যদি  কখনও এমন হয়, আপনি কোনো রাজা, রাষ্ট্রপতি অথবা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির সাথে দেখা এবং তার কাছে যা খুশি তা-ই চাওয়ার সুযোগ পান,  তবে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করবেন? একটু ভেবেচিন্তে বলুন। হয়তো আপনি খুব ভালোভাবে গোসল করে নিজের সর্বোত্তম পোশাকটি পরবেন। এমনও হতে পারে কেবল এই  উপলক্ষেই আপনি কিনে নিবেন একটি নতুন পোশাক। অন্ততপক্ষে নিজ শব্দভাণ্ডারের সর্বোত্তম শব্দগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইবেন। আপনার মনের মধ্যে বয়ে যেতে থাকবে অপ্রতিরোধ্য উচ্ছ্বাসের ঝড়; কারণ আপনি জানেন, এমন একজনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন যিনি আপনার পার্থিব সকল চাওয়া পূরণ করবে। কিন্তু শুরুতেই প্রশ্ন আসে, কী কারণেই বা তিনি আপনার সাথে দেখা করতে রাজি হবেন?

চলুন, বাস্তবতায় ফেরা যাক। যদি এমনটি হয়, আপনি সাক্ষাত করতে যাচ্ছেন রাজাধিরাজ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে, আর এটাও পুরোপুরি নিশ্চিত যে, যা চাইবেন তা-ই দেওয়া হবে আপনাকে? কিন্তু প্রশ্ন হলো, আল্লাহর কাছে নিজ প্রয়োজনের কথা জানানোর যথাযথ আদব কি আপনি শিখে নিয়েছেন? কখনও কি ভেবেছেন, আপনার দু’আগুলো কবুল হয় না কেন? হয়তো ভেবে নিয়েছেন আপনি অনেক বেশি পাপী, আর মনে করছেন আল্লাহর কাছে যা চেয়েছেন তিনি তা কবুল করবেন না।

IIRT Arabic Intensive

আচ্ছা … আরেকবার ভেবে দেখুন।

চাওয়া কিংবা আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা চাওয়ার সময় সবারই কিছু বিশেষ আদব মেনে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে কিছু আদব আধ্যাত্মিক, বাকিগুলো ব্যবহারিক এবং আনুষ্ঠানিক।

আধ্যাত্মিক আদব:

দু’আ কবুল না হওয়ার প্রথম এবং প্রধান কারণ হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ব্যাপারে সম্যকভাবে চিন্তা না করা।

“বলুন, কে নিঃসহায়ের ডাকে সর্বোত্তম সাড়া দানকারী যখন সে ডাকে?” [সূরা আন-নামল(২৭): ৬২]

ওমর বিন আল-খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন, “আমি দু’আ কবুলের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই, বরং আমি উদ্বিগ্ন  দু’আ করার ব্যাপারে। যখনই কোনো দু’আর ব্যাপারে আমি উৎসাহ বোধ করি, তখনই সেটি কবুল হওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত থাকি।”[]

মনের মধ্যে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে সংশয় রেখে যদি আমরা আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলি তাহলে আমরা তাই পাবো যার দিকে আমাদের মন ইঙ্গিত করছে। আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চেয়ে না পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে ধৈর্যহীনতা।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বান্দার দু’আ ততক্ষণ পর্যন্ত পূরণ হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে গুনাহ হয় এমন কিছু চায় অথবা রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে অথবা সে অধৈর্য হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নবী, “সে অধৈর্য হয়ে যায়”- এর মানে কী? তিনি বললেন, সে এরকম বলতে থাকে, “আমি দিনের পর দিন দোয়া করেই গেলাম কিন্তু উত্তর পেলাম না।” ফলশ্রুতিতে একসময় সে হতাশ হয়ে দু’আ করাই ছেড়ে দেয়।[]

ব্যবহারিক আদব:

আল্লাহর কাছে তওবা না করে ধারাবাহিক ভাবে পাপে নিমজ্জিত হওয়া দু’আ কবুল হওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায়। এ কারণেই আল্লাহর কাছে কোনোকিছু চাওয়ার আগে আন্তরিক অনুশোচনা এবং দ্বিধাহীন ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।

আল্লাহর কাছে আমাদের আর্জিগুলো পেশ করার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা করা, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাম, দু’আ এবং রহমত প্রেরণ করার ব্যপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে আল্লাহর দরবারে দু’আ করতে শুনলেন। তিনি (সাঃ) বললেন, “লোকটা তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলো।” তারপর তিনি তাকে ডাকলেন, তাকে এবং অন্য সবাইকে বললেন, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ প্রার্থনা করবে তখন মহিমান্বিত এবং পরাক্রমশালী পালনকর্তার প্রশংসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে শুরু করবে। তারপর তাঁর নবীর উপরে দরূদ পাঠ করবে…এরপরে সে যা ইচ্ছা করে তা চাইবে।”[]

আরেকটি ব্যবহারিক আদব যার কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে দু’আ করার সময়,  তা হচ্ছে বাগ্মীতা ও শৈল্পিকতার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময় উত্তম বাক্য ব্যবহারের যে সুন্নাহ তা অর্জন করা।

“আমাকে সংক্ষিপ্ত ভাষণের অধিকারী করা হয়েছে”- মুহাম্মাদ (সাঃ)[]

দু’আর মাঝে আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহের সমাবেশ ঘটানোও দু’আকে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করার অংশ। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করা হয় তখন ‘আর রহিম’, ‘আর রাহমান’ এই নামগুলোর মাধ্যমে কামনা করাই উত্তম।

আনুষ্ঠানিক শিষ্টাচার:

কতিপয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দু’আ করার অশেষ গুরুত্ব ও অপরিসীম তাৎপর্য রয়েছে। যথার্থ আদবের সাথে দু’আ করলে তা গৃহীত হওয়ার এবং আশানুরূপ সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়; উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,  যে কোনো ইবাদতের পর আল্লাহর কাছে দু’আ করা।etiquette-of-dua2

কিছু আদবের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো, তবে কোনোভাবেই তা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়:[]

▪কিবলামুখী হয়ে দু’আ করা

▪দু’আ কবুলের উৎকৃষ্ট সময় যেমন সিজদা, আযান ও ইকামতের মাঝে, তাহাজ্জুদের সময় দু’আ করা

▪দু’আর পূর্বে দান-সদাকাহ করা

▪অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিখুশি থাকা

▪দু’আর পূর্বে অযু করা

আল্লাহ যেভাবে আমাদের ডাকে সাড়া দেন-

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন কোন মুসলিম নেই যখন সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যার মধ্যে নিষিদ্ধ কিছু নেই অথবা সে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, যাকে আল্লাহ এই তিনটা জিনিসের মধ্যে একটা প্রতিদানস্বরূপ দেন, নাহয় সে যা চায় তা শীঘ্রই দিয়ে দেন অথবা পরকালে তার জন্য পুরষ্কারস্বরূপ সংরক্ষণ করেন অথবা সমপরিমাণ বিপদ আপদ থেকে তাকে মুক্ত করেন।[]

সবশেষে বলা যায়, আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম কিছু চাওয়া এবং তাঁর দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াটাই দু’আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন মন্তব্যের ঘরে।

উৎস: “ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি” (মূল আর্টিকেল লিঙ্ক)

অনুবাদক: উম্মে আফরাহ্, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি।

অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া


তথ্যসূত্র:

[১] আল ফাওয়া’ঈদ – ইবনুল কাইয়্যিম

[২] সহীহ, মুসলিম

[৩] সহীহ, আবু দাউদ

[৪] সহীহ, মুসলিম

[৫] শাইখ আবদুল্লাহ জিবরিন কর্তৃক পরীক্ষিত এবং সংক্ষেপিত

[৬] সহীহ, আল-আলবানি

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

2 Responses

  1. আবু আফরান

    অনেক সুন্দর অনুবাদ হয়েছে। বিদাত বিষয়ে অনুবাদ করুন। আমাদের সমাজ এখন বিদাতে ভরপুর। মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য সঠিক হাদিস জানার বিকল্প নেই। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন।

    Reply
  2. অম্রাউ যান

    অসাধারন। প্রেম , বিয়ে, পরকীয়া সমাজে বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে লিখুন। জিহাদ বিষয়ে লিখুন।

    Reply

Leave a Reply to অম্রাউ যান Cancel Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive