“লজ্জা নারীর ভূষণ”- কথাটা সত্য। তবে আমাদের সমাজে বাক্যটির ভুল প্রয়োগ প্রচলিত। অনেকের ধারণা, লজ্জা কেবল নারীদেরই থাকতে হবে। অনেকে পর্দাকে শুধু নারীদের কর্তব্য মনে করেন। অথচ লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী) নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা ফরজ। অবশ্য নারীদের পর্দা এবং পুরুষদের পর্দার ধরনটা আলাদা। তবে কোনোটারই গুরুত্ব কম নয়।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সমাজ ইসলাম থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। মুসলিম হিসেবে পরিচিত মানুষদের অধিকাংশেরই ইসলামী জ্ঞান খুব কম। ফলে ইসলামের অনেক জরুরি বিষয়ের মতো পর্দাকেও আমরা গুরুত্বহীন বানিয়ে ফেলেছি। তবে আশার কথা হলো, ইসলাম জানতে এবং মানতে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কোনো একটা বিষয়ে ইসলামের বিধান না জানার কারণে হয়তো অনেকেই গুনাহ করে ফেলেন। কিন্তু ইসলামে কী বলা আছে তা জানতে পারলে অনেকেই আল্লাহর দয়ায় ফিরে আসেন। এই লেখাটা মূলত তাদের জন্য। আর সবার আগে আমার নিজের জন্য।
চোখ ছাড়া একটা মুহূর্ত কল্পনা করে দেখুন তো! সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে যেসব নিয়ামাত দিয়েছেন, একদিন সেসবের হিসাব তিনি নেবেন; দৃষ্টিশক্তির ব্যাপারেও আমরা জিজ্ঞাসিত হবো। আল্লাহ তা’আলা হাশরের ময়দানে আমাদের কাছে দৃষ্টিশক্তির হিসাব চাইলে কী জবাব দিবো ভেবে দেখেছি কি? যিনি চোখ দিলেন, তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী চোখকে পরিচালিত করেছি কি? আল্লাহ তা’আলা চোখ নামক অমূল্য সম্পদ দেওয়ার পাশাপাশি চোখের ব্যাপারে কিছু আদেশ-নিষেধও দিয়েছেন। আখিরাতে মুক্তির জন্য সেগুলো জানা খুবই জরুরি, বিশেষ করে যুবকদের জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “মুমিন পুরুষদেরকে বলো, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।” [সূরাতুন নূর (২৪): আয়াত ৩০]
কাজেই দৃষ্টি সংযত করা আমাদের জন্য আবশ্যক। এটা আমরা জানি এবং স্বীকারও করি। তবে এর স্বরূপ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। বাস্তব জীবনে দৃষ্টির সংযম কীভাবে করতে হবে তা জানতে হাদীসের দিকে যাওয়া যাক।
জারীর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, “কোনো মহিলার ওপর আমার আচমকা নজর পড়ে গেলে আমি কী করবো?” তিনি জবাব দিলেন, “তোমার নজর ফিরিয়ে নাও।” (আহমাদ, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী)
আরেকটি হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “একবার নজর পড়ে গেলে আর দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখো না। প্রথমবারের (অনিচ্ছাকৃত) নজর তোমার জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয়বারের নজর বৈধ নয়।” (আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী) তাছাড়া কুদৃষ্টিকে তিনি চোখের ব্যভিচার হিসেবেও অভিহিত করেছেন। (মিশকাত)
হে আমার মুসলিম ভাই, আপনি আল্লাহ তা’আলাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এরপর কি আপনার নিজের ইচ্ছামতো চলার সুযোগ আছে? আল্লাহ যা আদেশ করেছেন এবং তাঁর রাসূল যেভাবে শিখিয়েছেন, তার ব্যতিক্রম করার অধিকার কি আপনার আছে? তবে কেন আপনার উদাসীনতা? কেন আধুনিকতার নামে অসভ্যতায় গা ভাসানো? কেন কাফিরদের অন্ধ অনুকরণ করে জাতে ওঠার চেষ্টা? আল্লাহর সন্তুষ্টিই কি আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়?
(স্ত্রী ও মাহরাম ব্যতীত) কোনো নারীর দিকে তাকাতে আপনাকে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি ভুলক্রমে দৃষ্টি চলে গেলেও সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর যিনি আদেশ দিয়েছেন তিনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ। আপনি কীভাবে এ আদেশ ভুলে গেলেন?
আপনার মনে হতে পারে, হুজুররা কেন এত কঠিন জীবন বেছে নেয়? কেন এত নিয়ম-কানুনের মধ্যে নিজেকে বেঁধে ফেলে? কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে, তাদের জীবনে শান্তি অনেক বেশি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু আল্লাহর ভয়ে কোনো নারীর দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকলে যে কী অতুলনীয় মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, তা যদি আমরা বুঝতাম! ভাই, আপনিও চেষ্টা করে দেখুন, দৃষ্টিকে সংযত করুন, বেগানা নারী থেকে চোখ সরিয়ে নিন। একবার করেই দেখুন, ঈমানের স্বাদটা টের পাবেন ইনশা-আল্লাহ।
আপনাকে মুসলিম বানিয়ে আল্লাহ তা’আলা আপনার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আপনাকে দামী করেছেন। আপনার চোখ দুনিয়ার হারাম বস্তু দেখার জন্য নয়। আপনার চোখকে রক্ষা করুন। চোখ দিয়ে দুনিয়াতে আপনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সওয়াব অর্জন করুন। আখিরাতে উত্তম প্রতিদান পাবেন ইনশা-আল্লাহ।
জান্নাতে আপনার জন্য কী আছে তা কি আপনি জানেন? আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য জান্নাতে হুরদের প্রস্তুত রেখেছেন। সেই হুররা কেমন জানেন? তারা সৎ স্বভাবের। তারা পূর্ণযৌবনা। তারা অনিন্দ্য সুন্দরী। তারা আয়তলোচনা। কোন মানুষ বা জ্বিন কখনোই তাদেরকে স্পর্শ করেনি। তাদের সৌন্দর্যের সাথে দুনিয়ার কোনো সৌন্দর্যের তুলনা চলে না। উপরন্তু, আপনার স্ত্রীও জান্নাতি হলে তার সৌন্দর্য যে আরও বেশি হবে, তা তো বলাই বাহুল্য।
কিন্তু দুনিয়ায় নিজের ইচ্ছামতো চললে জান্নাত পাওয়া সম্ভব নয়। ইসলামের বিধান মেনে চললেই আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুত জান্নাত দিয়ে আপনাকে পুরস্কৃত করবেন, নতুবা নয়। আল্লাহর দেয়া চোখকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করতে পারলে জান্নাতের স্ত্রীদের সৌন্দর্য দেখে আপনার চোখকে শীতল করতে পারবেন ইনশা-আল্লাহ। দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করলে সেটা আশা করা যায় না।
অনেকে বলে থাকেন, “খারাপ দৃষ্টিতে না দেখলেই হলো। আমরা তো ‘খারাপ কিছু’ করছি না।” বস্তুত এই কথাগুলো হচ্ছে শয়তানের ধোঁকা এবং আমাদেরকে আল্লাহর বিধান থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র। মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই জানেন কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা মন্দ। তাঁর দেওয়া প্রতিটি বিধানের মধ্যে অবশ্যই উপকার আছে- সেটা আমরা বুঝতে না পারলেও।
নারীর প্রতি পুরুষের সহজাত আকর্ষণ আল্লাহরই দান। নারীর চেহারা দেখলে ও কণ্ঠ শুনলে তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া পুরুষের জন্য স্বাভাবিক- এটা আল্লাহ জানেন। তাই আমাদের রব আমাদেরকে পর্দার বিধান দেওয়ার মাধ্যমে যে কোনো ক্ষতি থেকে আমাদের বেঁচে থাকাকে সহজ করেছেন। ইসলামে আছে সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান। আপনি হয়তো বাজে চিন্তা করবেন না। কিন্তু আরেকজন করবে। বরং বাজে চিন্তা করবে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই পুরো সমস্যাটার মূলোৎপাটন করা হয়েছে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার মাধ্যমে।
এখানে আরেকটা কথা উল্লেখযোগ্য। ‘খারাপ কিছু’ বলতে কী বোঝাতে চাইছি আমরা? আল্লাহর একটা বিধানকে অমান্য করা হচ্ছে- এর চেয়ে খারাপ আর কী আছে? আমার দৃষ্টিতে ভালো-খারাপ বিচার করলে তো হবে না, ভাই। আল্লাহর দেওয়া মানদণ্ড দিয়ে বিচার করতে হবে। কারণ, ইসলামের মূল কথাই হলো ‘আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ’।
নারী সংক্রান্ত ফিতনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে আপনার ব্যক্তিগত দ্বীন পালনও বিঘ্নিত হবে। আপনি হয়তো সালাতে মনোযোগ ও স্থিরতা পান না। এর অনেক কারণের মধ্যে একটা হতে পারে নারীসঙ্গ। গায়রে মাহরামদের সাথে চলাফেরা করার কারণে আপনার সালাতের কত বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা আপনি হয়তো জানতেও পারছেন না। আপনি সিয়ামের বারাকাহ থেকেও বঞ্চিত হবেন এই ফিতনার কারণে। এও মনে রাখতে হবে যে, একটা গুনাহ থেকে আরও বহু গুনাহের রাস্তা খুলে যায়। তাই আপনাকে খুব বেশি সাবধান থাকতে হবে।
দাড়ি-টুপিওয়ালাদের সম্পর্কে অনেক বাজে কথা সমাজে প্রচলিত আছে। তার একটা বড় অংশ (অধিকাংশও হতে পারে) মিথ্যা কিংবা ভুল বোঝাবুঝি। তবে কিছু অংশ সত্যও বটে। এর কারণ হলো, অনেকে ইসলামের কিছু অংশ মানেন, আর বাকিটা মানেন না কিংবা মানতে পারেন না। দাড়ি-টুপিওয়ালাদের অনেককেই গায়রে মাহরামদের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে, হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা যায়। ইসলামী লেবাসধারীদের এই অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য আপনারও কিছু করণীয় আছে। প্রথমত, আপনি নিজে ইসলামী লেবাস ধারণ করে পুরোপুরি ইসলাম মানতে চেষ্টা করুন। দ্বিতীয়ত, যারা ভুল করছে তাদেরকে সাধ্যমতো বোঝান।
আপনি যখন যাবতীয় বাধা-বিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে ইসলামের পথে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবেন, তখন আপনাকে দেখে অনেকের ভুল ধারণা ভাংতে পারে। প্রচলিত ইসলামের বিপরীতে শুদ্ধ ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে অনেকেই জানতে পারবে আপনার মাধ্যমে। আপনাকে দেখে অনেকেই হয়তো গুনাহ থেকে ফিরে আসবে। আপনাকে দেখে অনেকেই হয়তো ইসলামে প্রবেশ করবে। তাদের সবার সওয়াবও আপনি পেয়ে যাবেন ইনশা-আল্লাহ। এত বড় প্রতিদানের লোভ হয় না, ভাই?
হে মুসলিম যুবক, আপনি স্মরণ করুন আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সতর্কবাণী। কিয়ামাতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ দুই পা সরাতে পারবো না। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো আমরা যৌবনকে কোন পথে ব্যয় করেছি। (তিরমিযী) সেদিন আপনার চোখ আপনারই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কিছু করার থাকবে না। যৌবন আল্লাহর দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একে অনর্থক গুনাহর কাজে নষ্ট করবেন না। বরং আল্লাহর পথে ফিরে আসার এটাই সেরা সময়। এই বয়সের ইবাদাত আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়।
ধীরে ধীরে এগোবেন ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই কয়েকটা করণীয় নির্ধারণ করে নিন-
■ গায়রে মাহরাম নারীদের সাথে দেখা করা ও কথা বলা ত্যাগ করুন। সেটা খালাতো/মামাতো/চাচাতো/ফুফাতো বোনই হোক, ভাবী/চাচী/মামীই হোক, আর ক্লাসমেট/কলিগই হোক। ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’, ‘বোনের মতো’, ‘মায়ের মতো’- এমন ধোঁকায় পড়বেন না।
■ টেলিভিশন দেখা ত্যাগ করুন।
■ মোবাইল/ল্যাপটপ থেকে সকল মুভি/নাটক/গান ডিলিট করে দিন।
■ ফ্রি-মিক্সিংয়ের আশঙ্কা আছে এমন জায়গায় যাওয়া পরিহার করুন। যেতে বাধ্য হলে নারীদের থেকে দূরে থাকুন।
■ ফেসবুকে কারো পোস্ট-লাইক-শেয়ার-কমেন্টের কারণে আপনার নিউজফিডে হারাম কিছু এলে তাকে আনফলো করে দিন।
■ কুরআন-হাদীস পড়ার পেছনে সময় দিন।
■ দ্বীনী ভাইদের সাথে সময় কাটান। একা থাকবেন না।
■ বিয়ে করুন। অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব না হলে নফল সিয়াম পালন করতে পারেন।
■ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকুন।
প্রথম প্রথম কঠিন লাগতে পারে। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য থাকলে অবশ্যই সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করুন। আল্লাহর আযাবকে ভয় করুন। জান্নাতের আশা করুন। জাহান্নামকে ভয় করুন। ধৈর্য ধরে সরল পথে অটল থাকুন। এই পথের শেষ সীমানাতেই পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য- জান্নাত। ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ যেন আমাকেও সেখানে আপনার সাথী বানিয়ে দেন। আমীন।
[১] প্রচলিত ভুল মাসয়ালা-মাসায়িল – আশরাফ আলী থানভী (রাহিমাহুল্লাহ)
[২] যুব-সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান – আবদুল হামীদ ফাইযী (হাফিযাহুল্লাহ)
কারা মাহরাম সে সম্পর্কে জানতে এখানে দেখুন
মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।