প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়ে গেলেই কি বাংলাদেশ ইসলামী দেশ হয়ে গেল? তা তো নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেই কি আর না হলেই কি? তাতে তো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তাহলে মুসলিমদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে এত চিৎকার চ্যাঁচামেচি কেন?

উত্তর হচ্ছে, রাষ্ট্র হতে ইসলামের প্রতিটা বিধান এক এক করে বিদায় হোক সেটা মুসলিমরা হতে দিতে চায় না। মুসলিমরা চায় ইসলামী শরীয়াহ’র দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হোক। সেটা তো এক লাফেই হয়ে যায় না। একটা বাচ্চা একদিনে হঠাৎ করে দৌড়ানো শিখে না। সে প্রথমে হামাগুড়ি দেয়, এরপর সে চার হাত পায়ে হাঁটে, এরপর সে দুই পায়ে হাঁটতে শিখে, এরপর সে একদিন দৌড়াতেও পারে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা মানে হচ্ছে, রাষ্ট্র ইসলামকে ফেভার করছে, রাষ্ট্রের মধ্যে আপনি জোর গলায় ইসলাম পালন করতে পারবেন। এর মানে ভবিষ্যতে ইসলামের দিকে দৌড়ানোর জন্য রাষ্ট্র চার হাত পায়ে হাঁটছে।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানে আপনি মেয়েদের হিজাব পড়তে বাধা দিতে পারবেন না, ছেলেদের দাঁড়ি রাখাতে আপত্তি জানাতে পারবেন না। সব জায়গায় ইসলাম শক্তিশালী থাকলো। ইউরোপীয়ান কান্ট্রিগুলোতে যদি রাষ্ট্রধর্ম ক্রিস্টিয়ানিটি হওয়া স্বতেও সেখানে মুসলিমরা থাকতে পারে তাহলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে অন্য ধর্মের লোক কেন সেখানে থাকতে পারবে না?

যারা সেক্যুলার-নাস্তিক তারা এটা মানতে চায়না। তারা চায় রাষ্ট্র হবে ধর্মহীন। রাষ্ট্র যেভাবে খুশী সেভাবে চলবে, এখানে ধর্মের কোন পাত্তা থাকবেনা। মানুষের জন্য সব জায়গায় সালাত পড়ার ব্যবস্থা থাকবে না। দাড়ি রাখলে হ্যারাস করা হবে, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধা দেয়া হবে। সংবিধান হতে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ  আস্থা ও বিশ্বাস’ যেদিন উঠিয়ে দেয়া হল, সেই দিন থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উঠিয়ে দিয়ে সেক্যুলার প্রভুকে খুশী করে ডিইসলামাইজেশন এর সেই প্রক্রিয়ার হাতে খড়ি হচ্ছে। প্রতিটা মুসলিমের উচিত সেই প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়া। যারা এর সাথে আছেন, তাদের সাথেই আছি।

আর যারা বলছেন, রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি? ইসলামবিদ্বেষী সেই মানুষগুলোর কাছে প্রশ্ন: তাহলে রাষ্ট্রের আবার ভাষা কি? দেশে চাকমা ভাষা, গারো ভাষা থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হলো কিভাবে? রাষ্ট্রভাষা থাকতে পারলে রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারবে না কেন?

কিছু টিভিতে এর বিরুদ্ধে প্রচারণা করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, ভ্যাটিকান ছাড়া দুনিয়ার কোথাও নাকি রাষ্ট্রধর্ম নেই। ব্যাপারটা আসুন একটু চেক করি। আমি আপনাদেরকে উইকিপিডিয়ার এই লিংকে যেতে বলবো।

প্রকৃত সত্য হল বহু মুসলিম দেশ এবং পাশ্চাত্য খ্রিস্টান দেশেই রাষ্ট্রধর্ম আছে। লিংকে গেলে আপনি দেখতে পারবেন-

নিম্নলিখিত দেশগুলোতে রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে ক্রিস্টিয়ানিটি:

ফ্রান্স, হাঙ্গেরী, তুভালু, স্কটল্যান্ড, টঙ্গা, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, গ্রীস, স্পেন, পেরু, পোল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, পানামা, এল স্যালভাদর, ডোমিনিকান রিপাবলিক, আর্জেন্টিনা, আন্ডোরা, ভ্যাটিকান সিটি, মালটা , লিকসটেন্সটাইন, কোস্টারিকা।

(দেখুন, ইংল্যান্ড এর মত দেশে এংলিকান ভার্সন অব ক্রিস্টিয়ানিটি হল রাষ্ট্র ধর্ম।)

নিম্নলিখিত দেশগুলোতে ইসলাম:

আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই, কমরস, ইজিপ্ট, জর্ডান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, আরব আমিরাত, ইরান, ওমান, কুয়েত, ইয়েমেন, বাহরাইন, বাংলাদেশ, জিবুতি, ইরাক , প্যালেস্টাইন, তিউনিশিয়া।

নিম্নলিখিত দেশগুলোতে রাষ্ট্রধর্ম বুদ্ধিজম:

ক্যাম্বডিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার।

তারমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই রাষ্ট্রধর্ম ব্যাপারটা আছে। এমনকি সিম্বোলিক হলেও। তাহলে বাংলাদেশে থাকতে অসুবিধা কি? অসুবিধা হল, নাস্তিকরা এতে অখুশী, তারা ধর্মের মূল উৎপাটন করতে চায়। অসুবিধা হল, প্রভুরা অখুশী। প্রভুরা ইসলাম নামটাও শুনতে চায় না।

মুসলমান কিভাবে পারে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান থেকে উঠিয়ে দিতে? কিভাবে পারে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কে সংবিধান থেকে উঠিয়ে দিতে? কিভাবে পারে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ কে তুলে দিতে?

পারে তখন যখন মুসলমান আর মুসলমান থাকে না, মুনাফিকে পরিণত হয়। পারে তখন, যখন প্রভুকে খুশী করতে স্রষ্টার মনোনীত জীবনব্যবস্থা ইসলামকে বিসর্জন দেয়।

মুসলিম মিডিয়া ব্লগের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্লগ পরিচালনায় প্রতি মাসের খরচ বহনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য। বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।

নিচে মন্তব্যের ঘরে আপনাদের মতামত জানান। ভালো লাগবে আপনাদের অভিপ্রায়গুলো জানতে পারলে। আর লেখা সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে অবশ্যই "ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কমেন্ট করুন"।

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Loading Disqus Comments ...
IIRT Arabic Intensive