে অস্বীকার করতেই পারি, অকৃতজ্ঞ হতেই পারি, তাঁকে কোনদিনও ধন্যবাদ না দিতেই পারি। এতে তাঁর কিছুই যায় আসে না। কিন্তু যদি তাঁকে ভালোবেসে ফেলি? যদি কৃতজ্ঞ লাগে? যদি তাঁর প্রভুত্বের নিচে নিজেকে দাস হিসেবে দেখতে ভালো লাগে? যদি তাঁকে মিস করি? যদি তাঁর অসীম জ্ঞান আর প্রজ্ঞার উপরে ভরসা করে তিনি যা বলেন তাই শুনে মেনে নিই? সেই মহা পবিত্র সত্ত্বা আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি এত এত্ত এত্ত বেশি খুশি হন যে, আসমানের সমস্ত এঞ্জেলসদের ডেকে এনে সেই দাসের বিনীত কৃতজ্ঞতা দেখান। তাঁর দাস যখনই বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে মাফ চায়, তিনি এত খুশি হন যে সেই নগন্য দাসের পাহাড় সমান অবাধ্যতা আর বেয়াদবির অপরাধ তিনি আকাশ সমান উদারতা আর ক্ষমা দিয়ে মুছে নেন। হ্যাঁ। এত্ত ভালোবাসেন তিনি আমাদের।

এত্ত ভালোবাসেন বলেই তিনি চাননা আমরা তাঁর অবাধ্য হই। তাই তিনি যুগে যুগে বারবার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ন্যায় বিচারক। দুনিয়ার বুকে যারা অন্যায় করে বেড়ায়, অত্যাচার করে বেড়ায়, তাঁর এত এত্ত ভালোবাসার মানুষগুলোকে কষ্ট দেয়, তাদের তিনি ছেড়ে দেবেন না। তাদের বিচার তিনি করবেনই। এই জীবনকে অর্থপূর্ণ করার জন্যে, আমাদের ভালো চয়েস, খারাপ চয়েসগুলোকে মূল্যায়ন করার জন্যে তাই তিনি জান্নাতের অনুপম শান্তি, আর জাহান্নামের অবর্ণণীয় কষ্ট রেখেছেন। তিনি কাউকে শাস্তি দেবেন না, শুধু যার যা প্রাপ্য, ন্যায় বিচার করে তাকে সেটা বুঝিয়ে দেবেন। কি করলে কে পুরস্কার পাবে, আর কে ফেইল করবে এটা তাই তিনি বারবার, বারবার, বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানার জন্যে বলে দিয়েছেন।
শুধু একবার বললেই তো হতো? না।

তিনি বারবার বলেছেন, যেন আমরা ভুল না করি, ভুল পথে না চলে যাই। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, দুনিয়ার মায়ার বিভ্রান্তিতে পড়ে যেন কোনভাবেই বরবাদ না হয়ে যাই সেজন্যে তিনি কত ডিটেইলে শয়তানের পরিচয় দিয়ে দিয়েছেন, তাকে অনুসরণ করতে মানা করে দিয়েছেন, কত সুন্দর করে বলে দিয়েছেন এই দুনিয়া একটা বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই না। বারবার বলে দিয়েছেন, তাঁর কথা শুনতে, তাঁর প্রজ্ঞার উপর আস্থা রেখে কাজ করে যেতে, তখন তিনিই আমার সব সামলাবেন। আমাকে আরো বেশি করে আগলে রাখবেন। অনন্তকালের জন্যে পুরস্কার দেবেন যেটা আমরা কল্পনাও করিনি।

সামান্য কয়েক বছরের এই দুনিয়ায় একের পর এক শুধু ঝড় ঝাপ্টাই আসবে। এভাবেই এখানের জীবনকে সাজানো হয়েছে। কাজেই, সেটাকে ভয় পেয়ে তো লাভ নেই। সেটার মোকাবিলা আমাদেরকেই করতে হবে, তাই প্রস্তুতিও আমরা সেভাবেই নেবো। সামান্য কয়েকদিনই তো মাত্র। দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। এই সামান্য কয়েকদিনের কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার প্রতিদানে যিনি অসীম আর অনন্তের চাদরে জড়িয়ে আমাদেরকে চিরস্থায়ী পুরষ্কারের জগতে স্বাগতম জানাতে অপেক্ষা করছেন গভীর মমতায়, তাঁকে ইনশা আল্লাহ আমরা নিরাশ করবো না। প্রতিদিন নতুন উদ্যমে হেঁটে যাবো সবাই একসাথে। তাঁর দেখানো আলোতে, তাঁর দিকে, তাঁর পথে।

তাঁকে ইনশা আল্লাহ আমরা ভুলবোনা। এক মূহুর্তের জন্যেও না। আমাদের না বলা ভালোবাসা, জমে ওঠা কৃতজ্ঞতার সবটুকু বলা হবে দিনে অন্তত পাঁচবার। আমাদের সিজদাগুলো মুখরিত হোক কৃতজ্ঞতা, চাওয়া পাওয়া আর গভীরতম ভালোবাসায় ভেজানো নীরবতার রূপালি আলোয়।

আমাদের প্রতি প্রাণে বাজুক একটাই সুর- “সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমাকেই”।

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

About The Author

আমি মুহাম্মাদ তোয়াহা আকবর। একাডেমিক পরিচয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন বায়োটেকনোলজিস্ট। আগ্রহ বিজ্ঞানে এবং গবেষণায়। তারচেয়েও বেশি আগ্রহ পড়ানোতে। নৈতিক এবং আদর্শিক জীবনে একজন মনেপ্রাণে মুসলিম। নাস্তিকতা ছেড়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার অশেষ করুণা আর দয়ায় ইসলামের আলো চিনে এ পথে আসতে পেরেছি ২০১২ তে। এখন শিখছি। আরো বহু দূর পথ পাড়ি দিতে হবে জানি। অনন্তের জীবনের পাথেয় কুড়োতে বড্ড দেরী করে ফেলা একজন দূর্ভাগা হিসেবে নয়, বাঁচতে চাই সোনালি দিন গড়ার প্রত্যয়ে। ক্ষণিকের বালুবেলায় যে কটা মুক্তো কুড়োতে পারি সেই তো আমার লাভের খাতার শব্দমালা। হাঁটার পথে একটা দুটো মুক্তোর কথা, উপলব্ধির কথা লিখবো বলে এখানে পতাকা পুঁতেছি। আমি থাকবোনা একদিন। আমার খুঁজে পাওয়া কিছু মুক্তো হয়তো থেকে যাবে প্রজন্ম ছুঁয়ে প্রজন্মে। হয়তো হবে কারো আলোর মশাল। আর সে আগুন ছড়িয়ে যাবে সবখানে।

Related Posts

Loading Facebook Comments ...

2 Responses

Leave a Reply to Mozammel Hoque Cancel Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive