সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামীনের জন্য যিনি এই সমস্ত সৃষ্টি জগতের রাব্ব। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) এর উপর  শত শত দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।

গত কয়েক বছর ধরে কালাম ইন্সটিটিউটের কিছু শিক্ষকের সাথে পরিচয়ের সূত্রে  তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। সমকালীন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কীভাবে ইসলামি পন্থায় মুসলিমরা মোকাবিলা করবে, এসব নিয়ে তারা বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করে। কিছুদিন আগে এরকমই একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম; প্রোগ্রামটির নাম ছিল- ‘ঋণমুক্ত মুসলিম’। প্রোগ্রামটিতে অংশ নেওয়ার পর এই ভেবে আফসোস হচ্ছে যে, অন্তত ২ বছর আগেও যদি এরকম একটা প্রোগ্রাম হতো, তাহলে ঋণ নেওয়ার সমস্যাগুলো কী সেটা আরও আগেই বুঝতে পারতাম। ঋণের জালে জড়িয়ে পরার ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি। তবে, আল্লাহ চেয়েছেন আমাকে ঋণমুক্ত করে স্বচ্ছলতা দান করতে। যার কারণে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য ঈমান বৃদ্ধির এক বিশাল নেয়ামত হিসেবে পরিণত হলো। কীভাবে আমি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলাম, আর কীভাবেই বা সেখান থেকে মুক্ত হলাম আজকে সে অভিজ্ঞতাই আপনাদের সঙ্গে সংক্ষেপে শেয়ার করব।

IIRT Arabic Intensive

২০০৩ সালের কথা। আমি তখন নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি। সবে মাত্র ৬ সপ্তাহ হলো। জীবনের এই নতুন অধ্যায় নিয়ে আমি স্বাভাবিকভাবেই বেশ উত্তেজিত ছিলাম। একটা সেল ফোন খুব দরকার হয়ে পড়েছিল। আমার নতুন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ তথা কলেজ জীবনের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধির জন্য এটি আমার কাছে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। আমার বাবা-মা ছেলেমেয়েদের সেল ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহার, দামি জিনিসপত্র কিনে দেওয়া একেবারেই পছন্দ করতেন না। তারা নিজেরাও ওইসব জিনিস ব্যবহার করতেন না এবং মনে করতেন সফলতার জন্য এইসব জিনিসের কোনো দরকার নেই। হাই স্কুলে আমি সেল ফোন ছাড়াই কাটালাম। আমার নিজের কম্পিউটারও ছিল না তখন। কিন্তু আমি এখন কলেজে পড়ি। নিজের একটি সেল ফোন না হলে যে আর চলেই না! কাকতালীয়ভাবে তখনি আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে সিটিগ্রুপ থেকে কলেজ স্টুডেন্টদের জন্য ক্রেডিট কার্ড সাইন করাচ্ছিল। ক্রেডিট কার্ডে সাইন করানোর জন্য আমাকে প্ররোচিত করার কোন দরকারই পড়ল না তাদের। কিছুই বলতে হলো না আমাকে। আমি যা জানতাম এটি হচ্ছে ফ্রি, ব্যবহারে সহজ এবং এখন আমি আমার সেল ফোন এবং আরও কিছু জিনিসপত্র কিনতে পারবো। বাবা-মা’র সাথে একসাথে থাকার কারণে আমার ও আমার ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে তাদের বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছিল না। আমাদের বাসা ছিল আমার স্কুলের কাছেই। যাই হোক, আমাদের ক্যাম্পাসে মেইলবক্স ছিল। আমার ক্রেডিট কার্ডটি সেখানেই আসে। সেল ফোন কিনেই বাসায় নিয়ে যাই আর যথারীতি বাবা-মা’র কাছে ধরা খাই। আমার বাবা সাথে সাথেই আমাকে ওই দোকানে নিয়ে যায় ফোনটি ফেরত দেওয়ার জন্য। আমি ক্রেডিট কার্ডের পুরো টাকাটাই ফেরত পাই।

আমি সবসময় জানতাম যে ধার করা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। আমার বন্ধুবান্ধব ছিল। ছিল অমুসলিম বন্ধুও। আমি তাদেরকে ধারকর্জের মাঝে জড়িয়ে পড়তে দেখেছি ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার আগেই। এইসব এক কান দিয়ে ঢুকলেও আরেক কান দিয়ে বের করে দিতাম। তবে সেইবার আমি ক্রেডিট কার্ডটি বাতিল করেছিলাম। কিন্তু একটা সেল ফোন নেওয়ার নেশা আমাকে তাতিয়ে বেড়াচ্ছিলো। তাই আমি আবারও আরেকটি ক্রেডিট কার্ড নিলাম। এবার আমি ফোন কিনলেও সেটি বাসায় এমনভাবে লুকিয়ে রাখতাম যাতে আমার বাবা-মা কোনভাবেই খুঁজে না পায়। আমি নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিলাম যে এটি এমন কোনো বেশি টাকার লোন নয় আর যেহেতু আমার ক্যাম্পাস জব আছেই, আমি একসময় তা পরিশোধ করতে পারবোই। আসলেই কি তাই হয়েছিল? একেবারেই না। পরবর্তী চার বছর যাবত আমার হাজার হাজার টাকার লোন ছিল ক্রেডিট কার্ডে। আমি লোন পরিশোধ না করে ঝুলিয়েই রাখতাম। কারণ এভাবে আমি প্রতি মাসে লোন পরিশোধে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ, একসময় গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো। ভালো একটা ডিগ্রি পাওয়ায় ভালো স্যালারিতে একটা জবও জুটে গেল। চাকুরিটা ছিল আমার নিজ শহরেই। তাই আমি আমার বাবা-মা’র সাথেই থাকতে লাগলাম। আমার নতুন জব শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই আমি ক্রেডিট কার্ডের সমস্ত লোন পরিশোধ করে ফেললাম। তো, এখানেই তো শেষ হওয়ার কথা, তাই না?

আবারো ভুল হলো। আমার হাই স্যালারির জব এবং জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় শুন্য হওয়ার কারণে আমি তখন অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম । ফোন, কম্পিউটার, স্কি, ট্যুরে যাওয়া কিছুই বাদ রইলো না। এমনকি একটা গাড়িও কিনে ফেললাম ।

কিন্তু এভাবে আর চললো না। এরকমভাবে বেশ কিছু বছর কাটানোর পর আমি বুঝতে পারলাম  আমার নিজের মাঝে পরিবর্তন আনা দরকার। কিছু একটা করতেই হবে। আমার জবটা আসলেই ভালো ছিল, কিন্তু আমার আমার আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিলো না। আমি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতাম আর জানতাম কীভাবে তা ঢালাওভাবে খরচ করতে হয়। আমি এতটাই খরচ করতাম যে আমাকে প্রায় ধারকর্জ করে চলতে হতো! দিনে দিনে অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগলো।

একটা ব্যাপার আমি ভালো মতো বুঝলাম। তা হলো আমাকে বাসা ছেড়ে যেতে হবে। অতএব আমি বাসা ছেড়ে দিলাম। আমি আমার অতি পছন্দের গাড়িটি একটি মোটরবাইকের বিনিময়ে বিক্রি করে দিলাম। প্রচণ্ড মর্মাহত হয়েছিলাম সেদিন। এটি হয়তো আর কারো কাছে তেমন কিছু না, কিন্তু এটি আমার সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলো। এর ফলে এমন এক আর্থিক অবস্থা তৈরি হলো যার কারণে ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া আমার জন্য অনেক সহজ হয়ে গেলো। নতুন শহরেও আমি কাজ খুঁজে পেলাম এবং জীবনে প্রথমবারের মত বাড়ি ভাড়া দিলাম, বিল পরিশোধ করলাম, নিজের জন্য মুদি দোকানের কেনাকাটা করলাম। এইসবের মাধ্যমে আমার টাকাপয়সার হিসেবে কিছুটা লাগাম এলো। এখানে আসার আগেও আমি বিশাল পরিমাণের ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতাম, কিন্তু আবার আমার ক্রেডিট ব্যালেন্স বেড়ে যেতে লাগলো। ভাড়া পরিশোধসহ অন্যান্য যাবতীয় খরচাদি আমাকে হিসেবি হতে বাধ্য করলো।

আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং জীবনে আর্থিক ভারসাম্য আনার ফলে আমি আজকের এই অবস্থায় আসতে পেরেছি, কলেজ জীবন হতে দীর্ঘ সময় পর পুরোপুরি ঋণমুক্ত, নেই কোনো স্টুডেন্ট লোনের ঝামেলা। এমন স্বস্তিদায়ক অর্থনৈতিক অবস্থায় আমি এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আসতে পারলাম।

বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে জায়গা বদল করা এবং লোন পরিশোধ করার ফলে আমার অর্থনৈতিক অবস্থায় ভারসাম্য আসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনেক স্বভাবগত ও আত্মিক পরিবর্তনের জন্য আমি পুরোপুরি ঋণ থেকে মুক্ত পাই। এই পরিবর্তনগুলো কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আসে যেগুলোর মাধ্যমে আমি ওই বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাই। আশা করি এগুলো অন্যদের কাজেও লাগবে।

প্রথমত, আপনাকে আপনার লিমিট কতো তা জানতে হবে। অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করার মানে এই নয় যে আপনি আপনার সাধ্যের বাইরে এমন কিছু কিনবেন। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল বলেছেন,

‘‘এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’’ [সুরা আল-বাকারাহ(২): ১৪৩]

‘‘পানাহার করো, কিন্তু অপচয় কোরো না, তিনি নিশ্চয়ই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’’ [সূরা আল-আ’রাফ(৭): ৩১]

যখন আমি এই আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করলাম, আমি বুঝতে পারলাম যে আমি প্রয়োজনের  অতিরিক্ত খরচ করতাম, অপচয় করতাম আর আমার খরচের ব্যাপারে কোন ভারসাম্যই ছিল না। আমি আমার অবস্থা বুঝতে পারলাম। তাই জোর করে আমার খরচের অভ্যাস বদলানোর চেষ্টা করলাম। এটি সত্যিই আমাকে আমার অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। দূর হয় আমার অপচয় করার বদভ্যাস। আপনি যদি ধারকর্জে জর্জরিত হন আপনাকে দেখতে হবে আপনি কেমন খরচ করেন। ভারসাম্য আনার জন্য আপনার নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আপনি নিজে না পারলে নির্ভরযোগ্য কারো সাহায্য নিন। আর দেরি করবেন না।

দ্বিতীয়ত, আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। আগে আমি প্রায় প্রতি মাসেই ডিজাইনারের তৈরি পোশাক কিনতাম। কিন্তু এখন কদাচিৎ কিনি। ফ্যাশনেবল কিছু নয়, বরং কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো হলেই হলো। আমি বিলাসবহুল জিনিসপত্র কেনা বাদ দিয়ে নিতান্ত প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শুরু করলাম। যেমন খাবারদাবার, গ্যাস ইত্যাদি। আমাদের প্রিয় রাসূল (সা.) অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেন। তাঁর বাড়িতে কেবল ঘুমানোর কিছু বালিশ এবং একটি মাত্র মাদুর ছিলো। আমি কোনোভাবেই অবশ্য রাসূল (সা.)-এর মত ততটা মিতব্যয়ী হতে পারিনি, কিন্তু ঋণ হতে মুক্ত হওয়ার প্রচণ্ড তাগিদ আমাকে অনেক বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবহার ছাড়তে সক্ষম করেছিলো। যেমন আমি চলাফেরার জন্য নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করা ছেড়ে দিলাম। যখন আপনি ঋণমুক্ত হতে চাইবেন আপনাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতে হবে। আর সেগুলো মাত্র কয়েক মাসের জন্য নয়, বরং বছরের পর বছরের জন্য। অধিকন্তু আপনি আগে যেসব আমোদফুর্তি করে বেড়াতেন সেগুলোও ছাড়তে হবে। কিছুদিন পর পর ট্যুরে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। আমার মতো আপনার ক্রেডিট কার্ডও যদি সমস্যার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাদ দিয়ে দিন। এর পরিবর্তে আপনি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা শুরু করুন অথবা আপনার মাসিক পেমেন্টের টাকা ব্যাংকে জমা দিন। এই সব কিছুই আপনার জন্য শুরুর দিকে কষ্টকর হবে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ দিনশেষে আপনি এর ভালো ফল নিশ্চয় পাবেন।

তৃতীয়ত, আপনাকে প্ল্যান করতে হবে কীভাবে এর থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। আপনার টোটাল ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করুন, এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঠিক করুন কোথায় আপনাকে সর্বপ্রথমে পেমেন্ট দিতে হবে। আপনার বর্তমান ব্যয়ের ভিত্তিতে বাজেট করুন কী পরিমাণ লোন আপনি পরিশোধ করতে পারবেন। এভাবে আপনি ক্রমানুসারে লোন পরিশোধ করুন। এটাকে ডেট স্নোবল মেথড বলে। যদি আপনার কাছে এটি খুব ঝামেলার মনে হয় অথবা আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে, কীভাবে এটি করতে হবে তখন আপনার হয়তো কিছু রিসার্চ করার দরকার পড়বে। বা কোনো ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানারের সাহায্য নিতে হবে। সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো এটি আপনার পকেট থেকে কিছু অর্থ খসাবে কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য ভালোই মুনাফা দিবে। আমি এই পন্থাটাই ব্যবহার করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ এটি যথেষ্ট কার্যকর ছিল।

চতুর্থ এবং পঞ্চম উপদেশ হচ্ছে, বেশি বেশি দান খয়রাত করুন আর আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য চান। হ্যাঁ, আপনি ঋণগ্রস্ত হলেও কিছু দান করুন, সামান্য পরিমাণ হলেও। আল্লাহ্‌ আযযা ওয়া জাল বলেছেন,

‘‘সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে আর যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ তাকে যা দান করেছে তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না। আল্লাহ নিশ্চয়ই কষ্টের পর স্বস্তি দান করবেন।’’ [সূরা আত-তালাক(৬৫): ৭]

আল্লাহ আরও বলেছেন,

‘‘কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।’’ [সূরা আল-হাদীদ(৫৭): ১১]

‘‘এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিজিক দিবেন।’’ [সুরা আত-তালাক(৬৫): ৩]

আমি আসলেই বিশ্বাস করি আমার আজকের এই অবস্থায় আসার মূল কারণ ছিল দান সাদাকা করা। যদি নিজের জন্য অতিরিক্ত খরচ আল্লাহর রাহমাহ তুলে নেয়, তো তাঁর পথে খরচ নিশ্চয় তাঁর রাহমাহ অর্জনের সহায়ক হবে। আমার মনে আছে, যখন আমার কাঁধে মস্ত ঋণের বোঝা ছিল, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তখন কিছু দান খয়রাত করতাম। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যেতো এর অল্প কিছুদিন পরেই আমার ব্যাংকে বেশ ভালো পরিমাণের টাকা জমা হয়েছে। এর বেশির ভাগই আসতো আমার বাবার কাছ থেকে, মাঝে মাঝে অন্যান্য উৎস হতেও আসতো। কিন্তু সবসময়ই এগুলো ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি সবসময় এই টাকা লোন পরিশোধে কাজে লাগাতাম। এই টাকাগুলো হচ্ছে ওই আয়াতগুলোর সত্যতার নিদর্শন। আল্লাহর অশেষ রাহমাহ। অতএব নির্দি্বধায় দান করুন।

সবচেয়ে বড় সাহায্যটি এসেছিলো যখন আমি চেষ্টা করছিলাম এর থেকে পরিত্রাণ পেতে। ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আগের মাসগুলোতে আমি আমার দোয়ার পরিমাণ আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমি সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম এর থেকে মুক্তি পেতে। এর অল্প কিছু সময় পর আমাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হলো। আমি ভেবেছিলাম আমি এখানেই শেষ। হয়তো আমকে দেউলিয়া বা এমন কিছু ঘোষণা করা হবে। ঠিক তখনি আল্লাহ আমকে সবচেয়ে বড় সাহায্যটি করলেন। অফিস থেকে আমাকে সেভেরান্স পেমেন্ট দেওয়া হলো। এটি আমার ঋণ পরিশোধে খুব কাজে লাগলো। পরবর্তী মাসে আমি ঋণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারলাম।

আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমার দোয়া কবুল করেছিলেন। ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমি আমার জীবনে যে পরিবর্তনগুলো এনেছিলাম তার জন্য আমাকে তিনি আমাকে ঋণ থেকে মুক্তি দিয়ে পুরষ্কৃত করলেন।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যদি আপনি সত্যিই ঋণ থেকে মুক্তি পেতে চান এবং এর জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করেন, আল্লাহর পথে ব্যয় করেন, যদি আপনি বাজে খরচ করার অভ্যাস ছাড়েন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর সাহায্যের জন্য, অবশ্যই আপনি সফল হবেন। এইসবই আপনার অতীত ভুলের জন্য অনুশোচনা। হাদিসে কুদসি তে এসেছে আবু হুরাইয়া (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন:

“সুমহান আল্লাহ বলেছেন, আমি তা-ই যা আমার বান্দা আমার সম্পর্কে ধারণা করে। সে আমাকে যখন স্মরণ করে আমিও তাকে স্মরণ করি। সে যখন আমাকে কোনো মজলিসে স্মরণ করে আমি তখন এরচেয়েও ভালো মজলিসে তাকে স্মরণ করি। যখন সে আমার নিকট এক বিঘত পরিমাণ এগিয়ে আসে আমি এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। যখন সে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে আসে আমি এক প্রস্থ পরিমাণ এগিয়ে যাই। সে আমার কাছে হেঁটে আসলে আমি দৌড়ে যাই।” এর মানে হলো মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তওবাকবুলকারী; যদি তারা  বিশ্বাস করে যে, তিনি তাদের ক্ষমা করবেন এবং দয়া করবেন। যদি যথাযথ কাজের দ্বারা এই বিশ্বাস না থাকে তাহলে তা আল্লাহকে উপহাস করারই নামান্তর।

সবশেষে, আল্লাহ আল কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া নিশ্চয় কষ্টকর ও দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। ধৈর্য ধরুন। এর মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে যাচাই করছেন। ইনশাআল্লাহ, তিনি আপনাকে অতি শীঘ্রই সচ্ছলতা দান করবেন।

[বিঃ দ্রঃ সম্পূর্ণ লেখাটি আমেরিকান সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা, কিন্তু ঋণগ্রস্ত যে কারও জন্যই এটি প্রযোজ্য।]


উৎসঃ “Debt Free Muslims (মূল আর্টিকেল লিঙ্ক)

অনুবাদকঃ ফাতেমা তাবাসসুম পিঙ্কি

অনুবাদ কপিরাইট © মুসলিম মিডিয়া

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive