যৌনতার ব্যাপারে ইউরোপের অভিজ্ঞতাটা বিচিত্র। গ্রীক সভ্যতায় লাগামহীন যৌনতার ইতিহাস পাওয়া যায়। গ্রীক দেবদেবীদের অবাধ যৌনতা থেকে সমাজে যৌনতার চর্চাটা আঁচ করতে পারেন।  দেবরাজ জিউসের অভ্যাসই ছিল একের পর এক দেবী-জলদেবী-মানবীদের সাথে উপগত হওয়া। এমনকি সুদর্শন বালক গ্যানিমিডের প্রতি আসক্তি থেকে গ্রীকসমাজে সমকামিতার একটা আবহও ভেসে ওঠে। রোমান সমাজে যদিও একবিবাহ স্বীকৃত ছিল, এমনকি জাস্টিনিয়ান কোডে লিখিত আছে: প্রাচীন রোমান আইনে স্ত্রী ও রক্ষিতা একসাথে রাখাকেও অবৈধ করা হয়েছিল। কিন্তু ফল দাঁড়ালো এটা যে, পতিতাবৃত্তি হয়ে গেল ব্যাপক [1]। ফলে আইনে একবিবাহ থাকলেও বহুগামিতাই ঘুরেফিরে রয়ে গেল (Monogamy de jure appears to have been very much a façade for polygamy de facto.) এমনকি রোমান সমাজে সমকামিতাও অনুমোদিত ও প্রচলিত ছিল [2]।

ওদিকে ইহুদিরা নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন অনুসরণ করত। ব্যভিচার-সমকামিতা ছিল মৃত্যুদণ্ড-প্রাপ্য অপরাধ। ইহুদী সমাজে বহুবিবাহ বৈধ ছিল । একাধিক স্ত্রী থাকলে সম্পদ বণ্টনের নীতিমালা কী হবে, তা পুরাতন বাইবেলে আছে।

IIRT Arabic Intensive

 

বৈরাগ্যবাদ

এরপর ইউরোপ মধ্যযুগে প্রবেশ করল। মানবরচিত পলিয়ান খৃষ্টবাদ রোমানদের অবাধ যৌনচর্চাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনল।  খৃষ্ট নিজে ইহুদি হবার সুবাদে প্রথম যুগের খৃষ্টানরা একাধিক বিবাহে আপত্তি করেননি। কিন্তু রোমান সমাজের প্রভাবে খৃষ্টবাদে একবিবাহ নির্ধারণ করে দেয়া হল। পণ্ডিত st. Augustine-এর (মৃত্যু ৪৩০ খ্রি:) বলেছিলেন: আমাদের এই সময়, রোমান প্রথার সাথে তাল মিলিয়ে একের অধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি নেই’। ফাদার Eugene Hillman বলেন, রোমান গীর্জা থেকেই বহুবিবাহ নিষেধ করা হয়েছিল [3]

এটা ছিল আম-সমাজের জন্য। কিন্তু ধর্ম-দর্শন হিসেবে যৌনতার ব্যাপারে খৃষ্টধর্ম অবস্থান নিল মানব-ফিতরাতের বিপরীতে। যারা ধর্মপরায়ণ হতে চান, ধর্মের সাধনা করে পরম আত্মিক সাফল্য পেতে চান, তাদের এই মহাযাত্রাপথে প্রধান বাধা হল— দুনিয়া। অপবিত্র পৃথিবীতে মানুষ পদস্খলিত হয়েছে আদমের আদিপাপের কারণে, যা লেপ্টে আছে প্রতিটি মানুষের গায়ে। সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে ও খৃষ্টের প্রিয়পাত্র হতে হলে এই নশ্বর ঘৃণ্য দুনিয়ার  চাহিদা, ভোগকে অবদমন করতে হবে। দুনিয়ার সম্পর্ক, সম্পদ ত্যাগ করে মঠবাসী জীবন বেছে নিতে হবে, সারাজীবন যাজক-নানরা বিবাহ করতে পারবে না। পানি ব্যবহার ত্যাগ, লাগাতার উপবাস, নিজেকে নানাভাবে কষ্ট দেয়া, মানবিক চাহিদাকে বঞ্চিত করা, আত্মীয়দের বঞ্চিত করে চার্চের নামে সম্পদ লিখে দেয়া ইত্যাদির মধ্যে স্বর্গ তালাশ চলতে লাগল। ভয়াবহ আকার ধারণ করল বৈরাগ্যবাদ। আত্মা ও বস্তু পৃথকীকরণ আর অবতারবাদের গ্রীক দর্শন খৃষ্টধর্মকে ঈসা আ. এর শিক্ষা থেকে পুরোপুরি নিঃসম্পর্ক করে ফেলল। আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন: “তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ‘রাহ্‌বানিয়্যাত’ বা বৈরাগ্যবাদ-কে আবিষ্কার করেছিল। আমি তাদের উপর নির্ধারণ করিনি”– (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭:২৭)।

হাজার হাজার মানুষ নাজাতের জন্য বৈরাগ্য গ্রহণ করল। William Edward Leekey তাঁর  History Of European Morals গ্রন্থে জানাচ্ছেন। এক একজন পাদ্রীর অধীনে কী পরিমাণ মানুষ বৈরাগ্যচর্চা করত একটু নমুনা দেখা যাক—

পাদ্রী অধীনস্থ মঠবাসীর সংখ্যা
সেন্ট পেখোমিয়াস ৭,০০০
সেন্ট জেরোম ৫০,০০০
নিট্রিয়ার একজন এবোট ৫,০০০
সেন্ট পেরাপিয়ান ১০,০০০
মিসরের ‘অক্সিরিনকাস’ শহরের প্রায় সবাই। ২০,০০০ কুমারী নারী ও ১০,০০০ সন্ন্যাসী
৪র্থ শকের শেষদিকে মিসরে মঠবাসীদের সংখ্যা আর শহরবাসীদের সংখ্যা প্রায় সমান হয়ে আসে।

আরেকটু না বললে আসলে এই সময়ের ভয়াবহ আধ্যাত্মিকতা বুঝা যাবে না। কেন আজ ইউরোপ ধর্মকে শত্রু হিসেবে দেখে, সেটা বুঝতে হলে আমাদের এই ইতিহাসগুলো জানতে হবে। Leekey-র বিবরণ থেকে বৈরাগ্য চর্চার যে পদ্ধতিগুলো আমাদের সামনে আসে—

  • ৩০ বছর যাবত দিনে ১টি রুটি খেয়ে কাটানো
  • গর্তে বসবাস ও প্রতিদিনের খাবার ৫টি ডুমুর
  • বছরে একবার চুল কাটা, ময়লা কাপড় পরা, চোখ ঝাপসা না হওয়া অব্দি উপোস করা
  • ইচ্ছে করে মাছিকে দেহে কামড়ানোর সুযোগ দেয়া
  • শরীরে ৮০ পাউন্ড, ১৫০ পাউন্ড লোহা বহন করা সবসময়
  • ৩ বছর শুকনো ইঁদারার ভিতর বসবাস
  • ৪০ দিন ৪০ রাত কাঁটাঝোপে অবস্থান
  • ৪০ বছর বিছানায় গা না লাগিয়ে ঘুমানো
  • এক সপ্তাহ যাবত কিচ্ছু না খাওয়া, না ঘুমোনো
  • পানি স্পর্শ না করা। পানি ছোঁয়া, পা ধোয়া, হাত ধোয়াকে পাপ মনে করা।
  • শরীরে এমনভাবে রশি বেঁধে রাখা যাতে শরীর কেটে পোকা ধরে যায়।
  • ১ বছর যাবত দাঁড়িয়ে থাকা
  • পরিবারের সাথে আর কোনোদিন দেখা না করা

 

বৈপরীত্য

এই অসম্ভব দুনিয়াত্যাগ মানবিকভাবে অসম্ভব প্রতিভাত হল। সমাজে একটা অংশ অতিভোগবাদী হতে থাকল, তাও আবার চার্চের কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিরাও এর মধ্যে। একদিকে গীর্জা-মঠে মায়া-প্রেম-চাহিদার পৈশাচিক অবদমন। আরেকদিকে শহরে পাপাচারের জোয়ার। এই অসম্ভব জীবন স্বয়ং পাদ্রীদের পক্ষেই বজায় রাখা সম্ভব হত না। সেন্ট বার্নার্ড বলেছিলেন: গীর্জাকে যদি সম্মানজনক বিবাহ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তাকে অবৈধ পত্নী গ্রহণ, নিকটাত্মীয়দের সাথে যৌনসম্পর্ক এবং অন্যান্য সব অপবিত্রতা ও পাপাচারের দিকে ঠেকে দেয়া হবে’।[4] তাঁর এ কথা যাজকেরা কানেই তোলেনি। ঠিকই মঠগুলো হয়ে ওঠে গোপন কিন্তু অবাধ যৌনতার লীলাভূমি। কুমারী নারীদের সাথে সহাবস্থান ও সম্পদের অবাধ প্রবাহ স্বয়ং মঠাধ্যক্ষদেরও ইন্দ্রিয়পূজার দিকে ঠেলে দেয়। পোপের পক্ষ থেকে এর শাস্তি ছিল বড়জোর অন্য মঠে বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসর। ফলে সাধারণ জনগণ ও রাজক্ষমতার কাছে যাজকদের মর্যাদা কমতে থাকে। ঘৃণা এমন তীব্র হয় যে, ‘মঠবাসী’ পরিণত হয় গালিতে[5]।

ধর্মের আবরণে খৃষ্টবাদীরা সীমাহীন ভোগ, দুনিয়াপরস্তি, ইন্দ্রিয়সুখে গা ভাসায়। জার্মানির এক-তৃতীয়াংশ ও ফ্রান্সের এক-পঞ্চমাংশ সম্পদের মালিক ছিল চার্চ। কিন্তু পার্লামেন্টের প্রকিউরার জেনারেল ১৫০২ সালে হিসেব করে দেখান, ফ্রান্সের তিন-চতুর্থাংশের মালিক চার্চ। ইতালির এক-তৃতীয়াংশ ভূমির মালিক চার্চ। [6]

এভাবেই যাজকদের অনৈতিকতা, শতাব্দীর পর শতাব্দী ডাইনী-নিধন, বুবোনিক প্লেগ, চার্চ-সমর্থিত সামন্ততন্ত্রের অত্যাচার, ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট যুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ ইউরোপে শুরু হল বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন— এনলাইটেনমেন্ট। ঘুণেধরা খৃষ্টবাদ-কে মানুষ অস্বীকার করল, ফিরে এল ইউরোপের পুরনো নিজস্বতা— ‘গ্রীক-রোমান বস্তুবাদ ভোগবাদ’। হিউম্যানিজম ধর্ম, বস্তুবাদী দর্শন, পুঁজিবাদী অর্থনীতি, ভোগবাদী জীবনধারা, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজরাষ্ট্রের সমন্বয়ে এল নতুন সভ্যতাপাশ্চাত্য সভ্যতা

উপনিবেশ আমলে এই সভ্যতাই ফেরি করে ফিরেছে ইউরোপ সারা দুনিয়ায়। ক্ষমতা, শিক্ষাক্রম, আইন করে নেটিভদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এই সভ্যতাই চাপানো হয়েছে। ‘এই সভ্যতায় সভ্য নেটিভ’রাই আজ ক্ষমতায় দেশে দেশে। মুখে মুসলিম দাবিদার আমরাও এই সভ্যতারই সন্তান, যে সভ্যতা প্রতি লাইনে লাইনে শব্দে শব্দে ইসলামের মেজায-দর্শন-লক্ষ্য-ফলাফলের বিরোধী। যে সভ্যতার প্রতিটি ডাকে কুফরের সুর, তার ধর্ম কুফর, তার দর্শন কুফর, তার অর্থনীতি কুফর, তার জীবনযাপন পদ্ধতি কুফর, তার সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তা কুফর। তার প্রতিটি আহ্বান আল্লাহ-কে অস্বীকারের আহ্বান, প্রতিটি বয়ান আল্লাহ-রাসূল-দীনকে অস্বীকার করে মানবজ্ঞানকে প্রাধান্য দেবার বয়ান। তার প্রতিটি মুখরোচক শব্দের আড়ালে জুলুম-বঞ্চনা-লোভ-অহংকারের মুখব্যাদান। একক সর্বশক্তিমান স্রষ্টার দেয়া সর্বাঙ্গসুন্দর সিস্টেমের বিপরীতে এই পশ্চিমা পুঁজিবাদী-বস্তুবাদী-ভোগবাদী সিস্টেম মানবজাতির চূড়ান্ত স্পর্ধা আর ঔদ্ধত্যের আস্ফালন।

 

ইসলাম: মধ্যপন্থা

আদর্শগতভাবে অতিভাববাদী খৃষ্টধর্ম আর অতিবস্তুবাদী পশ্চিমা সভ্যতার ঠিক মাঝখানে অবস্থান ইসলামের। আল্লাহ খোদ মুসলিমদের সম্বোধন করেছেন ‘মধ্যপন্থী’ উম্মত হিসেবে। ইসলামে আধ্যাত্মিকতা জগত-মায়া-চাহিদাকে ত্যাগ করে নয়, এগুলোকে সাথে নিয়ে এগুলোর ভিতরেই আধ্যাত্মিকতা।‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান’। [আল-কুরআন]  পাঠক একটু চিন্তা করলেই বিষয়টি ধরতে পারবেন।

  • ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলো না’[7] ইসলামের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি। এমন কিছু করা যাবে না, যা ধ্বংসের মুখে, ক্ষতির মুখে, অহেতুক কষ্টের মুখে ফেলে দেয়।
      • খাবার প্রস্তুত হলে নামাযের জামাত পিছিয়ে দেয়া।
      • সাহরি খাওয়া-ই সওয়াব। এবং যতটা দেরি করে খাওয়া যায়।
      • ইফতার যত দ্রুত সম্ভব, তত সওয়াব।
      • রোযার রাতে স্ত্রী সহবাস অনুমোদিত।
  • ‘প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বিদয়াত, প্রত্যেক বিদয়াতই পথভ্রষ্টতা, প্রত্যেক পথভ্রষ্টতাই দোযখ’[8]। নিজ থেকে নতুন কোনো পদ্ধতি তৈরি করে তাতে নাজাত তালাশ করা যাবে না। অতিরিক্ত কিছু করে আল্লাহকে পাওয়া যাবে না। নাজাত তো মিলবেই না, উলটো জাহান্নাম মিলবে। নিচে ৩ জন সাহাবীর হাদিসটি দেখুন।
  • মায়া ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি হবে না। মায়ার যথার্থ লালনেই চূড়ান্ত মুক্তি।
      • মায়ের পায়ের নিচেই জান্নাত।
      • পিতা জান্নাতের দরজা।
      • শ্রেষ্ঠ মুমিন যার ব্যবহার ভালো, তার ব্যবহারই ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়া লোকমা শ্রেষ্ঠ সদকা।
      • কন্যা সন্তান লালনে জান্নাতের ওয়াদা।
      • উত্তম সন্তান সদকায়ে জারিয়া।
      • প্রতিবেশীর হক এতো বেশি বলা হয়েছে, নবীজী আশঙ্কা করেছেন যে, প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ না বানিয়ে দেয়া হয়।
      • আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জাহান্নামী।
  • নাজাতের ও আধ্যাত্মিক উন্নতির শ্রেষ্ঠ সব চর্চা এই লোক-সমাজের মাঝে থেকেই করতে হয়—
      • ইলম চর্চা
      • জামাআতে সালাত
      • জুমআ ও ঈদের সালাতে বাধ্যবাধকতা
      • দান-খয়রাত, মিসকীন খাওয়ানো
      • জিহাদ
  • ইসলামের নবী ঘোষণা দিলেন: প্রত্যেক নবীর জন্য এক ধরনের বৈরাগ্যতা থাকে। আর আমার উম্মতের বৈরাগ্যতা হল আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদ। [9] জিহাদের উদ্দেশ্য হল, নতুন নতুন ভূখণ্ড জয় করে আল্লাহর দেয়া জীবনযাপন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে ঐ অঞ্চলের আইন-অর্থনীতি-সমাজ-সংস্কৃতি-প্রথায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হয়, ঐ জনগোষ্ঠী দুনিয়াতে সুখে দিনাতিপাত করে এবং আখিরাতের সুখের রাস্তা চিনতে পারে। অর্থাৎ পার্থিব বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার ভিতরেই আধ্যাত্মিক সর্বোচ্চ উত্কর্ষ লাভ। এটিই আল্লাহর চূড়ান্ত নৈকট্য লাভের পথটিই পৃথিবীতে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, পৃথিবী থেকে দূরে থাকা নয়। নবীজি বলেছেন: আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভের উপায় হল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। কোনো আমল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হিসেবে জিহাদের আমলের কাছাকাছিও হতে পারে না।[10] সর্বোচ্চ আমলটাও জনমানুষের মাঝে থেকেই করতে হয়,বৈরাগী হয়ে নয়।

আবার বস্তুবাদীদের মত যেকোনো মূল্যে বস্তু আহরণ ও পার্থিব চাহিদার অন্ধ-অনুসরণও করা যাবে না। লাগামহীন ভোগ-বিলাস মানুষকে অমানুষ করে তোলে। আরও অধিকতর আয়েশ-বিলাস-ফুর্তির দিকে নিয়ে যায়, যা খুলে দেয় জুলুম আর গুনাহের রাস্তা ।  নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— ‘দুনিয়াপ্রেম সকল পাপের মূল’[11]। আখিরাতের জবাবদিহিতা স্মরণে রেখে দুনিয়া ব্যবহার করতে হবে, দুনিয়াতেই থাকতে হবে, কিন্তু দুনিয়ার প্রেমিক হওয়া যাবে না। দুনিয়ার পিছনে সব ভুলে ছোটা যাবে না। ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ-র সুন্দর একটি কথা আছে: তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না, সন্তান তো মায়ের অনুগামী হয়। [12] ইমাম গাযালী রাহ. বলেন: নৌকা পানির ভিতরেই চলে, কিন্তু ভিতরে পানি ঢুকলে ডুবে যায়। আমরাও দুনিয়াতে চলবো, কিন্তু অন্তরে দুনিয়া ঢুকবে না।

ইসলামে প্রতিটি পার্থিব কাজই আধ্যাত্মিকতার সোপান। প্রতিটি দুনিয়াবি কাজই ধর্মীয় কাজ, আখিরাতের কাজ। খৃষ্টবাদের মত ধর্মীয় কাজ আর পার্থিব কাজের মধ্যে পার্থক্য ইসলাম স্বীকার করে না। একান্ত ব্যক্তিগত অভ্যাস, টয়লেট সারা, স্ত্রীসংসর্গ থেকে নিয়ে চুল কাটা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সন্তান-লালন, ব্যবসা, আইন-বিচার, রাষ্ট্র-ব্যবস্থা, সরকার-গঠন, যুদ্ধ— প্রতিটি কাজ, যা একজন মানুষকে করতে হয়, সবই ধর্মীয় কাজ, দীনের কাজ। এসব কাজ যদি কেউ আল্লাহ ও রাসূলের দেখানো নীতিমালা মেনে করে, আল্লাহকে খুশি করার জন্য করে, রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণে করে, তাহলে খাওয়াটাও ইবাদত হয়ে যায়, পোশাকটাও হয়ে যায় ইবাদত, রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনাও ইবাদত এবং আখেরাতের কাজ, ধর্মের কাজ। এসবের জন্যও সওয়াব হতে থাকে,  আল্লাহর নৈকট্য পেতে থাকে, এবং মৃত্যুর পর এগুলোর বিনিময়ে মহাপুরস্কারের আশা করতে পারে।

 

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌনচাহিদা

খৃষ্টবাদ বিবাহ ও নারী-সংসর্গকে আধ্যাত্মিকতার পথে অন্তরায় সাব্যস্ত করেছে। যারা আধ্যাত্মিক পরম উত্কর্ষ পেতে চায় তাদের অবশ্যই বিবাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। আজও গীর্জার ফাদার ও নান-রা কৌমার্যব্রত পালন করে থাকেন। বিপরীতে ইসলামে বিবাহ-ই পূরণ করে আধ্যাত্মিক উত্কর্ষের অর্ধেক।

  • নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

إذَا تَزَوَّجَ العَبدُ فَقَد استَكمَلَ نِصْفَ الدِّين فَلْيَتَّقِ اللهَ في النِّصف البَاقي
‘‘বান্দা যখন বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক ঈমান (দ্বীন) পূর্ণ করে। অতএব বাকী অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’’[13]

  • আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
    مَنْ رَزَقَهُ الله امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهُ عَلٰى شَطْرِ دِينِهِ فَلْيَتَّقِ الله فِي الشَّطْرِ الْبَاقِي
    ‘‘আল্লাহ যাকে পুণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন, তাকে তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকী অর্ধেকের ব্যাপারে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।’’[14]

বিবাহ ইসলামে একটি ধর্মীয় কাজ, এবং ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্যবাধকতা। বিনা কারণে বিবাহ না করা-ই নিন্দনীয়।

  • তিন জন সাহাবী একবার আম্মাজানদের কাছে এসে নবীজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৈনন্দিন আমল সম্পর্কে জানতে চান। শুনবার পর তাঁরা নবীজীর আমলকে কম মনে করলেন, উনি তো নবী, উনার জন্য ওটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের বাঁচতে হলে ওটুকুতে চলবে?

একজন শপথ করে ফেললেন: আমি লাগাতার রোযা রাখব, কখনও রোযা ভাঙব না।

আরেকজন বললেন: আমি রোজ সারারাত ইবাদত করব, একদম ঘুমাব না।

আরেকজনা প্রতিজ্ঞা করলেন: আমি কোনদিন নারীর কাছে যাব না, কোনোদিন বিয়ে করব না।

ঘটনাচক্রে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কানে কাহিনী পৌঁছে গেল।  তিনি এঁদের ডাকালেন। বললেন:

-তোমরা এমন এমন বলেছো?

-জি, ইয়া রাসূলুল্লাহ।

-তাহলে শোনো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় আমিই করি। সেই আমি রোযাও রাখি, আবার কোনো কোনো দিন রাখিও না। রাতে তাহাজ্জুদও পড়ি, আবার ঘুমিয়েও নিই। বিবাহ-শাদীও করি। কান খুলে শোনো, এগুলো আমার সুন্নাহ। যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমাদের কেউ না। [15]

 

  • উসমান ইবনু মায্‘ঊন রা. একবার বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য খাসি হবার অনুমতি চেয়েছিলেন। নবীজী কঠোর ভাষায় সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা জানিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করলাম:

-হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে খাসি হয়ে যাবার অনুমতি দিন।

যে কাউকে খাসি করে অথবা নিজে খাসি হয়, সে আমার উম্মতের মধ্যে নয়। বরং আমার উম্মাতের খাসি হওয়া হল সিয়াম পালন করা।

-তাহলে আমাকে ভ্রমণ করার অনুমতি দিন।

-আমার উম্মাতের ভ্রমণ হল আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়া।

-তাহলে আমাকে বৈরাগ্য অবলম্বন করার অনুমতি দিন।

-আমার উম্মাতের বৈরাগ্য হচ্ছে সলাতের অপেক্ষায় মাসজিদে বসে থাকা।[16]

দেখুন সাহাবী তিনটি দুনিয়াবিমুখী পদ্ধতির কথা জানালেন।  নবীজি তিনটিই নাকচ করলেন।  তার বিকল্প হিসেবে এমন ৩টি পদ্ধতি বললেন, যা সামাজিক কাজ, সমাজের ভিতরে থেকেই করা যায়। বরং আরও বেশি সামাজিক অনুভূতি (রোযা), সামাজিক প্রতিষ্ঠা (জিহাদ) ও সামাজিক ইন্টার‍্যাকশনের (আগে আগে মসজিদে যাওয়া) দিকে নিয়ে যায়।

আমভাবে বিবাহ করা সুন্নাহ। বিবাহ না করলে যে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তার জন্য বিবাহ ফরয। শুধু তাই নয়, বিবাহ-বহির্ভুত যৌন-সঙ্গম যেমন গুনাহের, স্ত্রী-সংসর্গ তেমনই সওয়াবের।

  • একবার গরীব সাহাবীরা এলেন:

-ইয়া রাসূলুল্লাহ, ধনীরাই তো সব নেকী নিয়ে গেল। আমরা সালাত পড়ি, তারাও পড়ে। আমরা রোযা রাখি, তারাও রাখে। কিন্তু তারা সদকা করে, কিন্তু আমরা তো করতে পারি না।

-আল্লাহ তো তোমাদের জন্যও সদকার ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রতিবার আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা (তাসবীহ) সদকা, প্রতিবার আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা (তাকবীর) সদকা, প্রত্যেকবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা (তাহলীল) সদকা, প্রতিবার আল্লাহর শোকর করা (তাহমীদ) সদকা, সৎকাজে আদেশ করা সদকা, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করাও সদকা, এমনকি প্রত্যেকের যৌনাঙ্গেও রয়েছে সদকা

-ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ স্ত্রীর সাথে নিজের কামনা পূরণ করলেও সওয়াব?

-কেন? সেটা হারাম কাজে ব্যবহার করলে কি গুনাহ হত না?

-জি, তা হতো।

তাহলে তা হালাল কাজে ব্যবহার করলে তার জন্য নেকী তো হবেই। [17]

 

এই প্রান্ত

ঠিক যেমন পৌলীয় খৃষ্টবাদ একটা কৃত্রিম জীবন-ব্যবস্থা, একদম উল্টোপাশে পশ্চিমা সভ্যতাও কৃত্রিম দীন (জীবন ব্যবস্থা), দুটোই জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছে। আর মাঝখানে ইসলাম ফিতরাতের (সহজাত স্বভাবসুলভ) দীন। পশ্চিমা সভ্যতার লক্ষ্য মুনাফা আর ভোগ, যার হাতিয়ার জুলুম-বঞ্চনা। ইসলামের লক্ষ্য ইহকাল-পরকালে মুক্তি, হাতিয়ার ইনসাফ ও অধিকার। পশ্চিমা সভ্যতা নারী-পুরুষের বায়োলজি-বিরুদ্ধ, সাইকোলজির বিপরীত। আর ইসলাম সংগতিপূর্ণ। পশ্চিমা সভ্যতা উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বিচ্ছিন্ন মানবসত্তাকে।  আর ইসলাম মানবসত্তাকে করে রাখে ‘সহস্র বন্ধন মাঝে মহানন্দময়’। মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয় আত্মিকভাবে, পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে; যেটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি।

ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আগাম-সমস্যা এড়ানোর এবং  উদ্ভূত-সমস্যা নিরসনের নির্দেশনা রয়েছে। জীবনের যতগুলো সেক্টরের মুখোমুখি মানুষকে হতে হয়, সবগুলো। ব্যক্তিক-শারীরিক-মানসিক-পারিবারিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-আইনী-রাষ্ট্রীয় এরকম প্রতিটি পদক্ষেপেই ইসলাম সমস্যা এড়িয়ে সমাধানের পথ দেখায়। কেননা ইসলাম কোনো সৃষ্টির বানানো নয়। ইসলাম এমন একজনের দেয়া যিনি আমাদের বায়োলজির স্রষ্টা, আমাদের সাইকোলজির স্রষ্টা, আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের স্রষ্টা, স্থান-কালের স্রষ্টা, প্রাকৃতিক নিয়মের স্রষ্টা (law of nature), সকল দৃশ্য-অদৃশ্য সৃষ্টির স্রষ্টা। তিনিই এমন একটা যাপন-সিস্টেম মানুষকে দিয়েছেন, যা মানুষ-প্রাণিজগত-উদ্ভিদজগত-পরিবেশ-সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য বজায় রেখে নিশ্চিন্ত-প্রশান্ত জীবনের খোঁজ দেবে, আর মৃত্যুর পরের জীবনে মহাসফলতা নিশ্চিত করবে। 

অবশ্যই পশ্চিমা সভ্যতার বস্তুগত সাফল্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করব। কিন্তু পশ্চিম থেকে দীন (জীবন পরিচালনার নীতিমালা) একজন মুসলিম নিতে পারে না। পশ্চিমের ভালোমন্দের মাপকাঠিতে জীবনকে চালাতে পারে না। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের পুঁজিবাদ-তাড়িত পাশ্চাত্য সমাজ ও পাশ্চাত্য সমাজ প্রভাবিত বিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতি-বিরোধী। মানুষের বায়োলজি-সাইকোলজি বিরোধী, পরিবেশ-ইকোলজি বিরোধী, মানুষের স্বাভাবিক একতা ও সংগঠন (পরিবার-সমাজ) প্রবণতার বিরোধী। যত দিন যাচ্ছে মানবজাতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই মুনাফা-চোখো সভ্যতা। পশ্চিমা সমাজ, সমাজতত্ত্ব, সামাজিক ধারণা এবং ‘সামাজিক ধারণা-প্রভাবিত যেকোনো নতুন গবেষণা’ থেকে যত দূরে থাকতে পারবেন তত আপনার জীবন সুন্দর হবে। পুঁজিবাদের করাল থাবা ও নিষ্পেষণ আপনি, আপনার দেহ-মন, আপনার পরিবার তত নিরাপদ থাকবেন। সুখী ও তৃপ্তিময় জীবন কাটাবেন। আর বিপরীতে যত আপনি ওহী-ঘেঁষা (কুরআন-হাদিস) জীবন কাটাবেন, তত নিশ্চিন্ত-ফুরফুরে জীবন কাটবে, পরকালেও থাকবেন টেনশন-ফ্রী।

এই সহজ কথাটা ওরা বুঝবে ট্রিলিয়ন ডলারের গবেষণা শেষে।

আর আপনি-আমি বুঝব আমাদের অমূল্য ঈমানের চোখে।

আলহামদুলিল্লাহি আ’লা দীনিল ইসলাম।    

 

রেফারেন্স:

[1] প্যারিসের Centre National De La Recherche Scientifique এর গবেষক Claudine Dauphin বলেন: গ্রেকো রোমান সমাজে যৌনতা ছিল ত্রিমুখী— স্ত্রী, রক্ষিতা ও পতিতা (The Wife, The Concubine And The Courtesan)। ৪র্থ শতাব্দীর এথেনিয়ান বক্তা Apollodoros বলেন: আমাদের ফুর্তির জন্য আছে বেশ্যারা, দেহের নিত্যদিনের সেবায় আছে রক্ষিতারা, আর বৈধ উত্তরাধিকারী উৎপাদনের জন্য আছে স্ত্রীরা।

[Prostitution In The Byzantine Holy Land  By Claudine Dauphin, Centre National De La Recherche Scientifique, Paris, Classics Ireland ,University College Dublin, Ireland, 1996 Volume 3]

[2] প্রাগুক্ত 

[3] ফাদার Eugene Hillman-এর Polygamy Reconsidered গ্রন্থের বরাতে Women In Islam Versus Women In Judeo-Christian Tradition, ড. শরিফ আবদুল আযিম, দারুল আরকাম, পৃষ্ঠা: ৭৬

[4] H.E. Lea, An historical sketch of sacerdotal celibacy, p331

[5] ইরেসমাস (১৫০২ খৃ.) এর সূত্রে Cambridge Modern History.

[6] Will Durant, The Story Of Civilization, p17

[7] আল-কুরআন

[8] আল-হাদিস 

[9] মুসনাদু আহমাদ ৩/২৬৬

[10] তারীখে বুখারী ও জামেউস সগীর ১/২০১, হাদিসটি হাসান।

[11] পরে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ

[12] ঐ 

[13] সহীহ আল-জামিউস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ হা/ ৬১৪৮, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, ইমাম আলবানী বলেন, হাদিসটি হাসান লিগাইরিহ

[14] ত্বাবারানীর আওসাত্ব হা/ ৯৭২, হাকেম হা/ ২৬৮১, বাইহাক্বী, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/ ১৯১৬, ইমাম আলবানী এটিকে হাসান লি গাইরেহী বলেছেন।

[15] আল-হাদিস 

[16] মিশকাতুল মাসাবিহ ৭২৪ [আবূ দাঊদ হাদীসটি হাসান সানাদে বর্ণনা করেছেন]

[17] মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ সূত্রে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আদাবুয যিফাফ

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive