বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ এখনও ইসরা‌ইল বিদ্বেষী। পত্রিকাওয়ালারাও ইসরাইলের বিরুদ্ধে লিখায় মানুষ ইসরাঈলকেই ঘৃণা করে। তাও অধিকাংশ মানুষই ইসরাইল বৈধ-অবৈধ হবার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিগুলো খুঁজে দেখেন না। এ কারণে আপনি যদি নেতানিয়াহুর মুখ থেকে সরাসরি শুনেন কেন ইসরাইল বৈধ,তাহলে আপনিও কিন্তু তার যুক্তিতে কনভিন্সড হয়ে যেতে পারেন। ইনফ্যাক্ট, ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ ইসরাইলকে বৈধ এনটিই মনে করে। এবং এর ব্যাসিসে তারা কথা বলে। তারা মনে করে ইসরাইল এবং তার রাজধানী জেরুজালেম ইহুদীদের কাছেই থাকা উচিত।  ওবামা, ক্যামেরন, নেতানিয়াহুর যাবতীয় বক্তব্য এখন ইউটিউবে পাওয়া যায়, তাই জায়নিস্ট প্রচারণা এখন সবার হাতের নাগালে, যে কারণে ইসরাইলের বৈধতার পক্ষে ইদানীং কিছুটা জনমত গড়ে উঠেছে এবং বাংলাদেশের কিছু মানুষ (যারা সংখ্যায় একেবারে নগন্য নয়) এটা সমর্থনও করছে। সবচেয়ে দু:খের কথা – কলকাতায় ইসরাইলের পক্ষে মিছিলও হয়েছে। এভাবে চললে আর কিছুদিন পর তো ঢাকাতেও হবে, কারণ ঢাকা এখনও কলকাতা থেকেই ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে যাচ্ছে: এখন এটাই আশংকা। সাধারণত মুসলিম নেতারা মিডিয়ায়, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে, বা  জাতিসংঘে গিয়ে ‘কেন ইসরাইল অবৈধ’ তা রিলিজিয়াস বা সেক্যুলার পারস্পেক্টিভ থেকে ব্যখ্যা করেন না। যে কারণে ইউরোপে-আমেরিকায় লেজিটিমেসির পয়েন্টে ইহুদীরা সবসময়ই এগিয়ে থাকে। মুসলমানরা এই পয়েন্ট ধরে না গিয়ে ‘ইসরাইল অনেক অত্যাচারী’ – এই পয়েন্ট ধরে আগায়। যার ফলে, বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের পক্ষে জনমত শুধু ‘মায়া-দয়া-ভালবাসা’র ভিত্তিতে গড়ে উঠে, কিন্তু ‘লেজিটেমেসি’র দিক থেকে ইসরাইল যে অবৈধ তা মিডিয়ায় প্রচার না হওয়ায় ইসরাইলকে ‘এলিমিনেট’ করার কথা মুসলমানরা মুখেও আনতে পারেনা। যার কারণে সবসময় ‘একটি ইসরাইল রাষ্ট্র এবং একটি ফিলিস্তীন রাষ্ট্র’- এরকম একটি সমাধান’ আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সে জন্যই এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।

 জায়নিস্টদের পক্ষ হতে ইসরাইলের স্বপক্ষে সবচে’ বড় যুক্তিগুলো হচ্ছে এই –

IIRT Arabic Intensive

(১) ৩ হাজার বছরেরও পূর্বে তাদের আদি পুরুষ ইবরাহীম (আঃ) দুনিয়ায় (জেরুজালেমরই আশেপাশে কোথাও) আগমন করেন। পরবর্তীতে তাঁর বংশধর রাঃ (যারা ইয়াকুব (আঃ) এর বারো পুত্র হতে এসেছেন, বনী ইসরাইল নামে পরিচিত) জেরুজালেম এ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। [ইসরাইল হল ইয়াকুব (আঃ) এর আর একটি নাম।] কিং দাউদ এবং তদীয় পুত্র কিং সুলাইমান(আঃ) জেরুজালেম হতে বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেন (এবং তাঁদের সময়ে বনী ইসরাইল এর শাসনই দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন ছিল এটাই সত্য, কারণ তারা তখনকার মুসলিম)। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আসিরিয়ান, ব্যাবলনিয়ান এবং রোমানদের দ্বারা আক্রান্ত হন – এবং এরা একাধিকবার জেরুজালেম দখল করে জেরুজালেম ধ্বংস করে এবং বনী ইসরাইলকে জেরুজালেম থেকে উৎখাত করে। ফলশ্রুতিতে বনী ইসরাইল (তাদেরকে এখন আমরা ‘ইহুদী’ হিসেবেও জানি) সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়া যায় এবং তারা আর জেরুজালেমে তাদের হারানো সাম্রাজ্য গড়তে পারে নাই। এখন ১৯৪৮ সালে তারা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে জেরুজালেম সমেত ইসরাইল দখল করে নেয় এবং তারা তাদের হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করে।

সুতরাং যেহেতু তারা আগে থেকেই জেরুজালেমে ছিল তাই তারা জাস্ট তাদের পিতৃভূমিতেই ফিরে আসছে। ইবরাহীমের (আঃ) বংশধর হিসেবে, ইবরাহীম (আঃ) এর বিচরণের এই জায়গাটুকুতে কি তারা স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারেনা? তাই তাদের রাষ্ট্রটি বৈধ। মুসলিমদের উচিত এটাকে মেনে নেয়া।

(২) তাদের দ্বিতীয় যুক্তিটি একটি আবদার মাত্র। তা হল: আরবদের ২১ টি রাষ্ট্র আছে। আর এর মধ্যে জর্ডান অলরেডী একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র (এটা সত্য যে জর্ডানের লোকজন এথনিকালী প্যালেস্টাইনের অধিবাসীর অন্তর্ভুক্ত)। সুতরাং প্যালেস্টাইনে আর একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র কেন দরকার? ইসরাইলকে মেনে নিলেই তো হয়।

(৩) আর ইসরাইল তো পুরোটা নিচ্ছে না। ইসরাইল নিচ্ছে অর্ধেক আর ফিলিস্তীনকে তারা দিচ্ছে অর্ধেক; জেরুজালেমের অর্ধেক তারা নিবে, অর্ধেক মুসলিমদের দিবে। মানে ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নিলে (মানে একে বৈধতা দিলে) একটি ডিমিলিটারাইজড(!)  ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র মেনে নিতে ইসরাইল সহ ইউরোপীয়ান-আমেরিকানরা রাজী আছে। শর্ত একটাই ইসরাইলকে মেনে নিতে হবে। অসুবিধা কি?

আসুন এই যুক্তিগুলো একটু যাচাই বাছাই করি :

১. ক. হ্যাঁ, এটা সত্য যে তারা ইবরাহীমের (আঃ)  বংশধর এবং জেরুজালেম ইবরাহীমের (আঃ)  বিচরণক্ষেত্র, এটাও সত্য তারা ইবরাহীমের বংশধর। এটা্ও সত্য তাদের নবী সুলাইমান (আঃ)  এবং দাউদ  (আঃ)  জেরুজালেম হতেই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছেন। কিন্তু আমরা এখানে যেটা ভুলে যাচ্ছি, সেটা হল ইবরাহীমের (আঃ)  একমাত্র বংশধর তারাই নয়। ইবরাহীম (আঃ)  এর দুটি বংশধারা আছে: একটি বনী ইসরাইল, আর একটি বনী ইসমাঈল। বনী ইসরাইল হল তারা, আর বনী ইসমাঈল (আঃ) হল আরবরা।  এবং সুলাইমান (আঃ)  এবং দাউদ (আঃ)  আরব মুসলমানদেরও নবী।

এখন গত ৩ হাজার বছর ধরে নবী আসছিল বনী ইসরাইলেই। এই সময়ে বনী ইসমাঈলে কোন নবী আসেন নাই। কিন্তু সমস্যা হল, তারা তাদের নিজেদের নবীকেই মানতেন না এবং অনেক নবীকেই হত্যা করেছেন। সর্বশেষ তাদের প্রতি প্রেরিত ঈসা (আঃ)  কেও তারা মানে নাই। এরপর সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) বনী ইসরাইলে না এসে আসেন বনী ইসমাঈলে। যে কারণে তাদের আশা ভঙ্গ হয় এবং তারা মুহাম্মদ (সঃ) কে মানতে অস্বীকৃতি জানান। যদিও মুহাম্মদকে (সঃ) এমব্রেইস করার জন্য তারা মদীনায় গিয়ে বসে ছিলেন। এখন মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রচারিত দ্বীনই আসলে প্রকৃত দ্বীনী ইব্রাহীম (আঃ); যারা মুহাম্মদকে (সঃ) মানেনা, তারা বংশগত ভাবে ইবরাহীম (আঃ)  এর সন্তান হলেও তারা প্রকৃতপক্ষে দ্বীনী ইব্রাহীম (আঃ) এর উপর নেই, কারণ তারা ইব্রাহীমের (আঃ) নির্দেশ মানছেন না [ইব্রাহীম (আঃ) এবং তৎপরবর্তী প্রফেটদের নির্দেশ ছিল যখন মুহাম্মদ(সঃ) আসবেন তাঁকে যেন তারা মেনে নয়, এবং তাকেই ফলো করে]। তারা মিল্লাতে ইব্রাহীমের (আঃ) উপর নেই। আরও ভালভাবে বললে,  আল্লাহ তা’আলার কাছে বংশের আসলে তেমন কোন মূল্য নাই। এটা শুধুই মানুষের একটা আইডেন্টিটি মাত্র। যে এই আল্লহর আদেশ নিষেধ মানবে, সেই আল্লাহর প্রিয় হবে; আর যে আল্লাহর অবাধ্য হবে সে ইব্রাহীমের সন্তান হলেও আল্লাহ তাকে আযাব দিতে পারেন এবং তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারেন। আল্লাহর কাছে আইডিওলজী বা আদর্শ, এবং আক্বীদা, কর্ম, তাক্বওয়া এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, বংশ গুরুত্বপূর্ণ নয়। যারা ইব্রাহীমের আইডিওলজী ফলো করে তারাই প্রকৃতপক্ষে মিল্লাতে ইব্রাহীমের (আঃ) উপর আছে, এবং তারাই ইব্রাহীমের (আঃ) প্রকৃত বংশধর [মিল্লাত = পথ বা ওয়ে]। যদিও তারা ইব্রাহীমের সরাসরি বংশসূত্রে সন্তান না হয়ে থাকেন।

এখন, মুহাম্মদ (সঃ)  হলেন মূলত বনী ইসমাঈল, তাঁর সাথে অন্যান্য আরবরা এলাইড অবস্থায় আছে এবং তাঁরা ইব্রাহীম (আঃ) এর আদর্শকে মেনে নিয়েছেন [তবে সব আরব কিন্তু বনী ইসমাইল নন। বনী ইসমাইলরা আরবদের একটি শাখা মাত্র]  এমনকি অনারবরাও ইব্রাহীম (আঃ) এর আদর্শকে বুকে ধারণ করেন এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন; এঁরা সবাই এখনকার মুসলিম (তুর্কি, পার্সিয়ান, সিরিয়ান, পাকি, বাংগালী, মালয়ী – সবাই)। বংশগত দিক থেকে তো মুসলিমরা ইব্রাহীমের বংশধরদের ধারণ করেনই  এবং আদর্শগত দিক থেকে তাঁরা সবাই ইব্রাহীম (আঃ) এর উত্তর সূরী। সুতরাং ইব্রাহীম (আঃ) এর ভিটামাটি-মানি জেরুজালেম এবং তৎসংলগ্ন এলাকা (মানে সমগ্র ইসরাইল) ডিসার্ভ করেন প্রকৃতপক্ষে মুসলিমরাই। কারণ তাঁরাই ইবরাহীমের (আঃ) আদর্শের উপর আছে। একই সাথে জেরুজালেম হল মুসলমানদের প্রথম কিবলা, এবং মক্কা এবং মদীনার পর এটা গুরুত্বের দিক থেকে ৩য় গুরুত্বপূর্ণ শহর।

যেহেতু বর্তমানকার ইহুদীরা ইবরাহীমের আদর্শকে এক কোনাও মানে না, সেহেতু তারা প্রকৃতপক্ষে ইব্রাহীম (আঃ)  এর প্রকৃত বংশধর নয়। এজন্য তারা ইসরাইলের এক কোনাও ডিসার্ভ করেনা। মুসলমানরাই ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রকৃত আইডিওলজীকাল বংশধর (এবং সাথে এথনিকালও), সুতরাং ইসরাইলের পুরোটাই মুসলিমদের হতে হবে। যখন শক্তিতে কুলাবে, তখনই মুসলিমরা এটাকে ‘দ খ ল’ করে নিবে ইনশা আল্লাহ।

আপনি যখনই বললেন যে ইসরাইল একটি বৈধ রাষ্ট্র, তার মানে হল ইনডিরেক্টলি আপনি মেনে নিলেন ইহুদীরাই ইবরাহীমের প্রকৃত বংশধর, মানে ইহুদী ধর্ম সত্য ধর্ম আর ইসলাম ধর্ম মিথ্যা ধর্ম (আসতাগফিরুল্লাহ)। একারনেই ইসরাইলকে বৈধতা দেয়া মুসলিমদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এই যুক্তিটা ধর্মীয় যুক্তি, যারা মুসলিম না, তাদের কাছে এই যুক্তিটা টিকবে না। সুতরাং তাদের জন্য পরবর্তী পয়েন্ট।

১. খ. রাজনৈতিক দিক থেকে দেখি ইহুদীরা আসলে কতবছর জেরুজালেম থেকে ইসরাইল শাসন করেছে। আমি শুধু টাইমলাইন[১] উল্লেখ করছি।

খ্রিস্টপূর্ব (১০০০-৭২০) (তিনশ বছর,  সম্পূর্ণ বনী ইসরাইলের শাসন): দাউদ (আঃ) এরপর সুলাইমান (আঃ) আর এরপর অনেক ভাগে রাষ্ট্রটি ভাগ হয়ে যায়, তবে বনী ইসরাইলের শাসন কায়েম থাকে। (কিংডম অব জুডাহ, কিংডম অব আম্মন, কিংডম অব এডম, কিংডম অব ইসরাইল ইত্যাদি; কিংডম অব জুডাহ র ক্যাপিটাল ছিল জেরুজালেম, কিংডম অব ইসরাইল এর ক্যাপিটাল ছিল সামারিয়া।) ৮৩০ খ্রিস্টপূর্বে জেরুজালেমকে দেখুন ম্যাপে –

ইসরাইল: বৈধ না অবৈধ? কেন বৈধ বা কেন অবৈধ? - ম্যাপ ০১

খ্রিস্টপূর্ন ৭২১: আসিরিয়ানরা (বর্তমান সিরিয়ান পিপল এর পূর্বপুরুষ) ইসরাইলের কিছু অংশ দখল করে, সামারিয়ার পতন হয়। কিন্তু জেরুজালেমে ইসরাইলী শাসন অক্ষুণ্ন থাকে, আসিরিয়ানরা এই সিটি সীজ করলেও দখল করতে পারেনাই।

খ্রিস্টপূর্ব  (৫৮৬ – ৫৩৯): ব্যাবিলনীয়ান (বর্তমান ইরাক) সম্রাট নেবুচাদনেজার (বুখতেনজর নামেও পরিচিত) খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে জেরুজালেম দখল করেন। এবং সুলাইমান (আঃ) কর্তৃক নির্মীত ‘ফার্স্ট টেম্পল’ কে ধ্বংস করেন, বহু ইহুদী হত্যা করেন। সেই দিন ছিল বনী ইসরাইলের জন্য এক হৃদয়বিদারক দিন। তার মানে প্রায় ৫০০ বছর বনী ইসরাইলীরা, জেরুজালেম নিজেদের দখলে রাখে। এরপর তারা এর দখল হারায়। ৫৩৯ সাল পর্যন্ত জেরুজালেম ব্যাবিলনীয়ান দখলে থাকে।

খ্রিস্টপূর্ব (৫৩৯ – ৩২২): পার্সিয়ান সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ব্যাবিলনীয়ানদের হাত থেকে জেরুজালেম পুনর্দখল করেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে। তিনি ইহুদীদেরকে জেরুজালেমে ফেরার অনুমতি দেন। এবং তারা ধ্বংসাবশেষ এর উপর ‘সেকেন্ড টেম্পল’ গড়ে তুলে।

খ্রিস্টপূর্ব (৩২২ – ১৪১): ৩২২ এ আলেকজান্ডার জেরুজালেম জয় করেন। তার মৃত্যুর পর এটা গ্রীক কন্ট্রোল এ চলে যায়  এবং টলেমাইড এবং সেলুসিড দের দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব ১৪১ সাল পর্যন্ত শাসিত হয়।

খ্রিস্টপূর্ব (১৪১ – ৩৭): ইহুদীরা আবার জেরুজালেম দখল করে। এবং তা ১০০ বছর শাসন করে। হাসমোনিয়ান রুল ছিল এর নাম।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৭ – খ্রিস্টপরবর্তী ৬৩৮ সাল: এই পুরো সময়টাই জেরুজালেম ছিল রোমানদের এবং বাইজেন্টাইনদের দখলে (রোমান এবং বাইজেন্টাইন: দুইটাই একই সাম্রাজ্যের দুই পার্ট, তাই এদেরকে একসাথে লিখেছি।)। হেরড নামের এক রোমান জেনারেল খ্রিস্টপূর্ব ৩৭ সালে জেরুজালেম দখল করেন। রোমান সম্রাট টাইটাস ৭০  সালে জেরুজালেমে প্রবেশ করে ইহুদীদের ‘সেকেন্ড টেম্পল’ ধ্বংস করেন। ব্যাপকহারে ইহুদীদের হত্যা এবং বিতাড়িত করা হয়। খ্রিস্টপরবর্তী ৩২৪ সাল পর্যন্ত রোমানরা এবং ৩২৪ থেকে ৬৩৮ পর্যন্ত বাইজেন্টাইনরা (সেকেন্ড রোম) জেরুজালেম দখলে রাখে।

মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য পার্সিয়ানরা জেরুজালেম দখল করলেও (৬১৪-৬২৯ সাল) আবার তা বাইজেন্টাইনদের হাতে চলে যায়।

৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ : এই সময় জেরুজালেম সমেত সমগ্র ইসরাইল মুসলমানরা শাসন করে। ৬৩৮ সালে হযরত উমর (রাঃ) এর আমলে খ্রিস্টান বাইজেন্টাইনদের থেকে মুসলমানরা জেরুজালেম দখল করে নয় এবং উমর (রাঃ) নিজে জেরুজালেমে আসেন এই শহর এর দখল নেয়ার জন্য। ইহুদীদের জন্য জেরুজালেমকে ওপেন করে দেয়া হয় এবং ইহুদীরা স্বাধীন ভাবে ধর্ম কর্ম করে। এর কিছু সময় উমাইয়া, কিছু সময় আব্বাসী এবং বাকী সময় ফাতিমিজদের হাতে জেরুজালেম শাসিত হয়।

১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ – ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ: খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা জেরুজালাম দখল করে নেয় এবং এই শহরের সব মুসলিম এবং ইহুদীদের হত্যা করে। তারা ‘কিংডম অব জেরুজালেম ‘ নামে একটি দেশ বানায় বর্তমান ইসরাইল এর জায়গায়।

১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ – ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ: এই পুরো সময় জেরুজালেম মুসলিমদের হাতে থাকে। কিছু সময় আইয়ূবী, কিছু সময় মামলুক এবং বাকি সময় অটোম্যানদের (উসমানীয়) হাতে। উসমানীয়া আমলে ম্যাপে জেরুজালেমকে দেখুন:

ইসরাইল: বৈধ না অবৈধ? কেন বৈধ বা কেন অবৈধ? - ম্যাপ ০২

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ: উসমানীয়দের পতন হলে ব্রিটিশরা জেরুজালেম সহ বর্তমান ইসরাইল দখল করে নেয়। ১৯১৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত হাজার হাজার ইহুদীকে সমগ্র ইউরোপ থেকে এনে জেরুজালেম এবং এর আশেপাশের এলাকায় সেটল করা হয়। তারপরও ইহুদীরা মাত্র ১৫% ছিল টোটাল পপুলেশনের, যখন ১৯৪৭ সালে ইসরাইল গঠিত হয়।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ – ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ: ব্রিটিশটা ম্যান্ডেট এর মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র ইহুদীদের দান করে ১৯৪৮ সালে। আরবরা এতে রাজী হয় না, সব আরব দেশ (সিরিয়া, জর্ডান, মিশর) ইসরাইলকে আক্রমণ করে, কিন্তু তারা হেরে যায়। এবং ইসরাইল স্টাবলিশড হয় (ব্রিটিশ অর্থে এবং ব্রিটিশ আর্মস এমুনিশন নিয়ে) লক্ষাধিক ফিলিস্তিনীকে তাদের ভূমি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনীকে হত্যা করা হয়। তারপরেও জেরুজালেম এর অর্ধেকসহ পশ্চিম তীর ছিল জর্ডানের হাতে, এবং গাজা ছিল মিশরের হাতে। ফিলিস্তিনীরা জর্ডানে এবং মিশরে আশ্রয় নেয়।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল পুরো জেরুজালেম সহ পশ্চিত তীর জর্ডান থেকে নিয়ে নেয়। গাজা সহ সিনাই উপত্যকা মিশর এর হাত থেকে দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সালে মিশর এবং সিরিয়া মিলে ইসরাইলকে আক্রমণ করে। ক্ষয়ক্ষতি হলেও ইসরাইল ই এ যুদ্ধে জিতে যায়। পরে সালে মিশর চুক্তির মাধ্যমে (1978 Camp David, 1979 Egypt Israel peace treaty) ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়, এবং সিনাই আবার মিশর ফিরে পায়। গাজা এবং পশ্চিম তীর ইসরাইলী কন্ট্রোল এ থাকে।

১৯৯৩ সালে অসলো একর্ড এর মাধ্যমে আরাফাতের পিএলও  ইসরাইলের এক্সিস্টেন্সকে স্বীকৃতি দেয়। বিনিময়ে ইসরাইল পিএলও কে ‘প্যালেস্টাইন পিপল এর অথরিটি’ হিসেবে মেনে নেয়।

কিন্তু তারপরও সমস্যার সমাধান হয় নি, কারণ ‘প্যালেস্টাইন’ দের জন্য কোন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ইসরাইল দেয়নি, এবং ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে নির্বাচনে পি এল ও হেরে গেছে, এখন হামাস নির্বাচনে জিতে গেছে (১৩২ টি আসনের মধ্যে হামাস পেয়েছে ৭৪ টি, ফাতাহ পেয়েছে ৪৫ টি। কিন্তু ইসরাইল এবং আমেরিকা হামাসকে মানবে না, তাই ফাতাহ ক্ষমতায় রয়ে গেছে, শেষমেশ হামাস জোর করে গাজায় ক্ষমতা দখল করেছে, কিন্তু পশ্চিম তীর ফাতাহ এর আন্ডারে আছে।)।  হামাস ইসরাইলের এক্সিস্টেন্স কে স্বীকার করে না। হামাস মনে করে রাষ্ট্র হবে একটি, তা হবে ফিলিস্তিনী; ইসরাইলের কোন অস্তিত্ব থাকবে না।

যাহোক, মূল কথায় ফিরে আসি। উপরের দেয়া তথ্যে আমরা দেখলাম, যে গত ৩০০০ বছর ধরে শুধু ইসরাইলীরাই নয়, আরও অনেকেই জেরুজালেম এবং তদসংলগ্ন এলাকা শাসন করেছে।  জেনারেলী বিবেচনা করলে, এই সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

 ক) খ্রিস্টপূর্ব ১০০০- ৫৮৬ (৪১৪ বছর) + খ্রিস্টপূর্ব ১৪১- ৩৭ (১০৩ বছর) = ৫১৭ বছর শাসন শাসন করেছে বনী ইসরাইলীরা।

 খ) খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ – ১৪১ (১৮১ বছর, আলেক্সান্ডারের মেসিডেনিয়ান সাম্রাজ্য এবং গ্রীক সাম্রাজ্যের অধীনে) + খ্রিস্টপূর্ব ৩৭ – খ্রিস্টপরবর্তী ৬৩৮ (৬৭৫ বছর, রোমান এবং বাইজেন্টাইন কন্ট্রোল ) + ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ – ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ (৮৮ বছর, ইউরোপীয়ান ক্রুসেডার কন্ট্রোল )  = ৯৪৪ বছর শাসন করেছে বর্তমান খ্রিস্টিয়ান ইউরোপীয়ান এবং তাদের পূর্বপুরুষরা [মেসিডন+গ্রীক+রোমান+বাইজেন্টাইন, এরা এখন এক গোত্র (ন্যাটো) হয়েছে, তাই এদের একসাথে দেখিয়েছি ]

 গ) খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬-খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ (৪৭ বছর, ব্যবিলনীয় কন্ট্রোল) + খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ – খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ ( ২১৭ বছর, পার্সিয়ান কন্ট্রোল) + ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ – ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ (৪৬১ বছর, খোলাফায়ে রাশিদা+  উমাইয়া + আব্বাসিদ মুসলিম কন্ট্রোল)+ ১০৮৭ – ১৯১৭ (৮৩০ বছর, আইয়ূবী+মামলূক+ অটোম্যান মুসলিম কন্ট্রোল ) = ১৫৫৫ বছর শাসিত হয়েছে মুসলিম অথবা তাদের পূর্বপুরুষ দ্বারা [ব্যবলনীয়রা হল ইরাকিরা এবং পার্সিয়ানরা হল ইরানীরা, এরা তো এখন মুসলিম ব্লকে আছে, এজন্য এদেরকে মুসলিমদের পূর্বপুরুষ ধরেছি]

তার মানে জেরুজালেমের দাবীদার ৩টি গ্রুপ ইহুদী, অল ক্রিশ্চিয়ান ব্লক এবং অল মুসলিম ব্লক এর মধ্য ইহুদীরা মাত্র ৫১৭ বছর, অল ক্রিশ্চিয়ানরা ৯৪৪ বছর এবং অল মুসলিম ব্লক ১৫৫৫ বছর শাসন করেছে।

সুতরাং, ইহুদীদের যে যুক্তি যে তারা অতীতে জেরুজালেম (এবং তদসংলগ্ন এলাকা) শাসন করেছে, এবং এটা তাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহীমের ভিটামাটি তাই এটা তাদের হওয়া উচিত; সেই একই যুক্তিতে মুসলিমরাও কিন্তু অতীতে জেরুজালেম শাসন করেছে (এবং মুসলিমরা ১৫৫৫ বছর শাসন করেছে, ইহুদীরা ৫১৭ বছর করেছে), এবং মুসলিমরা বেশী সময় ধরে শাসন করেছে, একই সাথে মুসলমানরাও ইব্রাহীমের এথনিকাল ডিসেন্ডেন্টসদের ধারণ করে, ইব্রাহীম তো তাদেরও বাপ হয়। সুতরাং মুসলিমদের ক্লেইম জেরুজালেম এর উপর ইহুদীদের থেকে অনেক বেশী হয়।

ক্রিশ্চিয়ানরা মাত্র ৯৪৪ বছর শাসন করেছে, তাদের থেকেও মুসলিমদের ক্লেইম কিন্তু জোরালো, কারণ মুসলিমরা আরও বেশী সময় ধরে (১৫৫৫ বছর) এটা শাসন করেছে। এবং ক্রিশ্চিয়ানরা কিন্তু রোমান বা বাইজেন্টাইন, তারা ইব্রাহীমের সন্তান সন্ততি না, সুতরাং ক্রিশ্চিয়ানরা এই ব্যাপারে পিছিয়ে আছে।

আরও একটা ব্যাপার, মুসলিমরা রিসেন্টলি জেরুজালেম শাসন করেছে। (মানে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ অকুপেশন এর আগে)। সেই হিসেবেও মুসলিমরাই জেরুজালেম পায়। তার মানে ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক, সকল দিক বিবেচনায় মুসলিমরাই আসলে জেরুজালেম এবং তদসংলগ্ন এলাকাটি ডিসার্ভ করে।

২.”তাদের দ্বিতীয় যুক্তিটি একটি আবদার মাত্র। তা হল: আরবদের ২১ টি রাষ্ট্র আছে। আর এর মধ্যে জর্ডান অলরেডী একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র (এটা সত্য যে জর্ডানের লোকজন এথনিকালী প্যালেস্টাইনের অধিবাসীর অন্তর্ভুক্ত)। সুতরাং প্যালেস্টাইনে আর একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র কেন দরকার? ইসরাইলকে মেনে নিলেই তো হয়।”

এখানে প্রথম পয়েন্ট হল, এটা আরব ভিএস ইসরাইলী কনফ্লিক্ট নয়। এটা অল মুসলিম ব্লক ভি এস, যাইয়োনিস্ট ইহুদী ব্লকের কনফ্লিক্ট। কারণ আমরা জাতি/রাষ্ট্র ভিত্তিক চেতনায় কম ইন্টারেস্টেড, ইসলামী চেতনায় বেশী ইন্টারেস্টেড। এনিওয়ে, আরবদের ২১ টি (বা মুসলিমদের ৫৭ টি) দেশ থাকুক আর ২১০০ টি দেশ থাকুক এটা বড় কথা না। বড় কথা হল আমার বৈধ অধিকার আমি ছাড়বো কেন? জেরুজালেম মুসলিম উম্মাহর বৈধ অংশ, জেরুজালেম ইসলামের ৩য় গুরুত্বপূর্ণ শহর (মক্কা এবং মদীনার পরেই)  এবং জোর করে কেড়ে নিলে এটা মুসলিম উম্মাহ মানবে না। যারা জোর করে এটা দখল করেছে, তারা ফরেইন অকুপাইয়ার হিসেবেই বিবেচিত হবে।

৩. আর ইসরাইল তো পুরোটা নিচ্ছে না। ইসরাইল নিচ্ছে অর্ধেক আর ফিলিস্তীনকে তারা দিচ্ছে অর্ধেক; জেরুজালেমের অর্ধেক তারা নিবে, অর্ধেক মুসলিমদের দিবে। মানে ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নিলে (মানে একে বৈধতা দিলে) একটি ডিমিলিটারাইজড(!)  ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র মেনে নিতে ইসরাইল সহ ইউরোপীয়ানরা রাজী আছে। শর্ত একটাই ইসরাইলকে মেনে নিতে হবে। অসুবিধা কি?

– আমি আমার বৈধ ভূমির এক কোনাও ছাড়বো না, অর্ধেক দিবো কেন, কম পক্ষে গত ১৩০০ বছর এই অঞ্চল পুরাটাই মুসলিমরাই শাসন করেছে, এখন অর্ধেক তোমাদের দিতে হবে কেন? আর তোমাদের মিলিটারী থাকবে, আমাদের থাকতে পারবে না, এটা কেমন কথা?

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট: (বৈধতা বা লেজিটিমেসির প্রশ্নে) যা প্রতিটা মুসলিমেরই জানা থাকা উচিত। এই তথ্যগুলো প্রচলিত মিডিয়ায় সাধারণত স্কিপ করে রাখা হয়। আর অনেক পুরোনো খবর হওয়ায় এগুলো নিউ জেনারেশন মুসলিমরা অনেকেই খেয়াল করেন না।

৪. ১৯১৭ সালের আগে ফিলিস্তীন ছিল অটোম্যান খিলাফতের অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যানরা সম্পূর্ণ পরাজিত হয় এবং ফিলিস্তীনকে ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। জায়োনিস্ট ইহুদীরা ব্রিটিশ গর্ভনমেন্ট এর উপর চাপ সৃষ্টি করে একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের জন্য। এরপর ব্রিটিশরা ফিলিস্তীনকে ইহুদী বনী ইসরাইলকে দেয়ার প্ল্যান করে। ব্রিটিশরা  বেলফোর ডিক্লেরেশন এ ওয়াদা করে যে ফিলিস্তীনে ইহুদীদের জন্য ‘ইসরাইল’ রাষ্ট্রগঠন করা হবে। কিন্তু সমস্যা হয় এই একটা দেশ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ইহুদী ইসরাইলে নাই। ব্রিটিশরা এই প্রবলেম সলভ করার জন্য সারা বিশ্ব থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদী পপুলেশনকে মাইগ্রেশন করে ফিলিস্তীনে নিয়ে আসে এবং ফিলিস্তীনীদের সরিয়ে দিতে থাকে। ফিলিস্তীনীদের জমি-জমা ইহুদীদের কিনে দেয়া হয়। ১৯২২ সালে ইসরাইলে শতকরা ইহুদী ছিল মাত্র ১২ %, ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ পলিসির কারণে তা হয় ২৩%, ১৯৪৭ সালে তা হয় ৩২ %। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করা হয় জাতিসংঘের দেয়া ম্যান্ডেট এ। ফিলিস্তীনকে দুই ভাগ করা হয়, ইসরাইলের ভাগে পড়ে ৫৬% জায়গা, ফিলিস্তীনের ভাগে পড়ে ৪৪% জায়গা। মানে মাত্র ৩২% ইহুদী পপুলেশনের জন্য ৫৬% জায়গা ছেড়ে দিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্রগঠন করা হয়। আশেপাশের আরব দেশগুলো এটা না মেনে নিয়ে হামলা চালালে ইসরাইল, ফিলিস্তীনের পুরোটাই দখল করে নেয় (শুধু গাজা মিশরের দখলে, এবং পশ্চিম তীর জর্ডানের দখলে ছিল, তবে ১৯৬৭ সালে ইসরাইল গাজা এবং পশ্চিম তীরও দখল করে নেয়)। এখানে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, জার্মান হলোকাস্ট ইসরাইল এর পক্ষে জনমতকে জোরালো করেছে মাত্র, কিন্তু এটা ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের মূল কারণ নয়। আর আমার ব্যক্তিগত ধারণা, হলোকাস্টকে খুব বেশী ইগজাজেরেটেড করে প্রচার করা হয়েছে, যাতে ইসরাইলকে বৈধতা দেয়া যায়।  আসলে হলোকাস্ট এর বহু আগ থেকেই থিওডর হার্জল, বেন গুরিয়ানরা ইসরাইল গঠনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে দরকষাকষি করে আসছেন।

এটা খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা আছে নিম্নোক্ত ভিডিওগুলোতে –

ক. আমেরিকান সাংবাদিক এলিসন উইয়ার এর ব্যাখ্যা।

খ. নোয়াম চমস্কি’র ব্যাখ্যা।

তার মানে শতকরা হিসেবেও ইহুদীরা কম হওয়ায়, ইসরাইল রাষ্ট্রটি বৈধ নয়। ইহুদীরা ইসরাইলের মাইগ্রেটেড পপুলেশন হওয়ায়, এবং তারা ফিলিস্তিনীদের বের করে জায়গা দখলকারী হওয়ায় – তারা বৈধ নয়। এটা সম্পূর্ণ জোর-জবরদস্তি মূলক একটি রাষ্ট্র যেটি আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সামরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তায় টিকে আছে। পশ্চিম তীরে সেটেলমেন্ট এর পর সেটেলমেন্ট করে ফিলিস্তীনিদের জায়গা ইসরাইল দখল করে নিচ্ছে জোর করে, এবং ফিলিস্তীনীদের সংখ্যালঘু করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে – এ কারণেও ইসরাইল বৈধ নয়। ফিলিস্তীনী পপুলেশন কোনঠাসা হতে হতে আজ কি অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, তা দেখুন:

map-3

 আমরা কখনোই এই অবৈধ রাষ্ট্র মেনে নিবোনা। একে বৈধতা দিবো না। এটাকে ইল্লিগালী অকুপাইড টেরিটরি হিসেবে কাউন্ট করে যাবো। উত্তরাত্তর চেষ্টা করে যাবো সামরিকভাবে এই অঞ্চলটি দখলে নিয়ে আসার জন্য।  এবং যেহেতু ইসরাইল বৈধ নয়, সুতরা এর যেকোন জায়গায় যেকোন সময় হামলা চালানোই আসলে বৈধ, তা রকেট দ্বারা হোক, আর বিমান দ্বারাই হোক আর ট্যাংক বা কালাশনিকভ দিয়েই হোক। [একমাত্র চুক্তি করলে তা মেনে চলতে হবে, তবে চুক্তিতে ইসরাইলকে বৈধতা দিলে আমরা এটা মানবোনা।] ”একটি ইসরাইল রাষ্ট্র+একটি ফিলিস্তীন রাষ্ট্র” কোন সমাধান নয়, সমাধান হল ‘সকল ইহুদী/ইসরাইলীকে এলিমিনেট করা এবং পুরো ফিলিস্তীনই মুসলিমদের কব্জায় নিয়ে আসা।


[১] http://www.jewishvirtuallibrary.org/jsource/Peace/jerutime.html

     http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Jerusalem

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

3 Responses

  1. MD. Mizanur Rahman

    জাযাকাল্লাহ ভাই… অনেক অনেক পুরনো ইতিহাস জানতে পারলাম… স্পেশালি, প্যালেস্টাইন নিয়ে আমার ও অনেক ইন্টারেস্ট আছে… আমার প্রশ্ন হল যখন বেলফোর ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিল নকশা যখন প্রণয়ন করা হল তখন আরব দেশ গুলো কি করেছিলো।। ???

    Reply
    • Avatar photo
      মোঃ রেজাউল করিম ভূঁইয়া

      বেলফোর ডিক্লেরেশন হয়েছে ১৯১৭ সালে। ওই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পথে। সমস্ত আরব দেশ উসমানীয় খিলাফত থেকে বেরিয়ে এসে ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ কলৌনীতে পরিণত হচ্ছে। উসমানীয়ারা যতটা সম্ভব ইহুদীদেরকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছে ইসরাইল রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা হতে। কিন্তু ব্রিটিশদের হাতে ফিলিস্তীন চলে যাবার পর উসমানীয়াদের কিছু করার ছিল না। আরবরা উসমানীয়দের সাথে বেঈমানী করে ব্রিটিশদের পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়ে ব্রিটিশদের হাতে সমস্ত আরব ভূমি তুলে দেয়। যার ফল স্বরূপ ব্রিটিশরা ইসরাইল প্রতিষ্ঠার নীল নকশা করে। এতে বাধা দেয়ার কোন ক্ষমতা তখন আরবদের ছিল না।

      Reply

Leave a Reply to মোঃ রেজাউল করিম ভূঁইয়া Cancel Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive